এপ্রিল ০৫, ২০২৩ ১৮:৪৯ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনায় আমরা আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলীর ভাষায় খোদা-সচেতন ব্যক্তির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছি।

হযরত আলী (আ) একই প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, অশোভন উক্তি খোদা-সচেতন ব্যক্তির কাছে পাওয়া যায় না,তাদের গলার স্বর কোমল,তাদের মাঝে মন্দের কোন অস্তিত্ব নেই,সৎগুণ সদা বিরাজমান, কল্যাণে তারা অগ্রণী এবং ফেতনা তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দুর্যোগের সময় তারা মর্যাদাশীল, দুঃখ-দুর্দশায় ধৈর্যশীল এবং সুসময়ে তারা কৃতজ্ঞচিত্ত। যাকে তাঁরা ঘৃণা করে তার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে না এবং যাকে তাঁরা ভালোবাসে তার খাতিরে পাপ করে না। প্রমাণ দাঁড় করানোর আগেই তাঁরা সত্যকে স্বীকৃতি দেয়। তাঁরা কখনো আমানতের খেয়ানত করে না এবং যা স্মরণ রাখা দরকার তা কখনো ভুলে যায় না। তাঁরা কখনো অন্যকে গাল-মন্দ করে না, প্রতিবেশীর কোন ক্ষতি করে না,অন্যের দুর্ভাগ্যে আনন্দ অনুভব করে না, কখনো বিভ্রান্তিতে পা দেয় না এবং ন্যায় ও সত্য হতে কখনো সরে যায় না ।  একই প্রসঙ্গে হযরত আলী আরও বলেছেন:

'খোদা-সচেতন ব্যক্তিরা পরকালীন জীবনের খাতিরে নিজেকে অভাব-অনটনে রেখেছে এবং মানুষ তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা অনুভব করে। কঠোর তপস্যা ও পবিত্রতা দ্বারা তারা অন্যদের থেকে নিজেকে দূরে রাখে এবং নমনীয়তা ও দয়া দ্বারা তারা তাদের নিকটবর্তী হয়। অহংকারের কারণে তাঁরা অন্যদের কাছ থেকে দূরে থাকে না আবার বঞ্চনা ও প্রতারণা করার জন্য তাঁরা কারো নিকটবর্তী হয় না।'

মহানবী (সা) বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষ কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে: যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য সেটাই চায় যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। যে ব্যক্তি কোনো কাজের মুখোমুখি হলে সে কাজে পা বাড়ানো বা পিছিয়ে আসার আগে খতিয়ে দেখে যে, কাজটি আল্লাহর পছন্দের নাকি অপছন্দের। আর যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ছিদ্রান্বেষণ করার আগে সেই দোষটি নিজের মধ্য থেকে সংশোধন করে নেয়। আর, যখনই সে নিজের একটি ত্রুটি সংশোধন করে নেয় তখনই নতুন আরেকটি ত্রুটি দেখতে পায়। তাই মানুষের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। -মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে খোদা-সচেতন তথা মুত্তাকী হওয়ার তওফিক দান করুন।  

ভাইবোনেরা, আগামীকাল তথা ১৫ রমজান বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র বড় নাতি হযরত ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)'র পবিত্র জন্ম-বার্ষিকী। মুসলিম বিশ্বের যোগ্য ইমাম হিসেবে তাঁকে গড়ে তুলেছিলেন তাঁরই নানা মহানবী (সা.), পিতা আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) ও মা হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহা)। তাঁর জন্ম হয়েছিল মদীনায় হিজরি তৃতীয় সনে ও মুয়াবিয়ার ষড়যন্ত্রে তিনি শহীদ হন হিজরি ৫০ সনে। তিনি সমাহিত হন মদীনার জান্নাতুল বাকিতে। মহানবী (সা.) প্রিয় এই নাতিকে কোলে নিয়ে আদর করতেন ও তাঁর সঙ্গে খেলতেন। একবার তিনি মুনাজাতে বলছিলেন: হে আল্লাহ! আমি হাসানকে ভালবাসি, তাই আপনিও তাদের ভালবাসুন যারা হাসানকে ভালবাসে। মহানবী (সা) আরো বলেছেন, যারাই হাসান ও হুসাইনকে ভালবাসে আমিও তাদের ভালবাসি, আর আমি যাদের ভালবাসি আল্লাহও তাদের ভালবাসেন, আর আল্লাহ যাদের ভালবাসেন তাদের বেহেশত দান করবেন এবং যারা হাসান ও হুসাইনের সঙ্গে শত্রুতা রাখে তাদেরকে আমিও আমার শত্রু মনে করি, ফলে আল্লাহও তাদের শত্রু হন, আর আল্লাহ তার শত্রুকে জাহান্নামে পাঠাবেন।  

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন: হাসান ও হুসাইন বেহেশতি যুবকদের সর্দার। এরা দু' জন আমারই সন্তান; আর তারা দু'জনই মুসলমানদের ইমাম বা নেতা, তা তাঁরা তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে বিপ্লব করুক বা নাই করুক কিংবা ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক।  

সমর্থকদের নিষ্ক্রিয়তা ও আদর্শিক বিচ্যুতিসহ নানা দিক থেকে পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল থাকায় ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ, ইমামের প্রধান সেনাপতিসহ অনেকেই ভেতরে ভেতরে মুয়াবিয়ার কাছে বিক্রি হয়। এ সময় তিনি মুয়াবিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অব্যাহত রাখলে ইসলাম পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত এবং সুযোগ-সন্ধানী রোমানরা বায়তুল মোকাদ্দাস দখল করে নিত। এ ছাড়াও এ চুক্তির ফলে মুয়াবিয়ার প্রকৃত চেহারা জনগণের কাছে তুলে ধরা সহজ হয়েছিল। ইমাম হাসান (আ) কয়েক বার তাঁর সম্পদের অর্ধাংশ ও পুরো অংশ দান করেছেন দরিদ্রদের। তিনি অন্তত ২৫ বার পায়ে হেঁটে হজ করেছেন।

ইমাম হাসান (আ) বলেছেন, নিশ্চয়ই কল্যাণে প্রবেশে সক্ষম চোখ হল পূর্ণ-দৃষ্টির চোখ, সতর্কবাণী শুনে তা থেকে লাভবান-হওয়া কানই হল সবচেয়ে শ্রবণ-সক্ষম কান এবং দ্বিধা-সংশয় থেকে মুক্ত অন্তরই হল নিখুঁত অন্তর। 

মহান আল্লাহ আমাদের জন্য কুরআনের এবং মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের  অনুসারী হওয়ার পথ সহজ করে দিন এই মহাপুরুষদের শানে দরুদ পাঠানোর বরকতে।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ