ইরানে সহিংসতা উস্কে দিতে পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলোর নির্লজ্জ ভূমিকা
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইরানের ঘটনাবলীর বিষয়ে মিথ্যা খবর প্রচার, গুজব ছড়ানো, ছবি ও ভিডিও বিকৃত করে প্রচার করার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে ব্যাপক সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে অবৈধ স্বার্থ হাসিল এমনকি বিভিন্ন সরকার উৎখাতের জন্য পাশ্চাত্যের সরকারগুলো বিশেষ করে আমেরিকার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিভিন্ন শত্রু দেশের সরকার উৎখাতের জন্য মিডিয়ার অপব্যবহার করে প্রতি বিপ্লব ঘটানো আমেরিকার প্রধান কৌশলে পরিণত হয়েছে।
ইসলামি ইরান আমেরিকার বলদর্পী আচরণ ও সম্প্রসারণকামী নীতি এবং ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্যাতিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে পাশ্চাত্যের মিডিয়াগুলো ইরানের সরকার ব্যবস্থার উৎখাত কিংবা দুর্বল করার জন্য তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে মিডিয়াকে কাজে লাগাচ্ছে। অবশ্য ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের শুরু থেকেই ইসলামি সরকার ব্যবস্থা ও জনগণের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলে আসছে। কিন্তু গত ১৫ বছরে ইরান বিরোধী শত্রুদের সমন্বিত অপপ্রচার বহুগুণে বেড়েছে। ইরানের বাইরে থেকে ফার্সি ভাষায় প্রচারিত ৩৬০টিরও বেশি টিভি চ্যানেল ব্যাপক প্রচার চালিয়ে ইরানিদের ধর্ম বিশ্বাস ও জীবন যাপন পদ্ধতিতে এমনভাবে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে যাতে ইরানের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ভাবমর্যাদাকে ধূলিসাৎ করে দেয়া যায়। এই প্রচার মাধ্যমগুলো ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েব সাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও খুবই তৎপর।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে এবং ছবি ও ভিডিও প্রচার করে ইরানে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও দাঙ্গা উস্কে দেয়ার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালানো হয়েছে। বলা যায় ইরান বিরোধী অপপ্রচারের মাত্রা এতো বেশি যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। গত অনেক বছরের ঘটনাবলী লক্ষ্য করলে দেখা যায় ইরানে যখনই ছোটখাটো কোনো ঘটনা ঘটে সাথে সাথে বাইরে থেকে সম্প্রচারিত ইরান বিরোধী ফার্সি ভাষার চ্যানেলগুলো তিলকে তাল বানিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমে পড়ে। এভাবে তারা ইরানের জনগণকে বিভ্রান্ত করে তাদেরকে রাস্তায় নামিয়ে ইরান বিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়। এর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই বিদেশে ফার্সি ভাষার চ্যানেলগুলো কোনো দলিল প্রমাণ ছাড়াই ওই তরুণীর মৃত্যুর জন্য পুলিশের সহিংস আচরণকে দায়ী করে ব্যাপক অপপ্রচার চালাতে থাকে। অনেকে এ খবর বিশ্বাস কোরে রাস্তায় নেমে পড়ে এবং বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দেখায়। যদিও পুলিশের ভিডিও ফুটেজ এবং ডাক্তারের ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে যে তার ওপর পুলিশ কোনো নির্যাতন চালায়নি বরং পূর্ব থেকেই অসুখের কারণে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বাইরের মিডিয়াগুলো এ বিষয়ে তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন মিথ্যা ও গুজবের আশ্রয় নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করে ইরানে ব্যাপক গোলযোগ ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। তাদের মূল টার্গেট ইরানের সরকার ব্যবস্থার পতন ঘটানো এবং ইসলামি এই দেশটিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা। এ লক্ষ্যে ইরানের বিপ্লব বিরোধীরা এবং বাইরের মিডিয়া সমন্বিতভাবে কাজ করতে থাকে।
সৌদিআরবের অর্থায়নে পরিচালিত লন্ডন ভিত্তিক 'ইরান ইন্টারন্যাশনাল' টিভি এবং 'মান ওয়া তু' ও 'বিবিসি'র ফার্সি ভাষার টিভি চ্যানেলগুলো ইরানিদের উস্কানি, বিক্ষোভ, দাঙ্গা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। এই প্রচার মাধ্যমগুলো নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে আসে এবং সমস্ত শক্তি নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অপপ্রচার চালাতে থাকে। তারা ইরানের বিক্ষোভকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরে ইরানের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালায় এবং জনগণকে রাস্তায় নেমে পড়ার জন্য উস্কানি দিতে থাকে। বিক্ষোভ সমাবেশের হাজার হাজার এমন সব ছবি ও ভিডিও তারা প্রচার করেছে যার অনেকগুলোই ছিল গত কয়েক বছরে অন্য দেশের বিক্ষোভের চিত্র। অথচ সেসব ইরানের বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। ঠিক একইভাবে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমেও ইরান বিরোধী মনস্তাত্বিক প্রচার যুদ্ধ চালানো হয়। এমনভাবে তারা প্রচার চালায় যেন মনে হবে ইরানের ইসলামি শাসন ব্যবস্থা পতনের দ্বারপ্রান্তে।
ইরানের বিরুদ্ধে সমানে মিথ্যা টুইট ও বিভিন্ন কমেন্ট প্রচার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যক্তির নামে নকল একাউন্ট খুলে তার নামে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া, ইসরাইল, সৌদি আরব এবং আলবেনিয়ায় ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে ইরানের বিরুদ্ধে সাইবার হামলা পরিচালনার জন্য স্পেশাল বিভাগ খোলা হয়েছে।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর অজুহাতে ইরানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জোয়ার এবং এমন সময় ইরানে নারী অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হলো যখন বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায় বিপ্লবের পর বরং ইরানি নারীরা অধিকার ফিরে পেয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নারীরা ব্যাপকভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো ইরানে নারীর অধিকার নিয়ে সরব থাকলেও পাশ্চাত্য বিশেষ করে আমেরিকায় পুলিশের হাতে বহু সংখ্যক নারীর নিহত হওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলছে না।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন আগে এক ব্যক্তির হামলা থেকে বাঁচার জন্য এক নারী জানালা দিয়ে পালাতে গিয়ে নীচে পড়ে মৃত্যু বরণ করে। কিন্তু নারী অধিকারের প্রচারক গণমাধ্যমগুলো ওই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। আফগানিস্তানে স্কুলে সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ২৫জন ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায়ও পাশ্চাত্যের ফার্সি গণমাধ্যমগুলোতে ফলাও করে তুলে ধরা হয়নি। পাশ্চাত্যের নিয়ন্ত্রিত এই গণমাধ্যমগুলো কেবল ইরানে ছোট্ট কোনো ঘটনা ঘটলেও সেটাকে ফলাও করে প্রচার করে। এ থেকে তাদের দ্বিমুখী নীতির বিষয়টি ফুটে ওঠে।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর কয়েক দিন পর যখন এটা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে বিদেশি গণমাধ্যমগুলো এটাকে অজুহাত করে ইরানে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে এমনকি ইরানের ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে তখন অনেকেই বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে সরে আসে। কিন্তু বিক্ষোভ অব্যাহত রাখতে উস্কানি দেয়ার জন্য এবং ইরান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এই গণমাধ্যমগুলো মিথ্যা খবর, বিকৃত ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। তারা কয়েকজন তরুণীর মৃত্যুর খবর দিয়েছিল যাদের মধ্যে এখনো অনেকে জীবিত রয়েছে, অনেকে আত্মহত্যা কিংবা বিভিন্ন অসুখে আগেই মৃত্যুবরণ করেছিল।
তবে ইরানের বিপ্লবী জনতার সচেতনতার কারণে নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলোর সব ষড়যন্ত্র ও প্রচারণা কার্যত ব্যর্থ হয়ে গেছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।