এপ্রিল ২৪, ২০১৭ ২০:২৯ Asia/Dhaka
  • ইরানে খোদায়ী বালু-সেনারা হারিয়ে দেয় আমেরিকাকে

৩৭ বছর আগের কথা। ১৯৮০ সালের ২৪ এপ্রিলের গভীর রাতে ইরানে হামলা করতে আসা ৫ টি মার্কিন সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার অলৌকিক ধূলি-ঝড়ের শিকার হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।

পরের দিন তাবাস মরুতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে সেইসব মার্কিন সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টারের জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষসহ পাইলট, নিহত কমান্ডো সেনা আর ক্রুদের পুড়ে যাওয়া দেহ।

রাতের আঁধারে পরিচালিত এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল তেহরানে বিপ্লবী ছাত্রদের হাতে দখল হওয়া মার্কিন দূতাবাস এবং সেখানে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য অভিযুক্ত ও আটক মার্কিন কূটনীতিকদের উদ্ধার করা। তেহরানস্থ তৎকালীন মার্কিন দূতাবাস ইরানের ইসলামী সরকারসহ এ অঞ্চলের জনগণের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও গুপ্তচরবৃত্তির আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকায় বিপ্লবী ছাত্ররা তা দখল করে নেয় এবং কূটনীতিকের ছদ্মবেশধারী মার্কিন গুপ্তচরদেরকে ৪৪৪ দিন পর্যন্ত আটক করে রাখে। এখানে তারা অস্ত্র ও গুপ্তচরবৃত্তির নানা সামগ্রী এবং নানা ষড়যন্ত্রের দলিল-প্রমাণ উদ্ধার করে। অবশ্য মার্কিন সরকার ও তাদের স্থানীয় অনুচররা কৌশলে বহু দলিল ধ্বংস করে ফেলে। 

এই ঘটনার পর মার্কিন সরকার ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তাবাসে হামলা ব্যর্থ হওয়ায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও তার ডেমোক্রেট দল আমেরিকার নির্বাচনে ভরাডুবির শিকার হয়। 

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) এই ঘটনাকে ইসলামী এই দেশের জন্য আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি অলৌকিক এই ঘটনাকে আবাবিল পাখির মাধ্যমে আবরাহার বিশাল হস্তি-বাহিনী ধ্বংস হওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন যা পবিত্র কুরআনের সুরা আল ফিলে উল্লেখ করেছেন মহান আল্লাহ। আবরাহার বাহিনী পবিত্র কাবা ঘর ধ্বংস করতে এসেছিল। ইমাম খোমেনী (র.) তাবাস মরুর ধূলি বা বালুকে খোদার নিযুক্ত বালু-সেনা বলে উল্লেখ করেন। 

'অপারেশন ইগল ক্ল' নামের মার্কিন ওই অভিযানের উদ্দেশ্য কেবল ইরানি ছাত্রদের হাতে আটক কূটনীতিকের ছদ্মবেশধারী মার্কিন গুপ্তচরদের মুক্ত করাই ছিল না। ইরানের ইসলামী সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো ও  নতুন এক দালাল সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর মহাষড়যন্ত্র বাস্তবায়নেরও কথা ছিল ওই অভিযানের মাধ্যমে। এই বিশেষ অভিযানের জন্য মার্কিন কমান্ডোদের ৬ মাস ধরে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল এবং তারা চালিয়েছিল নানা মহড়া। মার্কিন সামরিক বিমানগুলোতে ছিল সামরিক বেশ কয়েকটি জিপ গাড়ি ও মটর সাইকেল যাতে এসব সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা যায় তেহরানস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে কূটনীতিকের ছদ্মবেশধারী গুপ্তচরদেরকে ঝটিকা হামলার মাধ্যমে উদ্ধার করে দূরে সরিয়ে নেয়ার কাজে।

ইরানের তৎকালীন  মুনাফিক প্রেসিডেন্ট আবুল হাসান বনিসদর মার্কিন সরকারের দালাল বা মীরজাফর হিসেবে এই অভিযানে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। বনিসদর বিধ্বস্ত মার্কিন বিমান ও হেলিকপ্টারগুলোর ওপর বোমা বর্ষণের নির্দেশ দেয়। ফলে সেগুলোতে থাকা আমেরিকার গোপন ষড়যন্ত্রের নানা দলিল-পত্র পুড়ে যায়। বিধ্বস্ত মার্কিন বিমান ও হেলিকপ্টারগুলোর পাহারায় নিয়োজিত একজন বিপ্লবী ইরানি সেনা এতে শহীদ হন। 

প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধানের দাযিত্ব পালন করতে গিয়ে বনিসদর ইরানের ওপর ইরাকের চাপিয়ে-দেয়া যুদ্ধের প্রথম দিকেও নানা আত্মঘাতী ও ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ নেয়। তার প্রকৃত পরিচয় স্পষ্ট হয়ে গেলে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেন মরহুম ইমাম খোমেনী। বনিসদর নারীর ছদ্মবেশ ধরে ফ্রান্সে পালিয়ে যায়।  # 

পার্সটুডে/মু.আ.হুসাইন/২৪

 

ট্যাগ