‘ম্যাড ম্যান’ থিওরি বাস্তবায়ন করে ট্রাম্প কী চাইছেন?
-
ডোনাল্ড ট্রাম্প
পার্সটুডে - ব্রিটেনের ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ম্যাড ম্যান থিওরি’ বা পাগল তত্ত্ব ব্যবহার করে ক্ষণিকের বিজয় চাইছেন।
পার্সটুডে জানিয়েছে, গার্ডিয়ান সংবাদপত্র এক নিবন্ধে লিখেছে, ট্রাম্পের নীতি সম্পর্কে আগাম ধারণা করা কঠিন যা কিনা ট্রাম্পের ব্যক্তিত্বের অংশ এবং যা তার শাসনেরও কৌশল। এ নীতি ইরানে হামলাসহ তার বৈদেশিক নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করেছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদকের মতে, মার্কিন হামলার উদ্দেশ্য ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করা নয় বরং ট্রাম্পের ব্যক্তিগত নীতি চরিতার্থ করা অর্থাৎ ব্যক্তিগত ক্ষমতা প্রদর্শন করাই তার মূল উদ্দেশ্য ছিল।
ট্রাম্প গর্বের সাথে বলেছিলেন, "আমি ইরানে আক্রমণ করবো কি করবো না তা কেউ জানে না।" তার এই কৌশল যতটানা যুক্তি নির্ভর তার চেয়ে সন্দেহ, বিশৃঙ্খলা এবং হঠকারীমূলক। কিন্তু ট্রাম্পের এ ধরনের নীতি বা কৌশলের উদ্দেশ্য দেশের স্বার্থ রক্ষা নয় বরং নাটকীয় খেলার মঞ্চস্থ করা। ট্রাম্প নিজেকে একজন "কর্মক্ষম ব্যক্তি" হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, এমনকি যদি তার কাজে ফলাফল নাও আসে।
প্রকৃতপক্ষে, গার্ডিয়ান যেমনটি লিখেছে, ইরানে আমেরিকার আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত বিজয় নিশ্চিত করা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে এটা তুলে ধরা যে আমেরিকাও ইসরাইলের সাফল্যের অংশীদার।
ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে প্রাথমিক কৌশলগত বিজয় খুব কমই স্থায়ী হয়, কিন্তু ইরানের ক্ষেত্রে, একটি সুসংগত সরকার কাঠামো, আঞ্চলিক কৌশলগত অবস্থান এবং বহু-স্তর বিশিষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন দেশ হওয়ায় ইরানে হামলা করতে গিয়ে তাদের হিতে বিপরীত হয়েছে। ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে তো পারেনি বরং ইরানের অভ্যন্তরীণ সংহতি ও প্রতিরোধকে আরো শক্তিশালী করেছে।
গার্ডিয়ানের মতে, কেউ কেউ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার জন্য ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলাকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এই যুক্তি ভিত্তিহীন। কারণ বাস্তবতা হল ট্রাম্প দ্রুত বিজয় অর্জন এবং একটি "সফল" অভিযানে অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষা থেকে ইরানে হামলা চালিয়েছে।
ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করতে গিয়ে, দ্য গার্ডিয়ান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে "পাগল তত্ত্ব"-এর কথা উল্লেখ করেছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় রিচার্ড নিক্সন প্রথম এই ধারণাটি ব্যবহার করেছিলেন। নিক্সনের লক্ষ্য ছিল আমেরিকার শত্রুদেরকে তার অপ্রত্যাশিত আচরণ দিয়ে ভয় দেখানো যাতে তারা কোনও পদক্ষেপ না নেয়। কিন্তু এখানেই রয়েছে মূল পার্থক্য: নিক্সন এই পদ্ধতিটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে এবং অন্যান্য বৈদেশিক নীতির হাতিয়ারের পাশাপাশি ব্যবহার করেছিলেন, যেখানে ট্রাম্প এটিকে তার ব্যক্তিত্ব এবং স্থায়ী শাসন কৌশলের অংশ করে তুলেছেন।
ইরান এখনও এনপিটির সদস্য এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার তত্ত্বাবধানে তাদের পরমানু কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে এই হামলা কেবল একটি দেশের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনই নয়, বরং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গঠিত আইনি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর সরাসরি আঘাত।
তবে, ট্রাম্পের একতরফা পদক্ষেপের ফলে ইউরোপীয় সরকারগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।#
পার্সটুডে/এমআরএইচ/এমএআর/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।