জানুয়ারি ২৭, ২০২৩ ১৩:০১ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর! কেমন আছো তোমরা? আশাকরি যে যেখানে আছো, ভালো ও সুস্থ আছো। সপ্তাহ ঘুরে রংধনুর ঝাঁপি নিয়ে আবারো হাজির হয়েছি আমি গাজী আবদুর রশিদ এবং আমি আকতার জাহান।

আজকের আসরের শুরুতেই থাকবে একটি রূপকথার গল্প। এরপর থাকবে একটি গান। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন সহকর্মী আশরাফুর রহমান। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে আজকের অনুষ্ঠান শুরু করা যাক।

অনেকদিন আগের কথা। এক দেশে ছিল এক রাজা ছিল। আর তার ছিল এক অতীব সুন্দরী কন্যা। এই রাজকন্যাকে অনেকেই বিয়ে করতে আগ্রহী ছিল।

কখনো কখনো রাজার এক বন্ধু এ বিষয়টি নানাভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করতো এবং তার বক্তব্যের উদ্দেশ্য- বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে শেষ করতো। এমন যুবকের নাম উল্লেখ করতো যে যথাযথভাবে রাজকন্যার যোগ্য বলে রাজাকে বোঝাতো। তার এই যোগ্যতা আছে, ঐ যোগ্যতা আছে এবং সে রাজকন্যার মতো এমন মেয়েকেই বিয়ে করতে চায়- ইত্যাদি বলে রাজার কান ঝালাপালা করত।

রাজদরবারের অন্য মন্ত্রীরাও রাজকন্যার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসত। সবার আগ্রহ দেখে মনে হতো, প্রত্যেকেই জামাই নির্বাচন করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নিয়েছে।

রাজা নিজেও বিষয়টি বুঝতেন। এ কারণেই তিনি কারো কথার জবাবে তেমন কোন কথা বলতেন না। মেয়েটিও বলতো: ‘আমি এমন স্বামী চাই যে আমাকে মনেপ্রাণে চায়, শুধু রাজার জামাই হতে চায়- এমন ছেলে আমি চাই না।’

এভাবে দিন যেতে থাকল। এক ঈদের দিনে সকল সভাসদ, বন্ধু-বান্ধব ও নিকাটত্মীয়রা রাজার কাছে জমায়েত হলো। এরপরে কথাবার্তার এক পর্যায়ে আবার রাজকন্যার বিয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলো। রাজা বললেন: এ পর্যন্ত এ বিষয়ে অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু কোনো জবাব দেইনি। এখন অবশ্য আমি এবং আমার কন্যা এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রস্তুত। আমার মেয়েকে সত্যিই পছন্দ করে এমন একজনকে নির্বাচন করতে চাই। যারা আমার কন্যাকে বিয়ে করতে চায় তারা যেন আগামীকাল এখানে উপস্থিত হয়। আমি তাদেরকে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য কিছু শর্ত দেবো। যে শর্তগুলো পূরণ করতে পারবে আর আমার মেয়ে যাকে  পছন্দ করবে তার সাথেই আগামীকালই বিয়ের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হবে।’

রাজার কথা শেষ হলে সকলে ঐ দিনের মতো চলে গেল এবং যে সকল যুকত রাজকন্যাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চায় তাদের কাছে খবর পৌঁছে দেয়া হলো তারা যেন আগামীকাল রাজদরবারে উপস্থিত হয়।

পরের দিন রাজার বাড়ির সামনে মাত্র তিন যুবককে দেখা গেল। বাকিরা ভয় পাচ্ছিল- না জানি রাজা তাদেরকে অপমান করে বসেন! রাজা ঐ তিন যুবককে অভ্যর্থনা জানালেন। তাদের পরিচিতি জানার পরে মেয়েকে তাদের সামনে হাজির করে বললেন: ‘এই আমার মেয়ে, একে ভালোভাবে দেখো, আমার মেয়ে রাজী হলে আজকেই বিয়ের আয়োজন করব। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে আমি রাজা, আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হলে কিছু শর্তাদি পালন করতে হবে। আমি শর্তাবলী বলার পরে তোমাদেরকে আধা ঘন্টা সময় দেবো, এরপর তোমরা তোমাদের মতামত কাগজে উপর লিখে দেবে। তোমাদের লেখা পড়ার পর আমি এবং আমার কন্যা সিদ্ধান্ত নেবো এরপর যা ভালো মনে হয় করবো।

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই রাজার শর্তগুলো শোনার জন্য আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করছো। শর্তগুলো জানাব মিউজিক বিরতির পর। (বাজনা)

রাজা বললেন: আমার শর্ত হলো- ‘আমার মেয়েকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক যুবকদেরকে একটি পিলারের সাথে বেধে ইচ্ছেমতো আঘাত করব। এরপর যদি বেঁচে থাকে, তাহলে যাদের মধ্য থেকে যাকে পছন্দ হবে তার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো।

রাজা একটু দম নিয়ে বললেন: বিয়ের পর বর আর কোনদিন এই বাড়িতে পা রাখতে পারবে না। সে জীবনে আমার নামে কোনো অভিযোগ করতে পারবে না; কোনো কাজের জন্যও আমার কাছে আসতে পারবে না। সে আমার কাছে কোন কিছু চাইতে পারবে না। আমার মেয়ে যদি তার সাথে খারাপ আচরণও করে এমনকি যদি তার শরীর থেকে চামড়া তুলে নেয় তবুও তার কিছুই বলার থাকবে না।

 রাজা আবার বললেন, যদি কেউ এসব শর্ত মেনে নিজেকে প্রস্তুত করতে রাজি না হয় তাহলে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে। আর কোনদিন এ শহরে পা রাখতে পারবে না। সে আমার এবং আমার কন্যার নাম মুখেও আনতে পারবে না। আর যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে আমি জানি না যে আমি তার সাথে কি আচরণ করব।

এসব বলার পর তিন জনের হাতে তিন টুকরো কাগজ ও কলম দেওয়া হলো। রাজা বললেন: 'তোমরা আধা ঘণ্টার মধ্য এই কাগজের উপর তোমাদের মতামত লিখে সই করবো যাতে আমি বুঝতে পারি কার কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো'।

রাজার লোকেরা তিনজনের কাছে তিনটুকরো কাগজ দিয়ে তিনজনকে আলাদা আলাদা রুমে রাখল এবং দরজা বন্ধ করে দিল। আধা ঘণ্টা পরে রাজা, তার মেয়ে, কাজী, মৌলভী এবং বিবাহের রেজিস্টার নিয়ে আসলেন। রাজার নির্দেশে ঐ তিন যুবকের লেখা কাগজগুলো আনা হলো। রাজা আর তার মেয়ে লেখাগুলো পড়তে লাগলেন।  

প্রথম যুবক লিখেছে- ‘আমি রাজকন্যাকে খুবই পছন্দ করি। আমি কখনোই তাকে  ভুলে যাবো না। কিন্তু যেহেতু রাজার হুকুম তাই চেষ্টা করবো যাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহর ছেড়ে যেতে পারি। আশা করি রাজা এবং তার আত্মীয়-স্বজনরা আমার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করবেন না।

রাজা ও তার মেয়ে ঐ লেখা পড়ে মুচকি হাসলেন। রাজা বললেন- এই যুবকের লেখা পড়ে বোঝা গেল যে, সে প্রকৃত প্রেমিক নয়। সে ধূর্ত, দুর্বল ও পলায়মান। সে মেয়েকে বিয়ে করে রাজার সান্নিধ্যে আসতে চেয়েছিল। ভালোবাসার ব্যাপারে তার কোন মাথাব্যথা ছিল না। এ ব্যক্তি জানে না যে, কোন কিছু অর্জন করতে অনেক মসিবত অতিক্রম করতে হয়। সে তার সমস্ত জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে চেষ্টা করে কিছু হাসিল করতে না পারলে মাঝপথে পলায়ন করে। এই যুবক ভীতু এবং বুদ্ধিহীন কেননা সে চিন্তা করে কোনো পথ বের করার চিন্তাই করেনি। সব সময় মানুষ নিজেকে সবচেয়ে ভালো চেনে এবং এই পলাতক বরের আমাদের কোন কাজ নেই বরং তার চলে যাওয়াই ভালো। সে যেন পিছনের দিকে ফিরে না চায়। আমরা তাকে ভুলে যাবো যাতে সে তার মতো করে ভালো থাকতে পারে’।

পলায়নপর যুবককে ছেড়ে দেওয়া হলো। এবার দ্বিতীয় জনের পালা। দ্বিতীয় জন লিখেছে- আমি রাজা ও তার কন্যার সকল শর্ত গ্রহণে রাজি এবং তা বাস্তবায়ন করতেও প্রস্তুত। যদি মারধরের পরে আমি জীবিত থাকি তাহলে আমি আমার লক্ষ্যে পৌছুতে পারব। আর যদি জীবিত না থাকি তাহলে পরজগতে তার জন্য কাঁদব। কেননা আমার জীবনে আমি আর কিছু চাই না- হয় মৃত্যু অথবা রাজকন্যা।

 এই লেখা পড়ার পরে রাজা তার কন্যাকে বললেন- এর ব্যাপারে তোমার মতামত কী?

রাজকন্যা বলল- আমি পাগল স্বামী চাই না।

রাজা বললেন- মাশাআল্লাহ মা, তুমি ঠিকই বলেছো। এই যুবক পিলারের সাথে বাঁধা অবস্থায় মার খেতে রাজি। এরপর সে আমার গোলাম হতে চায় এবং সে আমার থেকে দূরে থাকতে চায়। সে আমাকে ভয় করে। কেননা যদি শেষ পর্যন্ত রাজার তরবারি তার মাথাকে শরীর থেকে আলাদা করে দেয় সেজন্যও সে প্রস্তুত। কিন্তু আমার মেয়ে অন্যান্য মেয়েদের থেকে কত আলাদা? সে প্রেমের বিনিময়ে এই দুই জনের দূর্ভাগ্য কিনতে চায়নি। আমিও এটা বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এই লোক এক সময় সুস্থ জ্ঞানবান হবে। এই যুবককে পাগলা গারদে বা মানসিক হাসপাতালে পাঠানো উচিত যাতে সে নিজের চিকিৎসা করতে পারে। আর সে যেন দ্বিতীয়বার আমার মেয়ের নাম নিতে না পারে। এই যুবক প্রেমিক নয়, সে পাগল। পাগল জামাই দিয়ে আমার কাজ নেই। সে খুব দ্রুতই আমাদেরকে ভুলে যাবে তাই আমাদেরও উচিত তাকে ভুলে যাওয়া, যাতে সে শান্তিতে থাকতে পারে।

এবার তৃতীয় যুবকের লেখা পড়বার পালা। সে লিখেছে- আমার একটি চাচাতো বোন আছে। যার কোন দোষ আমার চোখে ধরা পড়েনি। তবুও আমি রাজার মেয়েকে অধিক ভালোবাসি এবং স্বপ্ন দেখি যে, আমরা অধিকতর সুখী হবো। আমি শহর থেকে বাইরে যাব না। যদি আমাকে বাধ্য করা হয় তাহলে তা হবে আমার উপর জুলুম। কেননা আমি একজন নিরীহ মানুষ। কিন্তু রাজ কন্যাকে বিবাহের জন্য চাবুক খাওয়ার শর্ত এবং পরবর্তীতে বেঁচে থাকা জীবনে নিপীড়ন- সেটাও আমি পছন্দ করি না, কেননা এতে স্বয়ং রাজকন্যার জীবনেও শান্তি এনে দেবে না। আমি এমন প্রেমিক যাতে রাজকন্যাও আমাকে পছন্দ করে এবং রাজাও তার শর্ত শিথিল করেন। আর তা যদি না হয় তাহলে আমার চাচাতো বোন কী দোষ করেছে? আমি মনে করি সকল সমস্যা সমাধানের তৃতীয় কোনো পথ আছে। আশা করি রাজা আমার এ লেখাকে অক্ষমতা হিসেবে বিবেচনা করবেন না। কেননা আমার কারো সাথে কোন বিবাদ নেই। কিন্তু আমি বিয়ে করতে চাই; ভালোভাবে জীবন যাপন করতে চাই এবং সব সময় রাজকন্যাকে খুশি দেখতে চাই।

রাজা কন্যাকে জিজ্ঞেস করলেন- এর ব্যাপারে তোমার কী মতামত?

রাজকন্যা বলল: আপনার যা মর্জি। আর তো কেউ অবশিষ্ট নাই।

রাজা মুচকি হেসে বললেন- ‘খুব ভালো! এই যুবক বুদ্ধিমান। সে জানে যে, তার চাচাতো বোনের সাথে আমার মেয়ের কোনো পার্থক্য নাই। কিন্তু আমার মেয়েকে বেশি ভালোবাসে এবং চিন্তা করে যে তোমার জীবন সুন্দর হোক। এই যুবক বুদ্ধিমান এজন্য যে, সে শহর থেকে বের হওয়ার ভয় করে না; সময়ের কাছে সে আত্মসমর্পণ করে না এবং সে তৃতীয় কোনো পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। আমার শর্তাবলী ছিল শুধু পরীক্ষার জন্য। আমারও কারো সাথে কোনো বিবাদ নেই। আমিও আমার মেয়ের কল্যাণ ও সুখ চাই। এখন এই যুবকের অধিকার আছে আমার মেয়েকে বিয়ে করার। যদি সে রাজি থাকে তবে শর্তহীনভাবে আজকেই বিয়ের অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করব। আর যদি সে রাজি না থাকে তবে বুঝবো সে তার চাচাতো বোনের সাথেই ভালো থাকবে। আমরাও তার বিবাহ অনুষ্ঠানে যাবো এবং তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাবো। হে যুবক! এখন তোমার শেষ কথা বলো’।

যুবক বলল: ‘আমি এ মেয়ের সাথে বিবাহের জন্যই অধিকতর আগ্রহী’।

রাজকন্যা বলল- ‘আমিও….’

রাজা বললেন- ‘আমিও তোমাদের শুভেচ্ছা জানাই এবং সৌভাগ্য কামনা করি, আশা করি তোমরা সুখী হবে।’

বন্ধুরা, অনুষ্ঠান থেকে বিদায় নেওয়ার আগে তোমাদের জন্য রয়েছে একটি দেশের গান। গানের কথা লিখেছেন মোঃ রফিকউজ্জামান, সুর করেছেন খন্দকার নূরুল আলম আর গেয়েছে শিশুশিল্পী: মালিহা রহমান মুসকান, অর্থি নুজহাত, নাফিসা আবরার মোহসিন আদিবা, শতাব্দী মল্লিক ঐশী, রাহাত রহমান ও তাদের সঙ্গীরা। তো বন্ধুরা, তোমরা গানটি শুনতে থাকো আর আমরা বিদায় নিই রংধনুর আজকের আসর থেকে।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ