আগস্ট ১৭, ২০২২ ১৮:৩৩ Asia/Dhaka

পরিবার একটি যৌথ বিষয়। এটি কেবল স্বামীর বা স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। যেসব স্বামী-স্ত্রী তাদের কথায় আমরা শব্দটি বেশি ব্যবহার করেন দেখা গেছে তারা জীবনকে উন্নত করার ক্ষেত্রে ও নানা সমস্যা সমাধানে অন্যদের তুলনায় বেশি সফল।

এর কারণ জীবনের ব্যাপারে তারা বেশি ইতিবাচক ও আশাবাদী মনোভাব পোষণ করেন। তারা নিজেকে স্বামী বা স্ত্রী থেকে পৃথক ভাবেন না। এই শ্রেণীর মানুষ জীবনকে নিয়ে সন্তুষ্ট ও তারা বেশ কম মানসিক চাপে ভুগেন এবং নানা মতভেদ ও দ্বন্দ্ব সমাধানে খুব দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছেন।

বয়স্ক দম্পতির ক্ষেত্রেও দেখা যায় যারা কথা-বার্তায় আমরা শব্দটি বেশি ব্যবহার করেন তারা বেশি আত্মবিশ্বাসী ও বেশি নিরাপদ বোধ করেন আমি বা তুমি শব্দ ব্যবহারকারী দম্পতিদের তুলনায়! যারা আমি বা তুমি শব্দ বেশি ব্যবহার করেন তারা স্বামী বা স্ত্রী থেকে নিজেদের পৃথক ভাবেন ও জীবনকে নিয়ে কম সুখী। এই শ্রেণীর মানুষ সমস্যা ও সংকটের মোকাবেলায় নিজেদের একাকী ভাবেন। ফলে তাদের সিদ্ধান্তগুলো হয় অপেক্ষাকৃত বেশি একতরফা সিদ্ধান্ত এবং তারা খুব কমই সমঝোতায় ও অনেক দেরিতে সমঝোতায় পৌঁছেন।

পরিবারগুলো আন্তরিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও আল্লাহর পরিচিতি অর্জনের অন্যতম কেন্দ্র। স্বামী ও স্ত্রীর উচিত এ ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করা। মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একজন মুমিন নারী ও পুরুষ যখন পরস্পরকে বিয়ে করেন তখন তাদের উদ্দেশ্য কেবল বস্তুগত কল্যাণ অর্জন নয়। নিজের ও সন্তানের জন্য উচ্চতর আত্মিক প্রশান্তি অর্জনও তাদের দায়িত্ব।

এবারে যথারীতি ইরানি পরিবার-ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু কথা বলব। ইরানে পরিবার ব্যবস্থায় কয়েক প্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে সংহতি ও যোগাযোগ এখনও গঠনমূলক ও উল্লেখযোগ্য। এমনকি ইন্টারনেটের মত আধুনিক প্রযুক্তি আসার পরও তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা তেমন একটা দেখা যায় না।  ইরানি পরিবারগুলোতে নারীর কাছে ব্যক্তিগত মূল্যবোধগুলোর চেয়ে পারিবারিক মূল্যবোধগুলোই বেশি গুরুত্ব পায়। স্বামী ও সন্তানের দেখাশুনা বা যত্ন নেয়া এখনও তাদের কাছে সবচেয়ে বড় নৈতিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃত।  তাদের মধ্যে সন্তান ও স্বামীর জন্য আত্মত্যাগের প্রবণতা দেখা যায়। নিজের অনুভূতি ও সখ-আহ্লাদকে গুরুত্ব না দিয়ে তারা সন্তানদের সখ-আহ্লাদকে বেশি গুরুত্ব দেন। ছুটির দিন বা বিশ্রামের দিনগুলোতে ইরানি নারীরা পরিবার ও স্বামী-সন্তানের জন্য নিবেদিত থাকেন। অন্য কথায় তারা সংসার ও সন্তানকে মাতৃসেবা দিতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন এইসব দিনে।  পারস্পরিক সহযোগিতার কারণে ইরানি পরিবারগুলোতে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব দেখা যায় না সাধারণত।

ইরানি পরিবারগুলোতে আধ্যাত্মিক নানা বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সহযোগিতা করে থাকেন ব্যাপক মাত্রায়। ইমান ও খোদাভীতি জোরদারে পারস্পরিক উৎসাহ প্রদান, ইবাদতে শরিক হওয়া ও জীবনকে অর্থপূর্ণ করার ক্ষেত্রে সহযোগী হওয়ার মত বিষয়গুলোতে এসব সহযোগিতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবারে আধ্যাত্মিক ও একত্ববাদী পরিবেশ সৃষ্টি করা পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের দায়িত্ব যাতে পরিবারের সদস্যদেরকে বিচ্যুতি ও সর্বনাশ থেকে রক্ষা করা যায়। এ ধরনের এক আদর্শ ইরানি দম্পতির দৃষ্টান্ত হল শহীদ মুহাম্মাদ ইব্রাহিম হিম্মাতের পরিবার। তিনি ছিলেন জিহাদের ময়দানের এক অকুতোভয় ও দক্ষ যোদ্ধা । ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে কম সময় দিতে পারতেন। কিন্তু যখন বাহির থেকে তিনি ঘরে আসতেন সেখানেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত ব্যতিক্রমী। শিশুর লালন-পালন এবং কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে ঘরের তেমন কোনো কাজই স্ত্রীকে করতে দিতেন না।  স্ত্রীও তার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করতেন। এ সময় শহীদ হিম্মাত বলতেন: আমার ওপর তোমার অধিকার এসবের চেয়েও অনেক বেশি। তিনি একবার স্ত্রীকে বলেছিলেন: আমি যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই নিজেই শেষ হয়ে যাব নইলে তোমাকে দেখিয়ে দিতাম যে কিভাবে ব্যস্ত এইসব দিনের ক্ষতিপূরণ করতে হয়।

শহীদ হিম্মাত মনে করতেন জীবনের সব কাজ ও সব কিছুই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হওয়া উচিত। বিয়ের আগে প্রস্তাবিত হবু স্ত্রীকেও তিনি এ নীতির কথা জানিয়ে বলেন, যদি সুনিশ্চিত হও যে আমাকে বিয়ে করা যায় কেবল তাহলেই আমরা এ বিষয়ে কথা বলব। - শহীদ হিম্মাতের এমন নীতির কারণে তিনি স্ত্রীসহ সবারই শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। 

তিনি স্ত্রীকে বাজার করতে দিতে চাইতেন না! স্ত্রী এত মনখুন্ন হলে বলতেন: ভেবো না যে তোমায় বিয়ে করে তোমাকে বন্দি বা দাসী বানিয়ে ফেলেছি! যেখানেই ইচ্ছে হয় যেতে পার, মানুষের মাঝে না গেলেই বরং আমি সন্তুষ্ট হব না, তবে আমি চাই না যে তুমি ভারি কিছু কিনে ক্লান্ত হও। ভারি জিনিসগুলো কেনার দায়িত্ব আমার ওপর ছেড়ে দাও। ঘরে খাবারের দস্তরখান বিছাতে গেলে শহীদ হিম্মাত স্ত্রীকে বাধা দিয়ে বলতেন, আমি যখন ঘরে আসি তখন তুমি বিশ্রাম নিবে! আমি তোমাকে স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামের মধ্যে দেখতে পছন্দ করি।

স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক ভালবাসার বন্ধন সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন: 'ইসলামী পরিবেশে স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের সহযোগী ও পরস্পরের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। ইসলামী পরিবেশে পরিবার এমনই শক্তিশালী থাকে যে কখনও দেখা যায় যে দুই তিন প্রজন্ম দাদাদাদি ও বাবা-মায়ের সঙ্গে একত্রে বসবাস করছে এবং এতকাল একসঙ্গে থাকা সত্ত্বেও পরের প্রজন্মগুলো মুরব্বিদের প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষণ কম বোধ করেন না ও মুরব্বিরাও পরের প্রজন্মের প্রতি এতটুকুও অসহিষ্ণু বা অসুবিধা বোধ করেন না। এখানে সবাই সবার সাহায্যে এগিয়ে আসে। ধার্মিক লোকদের পরিবেশ এমনই হয় ও খোদামুখিতাকে এভাবেই মেনে চলা হয়।'

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ও বিশেষ করে স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক সুসম্পর্ক জোরদারের অন্যতম এক পন্থা হল পরস্পরকে খুব সুন্দর ও শ্রদ্ধাপূর্ণ নামে ডাকা ও সুন্দর গুণবাচক সম্বোধনের মাধ্যমে কথা বলা বা পত্র লেখা।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ