ভেনেজুয়েলায় মার্কিন যুদ্ধ–পরিকল্পনা; মাদুরোর সামনে কী কী কৌশল রয়েছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154520-ভেনেজুয়েলায়_মার্কিন_যুদ্ধ_পরিকল্পনা_মাদুরোর_সামনে_কী_কী_কৌশল_রয়েছে
পার্সটুডে : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য ধাপে ধাপে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে, তখন কারাকাসও এই সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে নিজস্ব বিশেষ কৌশল তৈরি করছে।
(last modified 2025-11-29T13:18:41+00:00 )
নভেম্বর ২৯, ২০২৫ ১৪:৫২ Asia/Dhaka
  • সম্ভাব্য আগ্রাসনের মোকাবিলায় ভেনেজুয়েলা পুরোপুরি প্রস্তুত
    সম্ভাব্য আগ্রাসনের মোকাবিলায় ভেনেজুয়েলা পুরোপুরি প্রস্তুত

পার্সটুডে : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য ধাপে ধাপে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে, তখন কারাকাসও এই সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে নিজস্ব বিশেষ কৌশল তৈরি করছে।

আমেরিকা ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় দুই দেশের সম্পর্ক নিরাপত্তা, সামরিক ও অর্থনৈতিক—এই তিন ক্ষেত্রেই এক নতুন সংঘাতপর্বে প্রবেশ করেছে। ওয়াশিংটন ও কারাকাসের পারস্পরিক হিসাব-নিকাশ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

মেহের নিউজের বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, আমেরিকা নিজ ভূখণ্ডে মাদক পাচার ঠেকানোর অজুহাতে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে আগ্রাসন বিস্তৃত করতে বিভিন্ন ধরনের সামরিক চাপ প্রয়োগে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অন্যদিকে অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলছেন, তার দেশ যেকোনো চাপ ও সম্ভাব্য আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে পুরোপুরি প্রস্তুত।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য তিনটি যুদ্ধ-পরিকল্পনা

১. নিরাপত্তা ও গুপ্তচরবৃত্তি অভিযান:

বার্তা সংস্থা রয়টার্স মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলাকে লক্ষ্য করে আমেরিকার কার্যক্রম এখন নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে, যেখানে নতুন কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। এসবের কেন্দ্রে রয়েছে সিআইএ'র নেতৃত্বে নিরাপত্তা ও গোপন কার্যক্রম। যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য মাদুরো সরকারকে উৎখাত করা।

২. সীমিত সামরিক হামলা

এ পর্যায়ে ভেনেজুয়েলার জাহাজ লক্ষ্য করে হামলার পর দেশের অভ্যন্তরে স্থল অভিযান শুরু হতে পারে। এর সঙ্গে ভেনেজুয়েলার সামরিক ঘাঁটি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিমান হামলাও চালানো হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ সীমিত থাকবে এবং পরবর্তী আকাশ–অভিযানকে সহায়তা করবে—যেখানে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য ও মাঠ পর্যায়ে অপারেশনাল সহায়তা দেবে।

৩. অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি

এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার ওপর নিষেধাজ্ঞা চালিয়ে যাবে এবং তাদের কিছু অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত বলে শ্রেণিবদ্ধ করার চেষ্টা করবে। এর উদ্দেশ্য হলো- দেশের জাতীয় সম্পদকে দুর্বল করে ভেনেজুয়েলার প্রধান অর্থনৈতিক স্তম্ভগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা।

এছাড়া, বিভিন্ন সম্ভাবনার মধ্যে কূটনৈতিক বিকল্পও রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এটি দুই দেশের মধ্যে বিস্তৃত বা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এড়ানোর একটি উপায় হতে পারে।

মার্কিন পরিকল্পনার জবাবে কারাকাসের প্রতিরোধ কৌশল

কারাকাস যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বহুস্তরবিশিষ্ট কৌশল তৈরি করেছে। এর কেন্দ্রে রয়েছে ‘গেরিলা যুদ্ধ’ কৌশল, যেখানে ছোট ছোট সামরিক ইউনিট দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ লড়াইয়ে অংশ নেবে।

ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী ও ন্যাশনাল গার্ডের প্রায় ৬০ হাজার সদস্য দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। প্রেসিডেন্ট মাদুরো আরও বলেছেন, প্রয়োজনে ৮ মিলিয়ন সাধারণ নাগরিককে দেশ রক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

দ্বিতীয়ত, কারাকাস সম্ভাব্য মার্কিন অভিযানের বিরুদ্ধে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও শাসকদলপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। এটি এমন একটি বিস্তৃত কৌশল যা যেকোনো বিদেশি হস্তক্ষেপকে অত্যন্ত জটিল করে তুলবে এবং পুরো যুদ্ধক্ষেত্রের ব্যবস্থাপনা ভেঙে দেবে।

নিরাপত্তা সূত্রের অনুমান অনুযায়ী, এসব অভিযানে ৫ থেকে ৭ হাজার গোয়েন্দা সদস্য ও শাসকদলের সমর্থক সশস্ত্র ব্যক্তিরা অংশ নিতে পারেন। ভেনেজুয়েলার হিসাব স্পষ্ট: আমেরিকা যতই শক্তিশালী হোক, দীর্ঘমেয়াদি গেরিলা যুদ্ধ ও জনগণের অংশগ্রহণের কারণে আগ্রাসনের রাজনৈতিক ও মানবিক খরচ এত বেশি হবে যে, ওয়াশিংটনকে পিছু হটতে বাধ্য করবে।#

পার্সটুডে/এমএআর/২৯