মে ০৫, ২০২২ ২১:০২ Asia/Dhaka

আজ আমরা এই প্রদেশ ছেড়ে যাবো নতুন একটি প্রদেশ গুলেস্তানে। পুরাতাত্ত্বিকদের দৃষ্টিতে এই প্রদেশটি ইরানের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ একটি প্রদেশ। কারণ এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ব্যতিক্রমধর্মী বহু নিদর্শন।

আর্কিওলজিস্টরা গুলিস্তানকে ইরানের সবচে সমৃদ্ধতম অঞ্চল বলে মনে করে। কেননা এখানে রয়েছে তুরঙ্গ টিলা, ইসলাম টিলা, প্রাচীন গুরগান শহর , এস্কান্দার বাঁধ অথবা গুরগান প্রাচীর , কাবুস গম্বুজসহ খ্রিস্টপূর্ব তিনহাজার বছর থেকে ইসলামী যুগ পর্যন্ত সময়কালের বিচিত্র সব নিদর্শন । এইসব নিদর্শন এ অঞ্চলের সভ্যতা ও সংস্কৃতিসহ সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে। 

ইরানের প্রাদেশিক বিভাজনের সাথে যাঁরা পরিচিত তাঁরা হয়তো গুলিস্তানকে স্বতন্ত্র একটি প্রদেশ বলে না-ও জানতে পারেন। ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ মাযান্দারনের পূর্বাংশে এই প্রদেশটি অবস্থিত। ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর আঞ্চলিক বিশেষত্বের কারণে দেশের সর্বশেষ ভৌগোলিক বিভাজনকালে গুলিস্তানকে সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গুলেস্তান প্রদেশের আয়তন প্রায় বাইশ হাজার বর্গ কিলোমিটার। মিনুদাশ্ত, আলীয়াবাদ, গোম্বাদ, গুরগান, বন্দর তুর্কেমেন এবং কোর্দকুয়ী শহরের জনসংখ্যাসহ সমগ্র গুলেস্তান প্রদেশের জনসংখ্যার পরিমাণ পণেরো লক্ষ। গুলেস্তান প্রদেশের উত্তরে রয়েছে তুর্কেমেন প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণে সেমনন, পূর্বে খোরাসান এবং পশ্চিমে রয়েছে মযান্দারান প্রদেশ আর কাস্পিয়ান সাগর। ভাষা এবং গোত্রগত দিক থেকে এই প্রদেশটির লোকজন প্রধান দুটি পরিচয়ে পরিচিত। একটি গ্রুপ ফার্স নামে পরিচিত, অপর গ্রুপটি তুর্কেমেনী নামে পরিচিত। ফার্সরা কেন্দ্রীয় এবং দক্ষিণাঞ্চলে বসবাস করে।

ফার্সদের মধ্যে স্থানীয় এবং অভিবাসী দুই ধরনের অধিবাসী রয়েছে। ফার্সরা গুরগানী, কাতুলী, ফান্দুরুসকি এবং মযান্দারা'নী ভাষায় কথা বলে। আর অপর গ্রুপটি হলো তুর্কেমেনী । এরা উত্তরাঞ্চলে গুরগান সমতলভূমিতে বসবাস করে । তুর্কেমেনী ছাড়া ফার্সি ভাষার সাথেও এদের পরিচয় রয়েছে। গুলেস্তানের আবহাওয়া সামগ্রিকভাবে বলা যায় আর্দ্র। তবে যতো পূর্বদিকে যাওয়া যাবে বাতাসের আর্দ্রতা ততোই কমতে থাকবে। গীলান এবং মযান্দারা'নের মতো সবুজ প্রকৃতিময় প্রদেশগুলোর আবহাওয়ার আর্দ্রতার তুলনায় গুলেস্তান প্রদেশের আবহাওয়ায় আর্দ্রতা কম । এ অঞ্চলের আবহাওয়ায় আর্দ্রতার মূল উৎসর্গ হলো মযান্দারা'ন তথা কাস্পিয়ান সমুদ্র এবং ভূমধ্যসাগর।

শীতকালে গুলেস্তানের আবহাওয়া থাকে ব্যাপক ঠাণ্ডা এবং বরফপূর্ণ , তবে গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া উষ্ণ এবং আর্দ্র থাকে। সর্বোপরি এ অঞ্চলের আবহাওয়াকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় , যেমন নাতিশীতোষ্ণ , পার্বত্য এবং প্রায় শুষ্ক। আবহাওয়াগত এই তারতম্যের কারণে এখানে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যও ব্যাপক। যেমন এখানে আছে প্রচুর বন্তজঙ্গল , রয়েছে চারণভূমি এবং প্রচুর কৃষিক্ষেত। গুলেস্তান প্রদেশে এখন সাড়ে ছয় লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে ৭২ প্রকার কৃষিপণ্য উত্পন্ন হয় যা বৈচিত্র্যের বিচারে সমগ্র ইরানে বিরল। ইরানের পঞ্চাশ শতাংশ তুলা এবং বিয়াল্লিশ শতাংশ তেলবীজ অর্থাৎ তেল উৎপাদনের জন্য দানাদার শস্যাদি এখানে উৎপন্ন হয়। এছাড়া তামাক উৎপাদনের দিক থেকে গুলেস্তান প্রদেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এসবের বাইরেও গুলেস্তান প্রদেশে আলু, চাউল, যব, গমজাতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয় ।                                                     

গুলেস্তান প্রদেশের পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো এখানকার অসংখ্য নদ-নদী। এখানে ত্রিশটি নদী আছে। দুটি মূল নদী। একটির নাম গুরগান এবং অপরটির নাম আতরাক। বাকী আটাশটি হলো শাখা নদী। এগুলোর বাইরে গুরগান বাঁধটিও পানির আরেকটি উৎসন্ন। আতরাক নদীটির উৎস হলো খোরাসানের হাজার মসজিদ পর্বতমালা। এই নদীটির দৈর্ঘ্য হলো ৫০০ কিলোমিটার। আতরাক নদীটি এ অঞ্চলের সর্ব উত্তরে অবস্থিত নদী। এই নদীর ওপরে অসংখ্য বাঁধ দিয়ে কৃষিকাজে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আতরাক নদীর পানি শেষ পর্যন্ত কাস্পিয়ান সাগরের অথৈ জলে গিয়ে মেশে। গুরগান নদীটিও বেশ দীর্ঘ। খোরাসান প্রদেশের পর্বতগুলোই এই নদীর উৎসব। এই নদীটিও গুলেস্তান প্রদেশের কোনো কোনো অঞ্চল পেরিয়ে কাস্পিয়ানে গিয়ে মিলেছে।

গুরগান নদীর কথা বলছিলাম। কৃষিকাজের পানির প্রয়োজনে এই নদীর উপরেও বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এই নদীর উপর দেওয়া মাটির বাঁধটি বেশ বিখ্যাত। বাঁধটির নাম হলো 'ভাশ্মগীর'। সবুজ-শ্যামল বিচিত্র চারণভূমি, অসংখ্য বন্তজঙ্গল এবং সমৃদ্ধশালী প্রদেশ গুলিস্তানের রয়েছে ছয় হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস। পুরাতত্ত্ববিদগণ এখানকার মহামূল্যবান নিদর্শনগুলোকে আর্য সভ্যতারও আগের বলে উল্লেখ করেছেন। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে এখানে যে নিদর্শনগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলোর সাথে দজলা-ফোরাত বা টাইগ্রিস ইউফ্রেতিসের তীরে বসবাসকারী এইলামি এবং সুমেরীয় সভ্যতার নিদর্শনের সাথে মিল রয়েছে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ