আইএইএ'র বর্ণবাদী আচরণ; ইসরাইলের দিমোনার বিষয়ে নীরব কিন্তু ইরানের ব্যাপারে সরব
-
• আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি
পার্সটুডে - আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা, তার দ্বিমুখী নীতির কারণে, শুধু যে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে তাই নয় একইসাথে বরং পারমাণবিক বর্ণবাদী আচরণেরও বিস্তার ঘটাচ্ছে।
মার্কিন সরকারের সাথে পূর্ণ সমন্বয় ও প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পরপরই পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএর ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। এই যুদ্ধে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, আইএইএর নীতিমালা মূলত বিশ্বের উপর পশ্চিমা ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আধিপত্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার এবং অন্যান্য দেশকে দুর্বল করা ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করা।
মেহের নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা এবং এর পরিচালনা পর্ষদ ১২ দিনের যুদ্ধের আগে একটি বিবৃতি জারি করে দাবি করেছিল যে তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে বিরত থাকার এবং সংস্থার পরিদর্শকদের জন্য পরিদর্শন প্রক্রিয়া সহজতর করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। এই বিকৃতির কয়েক ঘন্টা পরই, পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী এবং পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি এনপিটিতে স্বাক্ষর না কারী ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ব্যাপক হামলা শুরু করে। অথচ ইরান আইএইএর সদস্য দেশ।
আইএইএর উদ্দেশ্যমূলক ওই বিবৃতি ইসরাইলের আগ্রাসনকে ন্যায্যতা দেওয়ার এবং পারমাণবিক অস্ত্রের উপর তার একচেটিয়া আধিপত্যকে বৈধতা দেওয়ার এবং বিশ্বের সরকারগুলোকে হুমকি দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। ইরানের বেসামরিক নাগরিক এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতি রাফায়েল গ্রোসি কেবলমাত্র উদ্বেগ প্রকাশ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন।
আইরিশ লেখক ডিলান ইভান্স এই বিষয়ে বলেছেন যে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে এখন আর একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচনা করা যায় না, বরং সংস্থাটি পশ্চিমা শক্তির প্রভাবে সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্টভাবে কাজ করছে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত তারা বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন সংস্থাটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে পশ্চিমা, ইসরাইল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বর্ণনা রিপোর্ট আকারে তুলে ধরে। এটা ছিল গত ৫ বছরে ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার পঞ্চম প্রতিবেদন।
আইরিশ লেখক ডিলান ইভান্স ইরান ও ইসরাইলের সাথে আইএইএর দ্বিমুখী আচরণের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন যে, গত দুই দশক ধরে, IAEA ইসরাইলের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে কোনও প্রস্তাব জারি করেনি, অথচ ইসরাইল পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটিতে স্বাক্ষর করেনি, দিমোনার মতো পরমাণু বোমা তৈরির কারখানা আইএইএর তত্ত্বাবধানে নেই এবং এর কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণের কোনো সুযোগও ইসরাইল দিচ্ছে না।
২০১৮ সালে, ইহুদিবাদী ইসরাইল দাবি করেছিল যে তারা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়েছে, যার ফলে পরিদর্শনের পরিধি আরো বেড়েছে এবং ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পর্কে নতুন করে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা এনপিটি চুক্তির সদস্য না হয়েও ইসরাইলের কাছ থেকে আইএইএ তথ্যপ্রমাণ গ্রহণ করেছে, যে রাষ্ট্র নিজেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। এভাবে সংস্থা নিজের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। #
পার্সটুডে/এমআরএইচ/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।