মার্চ ২৭, ২০২৩ ২০:৪৪ Asia/Dhaka

সম্প্রতি ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, সিনিয়র সাংবাদিক, ডেইলি স্টার পত্রিকার বাংলা বিভাগের সম্পাদক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং জনপ্রিয় উপস্থাপক গোলাম মোর্তজা।

তিনি বলেন, ইরান-সৌদি আরবের মধ্যে সাম্প্রতিক চুক্তিটি খুবই ইতিবাচক। যদি দেশ দুটি একসাথে কাজ করতে পারে তাহলে মুসলিম বিশ্বের জন্য খুবই ইতিবাচক হবে। তবে বৈশ্বিক পরাশক্তির যে খেলাধুলা সেই খেলাধুলার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত কি অবস্থান নিল সেটার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করবে।

বিশিষ্ট এই সাংবাদিক বলেন, এই চুক্তির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে। আর চীন কূটনীতিতে অনেক এগিয়ে গেছে।

সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

জনাব গোলাম মোর্তজা- রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: জনাব গোলাম মোর্তজা, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন থাকার সাত বছর পর নতুন করে আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

গোলাম মোর্তজা: প্রথম কথা: দুটি মুসলিম দেশের মধ্যে বৈরীতাপূর্ণ যে সম্পর্ক সেটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তারপরও বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুটি দেশের মধ্যে একটা চরম বৈরীতামূলক সম্পর্ক আমরা দীর্ঘদিন দরে দেখেছি। আর সেটি মুসলিম বিশ্বের জন্য খুবই ক্ষতিকর হয়েছে।

দ্বিতীয় কথা: একটা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে-এটি খুবই ইতিবাচক দিক। কিন্তু ইতিবাচক দিক হলেও এটাকে নিয়ে এখনই অতিরিক্ত আহ্বলাদিত হওয়ার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। তার কারণ মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক পরাশক্তির যে খেলাধুলা সেই খেলাধুলার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত কি অবস্থান নিল সেটার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। তবে যেহেতু চুক্তিটা হয়ে গেছে তারমানে কিছুটা আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে। তবে এই চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবনার জায়গা আছে।

রেডিও তেহরান: জনাব গোলাম মোর্তজা, এই চুক্তিটা হলো তা নিয়ে এখনই খুব বেশি  আহ্লাদিত হওয়ার কিছু নেই এবং চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে নিয়ে কোনো দ্বিধা বা প্রতিকূলতা আসতে পারে?

গোলাম মোর্তজা: দেখুন, চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটি একটি লম্বা সময়ের ব্যাপার। চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটিতে নানারকমের প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হবে।

প্রথম প্রতিকূলতা এবং প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে-ইরান এবং সৌদি আরবের যে অব্স্থান। সৌদি আরব যে নীতিগ্রহণ করে সেই নীতির সাথে ইরানের অনেকগুলো সাংঘর্ষিক অবস্থান রয়েছে। ইরান মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক বা ঐ পুরো অঞ্চল ভিত্তিক যেসব শক্তিকে সহায়তা করে সৌদি আরব তাদের বিপক্ষে অব্স্থান নেয়। ইয়েমেনে সৌদি আরব যুদ্ধ করছে অন্যদিকে সেখানে হুথি বিদ্রোহীদের প্রতি ইরানের সমর্থন আছে। এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার। তারচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের অবস্থান। ইসরাইল রাষ্ট্রটির অবস্থান কি হবে এবং এই চুক্তি হওয়ার সময় কি হয়েছে এগুলো নিয়ে আমাদের এখনও ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণের সুযোগ রয়েছে।

আমাদের একথা ভুলে গেলে চলবে না যে সৌদি আরবের বর্তমান যে শাষক বিশেষ করে যুবরাজ সালমানের সঙ্গে ইসরাইলের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মূলত সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই ঐ অঞ্চলের বেশ কিছু দেশের সাথে  ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক রয়েছে। সৌদি আরবের আকাশসীমা ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে ইসরাইল। ধারনা করা হয় যে সৌদি যুবরাজের অন্যতম প্রধান শক্তি ইসরাইল। তো সেই জায়গাটিতে ইসরাইলের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কি হয় এবং ইসরাইল-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে এই খেলাধুলার মাঝে শেষ পর্যন্ত কী করে তার উপরে নির্ভর করবে শেষ পর্যন্ত চুক্তি কতটা বাস্তবায়িত হবে! চুক্তির এই জায়গাটিতে নানারকমের সীমাবদ্ধতা নানারকমের প্রতিকূলকতা থাকা সত্ত্বেও এই চুক্তিটি খুবই ইতিবাচক দিক। শেষ পর্যন্ত ইরান এবং সৌদি আরব যদি কাছাকাছি আসতে পারে, একত্রে কাজ করতে পারে, দেশ দুটি যদি একত্রে নিজেদের স্বার্থ ও মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ দেখতে পারে তাহলে সেটা সামগ্রিকভাবে মুসলমানদের জন্য এবং মুসলিম বিশ্বের জন্য খুবই ইতিবাচক  একটা ঘটনা ঘটবে। কিন্তু কতোটা বাস্তবায়ন হবে সেটা নিয়ে আমার কাছে এখনও সংশয় বা সন্দেহ আছে।

রেডিও তেহরান: আবারও ফিরে এলাম সাক্ষাৎকারে। জনাব গোলাম মোর্তাজ,  ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে এই চুক্তি সই হয়েছে চীনের মধ্যস্থতায়। বিষয়টি নিয়ে সারা বিশ্বে এক রকমের তোলপাড় চলছে, চলছে নানামুখী আলোচনা। আপনি কি বলবেন?

গোলাম মোর্তজা: দেখুন, দৃশ্যমানভাবে আমাদের সামনে যে ঘটনা এবং তথ্য আছে তাতে মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতিতে চীন অনেকখানি এগিয়ে গেছে। সৌদি আরবের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে একচ্ছত্র আধিপত্য, তারা যা বলবে সৌদি আরব চলবে এই জায়গাটিতে একটা পরিবর্তন হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর সেখানে চীন তার অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। এরমধ্যে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে।

একটি ঘটনা এরকম হতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো নিজ থেকে চেয়েছে যে  চীন এই জায়গাটিতে আসুক। মধ্যপ্রাচ্যে চীন আসুক বৈশ্বিক রাজনৈতিক নানা প্রেক্ষাপট নিয়ে।

আরেকটি বিষয় হতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায়নি তবুও চীন এসেছে এবং সৌদি আরব হয়তো তার অবস্থান আস্তে আস্তে কিছুটা পরিবর্তন করছে। সৌদি আরব শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করে  না থেকে চীন যেহেতু একটা বৈশ্বিক শক্তি, অর্থনৈতিক শক্তি, সামরিক শক্তি সেই কারণে তার সঙ্গেও সম্পর্ক রাখতে চায়। একইসাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও সম্পর্ক রাখতে চায়। অর্থাৎ সৌদি আরব একক শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে না ঝুঁকে সে চীনকেও সঙ্গে রাখতে চায়। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমানভাবে যে ঘটনাগুলো ঘটছে এইটাই যদি চলমান থাকে তাহলে কোনো সন্দেহ নেই একটা বড় চাপে থাকবে ইসরাইল।

রেডিও তেহরান: আপনি বললেন, এই চুক্তির কারণে এবং যদি তা বাস্তবায়িত হয় তাহলে ইসরাইল একটি বড় চাপে থাকবে তবে এ চুক্তির পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না এমন প্রশ্নও উঠছে..

গোলাম মোর্তজা: দেখুন, সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের ভালো সম্পর্ক হবার কারণে নেপথ্যে কোনো শর্ত আছে কি না সেটা দেখার বিষয়। যেমন ধরুন-লেবাননকেন্দ্রীক হিজবুল্লাহ বা ফিলিস্তিন বা হুথি বা ইরাক-সিরিয়াকেন্দ্রীক যেসব ছোটখাট শক্তি আছে তাদের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক কি হবে এ ব্যাপারে কোনো শর্ত আছে কি না, বড় কোনো ব্যাপার আছে কি না সেটা আগামী দিনগুলোতে পরিষ্কার হবে। তবে এখন পর্যন্ত যা ঘটছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র একধরনের চাপে আছে, ইসরাইল একধরনের চাপে আছে। চীন কূটনীতিতে অনেক এগিয়ে গেছে বলেই এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে।

তো জনাব গোলাম মোর্তাজা, ইরান-সৌদি আরবের মধ্যে চুক্তি নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে অবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

গোলাম মোর্তজা: আপনাদেরকে এবং দর্শক-শ্রোতাদের সবাইকে ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৭

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ