নভেম্বর ২৩, ২০২২ ২১:২৫ Asia/Dhaka

মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি ও আল্লাহ-প্রেমিক হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে রাখতে হবে ব্যাপক ধারণা।

মহান আল্লাহর পবিত্র নামগুলো কেবল এক-একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত এমনই দুই নাম হল গ্বানি ও মুগ্বনি। গ্বানি নামের অর্থ যিনি সব কিছুর অমুখাপেক্ষী এবং অন্য সবাই ও সব কিছু তাঁর মুখাপেক্ষী। মুগ্বনি নামের অর্থ অমুখাপেক্ষীকারী। মহান আল্লাহ একাধারে গ্বানি ও মুগ্বনি হিসেবে বান্দাদের প্রতি অমুখাপেক্ষী এবং  তিনি তাদেরকে বস্তুগত বা বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে নিজের প্রতি ছাড়া অন্য সবার দিক ও সব কিছু হতে অমুখাপেক্ষী করেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর গ্বানি নাম মোট ১৮ বার এসেছে। এর মধ্যে মহান আল্লাহর হামিদ নামের সঙ্গে এই নাম এসেছে দশ বার, হালিম, জুলরাহমাত ও কারিম নামের সঙ্গে এসেছে একবার করে এবং পাঁচ বার এসেছে স্বতন্ত্রভাবে বা একাকী।

 মহান আল্লাহর গ্বানি নামের অর্থ চরম অমুখাপেক্ষিতা এবং মহান আল্লাহর প্রতি অন্যদের মুখাপেক্ষিতা। এ গুণ বা বৈশিষ্ট্য কেবল মহান আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। অর্থের দিক থেকে মহান আল্লাহর সামাদ নামের সঙ্গে এই নামের মিল রয়েছে। মহান আল্লাহ সামাদ অর্থাৎ মহান আল্লাহ চাহিদা বা অভাববিহীন, অন্যদিকে সব সৃষ্টি ও অস্তিত্ব মহান আল্লাহর কাছ থেকেই তাদের দরকারি সব কিছু পেয়ে থাকে এবং তারা সব সময় ও সব স্থানে মহান আল্লাহর দয়া ও করুণার মুখাপেক্ষী। আকাশ-মণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে তার সবই হল গ্বানি আল্লাহর। তিনিই এসবের স্রস্টা বা খালিক ও তিনিই এসবের মালিক।  

মহান আল্লাহই সব সৃষ্টির উৎস এবং তিনিই তাদের সব ধরনের পূর্ণতা দিয়ে থাকেন। সব পূর্ণতা এবং ঔজ্জ্বল্য ও গৌরব বা শ্রেষ্ঠত্ব বলতে যা কিছু রয়েছে বিশ্ব চরাচরে তার সবই মহান আল্লাহর সত্ত্বারই প্রতিফলন এবং মহান আল্লাহর অস্তিত্ব থেকেই উৎসারিত। তাই মহান আল্লাহর কোনো কিছুর অভাব ও চাহিদা নাই।

 সুরা ফাত্বির-এর ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর কাছে ফকির বা অভাবগ্রস্ত। আর আল্লাহ; তিনি গ্বানি বা অভাবমুক্ত, হামিদ বা প্রশংসিত।– মহান আল্লাহ'র গ্বানি হওয়ার বিষয়টি নিরঙ্কুশ তথা চরম অর্থপূর্ণ।  অন্যদিকে দারিদ্র বা অভাব কেবল মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই আয়াতে এটাই বলা হচ্ছে যে মানুষকে বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হলে তাদেরকে নিরঙ্কুশ গ্বানির মুখাপেক্ষী হতে হবে। 

আসমাউল হুসনা 

 

সুরা ফাত্বির-এর ওই আয়াতে হামিদ নামের সঙ্গে মহান আল্লাহর গ্বানি তথা 'অমুখাপেক্ষী' এই নাম এসেছে। এর অর্থ সারা দুনিয়ার সব মানুষও যদি কাফির হয়ে যায় ও আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয় তবুও মহান আল্লাহ গ্বানি বলে তাদের প্রতি অমুখাপেক্ষী এবং মানুষের অকৃতজ্ঞতা মহান আল্লাহর বিন্দুমাত্রও ক্ষতি করে না। মহান আল্লাহ সুরা লোকমানের ১‌২ নম্বর আয়াতে বলেছেন, আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যাণের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। 

এ বিশ্ব-চরাচরে যা কিছু আছে সব কিছুরই মালিক হলেন আল্লাহ। তাই আল্লাহ কারো প্রশংসার মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ মানুষকে তাঁর দাসত্ব বা ইবাদত করতে বলেছেন এ জন্যই যে এটা তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, আত্মিক পূর্ণতা এবং সার্বিক কল্যাণের জন্যই জরুরি। 

মহান আল্লাহর মুগ্বনি নামের অর্থ অমুখাপেক্ষীকারী। পবিত্র কুরআনে এই নাম ও এর সমার্থক শব্দ মোট ৭ বার এসেছে। সুরা নায্‌ম্‌-এর ৪৮ নম্বর আয়াতে গ্বানির সমার্থক শব্দ ব্যবহার করে মহান আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেছেন: আল্লাহই মানুষকে ধনী বা সম্পদশালী করেন ও দরিদ্র বা ফকির করেন।  
মহান আল্লাহ একাধারে গ্বানি ও মুগ্বনি হিসেবে বান্দাদের প্রতি অমুখাপেক্ষী এবং  তিনি তাদেরকে বস্তুগত বা বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে নিজের প্রতি ছাড়া অন্য সবার দিক ও সব কিছু হতে অমুখাপেক্ষী করেন। মহান আল্লাহই মানুষকে দেন সত্যিকারের সম্পদ ও সম্মান। ফলে যিনি তা পান তিনি যদি বাহ্যিকভাবে দরিদ্রও হন তবুও কারো মুখাপেক্ষী নন। আর কোনো ব্যক্তির যদি প্রকৃত সম্পদ ও সম্মান না থাকে তাহলে তার অনেক সম্পদ থাকলেও বাস্তবে প্রকৃত ও আধ্যাত্মিক অমুখাপেক্ষিতা তার নেই। 

মহানবী-সা. বলেছেন, অনেক সম্পদ থাকলেই গ্বানি হওয়া যায় না, গ্বানি তিনিই যার রয়েছে আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাস।–আসলে যারা সম্পদ-লোভী বা সম্পদের দাস তারাই হচ্ছে সবচেয়ে হতদরিদ্র।  

মুমিন ব্যক্তিরা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ও নানা মাধ্যম বা উপায়কে কাজে লাগিয়ে প্রকৃত অমুখাপেক্ষিতা অর্জন করেন। মুমিন জানেন যে সব কাজ ও চেষ্টার ফলাফল রয়েছে মহান আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণে। তাই মুমিন সর্বশক্তিমান ও সবকিছুর অধিকারী মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে হাত পাতেন না। এই শ্রেণীর মানুষ মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে ও মহান আল্লাহর দেয়া শক্তি, জ্ঞান আর নেয়ামতকে কাজে লাগিয়ে অন্য মানুষের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন।  #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।