পবিত্র কুরআনে হুয়া শব্দ বা নাম ৪৭৭ বার এসেছে
আসমাউল হুসনা-১০০ ( হুয়া নামের তাৎপর্য)
মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে।
এইসব পবিত্র নাম কেবল এক-একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে বিচিত্রময় এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। বিশ্বজগতের ব্যবস্থাপনা বিপুল সংখ্যক এইসব নামের প্রকাশ এবং ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর। তবে মহান আল্লাহর মূল সত্ত্বাকে উপলব্ধি করা কখনও কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আর এ কারণেই মহান আল্লাহ নিজের মূল সত্ত্বা বা জাত-এর পরিচয় বোঝাতে হুয়া هُو বা 'তিনি' শব্দ ব্যবহার করেছেন। পবিত্র কুরআনে এই নাম ৪৭৭ বার এসেছে। আরবি ভাষায় 'হুয়া' শব্দ সর্বনাম হিসেবে ব্যবহার করা হয় ব্যাপক মাত্রায়। তৃতীয় পুরুষ হিসেবে এই হুয়া বা তিনি শব্দ যখন বিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করা হয় তখন তার পরিচয় অস্পষ্টই থেকে যায়। হুয়া যখন মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তখনও এ বাস্তবতাই তুলে ধরা হয় যে মহান আল্লাহর পবিত্র সত্ত্বার স্বরূপ বোঝা বা দেখা মানুষের সাধ্যাতীত এবং কেউই এর বাস্তবতা পরিপূর্ণভাবে বুঝতে সক্ষম নন যদিও মহান আল্লাহর অস্তিত্বের নিদর্শন ও প্রভাব অন্য যে কোনো বিষয়ের চেয়ে বেশি স্পষ্টভাবে ছড়িয়ে আছে গোটা সৃষ্টিলোকে।
মহান আল্লাহকে অন্য সবার চেয়ে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় যিনি জানেন ও চেনেন তিনি হলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)। অথচ তিনি নিজেও বলেছেন, আমরা আপনাকে যেভাবে চেনা ও জানা উচিত সেভাবে চিনতে ও জানতে পারিনি!
হুয়া বা তিনি বলতে প্রথমে আমাদের এটুকু মনে রাখা দরকার যে আল্লাহ হচ্ছেন তিনি যিনি স্রস্টা ও প্রভু এবং তিনি সমগ্র বিশ্বজগত তথা অস্তিত্ব-জগতের প্রতিপালক, কিন্তু তাঁকে পুরোপুরি চেনা বা জানা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহর নানা নিদর্শন দেখে তাঁর অদৃশ্য সত্ত্বা সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু ধারণা অর্জন করা যায়। আমরা জানি যে কোনো কিছুই নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করে না, বরং সব কিছুরই রয়েছে সংগঠক বা নির্মাতা। সব কাজ বা ঘটনারই রয়েছে কারণ বা চালিকা-শক্তি ও সব শিল্পকর্মেরই রয়েছে শিল্পী। এভাবে সব বিষয়, ঘটনা বা কাজের শুরুতেই রয়েছে এক নির্দিষ্ট শক্তি, আর সেই শক্তিকে আমরা প্রথমেই চিনতে পারি বা না পারি সেই শক্তিই হলেন 'তিনি' তথা আল্লাহ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ নিজের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন: তিনি সত্য বা হাক্ব্ ( হুয়াল হাক্ব্), তিনি ছাড়া আর কেউ ইলাহ বা প্রভু নন, তিনি চির-জীবন্ত ও চিরস্থায়ী, তিনি ওয়ালি বা অভিভাবক এবং তিনিই মৃতকে জীবিত করেন।
পবিত্র কুরআনে সুরা তাওহিদের প্রথমেই মহান আল্লাহ বলছেন: বলো আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। বর্তমান শতকে পবিত্র কুরআনের অন্যতম প্রধান মুফাসসির আয়াতুল্লাহ জাওয়াদ অমোলি এই সুরার পটভূমি বা শানেনজুল প্রসঙ্গে বলেছেন, এক দল ইহুদি মহানবীর (সা) কাছে এসে বলেন, আপনি তো আমাদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিচ্ছেন, আপনি মহান আল্লাহর বংশ বা জাতিসত্তা সম্পর্কে কিছু বলুন! এরই প্রেক্ষাপটে নাজিল হয় সুরা তাওহিদ। তিনি বলেছেন, পবিত্র সত্ত্বা আল্লাহর কোনো বংশ নেই এবং তাঁর সত্ত্বা হচ্ছে চিহ্নবিহীন। তাঁর কোনো বাবা-মা নেই তথা তিনি জন্ম নেননি এবং তাঁর কোনো সন্তান নেই ও তিনি সন্তান জন্ম দেন না! তাঁর কোনো সমকক্ষ ও সমতুল্য বা নজির নেই। বরং সব জনক ও জননী এবং সন্তান-সন্ততি মহান আল্লাহরই সৃষ্টি। মহান আল্লাহ পুরোপুরি অদৃশ্য! পবিত্র কুরআনের সুরা বাক্বারায় ১৮৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি তো তাদের কাছেই রয়েছি। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন তারা আমার কাছে প্রার্থনা করে।
সুরা আরাফ-এর ১৮০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সেসব নাম ধরেই তাঁকে ডাকো।–ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী কেউ যদি মহান আল্লাহর বিখ্যাত নাম তথা ইসমে আযমের মাধ্যমে তাঁকে ডাকে তাহলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। মহান আল্লাহর ইসমে আযম ঠিক কোন্ নামগুলো সে সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। অনেকে মনে করেন মহান আল্লাহর সব নামই ইসমে আযম। ইসমে আযম উচ্চারণের কারণেই দোয়া কবুল হয় না বরং এইসব নামের বাস্তবতার প্রভাবেই মহান আল্লাহর রহমত নাজিল হয়। ইসমে আযমের মাধ্যমে দোয়া কবুল তখনই সুনিশ্চিত হয় যখন কোনো ব্যক্তি কঠিন সংকট বা প্রাণহানির মত বিপদে পড়ে সেই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য সবার সাহায্যের ব্যাপারে পুরোপুরি হতাশ হয়ে একমাত্র আল্লাহর রহমত ও সাহায্যের ওপরই পুরোপুরি ভরসা করে। এ সময় তার মনে আল্লাহ ছাড়া আর কারো সাহায্যের ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও আশা না থাকায় সে আল্লাহকে যে নামেই ডাকুক না কেন আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন এবং তাই সেই নামই ইসমে আযম হিসেবে কাজ করে।
শ্রোতা ভাইবোনেরা, সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও সবার জন্য মহান আল্লাহর রহমত লাভের প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে আসমাউল হুসনা অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পর্বের নির্ধারিত আলোচনা শেষ করছি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অনেক নামের মহিমা ও তাৎপর্য সম্পর্কে কিছু ধারণা অর্জনের সুযোগ দেয়ায় তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং এইসব নামের আলোকে জীবন গড়ে তোলার প্রার্থনা করছি। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/২৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।