ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি-এর নবম হামলায় কী ঘটেছিল?
(last modified Wed, 18 Jun 2025 12:51:32 GMT )
জুন ১৮, ২০২৫ ১৮:৫১ Asia/Dhaka
  • ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি-এর নবম হামলায় কী ঘটেছিল?

পার্সটুডে - সোমবার সন্ধ্যায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনী সম্মিলিত অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি -এর নবম হামলা শুরু করে।

ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসনের জবাবে ইরান শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হামলা শুরু করেছে। পার্সটুডে-র এই নিবন্ধে, আমরা সোমবারের সম্মিলিত অভিযান "সত্য প্রতিশ্রুতি-3"-এর নবম হামলার দিকে এক নজর দেব।

তেহরানের সময় রাত ১১:৪৫ মিনিটে, আইআরজিসির মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী মোহাম্মদ নায়েনি ইসরাইলের বিভিন্ন অবস্থানে "সত্য প্রতিশ্রুতি-3"-এর নবম ধাপ শুরুর ঘোষণা দিয়ে বলেন: এই অভিযান মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আমরা সীমিত অঞ্চলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি এবং বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত করেছি। আইআরজিসির মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন: "আমাদের আক্রমণ অবশ্যই একটি সম্মিলিত আক্রমণ। ইসরাইলের বিরুদ্ধে শক্তির সকল উপাদান ব্যবহার করা হবে এবং ইসরাইলের দম্ভ চূর্ণবিচূর্ণ করে এগিয়ে যাবে। ইসরাইলি সূত্রগুলো জানিয়েছে যে ইসরাইলের চ্যানেল-১৪ এর সম্প্রচার অজানা কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইসরাইলের এই টিভি চ্যানেল-১৪ এর সম্প্রচার বন্ধ করার আগ মুহূর্তে, এই চ্যানেলে বিকট শব্দ শোনা গিয়েছিল। হিব্রু ভাষার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে: সমন্বিত আক্রমণের অংশ হিসেবে ইরান থেকে ১০০টিরও বেশি ড্রোন আসছে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পরে এমনভাবে নিক্ষেপ করা হবে যাতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলো একসাথে গিয়ে আঘাত হানতে পারে। 

রাত পনে ১২টার দিকে, ইসরাইলি দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ রিপোর্ট করে যে হাইফা তেল শোধনাগারের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শোধনাগারের ক্ষতি হওয়ায় এই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইসরাইলি চ্যানেল-১৪ জানিয়েছে যে শোধনাগারের পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক এবং ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শোধনাগার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করেছে। হাইফা তেল শোধনাগার পরিচালনা সংস্থা এক সরকারী বিবৃতিতে বলেছে, তেল শোধনাগারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ক্ষতির ফলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

প্রায় রাত ১২:৪৫ নাগাদ, ইসরাইলে ইরানের হামলার ফলে শতাধিক ইসরাইলি হতাহত হয়, সেইসাথে অবকাঠামোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে, ইসরাইলি পুলিশ সেখানকার দেশী-বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলোকে ইরানের হামলার দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার থেকে বিরত থাকতে বলেছে এবং যারা এই আদেশ অমান্য করবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

রাত ১:০০ টার দিকে, ইসরাইলের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরাইলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ছবি পোস্ট করে। ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ সংবাদপত্র আরও জানিয়েছে যে শত শত মানুষ বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে হলেও সমুদ্রপথে বিভিন্ন বন্দরে নৌকা বা জাহাজে করে অধিকৃত ইসরাইল অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। 

রাত ২:০০ টার দিকে, হিব্রু সূত্র জানিয়েছে যে আইআরজিসির ক্ষেপণাস্ত্রগুলি নাভাতিম বিমান ঘাঁটিতে আঘাত করেছে। ওয়ালা ওয়েবসাইটটি আরও ঘোষণা করেছে: "একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র অধিকৃত অঞ্চলের দক্ষিণে বেয়ারশেবাতে আঘাত করেছে।" দৈনিক ইসরায়েল হায়োম সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট লিখেছে: "ইসরাইলের দক্ষিণে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করার পর আগুন লেগে যায়।" হিব্রু সূত্র অনুসারে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবে আঘাত হানে। ইসরায়েলি রেডিও এবং টেলিভিশন সংস্থাও ঘোষণা করেছে যে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকজন ইহুদিবাদী আহত হয়েছে। ইসরায়েলি সাংবাদিক গিডিয়ন লেভি আল জাজিরার সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন: "সাম্প্রতিক ইরানি হামলা ছিল আমার জীবনে শোনা সবচেয়ে বড় হামলা ও নজিরবিহীন বিস্ফোরণ যার ফলে পুরো তেল আবিব কেপে উঠেছিল।" তিনি আরও বলেন: "ইসরায়েলকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে এবং এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে। ইসরাইল এখন বসবাসের অযোগ্য এবং ইহুদিবাদীরা এই অবস্থাচালিয়ে যেতে পারবে না।"

ভোর ৪টার দিকে, ইসরাইলি সূত্র ঘোষণা করে যে বেশ কয়েকটি জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রয়টার্সের সংবাদ সংস্থা, সাহাব নিউজ নেটওয়ার্ক: জেড, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে তেল আবিব এবং আশেপাশের অন্যান্য এলাকায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আল-মায়াদিন জানিয়েছে যে ইরানের ছোড়া কিছু ক্ষেপণাস্ত্র বন্দর শহর হাইফায় আঘাত হেনেছে।

পরের দিন সকাল ৯:০০ টার দিকে, ইসরাইলের চ্যানেল-১২ ঘোষণা করে: "তেল আবিবের কাছে রামাত হাশারন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।" ইসরায়েলি মিডিয়া আরও লিখেছে: "ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হার্জলিয়া এবং তেল আবিবের স্পর্শকাতর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।" 

সকাল ১০:৩০ মিনিটের দিকে, আইআরজিসি ঘোষণা করেছে: কিছুক্ষণ আগে, এই বাহিনী আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি নতুন হামলা শুরু হয়েছে যা আগের চেয়েও শক্তিশালী এবং ধ্বংসাত্মক। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৮