সংকটপূর্ণ মার্কিন নির্বাচন দেশটির গণতন্ত্রহীনতারই সাক্ষ্য
https://parstoday.ir/bn/news/world-i84441-সংকটপূর্ণ_মার্কিন_নির্বাচন_দেশটির_গণতন্ত্রহীনতারই_সাক্ষ্য
চলতি বছরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ও সংকটপূর্ণ নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।
(last modified 2025-12-13T07:38:09+00:00 )
নভেম্বর ০৬, ২০২০ ১৯:৫১ Asia/Dhaka
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ (ফাইল ফটো)
    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ (ফাইল ফটো)

চলতি বছরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ও সংকটপূর্ণ নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।

এই নির্বাচনে দুই প্রার্থীর পক্ষ থেকেই অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়েছে পরস্পরের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় ভোট গণনায় বিলম্বের  ফলে গত তেসরা নভেম্বরের এই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল এখনও প্রকাশ হয়নি। নির্বাচনী ফলাফলের মতবিরোধ নিয়ে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত চলছে এবং তা বড় ধরনের সশস্ত্র সংঘাত বা গৃহযুদ্ধের রূপও নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।  

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের কাছে পরাজয়ের প্রায় নিশ্চিত আশঙ্কার মুখে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, 'মার্কিন নির্বাচন-ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত ও প্রথম থেকে তা দুর্নীতিগ্রস্ত না হলেও সহজেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, হঠাৎ করে আমার ভোট কম হয়ে পড়ে!' ট্রাম্প এখন তার দেশের গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন, অথচ বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় ট্রাম্প সে সময় এ ধরনের দুর্নীতির কথা বলেননি!

মার্কিন ইলেক্টরাল কলেজের ভোটকেও অনেকে ত্রুটিপূর্ণ ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে থাকেন।

গণতন্ত্রের দাবিদার এই দেশটির নির্বাচনে কেবল দুটি দলই সব সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে। দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমনই যে সেখানে এই দুই দলের বাইরে অন্য কোনো দল আর্থিক অসঙ্গতির কারণেই তাদের পক্ষে জনমত যাচাইয়ের সুযোগ পায় না। বলা হয় যে মার্কিন গণতন্ত্র হচ্ছে মূলত অর্থ ও প্রচারণা-কেন্দ্রীক তথা গভর্নম্যান্ট অফ দ্য মানি ফর দ্য মানি বাই দ্য মানি! জনগণের নয় বরং অর্থের সরকার অর্থের জন্য সরকার ও অর্থের সুতার টানে পরিচালিত সরকার।

বড় বড় পুঁজিবাদী কোম্পানি ও ইহুদিবাদী লবির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দলকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দেশটির সরকারগুলো জনগণের ইচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের বাইরে যুদ্ধ-সংঘাত ও হস্তক্ষেপে লিপ্ত হয়। বেকারত্বসহ অর্থনৈতিক নানা সংকট থাকা সত্ত্বেও মার্কিন জনগণের করের টাকার একটা বড় অংশ সাহায্য হিসেবে পেয়ে আসছে অবৈধ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র  বর্ণবাদী ইসরাইল। ডেমোক্রেট দলের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন বার্নি স্যাণ্ডার্স। কিন্তু ইসরাইল বিরোধী বক্তব্যের কারণে তিনি দলের মনোনয়ন পেতেই ব্যর্থ হন।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বুলি আওড়াতে অভ্যস্ত মার্কিন সরকারগুলো দেশের ভেতরে কৃষ্ণাঙ্গসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু শ্রেণীর অধিকার আদায়কে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে পুলিশের গুলিতে প্রায়ই বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গরা। মজলুম, অবহেলিত ও নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য আর শোষণের শিকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীসহ সংখালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের আধিকার আদায়ের আন্দোলনকেও নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয় দেশটিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেবল এক শতাংশ ধনীরাই দেশটির বেশিরভাগ সম্পদের অধিকারী ও সম্পদ তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দেশটিতে দেখা দিয়েছিল অকুপাই ওয়াল-স্ট্রিট ও '৯৯ শতাংশের অধিকার আদায়ের আন্দেলন' শীর্ষক আন্দোলন। অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে দুই মার্কিন দলই বিপুল অর্থ চাঁদা বা সাহায্য হিসেবে নিয়ে থাকে বলে দেশটিতে জনগণের হাতে থাকা বিপুল অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করার বিল পাশ করানো সম্ভব হয়নি কখনও।  

মার্কিন সরকারগুলো সেদেশের জনগণের ব্যাপক বিরেধিতা উপেক্ষা করে ইরাক ও আফগানিস্তান দখল করেছিল এবং এই দুটি দেশসহ বিশ্বের নানা অঞ্চলে বহু যুদ্ধ বাধিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন বেসামরিক জনগণকে হত্যা করেছে। ইরানের ইসলামী ও নির্বাচিত সরকারের সঙ্গেও মার্কিন সরকারের বর্বর আচরণ আর কঠোরতম নিষেধাজ্ঞায় মার্কিন জনগণের ইচ্ছার কোনো প্রতিফলন নেই। মার্কিন সরকার ১৯৫২ সালেও ইরানের জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী মুসাদ্দেক সরকারকে উৎখাত করেছিল একদল সামরিক কর্মকর্তার সহায়তায়। তাই এটা স্পষ্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও দেশটির নীতি আর রাষ্ট্র-ব্যবস্থাকে মোটেই গণতান্ত্রিক বলা যায় না।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।