নারীর গৃহিনী হওয়া সম্পর্কে ইসলাম ও পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গি
পরিবার সমাজের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। পরিবার ব্যক্তিকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ কারণে ইসলাম বিয়ে ও পরিবার গঠনকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়।
বেহেশতি নারীকুলের সর্দার হযরত ফাতিমা (সা.)'র পারিবারিক জীবন আমাদের এটা শেখায় যে, একজন স্ত্রীর প্রধান দায়িত্ব হল স্বামী, সন্তান ও ঘর-কন্নার দেখাশোনা করা। পরিবারের ভিত্তিকে মজবুত করার জন্যই এই দায়িত্ব পালন জরুরি। পারিবারিক ও সামাজিক কাজগুলোর কোনটি কে করবে তা নির্ধারিত না হলে সমাজে দেখা দেবে সংকট। পাশ্চাত্যের পারিবারিক সংকট, বিশেষ করে, পাশ্চাত্যের পরিবারগুলোতে ও ঘর-সংসারের কাজে নারীর অনুপস্থিতিই এর প্রমাণ।
আজ পশ্চিমা সমাজে নারীর মাতৃত্বের ভূমিকা প্রধান না হয়ে গৌণ হয়ে পড়েছে। বরং ঘরের বাইরে কাজ করাই পশ্চিমা নারীর জন্য প্রধান দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু ইসলাম মনে করে সংসার পরিচালনা নারীর প্রধান দায়িত্ব এবং তা পরিবারে দেয় অপেক্ষাকৃত বেশি শান্তি ও সমৃদ্ধি। পশ্চিমা সমাজ শান্তি ও সমৃদ্ধির এই চাবিকাঠির গুরুত্ব সম্পর্কে অচেতন হয়ে আছে।
পশ্চিমা নারীর ইতিহাসে দেখা যায় প্রাচীন, মধ্য ও রেনেসাঁর যুগেও পশ্চিমা নারী ছিল সম্মানহীন ও পুরুষের দাসীর সমতুল্য। ঘরের সবচেয়ে কঠোর ও কঠিন কাজগুলো করানো হত তাদের দিয়ে। প্রাচীন গ্রিসে নারীকে মনে করা হত ত্রুটিপূর্ণ মানব ও পুরুষের নির্দেশ বাস্তবায়নকারী। গ্রিক কবি হোমারের মতে নারীর কাজ হল কেবল সন্তান জন্ম দেয়া ও ঘর-কন্নার কাজ করা। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল মনে করতেন পুরুষের সেবিকা হিসেবে নারী হল দাসী।
রেনেসাঁর যুগেও পাশ্চাত্যে নারীর অবস্থা তেমন উন্নত হয়নি। অভিজাত কয়েকটি পরিবারের মহিলারা ছাড়া সাধারণ নারীদেরকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরিবারের কঠিন কাজগুলো করতে বাধ্য করা হত। তাদের মানবিক অধিকার বলতে কিছুই ছিল না।
আসলে ফেমিনিজম বা নারীবাদী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল নারীর প্রতি পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিক জুলুমের প্রতিবাদে। কিন্তু এই আন্দোলনও নারীর ভূমিকায় কোনো ভারসাম্য আনতে পারেনি বরং আন্দোলনটি উগ্রবাদ বা চরমপন্থী চিন্তার শিকার হয়েছে। কারণ, তারা নারী মুক্তির কথা বলে নারীকে তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ করেছে।
নারীবাদীরা গিন্নিপনা ও ঘরের ভেতরে কাজ করাকে নারীর জন্য অপমানজনক বলে মনে করে। তারা মনে করে এটা হচ্ছে পুরুষের সেবা ও স্রেফ তাদেরই স্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু সঠিক নিয়ম-নীতির আওতায় ঘরের ভেতরে নারীর স্বেচ্ছাসেবী কাজকে যদি নির্ধারিত করা হয় তাহলে তা হবে খোদ নারী ও গোটা পরিবারের জন্যই কল্যাণকর। তাই এ ধরনের কাজকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা চরমপন্থা বা উগ্রবাদ মাত্র।
নারীবাদীদের মতে, ঘর-কন্না ও সংসারের কাজ করা ঘরের বাইরে নারীর কর্মসংস্থান এবং তাদের সামাজিক ততপরতার পথে প্রধান বাধা। প্রখ্যাত মার্কিন নারীবাদী বিটি ফ্রিদান-এর মতে "গত কয়েক শতক ধরে পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শ নারীর ওপর কর্তৃত্ব করে এসেছে। এখন এই আদর্শ নারীদের ঘরে অবস্থানকে প্রেমময় বা রোমান্টিক বলে তুলে ধরছে এবং পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণ-মাধ্যমের মঞ্চ থেকে নারীকে অনুগত ও করুণাময়ী হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছে। পুতুল ও রান্না ঘরের সামগ্রীর মত খেলনা ধরিয়ে দিয়ে নারীকে মা ও সহধর্মিণী তথা গৃহবধূ হওয়ার জন্য প্রস্তুত করছে পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শ।"
আসলে পাশ্চাত্যের মতাদর্শগুলো নারীর সাংসারিক কাজের গুরুত্বকে সঠিকভাবে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়াও এই মতাদর্শগুলো নারীকে সম্মান দেখানোর মূল দর্শন সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই তারা গৃহবধূ বা গৃহিনীকে বিনা মূল্যে পুরুষদের সেবাকারী দাসী বলে মনে করছে। ইউরোপীয় সমাজবিজ্ঞানী এন্থনি গিডেন্স ও ফরাসি নারীবাদী ক্রিস্টিন ডেলফি ঠিক এমনটিই মনে করেন।
পাশ্চাত্যে নারীবাদের বিস্তারের ফলে বিয়ে করা, মা হওয়া ও সংসারী হওয়াকে নারীর জন্য অশালীন বলে মনে করা হয় এবং ঘরের বাইরে নারীর কাজ করাকে ব্যাপক উতসাহ দেয়া হয়। এ ছাড়াও চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং পুরুষের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নারীর সংগ্রাম ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে। শুলামিথ ফায়ারস্টোনের মত কোনো কোনো উগ্র নারীবাদী নারীর মা হওয়া ও ঘরের কাজ করার মত বিষয়গুলোকে নিম্নশ্রেণীর বা নিকৃষ্ট কাজ বলে মনে করেন। তিনি নারীকে কথিত এই নিকৃষ্ট অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ফরাসি নারীবাদী সাইমন দ্যা বিভোয়ের মনে করেন গৃহবধূর কাজগুলো অর্থহীন বা পণ্ডশ্রম মাত্র এবং সমাজের জন্য এইসব কাজ প্রত্যক্ষভাবে লাভজনক নয়। তার মতে ঘরের কাজে কোনো কিছু উতপাদিত হয় না বলে গিন্নীরা হলেন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক।
বামপন্থী নারীবাদী ওয়েলি সেকম্ব মনে করেন নারীরা ঘরের কাজ করায় পুঁজিবাদ পুরুষদেরকে বেশি শোষণের সুযোগ পায়। তাই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিনামূল্যে শ্রম দানকারী এইসব গিন্নী বা গৃহীনি ছাড়া ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু এটা অবাস্তব এ কারণে যে ঘরের কাজ ও বাইরের কাজ সমান নয়। নারী ঘরের কাজ করেন দায়িত্বশীলতা ও ভালবাসার কারণে। তাই বাইরের কাজের সঙ্গে তার তুলনা হয় না।
মার্কিন নারীবাদী শার্লোট পারকিনস গিলম্যান মনে করেন ঘর ও শিশুদের শিক্ষালয়গুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার মত কাজগুলো যদি কোনো বিশেষ সংস্থার পেশাদার কর্মীদের মাধ্যমে করানো হয় তাহলে নারীরা নিশ্চিন্তে ঘরের বাইরে যেতে পারবেন এবং সহজেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক ততপরতা চালাতে পারবেন। এ জন্য কোনো কোনো নারীবাদী তাত্ত্বিক ও কর্মী সমবায়-ভিত্তিক বাসভবন গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন যাতে গৃহস্থালী কাজ ও শিশুদের প্রতিপালনের নানা সুযোগ থাকবে।
এভাবে নারীর ভূমিকা ও বিশেষ করে তার ঘর-সংসারকেন্দ্রীক কাজ সম্পর্কে পাশ্চাত্যে নানা প্রান্তিক বা চরমপন্থী ধারণাগুলো সেখানকার পরিবারগুলোর ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে। কারণ, এইসব মতবাদ পশ্চিমা নারীকে তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য থেকে দিনকে দিন বেশি দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ইসলাম নারীর গৃহস্থালী ভূমিকাকে যৌক্তিক দৃষ্টিতে দেখে।
(দুই)
সংসারের জরুরি কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পাদন করা না হলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিতে পারে। বিগত আলোচনায় আমরা বলেছি পাশ্চাত্যে নারীর গৃহস্থালী কাজ করাকে নিকৃষ্ট কাজ বলে মনে করা হয়। ফলে সেখানে পরিবার ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন।
ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবারে নারী ও পুরুষ পরস্পরের সহযোগী। এ ধর্মের মতে, স্বামী ও স্ত্রী পরিবার গঠনের মাধ্যমে পরস্পরের পাশে থেকে ইহকালীন ও পারলৌকিক সৌভাগ্য অর্জন করতে চান। তাই পরিবার নারী ও পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র নয় বরং সমবায় ও সহযোগিতার কেন্দ্র। এখানে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে মানুষের আত্মিক উন্নতি ঘটে এবং বিকাশ ঘটে মানবীয় প্রতিভার। অন্য কথায় ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবারের ভিত্তি হল ভালবাসা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নয়। দাম্পত্য জীবনসহ জীবনের সব দিকে স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরকে সহযোগিতা করে এই ভালবাসার ভিত্তিতেই। সে জন্য পরিবারের সদস্যরা দায়িত্ব বা কাজগুলো ভাগ করে নেন। এভাবে বৃদ্ধি পায় পরস্পরের প্রতি ভালবাসা এবং দাম্পত্য জীবন হয় সুখময়।
ইসলাম স্বামী ও স্ত্রীর স্বভাব এবং শারীরিক প্রকৃতির আলোকে তাদেরকে একই ধরনের কাজ করতে বলে না। এ ধর্মের দৃষ্টিতে পুরুষ সংসারের বা পরিবারের প্রধান, আর স্ত্রী হলেন সচিব। পরিবারকে যদি একটি ভবনের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে এর ছাদটির কাজ হল বৃষ্টি ও ঝড়-তুফানের মত বাইরের নানা সংকট থেকে পরিবারকে রক্ষা করা। অন্যদিকে ভবনটির স্তম্ভের কাজ হল ছাদকে রক্ষা করা। ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষ হলেন পরিবারের ছাদ ও স্ত্রী হলেন স্তম্ভ। ছাদ স্তম্ভ ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। আর ছাদ ছাড়াও স্তম্ভ সুরক্ষিত হয় না। পুরুষ দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে বেশি শক্তিশালী হওয়ায় বাইরের সংকটগুলো তাকে মোকাবেলা করতে হয়। বাইরের যে কোনো হামলা এবং প্রখর তাপ বা বৃষ্টি থেকে ঘরকে রক্ষা করা স্বামীর দায়িত্ব। স্বামী যদি এইসব দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে সংকট ছড়িয়ে পড়বে ঘরের ভেতরে। স্ত্রী বা নারী হলেন ঘরের স্তম্ভের মত। একই সময়ে স্ত্রী কী ছাদের ভূমিকাও পালন করতে পারেন? নারীর জন্য পুরুষালী কাজ করা যেমন কঠিন ও শোভনীয় নয় তেমনি পুরুষের জন্যও নারীসুলভ কাজ বা দায়িত্ব পালন করা শোভনীয় নয়।
যেসব কাজে অপেক্ষাকৃত বেশি শারীরিক শক্তির দরকার হয় ইসলাম সেইসব কাজ করতে বলে পুরুষকে। আর যেসব কাজের জন্য দয়া, স্নেহ ও ভালবাসা বেশি দরকার হয় সেসব কাজ তথা মাতৃত্ব ও সন্তান প্রতিপালন করতে বলে স্ত্রীকে। প্রশ্ন উঠতে পারে, ঘরের সব কাজই কী স্ত্রীকে বা নারীকেই করতে হবে?
নৈতিক, মানসিক এবং আবেগ –অনুভূতিগত দিক থেকে ঘরের কাজগুলো সম্পাদন করা নারীর জন্য বেশি উপযোগী বা মানানসই। তবে আইনগত দিক থেকে পুরুষ এইসব কাজ করতেও নারীকে বাধ্য করতে পারে না। এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে নারীর রয়েছে নির্বাচনের স্বাধীনতা। ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবারে নারীর একমাত্র দায়িত্ব বা কর্তব্য হল স্বামীর দেখাশুনা করা ও তার প্রতি অনুগত থাকা। কিন্তু বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো, কাপড় ধোয়া ও ঘরদোর পরিষ্কার করা নারীর দায়িত্ব নয়। এ যুগের বিশিষ্ট আলেম এবং ইরানের ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (র.) এ প্রসঙ্গে বলেছেন: কোনো স্বামী ঘরের কাজে লিপ্ত হতে স্ত্রীকে বাধ্য করার অধিকার রাখেন না।
ইসলাম গৃহস্থালী কাজ করার দায়িত্ব কখনও নারীর ওপর চাপিয়ে দেয়নি। তবে নৈতিক উপদেশ হিসেবে ঘরের কাজ করতে সক্রিয় বা উদ্যোগী হওয়ার জন্য নারীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং এ ধরনের কাজ করাকে ইবাদতের সমতুল্য বলে উল্লেখ করেছে। কারণ, পরিবারে ভারসাম্য রক্ষার জন্য কাজ ভাগ করে নেয়া বা শ্রম-বিভাজন জরুরি। আর এরই আলোকে ঘরের বাইরের কঠিন কাজগুলো করা পুরুষের দায়িত্ব। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) নারীদের বলেছেন: যে নারী বা স্ত্রী যখন স্বামীর ঘরের কোনো জিনিষকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয় তথা কোনো কাজ করে ঘরের সংস্কার বা উন্নয়নের লক্ষ্যে সে সময় আল্লাহ তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। আর আল্লাহ যার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন তাকে তিনি শাস্তি বা আজাব দেবেন না।
পরিবারের কাজে শ্রম বিভাজনের বিষয়ে মহাপুরুষদের জীবনের দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য আদর্শ। আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) ও ফাতিমা (সা.) এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.)'র মতামত চাইলে তিনি ঘরের কাজগুলো করতে ফাতিমা (সা.)-কে এবং বাইরের কাজগুলো করতে আলী (আ.)-কে পরামর্শ দেন। ফাতিমা (সা.) এতে অত্যন্ত খুশি হয়ে বলেছিলেন: আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না যে আমি এই শ্রম-বিভাজনে কতটা খুশি হয়েছি, কারণ আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাকে পুরুষের সাথে সম্পর্কিত কাজ কিংবা যেসব কাজ করতে ঘরের বাইরে পুরুষদের মধ্যে যেতে হয় সেসব কাজ করা থেকে বিরত রেখেছেন।
হযরত ফাতিমা (সা.)'র এই বক্তব্য থেকেই স্বামী ও স্ত্রীর কাজের ধরণ কেমন হওয়া উচিত তা ফুটে উঠেছে। তাই এটা স্পষ্ট ইসলাম নারী ও পুরুষের স্বভাব বা প্রকৃতির আলোকেই নারী-পুরুষের কাজের মধ্যে ভিন্নতার কথা বলে। এই ভিন্নতা ও পার্থক্যের মধ্যে বৈষম্য বা ভেদাভেদের কোনো সম্পর্ক নেই।
অন্যদিকে গিন্নিপনা ও স্বামীর দেখাশুনা করার মত শৈল্পিক কাজের মধ্যে রয়েছে পুণ্য বা সাওয়াব। স্ত্রী যখন এটা জানবেন যে স্বামীর দেখাশুনা ও শিশুদের প্রতিপালনে রয়েছে ইবাদতের সাওয়াব তখন তিনি আনন্দ চিত্তে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় এইসব কাজ করবেন এবং এইসব কাজ করতে কখনও ক্লান্তি বোধ করবেন না বা এ ধরনের কাজকে চাপিয়ে দেয়া কাজ বলে মনে করবেন না।
এ ছাড়াও ইসলাম ঘরের কাজকর্মে স্ত্রীকে সহায়তা করতে স্বামীকে পরামর্শ দিয়েছে। ঘরের কাজ করা কেবল স্ত্রীর দায়িত্ব –এমনটি ভাবতে নিষেধ করে ইসলাম। আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) ঘরের কাজে ফাতিমা (সা.)-কে সহায়তা করতেন বলে বহু বর্ণনা রয়েছে। তিনি ঘরের চুলার জন্য লাকড়ি বয়ে আনতেন, ঘরের জন্য পানি আনতেন এবং ঘরে ঝাড়ু দিতেন। অন্যদিকে ফাতিমা (সা.) আটা বানাতেন, খামির করতেন ও রুটি তৈরি করতেন।
ইসলাম সব সময়ই নারী ও পুরুষকে মানুষ হিসেবে সমান মর্যাদা দিয়েছে। ঘরের কাজের তথা নারীর মূল কাজের ক্ষতি না হলে নারীরা সামাজিক নানা কাজেও অংশ নিতে পারে বলে এ ধর্ম ঘোষণা করেছে। এমনকি নারী ধর্ম রক্ষা ও সংসারের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গিয়ে অর্থনৈতিক ততপরতাও চালাতে পারে। তবে মুসলিম নারীর এ ধরনের কাজের উদ্দেশ্য পশ্চিমা নারীদের মত বস্তুবাদ-ভিত্তিক নয়। ইতিহাসে দেখা যায় হযরত ফাতিমা (সা.) যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে বাবাকে সাহায্য করেছেন। কখনও মসজিদে গিয়েছেন ও আলী (আ.)'র নেতৃত্বের বৈধতা ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে ভাষণ দিয়েছেন। #
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৮