মার্চ ০৩, ২০২২ ১৭:৪২ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআনের তাফসির বিষয়ক অনুষ্ঠানের 'কুরআনের আলো'র সূরা ক্বাফ'এর সংক্ষিপ্ত তাফসির সম্পর্কে জানব। মক্কায় অবতীর্ণ এই সূরার মূল বিষয়বস্তু পরকাল সংঘটনের প্রমাণসমূহ, ভালো ও মন্দ মানুষের পরিণাম এবং অতীত জাতিগুলোর কাহিনী থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা। এই সূরার ২৩ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

وَقَالَ قَرِينُهُۥ هَٰذَا مَا لَدَيَّ عَتِيدٌ (23) أَلۡقِيَا فِي جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيدٖ (24) مَّنَّاعٖ لِّلۡخَيۡرِ مُعۡتَدٖ مُّرِيبٍ (25) ٱلَّذِي جَعَلَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ فَأَلۡقِيَاهُ فِي ٱلۡعَذَابِ ٱلشَّدِيدِ (26)

“আর তার সঙ্গী [ফেরেশতা] বলবে, এই তো আমার কাছে [তার আমলনামা]  প্রস্তুত।” (৫০:২৩)

“[ওই দুই ফেরেশতাকে] আদেশ করা হবে, তোমরা উভয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর প্রত্যেক উদ্ধত কাফিরকে।” (৫০:২৪)

“[যে কিনা] কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধা দানকারী ও সীমা লঙ্ঘনকারী এবং সন্দেহ পোষণকারী।” (৫০:২৫)

“যে আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহ গ্রহণ করেছিল, তোমরা তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।” (৫০:২৬)

আগের আসরে আমরা দু’জন ফেরেশতার কথা বলেছি যারা সব সময় প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে থাকে। পার্থিব জীবনে ওই ব্যক্তির ভালো ও মন্দ কাজগুলোর হিসাব রাখা এবং কিয়ামতের দিন তাকে জান্নাত অথবা জাহান্নামে নিক্ষেপ করা তাদের দায়িত্ব।  এরপর আজকের আয়াতে বলা হচ্ছে: ফেরেশতারা মানুষের যে আমলনামা তৈরি করেছে তা নিয়েই কিয়ামতের দিন তাদেরকে আল্লাহর আদালতে হাজির হতে হবে।

সেদিন আল্লাহ তায়ালা ওই আমলনামার ভিত্তিতে উদ্ধত কাফিরদেরকে পূণ্যবান ব্যক্তিদের কাছ থেকে আলাদা করবেন এবং তাদের শাস্তি দেবেন। কারণ, তারা হঠকারিতা ও গোয়ার্তুমির কারণে আল্লাহকে অস্বীকার করেছে এবং অন্যের প্রতিটি ভালো কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের মানুষ আল্লাহ তায়ালার সীমারেখা লঙ্ঘন করে এবং অন্য মানুষকেও আল্লাহর পথ গ্রহণের ক্ষেত্রে সন্দেহপ্রবণ করে তোলে। তারা অন্য মানুষের সামনে আল্লাহর পাশাপাশি আরো অনেক ইলাহ’র নাম তুলে ধরে এবং অন্যান্য শক্তির মাহাত্ম্য তুলে ধরে মানুষকে সেসব মেনে নিতে উদ্বুদ্ধ করে।

এই চার আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

১- যদি কেউ অজ্ঞতার কারণে কুফরি করে তাহলে তার ঈমানের পথে ফিরে আসার আশা থাকে। কিন্তু কেউ যদি জেনেবুঝে নিছক বিদ্বেষ ও অহংকারের কারণে কুফরি করে তাহলে তার ফিরে আসার কোনো আশা থাকে না বরং তার কুফরির মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে।

২- মুমিন ব্যক্তিরা নিজেরা যেমন সৎ কাজ করেন তেমনি অন্যকেও সৎকাজে উৎসাহিত করেন। কিন্তু সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরা অন্যকে সৎকাজ করতে বাধা প্রদান করে।

৩- জাহান্নামের আজাবের মাত্রা রয়েছে এবং কুফর, শিরক ও গোনাহের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ওই মাত্রা নির্ধারিত হয়।

সূরা ক্বাফ 'এর  ২৭ থেকে ৩০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

۞قَالَ قَرِينُهُۥ رَبَّنَا مَآ أَطۡغَيۡتُهُۥ وَلَٰكِن كَانَ فِي ضَلَٰلِۢ بَعِيدٖ (27) قَالَ لَا تَخۡتَصِمُواْ لَدَيَّ وَقَدۡ قَدَّمۡتُ إِلَيۡكُم بِٱلۡوَعِيدِ (28) مَا يُبَدَّلُ ٱلۡقَوۡلُ لَدَيَّ وَمَآ أَنَا۠ بِظَلَّٰمٖ لِّلۡعَبِيدِ (29) يَوۡمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ ٱمۡتَلَأۡتِ وَتَقُولُ هَلۡ مِن مَّزِيدٖ (30)

“তার সহচর (শয়তান) বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে অবাধ্য হতে প্ররোচিত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল ঘোর বিভ্রান্ত।” (৫০:২৭)

“[আল্লাহ বলবেন:] ‘আমার সামনে [তর্কাতর্কি ও] বাক্-বিতন্ডা করো না; তোমাদেরকে তো আমি পূর্বেই শাস্তির প্রতিশ্রুতি প্রেরণ করেছি।” (৫০:২৮)

“[কাফেরদের জাহান্নামে নিক্ষেপ সংক্রান্ত] আমার নির্দেশের রদ-বদল হয় না এবং আমি আমার বান্দাদের প্রতি কোন অবিচার করি না।” (৫০:২৯)

“সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব, তুমি কি পূর্ণ হয়েছ? [তখন] জাহান্নাম বলবে, আরো বেশী আছে কি?” (৫০:৩০)

যেসব সহচর মানুষকে জাহান্নামি করে তোলে এই চার আয়াতে তাদের কথা বলা হয়েছে। খারাপ বন্ধু, কাফির সর্দার ও তাদের সবার শীর্ষে শয়তান মানুষের এই খারাপ পরিণতির জন্য দায়ী। এসব মানুষ কিয়ামতের দিন যখন নিজেদের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি প্রত্যক্ষ করবে তখন নিজেদের পাশাপাশি তাদের নেতৃবৃন্দ ও শয়তানের সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হবে। তারা নিজেদের অপরাধের দায়ভার অপরের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করবে। অপরাধীরা বলবে, যদি তোমরা আমাদেরকে প্ররোচনা না দিতে তাহলে আজ আমরা ঈমানদার থাকতাম। তোমাদের অনুসরণ না করলে আজ আমাদের এই শোচনীয় পরিণতি হতো না। কিন্তু সেদিনের এই বচসা তাদের কোনো কাজে আসবে না।

সেদিন শয়তান আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলবে, হে আল্লাহ! আমি কাউকে কুফরি করতে বা হারাম কাজে লিপ্ত করতে বাধ্য করিনি বরং তারা নিজেরাই তাদের সৃষ্টির আসল উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে কঠিনভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল।  যদিও জাহান্নামীরা দাবি করবে, শয়তানের প্ররোচনায়ই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

ঠিক এখানেই আল্লাহ তায়ালা তাদের উভয়কে চুপ করিয়ে দিয়ে বলবেন: এখন এসব তর্কাতর্কির সময় নয়। প্রত্যেকের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং প্রত্যেকে তার অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি পাবে। কাউকে কম বা বেশি শাস্তি দেয়া হবে না।

জাহান্নামে জায়গার কোনো অভাব নেই। কেউ যেন একথা না ভাবে যে, বড় বড় দাগী অপরাধীদের দ্বারাইতো জাহান্নাম পূর্ণ হয়ে যাবে; তখন আমাদের রাখার আর স্থান থাকবে না। বাস্তবতা হচ্ছে জাহান্নাম সেদিন নিজেই কথা বলে উঠবে। জাহান্নাম আল্লাহকে বলবে: আরো বেশি কেউ আছে কি?!

এই চার আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

১- আমরা আমাদের বাবা, মা, ভাই বা বোনকে পছন্দমতো বাছাই করে নিতে পারি না। কিন্তু বন্ধু ও সহচরদের আমরা নিজেরাই বাছাই করে নেই। আর এই বন্ধু ও সহচররা আমাদের পরকালীন পরিণতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২- কিয়ামতের দিন কেউ নিজের অপরাধের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারবে না। শুধু বন্ধু বা সহচর নয় শয়তান পর্যন্ত সেদিন জাহান্নামীদের কৃতকর্মের দায় বহন করতে অস্বীকার করবে।

৩- আল্লাহ যেমন মানুষের কাছে হেদায়েতের বাণী পৌঁছে দিতে কার্পণ্য করেননি তেমনি গোনাহগার ও জালিমদের শাস্তি দিতেও কুণ্ঠিত হবেন না। কারণ, তাদেরকে শাস্তির ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার অর্থ হবে নেক বান্দাদের পাশাপাশি জালিমদের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি অবিচার করা।

৪- জাহান্নামীরা তাদের নিজেদের কৃতকর্মের জন্য জাহান্নামের নিক্ষিপ্ত হবে; আল্লাহ তাদের ওপর বিন্দুমাত্র জুলুম করবেন না। আল্লাহ কখনও কারো প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করেন না।#

পার্সটুডে/এমএমআই/আবুসাঈদ/ ০৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ