জুন ০১, ২০২৩ ২০:০৫ Asia/Dhaka

পরিণয় সে তো নয় অভিনয়/ সে যে জীবনের সব সুর তাল ও লয়  প্রজাপতির দুই পাখার মত একই সূত্রে দুই হৃদয়ের ছন্দ-মিলের অভ্যুদয় 

নারী যেন ফুল নর বুলবুল/তাই তো নর-নারীর প্রাণে/ সুর ও সুরভির মিলনে
বিধাতা দিয়েছেন চিরন্তন আকর্ষণ/ জীবনের পূর্ণতার বিবর্ধন
থাকতে একই নীড়ের বন্ধনে! 
ব্যক্তি আসে ব্যক্তি যায়, থেকে যায় নব-প্রজন্মের সবুজ-উদ্যান!
পরিবার যেন জীবন মরুতে বর্ণাঢ্য গুলবাগিচা প্রেমের গুলশান!
জীবনের অশেষ মাধুর্য ধারণ করে পরিবার!
পরিবার! সে তো একান্তই আপনজনার 
বিচিত্র মায়াবী সুর আর স্নেহরসে টইটম্বুর 
যে যেভাবেই যেখানেই থাকি কাছে কিংবা দুর
দু বাহু বাড়িয়ে চেয়ে রয় পরিবার!
সদাই লক্ষ্য তার হৃদ্যতার বাঁধন জোরদার 
ফোটাতে ঠোঁটে মিষ্টি হাসি সব আপনজনার!
স্বামী-স্ত্রী আশ্রয় দুজনে দুজনার/ প্রশান্তির প্রেরণা প্রেমময় ত্যাগের আধার
সব আনন্দ আর সুখ-দুঃখে তনুমন যেমন থাকে একাকার। 
প্রেমময় পরিণয়ই খুলে দেয় পবিত্র নীড়ের সৌভাগ্য-দ্বার! 

বিয়ে প্রত্যেক মানুষেরই তথা প্রত্যেক নর-নারীরই মৌলিক অধিকার। প্রাপ্ত-বয়স্ক নর ও নারী যদি তাদের স্নেহময় আবেগ অনুভূতি এবং অনিবার্য প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণের জন্য বিয়ের পথ বেছে না নেন তাহলে সমাজে নেমে আসবে বিপর্যয়। আর এ জন্যই ইসলাম বিয়েকে অশেষ গুরুত্ব দেয় এবং হাদিসে বলা হয়েছে যে বিয়ে করল সে যেন ধর্মের অর্ধেক রক্ষা করল। তাই বেশি বয়সে বা খুব দেরি করে বিয়ে করাকেও ইসলাম সমর্থন যোগায় না।  বর্তমান যুগে তথা আধুনিক এই বিশ্বে নগরায়ন বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে নর ও নারীদের একই স্থানে ও একই কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে বৈধ সীমারেখার বাইরে নর-নারীর সম্পর্ক এবং বিশেষ করে যুবক ও যুবতিদের সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা নানা ধরনের সামাজিক সংকট সৃষ্টি করছে।  আর এর ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে নারী বা যুবতীরা। অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুবকরা যুবতী নারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টির পর অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে কিংবা আরও বেশি জানাশোনার অজুহাত দেখিয়ে বিয়ের পথ ত্যাগ করছে। এভাবে প্রতারণা ও  হতাশার শিকার হয়ে অনেক যুবতী আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে।

পশ্চিমা সংস্কৃতিতে যৌন স্বাধীনতার নামে নর-নারীর ও যুবক-যুবতীদের অবাধ মেলামেশাকে আইনের আওতায় প্রশ্রয় দেয়া হয়। ফলে সেখানে নারী নির্যাতন ও ব্যভিচার এবং নানা ধরনের যৌন রোগ খুব বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। একই কারণে গর্ভপাত ও বিপুল মাত্রায় অবৈধ সন্তানের জন্মও পাশ্চাত্যের এক বড় সামাজিক সংকট। আর এসব সংকটের ধাক্কার বেশিরভাগটাই যায় নারীদের শরীর ও মনের ওপর। 

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তরুণী মাতা রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তারা মাতা হচ্ছেন অবৈধভাবে। দেশটিতে প্রতি বছর যৌন রোগের শিকার হন এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। তালাকের সংখ্যার দিক থেকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। অবাধ যৌনাচার তথা ব্যভিচার যুগে যুগে বহু জাতির ধ্বংস ডেকে এনেছে। পাশ্চাত্যের  বহু খ্যাতিমান পুরুষ যৌন লালসার দাস হতে গিয়ে হারিয়েছেন সম্পদ ও মর্যাদা। 

ইসলাম কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের যোগাযোগকে নিষিদ্ধ করেনি। তবে পরপুরুষ ও পরনারীর পারস্পরিক যোগাযোগকে নৈতিক পবিত্রতার আওতাধীন করতে বলে ইসলাম। ইসলামী আইন অনুযায়ী নারীকে বাইরের জগতে বা পরপুরুষের সামনে হিজাব মেনে চলতে হবে এবং অশালীন অঙ্গভঙ্গি বা উত্তেজক পোশাক পরাসহ প্ররোচক সব তৎপরতা থেকে দূরে থাকতে হবে যা পুরুষদের বেলায়ও প্রযোজ্য। ইসলাম পুরুষ ও নারী উভয়কেই পরনারী বা পরপুরুষের সামনে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। 

বিয়ে প্রত্যেক মানুষেরই তথা প্রত্যেক নর-নারীরই মৌলিক অধিকার

শিয়া মুসলিম আইন ব্যভিচার এড়ানোর অন্যতম পন্থা হিসেবে অস্থায়ী বিয়ের প্রথাকে সমর্থন করে। এ নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও অনেকে বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে এ প্রথার যথাযথ ব্যবহার ব্যভিচার রোধে বেশ সহায়ক এবং  তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত অল্প খরচে বিয়ে করার এ প্রথা চালু থাকলে মানব সমাজ থেকে ব্যভিচার প্রায় উঠেই যেতো। তারা বলেন, এটা ঠিক যে অস্থায়ী বিয়ের মাধ্যমে স্থায়ী বিয়ের সব লক্ষ্যগুলো অর্জন করা যায় না যদিও এ ধরনের বিয়েতেও নির্দিষ্ট মোহরানাসহ স্থায়ী বিয়ের নানা শর্ত থাকে এবং উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে স্থায়ী বিয়ের শর্তের অনুরূপ নানা শর্ত যোগের সুযোগ রয়েছে। এমনকি অস্থায়ী বিয়েকে স্থায়ী বিয়েতেও রূপান্তর করা যায়। মানব সমাজেরই অনেকেরই স্থায়ী বিয়ের আর্থিক সঙ্গতি নেই। সেক্ষেত্রে তাদেরকে হয় অস্থায়ী সন্ন্যাসব্রতে থাকতে হবে ধৈর্য ধরে অথবা ব্যভিচারের মত পাপে জড়াতে হবে। আর এ পাপ ঠেকাতেই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অস্থায়ী বিয়ের বিধান রেখেছেন বলে ওই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

আর যাদের স্থায়ী বিয়ে করার মত আর্থিক সামর্থ্য ও সঙ্গতি রয়েছে তাদের কখনও অস্থায়ী বিয়ের পথ ধরা উচিত নয়। কেউ সাধারণত স্থায়ী বিয়ের সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও অস্থায়ী বিয়ের দিকে ঝুঁকেন না।  যাদের কাছে বিয়ে কেবলই নেশা তারা স্থায়ী বিয়েরও অপব্যবহার করতে পারেন দ্রুত তালাক দিয়ে বার বার বহু স্থায়ী বিয়ে করার মাধ্যমেই। সন্তান গ্রহণের উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ সাধারণত অস্থায়ী বিয়ে করেন না। শর্ত নবায়ন করা না হলে এ ধরনের বিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তালাকের মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায়।

কুমারী মেয়ের অস্থায়ী বিয়ের জন্য বাবা-মায়ের সম্মতি বা বাবা-মা মৃত হলে বাবা-মায়ের স্থলাভিষিক্ত কারো সম্মতি নেয়া জরুরি। কিন্তু বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত নারীর ক্ষেত্রে ওই সম্মতি নেয়া জরুরি নয়। এক্ষেত্রে ওই মেয়ে ও অস্থায়ী বিয়েতে আগ্রহী পুরুষের পারস্পরিক সম্মতিই যথেষ্ট। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তারা উভয়ে যদি চান তবে ওই বিয়ের মেয়াদ নবায়নও করতে পারেন। অস্থায়ী বিয়ের শর্ত নির্ধারণে স্বাধীনতা অপেক্ষাকৃত বেশি। যেমন, স্থায়ী বিয়ের অন্যতম শর্ত এটা যে, পুরুষের ইচ্ছা হোক বা না হোক তিনি স্ত্রীর দৈনন্দিন ভরণপোষণ এবং অন্যান্য প্রয়োজন পূরণের খরচ যোগাতে বাধ্য। কিন্তু অস্থায়ী বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষ এ ধরনের শর্ত নাও মানতে পারেন বা তার তা মানার সঙ্গতি নাও থাকতে পারে অথবা স্ত্রী নিজেই স্বামীর অর্থ গ্রহণে আগ্রহী নাও হতে পারেন। 

পরিবারের সমৃদ্ধি ও স্থায়িত্বের অন্যতম শর্ত হল এর সদস্যদের পারস্পরিক আস্থা ও আমানতদারী তথা বিশ্বস্ততা। এ জন্য সর্বাগ্রে স্বামী ও স্ত্রীকে পরস্পরের দায়িত্ব এবং অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বিশ্বস্ততা রক্ষা বলতে কেবল স্ত্রী বা স্বামীর অর্থ, সম্পদ ও জীবন-যাপনের সামগ্রী রক্ষা করাকেই বোঝায় না। স্ত্রীর বা স্বামীর ও তার  পরিবারের সম্মান এবং গোপনীয় বিষয়গুলোর গোপনীয়তা রক্ষাও এর অন্যতম দিক। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ