পশ্চিমাবিশ্ব কেন স্বাধীন দেশগুলোর বিরুদ্ধে ‘বৈজ্ঞানিক বর্ণবৈষম্য’ ব্যবহার করে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i155218-পশ্চিমাবিশ্ব_কেন_স্বাধীন_দেশগুলোর_বিরুদ্ধে_বৈজ্ঞানিক_বর্ণবৈষম্য’_ব্যবহার_করে
পার্সটুডে: তেহরানে ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত "উচ্চতর বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যায়বিচার গবেষণা ও প্রযুক্তি" বিষয়ক জাতীয় সম্মেলনে জোর দেওয়া হয়েছে যে, পশ্চিমাবিশ্ব স্বাধীন দেশগুলোর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে বৈজ্ঞানিক বর্ণবৈষম্য প্রয়োগ করছে।
(last modified 2025-12-18T13:39:55+00:00 )
ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫ ১৭:৩৪ Asia/Dhaka
  • বিজ্ঞান, শক্তি ও বৈষম্য: পশ্চিমা নীতির বাস্তব চিত্র
    বিজ্ঞান, শক্তি ও বৈষম্য: পশ্চিমা নীতির বাস্তব চিত্র

পার্সটুডে: তেহরানে ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত "উচ্চতর বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যায়বিচার গবেষণা ও প্রযুক্তি" বিষয়ক জাতীয় সম্মেলনে জোর দেওয়া হয়েছে যে, পশ্চিমাবিশ্ব স্বাধীন দেশগুলোর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে বৈজ্ঞানিক বর্ণবৈষম্য প্রয়োগ করছে।

পার্সটুডের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, বিশ্বে ক্ষমতাধররা দুর্বল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দিক থেকে বর্ণবৈষম্য প্রয়োগ করে এবং এটি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়েছে। বৈজ্ঞানিক বর্ণবৈষম্য বলতে বোঝায়- আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এবং বিজ্ঞানক্ষেত্রে অযৌক্তিক নীতি চাপিয়ে দিয়ে বৈশ্বিক সমাজের একটি অংশকে তাদের মৌলিক অধিকার, অর্থাৎ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান, জ্ঞান ও প্রযুক্তি অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে। এর ফলে মানবসমাজ বৈজ্ঞানিক বৈষম্য ও অবিচারের মুখোমুখি হচ্ছে, যা মূলত বৈজ্ঞানিক বর্ণবৈষম্য।

এই বৈজ্ঞানিক বর্ণবৈষম্য নতুন কিছু নয়। অতীতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলোর ওপরও চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে তারা ইরানি গবেষকদের লেখা প্রবন্ধ প্রকাশ না করে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে চাপানো ১২ দিনের যুদ্ধের পর এই বৈজ্ঞানিক বর্ণবৈষম্য আরও তীব্র হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে বৈজ্ঞানিক বর্ণবৈষম্য আরোপ করা হচ্ছে, যখন ইউনেসকো ১০ নভেম্বরকে 'শান্তি ও উন্নয়নের সেবায় বিজ্ঞান' দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।  ইউনেসকোর মতে, বিজ্ঞান মানুষের মর্যাদা রক্ষা করবে, উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং মানবদুঃখ লাঘবে ভূমিকা রাখবে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, পশ্চিমা বিশ্ব সেই আদর্শ মানছে না। প্রশ্ন হলো- কেন তারা স্বাধীন দেশগুলোর হাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পৌঁছাতে দিতে চায় না?

এর মূল কারণ হলো, বিজ্ঞান আজ শক্তির উৎস। যে দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকে, সে দেশ উন্নত হয়, স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। এমন দেশকে সহজে নিষেধাজ্ঞা বা চাপের মুখে ফেলা যায় না।

আল্লামা তাবাতাবায়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইয়্যেদ জালাল দেহকানি ফিরোজাবাদি বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থা মোটেও ন্যায়সঙ্গত নয়; এটি একটি ক্ষমতাকেন্দ্রিক ব্যবস্থা। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে প্রতিদ্বন্দ্বীরা অন্যদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার দিতে চায় না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সবসময়ই রাষ্ট্রক্ষমতার অন্যতম ভিত্তি।”

পশ্চিমা বিশ্ব বিজ্ঞানকে শুধু জ্ঞান হিসেবে নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য বজায় রাখার হাতিয়ার হিসেবে দেখে। তাই তারা বৈজ্ঞানিক একচেটিয়াত্ব ধরে রাখতে চায়। ইরানের মতো যেসব দেশ স্বাধীন নীতি অনুসরণ করে, তারা এই বৈষম্যের সবচেয়ে বড় শিকার।

পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক বর্ণবৈষম্য স্পষ্টভাবে ন্যায় ও বৈষম্যবিরোধী মূল্যবোধের পরিপন্থী। অথচ পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, বাস্তবে এসব নীতিকে গুরুত্ব দেয় না।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৮