'আমাদের হাত রক্তে রঞ্জিত' বোরেলের স্বীকারোক্তি এবং গাজায় ইউরোপের দ্বিমুখী নীতি
(last modified Sun, 11 May 2025 11:41:05 GMT )
মে ১১, ২০২৫ ১৭:৪১ Asia/Dhaka
  • 'আমাদের হাত রক্তে রঞ্জিত' বোরেলের স্বীকারোক্তি এবং গাজায় ইউরোপের দ্বিমুখী নীতি

স্পেনের প্রবীণ কূটনীতিক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এক বিরল বক্তৃতায় এমন একটি বাস্তবতা প্রকাশ করেছেন যা নিয়ে মানবাধিকার কর্মী এবং স্বাধীন বিশ্লেষকরা বছরের পর বছর ধরে জোরেসোরে কথা বলে আসছেন।

"আজ গাজার জনগণের উপর যে বোমা পড়েছে তার অর্ধেকই ইউরোপীয় মাটি থেকে এসেছে।" এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেলের একটি অকপট এবং স্পষ্ট স্বীকারোক্তি।

পার্সটুডে-র মতে,এই স্বীকারোক্তি যদিও দেরিতে এসেছে তা এমন একটি মহাদেশের নৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার স্পষ্ট প্রতীক যা একসময় মানবাধিকার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার দাবি করেছিল। গাজায় বিস্ফোরণের শব্দ এখনও বিশ্বের কানে প্রতিধ্বনিত হয়। যেসব মা তাদের সন্তানদের কোলে নিয়ে আছে কিন্তু তারা আর নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। তাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। গাজায় হতাহতের পরিসংখ্যানও ভয়াবহ: ৫০,০০০ এরও বেশি নিহত এবং ১,১৬,০০০ আহত, ১৭,০০০ শিশু শহীদ। এগুলো কেবল সংখ্যা নয়,প্রতিটিই এমন একটি জীবনের গল্প যা শেষ হয়ে গেছে এবং ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে ইউরোপ সরাসরি এই অপরাধের সঙ্গে  জড়িত।

"দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমরা সবচেয়ে বড় জাতিগত নির্মূল অভিযান প্রত্যক্ষ করছি, যার লক্ষ্য ফিলিস্তিনিদের নির্মূলের পর সেখানে বিশ্রামাগার এবং ছুটি কাটানোর বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা। স্পেনের ইউস্তে মঠে ইউরোপীয় কার্লোস ভি পুরস্কার গ্রহণের পর ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল এসব কথা বলেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদিও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এবং "আত্মরক্ষার বৈধ অধিকার"  কথা বলছে, বাস্তবে তারা গাজার অসহায় জনগণের হত্যাযজ্ঞের অংশ হিসেবে কাজ করছে।  ইসরাইলের অস্ত্র রপ্তানি, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকের গণহত্যার বিষয়ে অর্থপূর্ণ নীরবতা এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের মুখে নিষ্ক্রিয়তা - এই সবকিছুই এই ইউনিয়নের কথিত নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

আজ,স্পেনের একটি মঠ থেকে বোরেল স্বীকার করেন যে ইউরোপের "প্রতিবাদ এবং প্রভাবের সমস্ত হাতিয়ার ছিল কিন্তু কখনও সেগুলো ব্যবহার করেনি।"

ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রতি ইউরোপের প্রতিক্রিয়া দেখলে আপাত দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যে ইউরোপীয় নেতারা অভূতপূর্ব তাড়াহুড়ো করে কিয়েভে কোটি কোটি ইউরোর অস্ত্র পাঠিয়েছিলেন, তারা গাজায় রক্তপাতের প্রতিক্রিয়ায় অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এটা কি সত্য নয় যে মানবাধিকার এবং দখলদারিত্বের মুখোমুখি হওয়ার নামে উভয় সংকট বিশ্লেষণ করা হয়? তাহলে কেন এক জায়গায় ইউরোপ কেবল ট্যাঙ্ক এবং ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং অন্য জায়গায় কেবল নীরবতা এবং খালি প্রতিশ্রুতিই যথেষ্ট?

বোরেলের স্বীকারোক্তি, যদিও ব্যক্তিগত অবস্থানের আকারে প্রকাশিত, তা একটি নিয়মতান্ত্রিক বিপর্যয়ের গভীরতা প্রকাশ করে। সেই ইউরোপীয় পররাষ্ট্রনীতি একটি দ্বৈত খেলায় পরিণত হয়েছে যেখানে মানবতা এবং নীতির মানদণ্ড মানবাধিকার নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং নির্দিষ্ট মিত্রদের নৈকট্য।

বোরেলের দৃষ্টিতে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের লক্ষ্য প্রতিশোধ বা নিরাপত্তার চেয়েও বেশি কিছু: "ফিলিস্তিনিদের নির্মূলের পর বিশ্রাম ও বিনোদনের জায়গা তৈরি করার জন্য জাতিগত নির্মূল।" এই ধরনের বক্তব্য একজন অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিকের কথার বাইরেও যায়; এটি ইউরোপের সম্মিলিত বিবেকের জন্য একটি জাগরণের ডাক। যে মহাদেশটি এখনও ইতিহাসের আয়নায় নিজেকে গণহত্যার শিকার হিসেবে দেখে, আজ সেই মহাদেশ গণহত্যার অস্ত্র সরবরাহকারীর অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে।#

পার্সটুডে/এমবিএ/১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।