নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করাতে হল্যান্ডের আইনজীবীদের তৎপরতা; সবার জন্যই অনুকরণীয়
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন হল্যান্ডের একদল আইনজীবী। ১৯৯৮ সালে পাস হওয়া 'রোম স্ট্যাচু' বা রোম সংবিধির ভিত্তিতে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আগ্রাসনের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই আন্তর্জাতিক আদালতের অংশীদার নয়।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি আদেশ জারি করেছে। তাতে গণহত্যা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে ইসরাইলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আদালতের আদেশের পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, তা আইসিজেতে জানাতে বলা হয়েছে। কিন্তু দখলদার ইসরাইল এই আদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বরং নেতানিয়াহু'র নির্দেশে তার বাহিনী গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে গাজার রাফাহতে নতুনকরে গণহত্যা চালাচ্ছে বর্বর ইসরাইলি সেনারা।
কয়েকদিন আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, নেতানিয়াহু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে। এ কারণে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আশঙ্কায় উদ্বেগে রয়েছে নেতানিয়াহু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
তারা আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সম্ভাবনা আচ করতে পেরে তা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এই প্রক্রিয়া ঠেকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। হিব্রু ভাষার বিভিন্ন গণমাধ্যমও স্বীকার করেছে, হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সম্ভাবনার খবরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
কিছু দিন আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি'র প্রসিকিউটরের কার্যালয় নানা পক্ষের উদ্বেগের বিষয়ে অবহিত থাকার কথা জানিয়ে গাজা ইস্যুতে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছে। এই আদালতের কর্মকর্তাদেরকে ভয় দেখানো বা প্রভাবিত করার সমস্ত প্রচেষ্টা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে ঐ কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিশোধ বা হুমকি থাকলে আদালতের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটরের কার্যালয় জোর দিয়ে বলেছে, রোম স্ট্যাচু বা সংবিধি অনুযায়ী শুধু হুমকি প্রদানকেই বিচার ঠেকানোর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আইসিসির চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, কিছু দিন ধরে জাতিসংঘের এই আদালত ও এর কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের হুমকি জাতিসংঘের এই স্থায়ী যুদ্ধাপরাধ আদালতের ‘বিচার প্রশাসনের’ বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল হতে পারে। এতে আরো বলা হয়, আইসিসির দপ্তরের কর্মীদের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা, তাদের ভয়ভীতি দেখানো বা তাদের ওপর অবৈধ প্রভাব খাটানোর সব ধরনের চেষ্টা অবশ্যই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
এর আগে বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চিফ প্রসিকিউটর গাজার উত্তরে অবস্থিত 'আশ-শিফা' হাসপাতাল এবং গাজা উপত্যকার দক্ষিণের 'নাসের' হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দেখা করে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব সূত্র জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, ধর্ষণ ও গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যে তদন্ত করছে, তাতে হাসপাতালগুলোতে সংঘটিত অপরাধযজ্ঞকেও শামিল করা হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং হল্যান্ডের আইনজীবীদের এই পদক্ষেপকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের আইনজীবীরাও অনুসরণ করবে। আর এমনটি হলে নেতানিয়াহু ও তার অবৈধ প্রশাসনের ওপর চাপ আরও বাড়বে এবং তাদের নির্বিচারে মানুষ হত্যার মিশন বন্ধ হলেও হতে পারে।#
পার্সটুডে/এসএ/৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।