অক্টোবর ০৭, ২০২২ ১৭:০৭ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছ তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভালো ও সুস্থ আছো। সপ্তাহ ঘুরে আসর সাজিয়ে তোমাদের মাঝে হাজির হয়েছি আমি গাজী আবদুর রশীদ এবং আমি আকতার জাহান।

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, মহান আল্লাহর গুণবাচক ৯৯টি নামের অন্তর্ভুক্ত একটি নাম হচ্ছে ‘আল-মুক্বসিত্বু’ তথা ন্যায়বিচারকারী বা ইনসাফকারী ও সত্য-সন্ধানী বা ন্যায়কামী। মহান আল্লাহ সর্বাবস্থায় ন্যায়বিচারক এবং তিনি ন্যায়বিচারক ও ন্যায়বিচারকামীদের ভালোবাসেনমহান আল্লাহ ন্যায়বিচার করতে তার বান্দাদের প্রতি আহ্বান জানান এবং এ বিষয়ে ব্যাপক উৎসাহ দিয়েছেন। প্রসঙ্গে সুরা হুজুরাতের নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা ন্যায়বিচার কর। আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন। অন্যদিকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন: “নিশ্চয়ই ন্যায়বিচারকামীরা কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে আলোকিত আসনগুলোর অধিকারী হবেন”।  

বন্ধুরা, তোমরা জেনে খুশি হবে যে, আল্লাহপাকের পক্ষ পৃথিবীতে এ পর্যন্ত থেকে যত নবীর (আ.) আগমন ঘটেছে, তাদের প্রত্যেককে আল্লাহতায়ালা বিশেষ যেসব দায়িত্ব দিয়েছেন তার মধ্যে প্রধান দায়িত্ব হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহতায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী সকল নবীই (আ.) দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেছেন এবং এক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন।

আমরা সবাই ন্যায়ের পথে চলব এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করব- এ আশাবাদ ব্যক্ত করে আজকের আসরের দিকে নজর দিচ্ছি। আসরের শুরুতেই থাকবে একটি ন্যায় বিচারের গল্প। এরপর থাকবে একটি গান এবং সবশেষে থাকবে একটি আবৃত্তিআমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন সহকর্মী আশরাফুর রহমান। তাহলে প্রথমেই গল্পটি শোনা যাক।

ইরাকের বসরা শহরের এক গৃহস্থের দুই পুত্র ছিল। বড় ছেলের নাম ছিল হাতেম আর ছোটজনের নাম কাজেম। একবার তারা ব্যবসা থেকে বাড়তি কিছু আয় করে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কিছুদিন পর ভালো একটা দিন দেখে তারা একসাথে বেরিয়ে পড়ল। তিনদিন সফরের পর দু’ভাই এক মুসাফির খানায় আশ্রয় নিল। সেখানে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে আবার যাত্রা শুরু করল।

কিছু দূর যেতেই তারা নদীতে একটি পুটলী ভেসে যেতে দেখে উপরে তুলল। খুলে দেখে তারা অবাক হয়ে গেল। পুটলীতে এক হাজার সোনার মোহর ও দু’টি হীরকখণ্ড পেয়ে তারা সমানভাবে ভাগ করে নিল। এরপর আবার চলতে শুরু করল।

কিন্তু সঙ্গে এত অর্থ ও মূল্যবান হীরক নিয়ে চলা তারা নিরাপদ মনে করল না। তাই দু’জনে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিল যে, ছোট ভাই এগুলোকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। আর বড় ভাই কিসরা নগরে যাবে। বড় ভাই হাতেম বলল, এগুলি নিয়ে তুমি বাড়ি গিয়ে তোমার ভাবীর হাতে দেবে।

ছোট ভাই কাজেম বাড়ি গিয়ে ভাইয়ের দেওয়া স্বর্ণমুদ্রাগুলো ভাবীর কাছে দিল। কিন্তু হীরকখণ্ড না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দিল। এ সম্পর্কে হাতেমের স্ত্রী কিছুই জানতে পারল না।

এদিকে বড় ভাই হাতেম নানা দেশ ঘুরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে টাকা-পয়সা ও মালামাল নিয়ে তিন বছর পর দেশে ফিরে এলো। কয়েকদিন পর সে স্ত্রীকে সোনার মোহর ও হীরকখণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল যে, কাজেম হীরকখণ্ড দেয়নি। তখন হাতেম কাজেমকে জিজ্ঞেস করল, হীরক খণ্ডের খবর কী? তুমি কেন তোমার ভাবীর হাতে দাওনি?

কাজেম কসম করে বলল, ভাই আপনার স্ত্রী মিথ্যা বলেছে, আমি ভাবীর সাথে ওইদিনই হিরক খণ্ড দিয়েছি।

কাজেমের কথা বিশ্বাস করে হাতেম তার স্ত্রীকে তিরস্কার করল। হাতেমের স্ত্রী গালাগাল শুনে অপমানিত হয়ে স্বামীকে না জানিয়ে ওই শহরের কাজীর কাছে গেল এবং সব ঘটনা বর্ণনা করে সুবিচার চাইল।

সবশুনে হাতেম ও কাজেমকে ডেকে আনলেন কাজী। তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চেয়ে সত্য কথা বলার জন্য অনুরোধ করলেন তিনি। কাজী কাজেমকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যখন হীরকখণ্ড হাতেমের স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছো তখন কোনো সাক্ষী ছিল কি? সে বলল, হ্যাঁ, দুই জন সাক্ষী ছিল।

কাজী সাক্ষীদেরকে আদালতে হাজির করার হুকুম দিলেন। কাজেম গিয়ে দু’জন লোককে কিছু অর্থ দিয়ে বলল, ‘ভাই তোমরা আমার সঙ্গে আস। কাজীর দরবারে তোমরা সাক্ষ্য দেবে যে, তিনবছর পূর্বে অমুক দিন তোমাদের উপস্থিতিতে আমি আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে পাঁচশ’ সোনার মোহর ও একখণ্ড হীরক দিয়েছিলাম।’

কাজীর দরবারে হাজির হয়ে লোক দুটি কাযেমের শেখানো কথামতো মিথ্যা সাক্ষ্য দিল। কাজী সাক্ষীর পরিপ্রেক্ষিতে রায় দিলেন যে, হাতেমের স্ত্রীর কাছে হীরকখণ্ড রয়েছে। হাতেমকে হুকুম দিলেন তার স্ত্রীর কাছে থেকে তা উদ্ধার করতে।

এমন রায় শুনে হাতেমের স্ত্রী অসহায় বোধ করল। কিন্তু দমে না গিয়ে বাদশাহর দরবারে গিয়ে ন্যায়বিচার চাইল। বাদশাহ বললেন, তুমি কাজীর কাছে গেলে না কেন? সে বলল, হুজুর গিয়েছিলাম। কিন্তু সুবিচার পাইনি। এখন আপনার কাছেও সুবিচার না পেলে স্বামীর ঘরে থাকা আমার দায় হয়ে পড়বে।

সব শুনে হাতেম, কাজেম ও সাক্ষীদ্বয়কে দরবারে ডাকলেন বাদশাহ। তাদের কাছে সবকিছু বিস্তারিত জানলেন। কাজেম ও তার সাক্ষীরা আগের মতই সাক্ষ্য দিল।

বাদশাহ হাতেম, কাজেম, দু’সাক্ষী ও হাতেমের স্ত্রীকে জেল-হাজতে ঢুকালেন। তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা সেল বা কক্ষে রাখার ব্যবস্থা করলেন। আর প্রত্যেককে কিছু মোম দিয়ে হুকুম দিলেন, হীরকখণ্ডের আকৃতি তৈরি করো, তাহলে ছেড়ে দেওয়া হবে।

হাতেম ও কাজেম দুই ভাই মোম দ্বারা একই আকৃতির হীরক তৈরি করল। আর দুই সাক্ষীর হীরকের আকৃতি হ’ল ভিন্ন ভিন্ন। এদিকে হাতেমের স্ত্রী কিছুই তৈরি করতে পারল না।

বাদশাহ সবাইকে দরবারে ডেকে মোম নির্মিত হীরকের আকৃতি উপস্থিত করার নির্দেশ দিলেন। দুই ভাই ও সাক্ষীদ্বয়ের তৈরিকৃত হীরক আকৃতি বাদশাহর সম্মুখে পেশ করা হ’ল। দরবারের সকলেই দেখল যে, দুই ভাইয়ের হীরকের আকৃতি এক। কিন্তু সাক্ষীদের হীরকের আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন।

তখন বাদশাহ ও দরবারের সকলেই বুঝতে পারলেন যে, সাক্ষীরা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে। তারা হীরক আদৌ দেখেনি। তাই তাদের তৈরি হীরকের আকৃতিতে মিল নেই। তখন বাদশাহ বললেন, হাতেমের স্ত্রীর তৈরি হীরক আকৃতি কোথায়? হাতেমের স্ত্রী ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, হুজুর। আমি তো হীরক কখনই দেখিনি। আমি কিভাবে হীরক আকৃতি তৈরি করব?

একথা শুনে বাদশাহ এবং দরবারে উপস্থিত সকলেই বুঝতে পারলেন যে, ছোট ভাই কাজেমই হীরকখণ্ড রেখে দিয়েছে এবং অর্থের বিনিময়ে দু’জন মিথ্যা সাক্ষীও হাজির করেছে।

কাজেম হীরকখণ্ডদ্বয় দরবারে হাজির করল এবং দুই হাতে দুই কান ধরে কসম করল যে, আর কোন দিন মিথ্যা কথা বলব না। আমার অন্যায় হয়েছে, আমাকে ক্ষমা করুন। বাদশাহ তাকে মাফ করে দিলেন।

বাদশাহ দু’ভাইকে দু’খণ্ড হীরক দিয়ে বিদায় দিলেন। আর হাতেমের স্ত্রীকে তার সততা ও সাহসের জন্য পুরস্কৃত করলেন। আর সাক্ষীদ্বয়কে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যথাযোগ্য শাস্তি দিয়ে কয়েদখানায় পাঠিয়ে দিলেন।

এরপর কাজীকে ডেকে বললেন, আপনি সবদিক জেনে-শুনে বুদ্ধি-বিবেচনা করে বিচার করলেন না কেন? সত্য ঘটনা না জেনেই সেই মহিলার কাছ থেকে হীরকখণ্ড আদায় করতে বললেন। এরূপ রায় দেওয়া আপনার উচিত হয়নি।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে রয়েছে একটি নাতে রাসূল। প্রজাপতি শিরোনামের নাতটির কথা ও সুর আবু তাহের শাকিলের। আর গেয়েছে হুমায়রা আফরিন ইরা। 

নারায়ণগঞ্জের ছোট্টবন্ধু ইরার চমৎকার কণ্ঠে নাতটি শুনলে। আশা করি ভালো লেগেছে। বন্ধুরা, এবার তোমাদের জন্য রয়েছে একটি কবিতা। আবৃত্তি করেছে ঢাকার সারেগামা একাডেমির সদস্য সুহা। 

সুহার চমৎকার উচ্চারণে শিক্ষণীয় কবিতাটি শুনলে। তো বন্ধুরা, তোমরা যারা এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চাও তারা তোমাদের ফোন নাম্বার জানাও। আমরাই ফোন করে তোমাদের সাক্ষাৎকার নেবো-কেমন!

তো তোমরা ভালো ও সুস্থ থেকো আবারো এ কামনা করে গুটিয়ে নিচ্ছি রংধনুর আজকের আসর থেকে। কথা হবে আবারো আগামী সপ্তাহে।

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।