আগস্ট ২৭, ২০২২ ১৭:১৮ Asia/Dhaka
  • ব্রিটেনের অমুসলিম গবেষক মিসেস কার্ন আর্মস্ট্রং
    ব্রিটেনের অমুসলিম গবেষক মিসেস কার্ন আর্মস্ট্রং

সালমান রুশদি একজন ইসলাম বিদ্বেষী কুখ্যাত ব্রিটিশ লেখকের নাম। ১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বরে তার বিতর্কিত স্যাটানিক ভার্সেস অর্থাৎ 'শয়তানের পদাবলী' বইটি বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল। সম্প্রতি রুশদির ওপর হামলার ঘটনা আবারো সবাইকে মুসলিম বিদ্বেষী এ লেখকের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

এ সংক্রান্ত আলোচনার গত পর্বে আমরা ব্রিটেনের এক অমুসলিম গবেষক মিসেস কার্ন আর্মস্ট্রং এর লেখা 'মুহাম্মদ' বইটির কথা উল্লেখ করেছিলাম। এ বইয়ে তিনি মানবজাতির ইতিহাসে বিশ্বনবীর ব্যক্তিত্বের ব্যাপক প্রভাবের কথা স্বীকার করেছেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলা এবং এর পরপরই ইসলাম ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)'র বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার শুরুর আগে মিসেস কার্ন আর্মস্ট্রং তার এ বইটি লিখেছিলেন। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণের নতুন ভূমিকায় লেখিকা বলেছেন, 'নিউইয়র্কে ওই সন্ত্রাসী হামলার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই'। তিনি এও বলেছেন, 'ইসলাম শব্দের অর্থই হচ্ছে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ এবং ইসলামের মূল শিক্ষা হচ্ছে অপরের জন্য শান্তি কামনা করা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর ব্যক্তিগত জীবনচরিত্রেও ওই নীতিরই প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। কারণ মহানবী এমন এক যুগে বার্তাবাহকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন যখন আরব সমাজ দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিশোধ পরায়ণতা ও অজ্ঞতায় নিমজ্জিত ছিল। কিন্তু মহানবী ওই সমাজ থেকে এসব অজ্ঞতা ও সামাজিক অনাচার সমূলে উৎখাত করেছিলেন।

ব্রিটেনের এই অমুসলিম লেখিকা মিসেস কার্ন আর্মস্ট্রং তার 'মুহাম্মদ' বইটিতে আরো বলেছেন, 'বিশ্বনবী তার সমগ্র জীবনে এটা দেখিয়ে দিয়েছে যে, সব কিছুর আগে আমাদেরকে অবশ্যই স্বার্থপরতা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ পরিহার এবং অন্যের মতামতকে উপেক্ষা করার নীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। তবেই আমরা পারস্পরিক সহাবস্থানের জন্য একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল বিশ্ব তৈরি করতে পারব যেখানে কোনো ধরনের জুলুম, অন্যায় ও বৈষম্য থাকবে না।

যাইহোক, ইসলামের সৌন্দর্য ও মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চরিত্র হরণের জন্য শত্রুরা সবসময়ই চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। ইসলামের যৌক্তিক অবস্থানের কাছে হেরে গিয়ে পাশ্চাত্যের ইসলাম বিদ্বেষী প্রচার মাধ্যমগুলো ইসলাম অবমাননার পথ বেছে নিয়েছে। খোদ বিশ্বনবী (সা.)এর জীবদ্দশায়ও তার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। মক্কার মুশরিকরা বিশ্বনবীর যৌক্তিক অবস্থান ও উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী সম্পর্কে জানা সত্বেও নিজেদের অন্যায় আচরণ সংশোধন না করে উল্টো বিশ্বনবী যখন কথা বলতেন তখন তারা হৈ চৈ শুরু করে দিত যাতে নবীর কথা কেউ শুনতে না পারে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে তারা নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করতো।

মক্কার মুশরিকরা যেমন সাধারণ মানুষকে বিশ্বনবীর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করতো ঠিক তেমনি বর্তমান যুগেও পাশ্চাত্যের ইসলাম বিদ্বেষী কুচক্রি মহল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সা.)সহ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন নানা অপপ্রচার চালিয়ে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে আসছে। 

এ প্রসঙ্গে বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে বিশ্বনবীকে অবমাননা করে কার্টুন চিত্র প্রকাশের কথা উল্লেখ করা যায়। ইউরোপীয় সরকারগুলো নিজেদেরকে বাক স্বাধীনতার ধ্বজাধারি বলে মনে করে এবং এ স্বাধীনতাকে তারা অন্য সব কিছুর চাইতে অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয় হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। এমনকি অন্য ধর্মের মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিকেও তারা আমলে নিচ্ছে না। অথচ এটা সবারই জানা আছে, যে স্বাধীনতা মহান ব্যক্তিত্বদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে এবং বাক স্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা তাই করা হয় সেই স্বাধীনতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য কেননা তা মানব সমাজের চেতনা ও বিবেকের পরিপন্থী।

ইসলামই পাশ্চাত্যের মূল টার্গেট

বাক স্বাধীনতার ধুয়া তুলে মানবজাতির শ্রেষ্ঠ আদর্শ ও আধ্যাত্মিক সম্পদ ধ্বংস করা সম্ভব নয়। যে কোনো দেশের আইনে স্বাধীনতারও একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং অন্যের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে যা ইচ্ছা তাই বলার নাম স্বাধীনতা নয়। পৃথিবীর সব চিন্তাবিদরা এ বিষয়ে একমত যে মানুষের কর্ম ও আচরণ অবাধ নয় এবং এ ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত।

কোনো কোনো খবরে জানা গেছে, সালমান রুশদির প্রাণ রক্ষায় তার নিরাপত্তার জন্য এ পর্যন্ত লাখ লাখ ডলার ব‍্যয় করা হয়েছে। কিন্তু এতো নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থেকেও তার ওপর হামলার ঘটনা থেকে বোঝা যায় বিশ্বনবীকে অবমাননার ঘটনা আজো মুসলমানদের মনে দাগ কেটে আছে এবং সুযোগ পেলেই মুসলমানরা রুশদির ওপর প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করবে। অন্যদিকে, রুশদিকে রক্ষার চেষ্টা মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা রক্ষার দাবিদার পাশ্চাত্যের জন্যও কেলেঙ্কারির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশ্চাত্য যতই রুশদিকে সমর্থন দেবে ততই তাদের কেলেঙ্কারির বোঝা ভারি হতে থাকবে।

সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় আফগানিস্তানের জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। রুশদির ওপর চাকু নিয়ে হামলার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছে আফগানিস্তানের আপামর জনসাধারণ। এ সম্পর্কে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবির সংবাদদাতার কাছে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আফগান নাগরিকরা। কাবুলের কয়েকজন অধিবাসী বলেছেন, যারা ইসলামি বিশ্বাস ও চেতনায় আঘাত হানবে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই এবং তাদেরকে তাদের অপরাধের শাস্তি পেতে হবে। কয়েকজন আফগান নাগরিক বলেছেন, সাম্প্রতিক হামলায় সালমান রুশদি মরে গেলেই ভালো হতো। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সালমান রুশদির ওপর হামলাকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছেন আফগান নাগরিকরা। তারা হামলাকারী হাদি মাতারের ছবি প্রকাশ করে তাকে 'মুসলিম বিশ্বের বীর' বলে উল্লেখ করেছে।

রুশদির  ওপর হামলার ঘটনায় ইরানের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, 'তেহরান হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় এবং ইরানের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার অধিকার কারও নেই'। ইরানের সংবাদমাধ্যমে রুশদির উপর হামলাকে 'সৃষ্টিকর্তার দেয়া শাস্তি' বলে উল্লেখ করা হয়।

এই হামলার বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আরো বলা হয়, 'রুশদি তার লেখায় যেভাবে ধর্মকে অবমাননা করেছে সেটাকে বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে সমর্থন করা যায় না। এই হামলায় আমরা সালমান রুশদি ও তার সমর্থকদের ছাড়া অন্য কাউকে দোষারোপ করা, এমনকি নিন্দার যোগ্য বলেও মনে করি না।#   (সমাপ্ত)

পার্সটুডে/রেজওয়ান  হোসন/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ