মহান আল্লাহ অতি সূক্ষ্ম রহস্যগুলোও নিখুঁতভাবে জানেন
আসমাউল হুসনা' -৮২ (বাদিইয়ু নামের তাৎপর্য)
মহান আল্লাহ হলেন এমন এক সত্ত্বা যিনি ত্রুটিহীন, তুলনাহীন, শরিকহীন ও পবিত্র। মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরব-অহংকার –এসবই নজিরবিহীন। মহান আল্লাহর সত্ত্বাকে বোঝা অসম্ভব তবে তাঁর গুণবাচক নামগুলো তাঁর মহত্ত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা বা পরিচিতি তুলে ধরে।
আসলে সব সুন্দর নাম কেবলই মহান আল্লাহর। মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে। এইসব পবিত্র নাম কেবল একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে বিচিত্রময় এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে।
মহান আল্লাহর এইসব নামের কোনো কোনোটির অর্থ কাছাকাছি বা প্রায় একই ধরনের। যেমন, খালিক্ব, বারিয়ু, ফাত্বির, ফালিক্ব ও বাদিইয়ু। এইসব নামের বাহ্যিক অর্থ কাছাকাছি হলেও সেসবের স্বতন্ত্র নানা দিক বা বৈশিষ্ট্যও রয়েছে অর্থ ও প্রয়োগের দিক থেকে। যেমন, খালিক্ব অর্থ স্রস্টা আকার ও পরিমাণের দিক থেকে। আর বারিয়ু বলতে বোঝায় এমন এক স্রস্টাকে যিনি সৃষ্টি করেন কোনো ধরনের ত্রুটি বা কমতি কিংবা ঘাটতি ছাড়াই এবং পরিপূর্ণ ভারসাম্য সহকারে। অন্য কথায় একটি ভবন নির্মাণ করতে হলে একজন যোগ্য স্থপতি প্রথমে ভবনটির নক্সা আঁকেন। আর ওই নক্সার আলোকে ভিত্তি গড়ে দেন বান্না বা মিস্ত্রি। আর খালিক্ব ভবনটির মাপ ঠিক করে দেন এবং এরপর বারিয়ু ভবনটি গড়ে তোলেন। মহান আল্লাহর ফাত্বির নামের অর্থ হল যিনি কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই কোনো কিছুর সৃষ্টি শুরু করেন ও সেই সৃষ্টিকে সম্পূর্ণ অনস্তিত্ব থেকে পরিপূর্ণ অস্তিত্বে আনেন। মহান আল্লাহর ফালিক্ব নামের অর্থ হল কোনো কিছুর ছেদক বা পৃথককারী, যেমন বীজের ছেদক বা অঙ্কুরোদগমকারী বা রাতের আঁধার চিরে প্রভাত আনয়নকারী কিংবা রাত থেকে দিনের পৃথককারী।
যা-ই হোক মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত আরও এক নাম হল বাদিইয়ু-« بَدِیْع»। এর অর্থ নব-উদ্ভাবক তথা সম্পূর্ণ নতুন কিছুর সৃষ্টিকারী। পবিত্র কুরআনে এই নাম দুই বার এসেছে। একবার এসেছে সুরা বাকারার ১১৭ নম্বর আয়াতে ও আরেকবার এসেছে সুরা আনআম-এর ১০১ নম্বর আয়াতে। মহান আল্লাহ বাদিয়ু হিসেবে নজিরবিহীন নানা সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেন। মহান আল্লাহর এসব সৃষ্টি তাঁর নিরঙ্কুশ বা সর্বময় জ্ঞান ও ক্ষমতারই প্রকাশ। বাজনা একত্ববাদের যুক্তির আলোকে মহান আল্লাহর সঙ্গে তুলনার যোগ্য কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। তাই মহান আল্লাহ হচ্ছেন চূড়ান্ত বা নিরঙ্কুশ বাদিয়ু। মহান আল্লাহ যা সৃষ্টি করেন তার জন্য কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতার দরকার হয় না এবং কোনো হাতিয়ার, মাল-মশলা, এমনকি স্থান ও সময়েরও দরকার হয় না। আর মহান আল্লাহ প্রথম থেকেই বা চিরকালই এমন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সুরা আনআম-এর ১০১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের আদি স্রষ্টা।
সুরা বাকারার ১১৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ নিজেকে বাদিয়ু বা উদ্ভাবক হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন: তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কাজ সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে একথাই বলেন, ‘হয়ে যাও’ তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়।– মহান আল্লাহ যখন আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন তখন এর কোনো পূর্ব-দৃষ্টান্ত ছিল না। তাই তিনি এখানে উদ্ভাবক। মহান আল্লাহর সব সৃষ্টিই নতুন ও স্বতন্ত্র। এমনকি প্রত্যেক মানুষের হাতের আঙ্গুলের রেখার নক্সাও ভিন্ন ধরনের! এমনকি যমজ সন্তানদের মধ্যেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিন্নতা বা পার্থক্য থাকে। গাছের দুটি পাতার মধ্যেও আপনি সর্বাত্মক মিল পাবেন না। আর তাই বলা হয় মহান আল্লাহর সব সৃষ্টিই বাদিয়ু বা নব-উদ্ভাবিত। বিজ্ঞ মুমিন বা বিশ্বাসী ব্যক্তিরা মহান আল্লাহর নানা সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করেন এবং সেসবের যথাযোগ্য ব্যবহারের চেষ্টা করেন। এভাবে তারাও জনকল্যাণের স্বার্থে নতুন কিছু আবিষ্কারের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেন। গবেষক ও বিজ্ঞ মুমিনদের জানা উচিত মহান আল্লাহ ভূপৃষ্ঠের সব কিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণ ও সেবার জন্য।
বিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা মহান আল্লাহর নানা সৃষ্টি বা নেয়ামত ব্যবহার করে মানুষের কল্যাণের জন্য নতুন কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে মহান আল্লাহর ধর্মীয় বিধান ও রাসুলের সুন্নাতের মধ্যে নতুন কিছু প্রবর্তন করা তথা বেদাআত চালু করা নিষিদ্ধ। বেদায়াত হচ্ছে ইসলাম ধর্মের নামে এমন কিছু চালু করা যা এই ধর্মের অংশ নয়। মানুষের জন্য ধর্মীয় বিধান দেয়ার অধিকার রাখেন একমাত্র আল্লাহ। মানুষের জন্য যা যা দরকার তা অন্য সবার চেয়ে ভালো জানেন মহান আল্লাহ। কারণ আল্লাহ হচ্ছেন মানুষের স্রস্টা বা খালিক্ব। সুরা মুল্ক্-এর ১৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, যিনি সব অস্তিত্বকে সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত নন? ! তিনি অতি সূক্ষ্ম রহস্যগুলোও নিখুঁতভাবে জানেন।
আল্লাহ ও তাঁর মহান রাসুল যেসব কাজকে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা ইবাদতের অংশ বলেননি ধর্মীয় পরিসরে সেসব কাজ অবশ্যই বর্জনীয়। মুমিন ব্যক্তির উচিত কেবল মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশের আনুগত্য করা। ঈমান কেবল এভাবেই প্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মহান আল্লাহর ধর্ম এত বেশি পরিপূর্ণ ও সামগ্রিক বা সর্বাঙ্গীণ যে তাতে নতুন কিছু যোগ করার দরকার নেই। বাহ্যিক দৃষ্টিতে সুন্দর অনেক কাজ বা আচার-অনুষ্ঠানকে যদি ধর্মীয় দায়িত্বের অংশ করার দরকার মনে করতেন মহান আল্লাহ তাহলে তা করার জন্য তিনি অবশ্যই নির্দেশ দিতেন। #
পার্সটুডে/ এমএএইচ/২৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।