জুলাই ০৬, ২০২২ ১৭:৩২ Asia/Dhaka

তুর্কামান বন্দরের বিনোদনমূলক জেটি এবং এখানকার উপকূল সংলগ্ন বাজার সমগ্র গোলেস্তান প্রদেশের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে স্বীকৃত। খুব কম পর্যটককেই পাওয়া যাবে যে কিনা এই প্রদেশে বেড়াতে গিয়ে প্রশান্ত, সুন্দর এই তুর্কামান বন্দরে যান নি কিংবা এখানকার উপকূলীয় বাজারে কেনাকাটা করেন নি।

বেশ জাঁকজমকপূর্ণ এই বাজারটিতে রয়েছে অসংখ্য স্টল। তুর্কামানের বিচিত্র হস্তশিল্প সামগ্রীতে পরিপূর্ণ স্টলগুলো। পর্যটকদের কাছে এইসব শিল্প সামগ্রী খুবই প্রিয়। অবশ্য 'সোমবারের হাট'ও এখানকার গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত আরেকটি বাজার। এই বাজারটিকেও তুর্কামান বন্দর শহরের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণীয় স্পট বলে মনে করা হয়। শহরের প্রবেশমুখে জমে এই বাজার। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তুর্কামানের শ্রমজীবি মানুষেরা তাদের পরিশ্রমের ফসল বিভিন্ন শিল্পকর্ম এই বাজারে নিয়ে আসে বিক্রি ও প্রদর্শনীর উদ্দেশে। খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে তারা তাদের পণ্যগুলো রসিক ক্রেতাদের হাতে তুলে দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। যাই হোক তুর্কামান বন্দর বাজার নিয়ে আমরা আরও কথা বলার চেষ্টা করবো আজকের আসরে।

স্থানীয় এই সুন্দর বাজারে গেলে এ অঞ্চলের জনমানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিতির বাইরেও এখানকার বিভিন্ন খাবার সামগ্রী আস্বাদনের সুযোগ তৈরি হয়। তুর্কামানি পোশাক-আশাক এবং এখানকার হস্তশিল্প পণ্যও কেনাকাটা করা যায় নিশ্চিন্তে। বলা বাহুল্য বন্দর তুর্কামানের ঘরে তৈরি খাবার-দাবার অসম্ভব মজার। এখানকার বিচিত্র মিষ্টির পাশাপাশি অনন্য সাধারণ পানীয়গুলোও অসাধারণ। চমৎকার উপায়ে তৈরি এসব বিশেষ পানীয় দিয়ে বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়ন করার মাধ্যমে তাদের অতিথি পরায়নতার সৌকর্য দেখানো হয়। তুর্কামানের বেশিরভাগ খাবারই তৈরি করা হয় সেখানকার সুস্বাদু দুম্বার মাংসের সঙ্গে বিচিত্র সব্জি সহযোগে। সবচেয়ে নামকরা যে খাবারটি তুর্কামানের বিশেষ খাবার বলে বিবেচিত হয় তার নাম হলো 'চেকদার্‌মে'। বড় বড় গোশতের টুকরোর সঙ্গে পেঁয়াজ, টমেটো এবং বিভিন্ন সবজি মিশিয়ে চাউল দিয়ে পাকানো হয় চেকদার্‌মে। তুর্কামানের মহিলারা বিভিন্ন রকমের বিশেষ সুস্বাদু রুটি বানাতেও বেশ পারদর্শী।

বন্দর নগরী তুর্কামানের অন্যতম আকর্ষণ হলো অশুরদেহ দ্বীপ। ইতোপূর্বেও আমরা এই দ্বীপের কথা উল্লেখ করেছিলাম। কাস্পিয়ান সাগরের একমাত্র দ্বীপ যে দ্বীপে বেড়াতে যাবার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকগণ তুর্কামান বন্দরে ঘুরতে যান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য নিদর্শন এই অশুরদেহ দ্বীপে বসবাস করে বহু পশ-পাখি। পরিযায়ী পাখিদেরও ভীড় লক্ষ্য করা যায় এই দ্বীপে। দূর থেকে তাদের দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে, মন জুড়িয়ে যায়। প্রাকৃতিক এইসব বিচিত্র সৌন্দর্যের জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ প্রকৃতিপ্রেমিদের ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে এই দ্বীপ। তাছাড়া এই দ্বীপের আবহাওয়াও খুবই উপভোগ্য। বর্তমানে এই দ্বীপটিতে মাছ শিকারের জন্যে চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে। দূর থেকে দ্বীপটিকে দেখতে সবুজ বাগানের মতো মনে হয়।

অশুরদেহ দ্বীপ, একটি পর্যটন গন্তব্য ছাড়াও অর্থনৈতিক দিক থেকে তুর্কামান বন্দরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। কারণ ইরানের উচ্চমানের ক্যাভিয়ারের শতকরা চল্লিশ ভাগই এই অঞ্চল থেকে পাওয়া যায়। অশুরদেহ'র ক্যাভিয়ার বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত এবং উচ্চ মানের ক্যাভিয়ার। তুর্কামান বন্দর থেকে স্থানীয় নৌ-যানে মাত্র দশ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। ওই দ্বীপে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো এইসব নৌকা। দ্বীপটি কয়েক দশক আগেও একটি ছোট শহরের মতো ছিল। এখন এই সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ দ্বীপে শুধু জেলে আর মৎস্যজীবীরাই বসবাস করে। অশুরদেহ দ্বীপটি এখন ট্যুরিস্ট বা ভ্রমণ পিপাসুদের জন্যে দর্শনীয় একটি স্পটে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে প্রমোদতরী এবং অসংখ্য নৌযানের ব্যবস্থা। যার ফলে ভ্রমণকারীরা উপকূলে, কাস্পিয়ানের পূর্বাংশে এবং এখানকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে জলের ওপর দিয়ে বেড়াতে যেতে পারে আর উপভোগ করতে পারে জলভ্রমণের চমৎকার অভিজ্ঞতা।

তুর্কামান বন্দর থেকে চব্বিশ কিলোমিটার উত্তরে গেলেই 'গোমিশান জলাভূমি' নামে চমৎকার আরেকটি স্পট রয়েছে। গোমিশান আন্তর্জাতিক এই জলাভূমির আয়তন প্রায় এক লাখ সাতাত্তর হাজার হেক্টর। ইরান এবং তুর্কমেনিস্তানের সীমান্তে অনন্য একটি এলাকা এটি। এলাকাটি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর নিরাপদ আবাসনের জন্য বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর এই জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোণা লক্ষ্য করা যায়। শীতকালে রাশিয়ার কিছু এলাকার আবহাওয়া শীতল হওয়ার সাথে সাথে পাখিগুলো এই জলাভূমিসহ গোলেস্তান প্রদেশের অন্যান্য জলাভূমিতে চলে আসে। এই আন্তর্জাতিক জলাভূমিতে চল্লিশটিরও বেশি প্রজাতির প্রাণী বাস করে। পাখিদের মধ্যে ফ্ল্যামিঙ্গো এবং রাজহাঁস অন্যতম। এই জলাভূমির একটি বিশাল এলাকা নো-হান্টিং এলাকা এবং পরিবেশ সংস্থার নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে। সুতরাং এই জলাভূমি পরিদর্শন করতে অবশ্যই আপনাকে পরিবেশ সংস্থার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।

আজকের আসরের সমাপ্তি টানার আগে একটি তথ্য দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি। সেটা হলো: ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে বিগত কয়েক শতাব্দীতে পারস্য উপসাগরের পানির স্তরের ওঠানামা এবং সমুদ্রে তলানী জমার কারণে ঐ অঞ্চলের আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এছাড়া কাস্পিয়ান উপসাগরমুখী নদীগুলোতে অসংখ্য বাঁধ দেওয়ার কারণেও উপকূলীয় সমতল ভূমি অঞ্চলে এই পরিবর্তন দেখা দেয়।

বন্দর তুর্কামান অঞ্চলের উত্তরাংশের আবহাওয়া কিছুটা মরু অঞ্চলের মতো। তবে দক্ষিণাংশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। আর এ কারণেই বন্দর তুর্কামান শহরের দক্ষিণাঞ্চলে জনবসতি তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি হয়ে উঠেছে শহরের প্রাণকেন্দ্র।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ