জুলাই ১৪, ২০২৩ ২৩:২১ Asia/Dhaka

শ্রোতাবন্ধুরা! স্বাগত জানাচ্ছি রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান আলাপনে আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো ও সুস্থ আছেন। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে সুইডেন এবং ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা পবিত্র কোরান পোড়ানো ও মহানবী সা' এর অবমাননা প্রসঙ্গে কথা বলব।

বিষয়টি নিয়ে গোটা বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে চলছে নিন্দা, সমালোচনা, প্রতিবাদ বিক্ষোভ। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারে আমাদের সাথে অতিথি হিসেবে আছেন লেখক, গবেষক এবং কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হুদা।

জনাব মাওলানা নাজমুল হুদা রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: জনাব, অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা, সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। কীভাবে দেখছেন এই ঘটনাকে?

অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা: পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টাকে আমি যদি এভাবে বলি, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার চরম বহিঃপ্রকাশ সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনা। গোটা বিশ্বে আমরা যে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা লালনের কথা বলি বা মেনে চলার কথা বলি এটি তার সম্পূর্ণ উল্টোচিত্র কুরআন পোড়ানোর বিষয়টি। আর এরমাধ্যমে জাতিগত যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তাকে উসকে দেয়া হয়েছে। পৃথবীর একটি বৃহত্তর জাতিগোষ্ঠী মুসলমান তাদের সেন্টিমেন্টে আঘাত করা হয়েছে। আর বিষয়টিকে সহজে প্রশমিত করা যাবে না। যাঁরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বি আছেন তাদেরকে আমরা বলব এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে।  ইসলাম ধর্মের পক্ষ থেকে বলছি পৃথিবীতে ধর্মের ব্যাপারে সহিষ্ণু থাকা প্রয়োজন। ধর্মীয় সংঘাতের ফলে বিশ্বে কোনো ধর্মের বিকাশ ঘটেনি। জনসেবা, দাওয়াত এবং খেদমতে খালক বা মানবতার সেবার মাধ্যম দিয়েই কেবল ধর্মের বিকাশ ঘটেছে। যদি তারা ধর্মের বিকাশ চায় তাহলে সংঘাত নয় সহমর্মিতা এবং সহঅবস্থানের ভিত্তিতে যার যার ধর্মকে লালন করা এবং প্রচার করাটাই কাম্য।

রেডিও তেহরান:  প্রায়ই মাঝেমধ্যে সুইডেন ও ফ্রান্সে পবিত্র কুরআনেও মহানবী (স)-কে অবমাননার ঘটনা ঘটে। এর কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?

অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা: এর কারণ হিসেবে আমার কাছে যেটি মনে হয়েছে, সুইডেন এবং ফ্রান্সে ধর্মান্তরিত মুসলমানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রতিনিয়ত ধর্মান্তরিত মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে। এমনিতেই তো অভিবাসী আছেন তারপর খৃষ্টানদের মধ্য থেকে বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান হচ্ছেন। এটি খৃষ্টান বিশ্বের জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। তাদের ভয় এভাবে যদি খৃষ্টান ওয়ার্ল্ড থেকে মানুষ ইসলামের ঝুঁকে পড়ে এবং মুসলমান হয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে খৃষ্ট ধর্মের জায়গাটা সংকুচিত হয়ে যাবে। আর এই ভীতির কারণেই চলতি কুরআন পোড়ানোর হিংসাত্বক ঘটনা সুইডেনে ঘটানো হয়েছে। তবে তাদের যদি এ ধরনের কিছু মনে হয়ে থাকে সেটি ভুল ধারণা। কারণ তাবলিগ এবং দাওয়াত কিংবা ধর্মীয় প্রচার প্রচারণা ইউরোপে যেমন চলছে খৃষ্টানরা এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতে তাদের মিশনারি কার্যক্রম চালাচ্ছে। অথচ কোনো মুসলিম দেশে তো খৃষ্টানদের ওপর কোনো ধরনের অত্যাচার করা হয়নি।

ডেনমার্কে পবিত্র কোরান পোড়ানোর নিন্দনীয় ঘটনা নিয়ে বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হুদার সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব শুনছেন। ফিরছি খুব শিগগিরিই আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা, আবারও ফিরে এলাম সাক্ষাৎকারে। মিউজিক বিরতির আগে  আপনি সুইডেন ও ফ্রান্সে পবিত্র কোরান পোড়নো  ও মহানবি সা. কে অবমাননার কারণ নিয়ে কথা বলছিলেন তো আপনি এ প্রসঙ্গে আরও কিছু কি বলবেন?

অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা: জ্বি, দেখুন এ পর্যন্ত পৃথিবীতে অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচারের কোনো ঘটনা মুসলমানরা ঘটায়নি। বিশেষত অন্য ধর্ম গ্রন্থ পোড়ানো কিংবা অবমাননার মতো ঘটনা কোনো মুসলামন ঘটায়নি। এতে মুসলমানদের লাভ হয়েছে। আর সুইডেনে তারা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর যে ঘটনাটি ঘটালো সেটিকে সচেতন বিবেকবান মানুষ ভালো চোখে দেখবে না। তারা এ ঘটনাকে ঘৃণার চোখে দেখবে। এমনকি পশ্চিমা বিশ্বের সচেতন মানুষও এ বিষয়টিকে গ্রহণ করবে না। আমাদের আহ্বান আসুন আমরা সবাই সহ-অবস্থান নিয়ে বসবাস করি। আপনারা এশিয়াতে, আফ্রিকায় ধর্ম প্রচার করছেন আমরা এসব জায়গায় ধর্ম প্রচার করছি। ধর্মীয় স্বাধীনতা সবারই আছে। তবে এটি নিয়ে এভাবে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়।

রেডিও তেহরান: জনাব অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হুদা, এ পর্বের সবশেষ যে বিষয়টি আপনার কাছে জানতে চাইব সেটি হচ্ছে,  কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় মুসলিম বিশ্বে যে প্রতিবাদ হচ্ছে কী যথেষ্ট?

অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা: কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় মুসলিম বিশ্বে যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে কোনো অবস্থাতেই এটি যথেষ্ট নয়। মুসলিম বিশ্বের যে শক্তি-সামর্থ্য, জনবল, অর্থ-সম্পদ এবং ভৌগোলিক অবস্থান যা কিছু আছে সেটাকে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে এটি সূচনা মাত্র। কিন্তু মুসলিম জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে একথা ঠিক কিন্তু তা অবশ্যই যথেষ্ট নয়। বর্জন নয় অর্জন সম্পর্কে যে কথা বলা বলব-প্রথমত পশ্চিমা বিশ্বসহ যারা মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ এবং রাসূল সা. কে অবমাননা করছে, আমাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে তাদের পণ্য বর্জনের আহবান জানাই। প্রতিবাদ বিক্ষোভ করি তবে বর্জনকে খুব বড় করে না দেখে আমরা নিজেরা প্রোডাক্ট তৈরি করি। আমাদের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে তাদের পণ্যকে রুখে দেয়ার চেষ্টা করি। আমাদের অর্জনকে বড় করে দেখতে হবে। এটিই হবে ভিন্ন ধরনের মূল প্রতিবাদ। মুসলিম জাতির ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, সাহিত্য, ইতিহাস ঐতিহ্য সবকিছু মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সব অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব এটাই কাম্য।

রেডিও তেহরান: তো জনাব অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হুদা  ডেনমার্কে পবিত্র কোরান পোড়ানো নিয়ে রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হুদা : আপনাকে এবং রেডিও তেহরানকেও ধন্যবাদ।

আর শ্রোতাবন্ধুরা! এ বিষয়ক আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব প্রচারিত হবে আগামী সপ্তায়। সে আসরেও আমাদের সঙ্গ দিতে ভুলবেন না। আপনারা সবাই ভালো সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন সিরাজুল ইসলাম। এটি উপস্থাপনা ও প্রযোজনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৪

ট্যাগ