জুলাই ২১, ২০২৩ ২০:৫৩ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাগত জানাচ্ছি রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান আলাপনে আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনা নিয়ে আজও কথা বলব। বিষয়টি এখন টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড।

এ নিয়ে গোটা বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে চলছে নিন্দা, সমালোচনা, প্রতিবাদ বিক্ষোভ। স্পর্শকাতর, ধর্ম অবমাননা, পবিত্র কুরআন অবমাননা ও মহানবির অবমাননা নিয়ে দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ দ্বিতীয় ও শেষ পর্বেও আমাদের সাথে অতিথি হিসেবে আছেন লেখক, গবেষক এবং কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হুদা।

জনাব মাওলানা নাজমুল হুদা রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান:  জনাব অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা,  ডেনমার্কে পবিত্র কোরান পোড়ানোর ঘটনা নিয়ে ওআইসির ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখবেন?

মাওলানা নাজমুল হুদা: ওয়াইসি একটি মুসলিম সংস্থা। এই সংস্থার কার্যকারিতা ও  তাদের যোগ্যতা তারা প্রমাণ করতে পারেনি। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি ন্যাটো জোট কিংবা ওয়ারশ জোট পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্বের জন্য সবকিছু করেছে। কিন্তু ওয়াইসি ইসলামি এই সংস্থাটি ন্যূনতম কাজ করেনি। আসল কথা হচ্ছে শক্তির কাছে কেবলমাত্র কথার কোনো মূল্যায়ন নেই। আজ মুসলিম বিশ্বের যে সমর শক্তি, অর্থনৈতিক শক্তি আছে সবকিছুকে যদি একত্রিত করে ওয়াইসির মাধ্যমে আমাদের জাতীয় স্বার্থে আমরা ব্যবহার করতে পারতাম যেকোনো জায়গায়-সেটা হোক পবিত্র কুরআন অবমাননা কিংবা রাসুল সা. কে অবমাননা, ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে বা অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে তাহলে এত বিড়ম্বনা মুসলিম বিশ্বের হতোনা। কিন্তু ওয়াইসি তেমন কোনো কাজই করেনি।  ওয়াইসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাদের উচিত সুইডেনে কিংবা ফ্রান্সে পবিত্র কুরআন পোড়ানো এবং রাসুল সা'কে অবমাননার ব্যাপারে রুখে দাঁড়ানো। ওয়াইসির মাধ্যমে সামরিক জোট গঠন করে পশ্চিমাদের এই ন্যাক্কারজনক কাজের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করা দরকার।

 রেডিও তেহরান:  ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন আপনি?

মাওলানা নাজমুল হুদা: বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে যেসব মুসলিম দেশ আছে তারমধ্যে মুসলিম জাতির স্বার্থ রক্ষায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ইরান মুসলিম জাতীয় ঐক্যের জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। পৃথিবীর যেখানেই মুসলিম জাতির স্বার্থে আঘাত এসেছে সেখানে ইরান প্রতিবাদ করছে। ইরান চেষ্টা করছে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকে প্রতিরোধ করার। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- ইরান এবং সৌদি আরবের সম্পর্ক। দীর্ঘদিন এটি বেশ খারাপ অব্স্থায় ছিল সেটি বর্তমানে অত্যন্ত সুন্দর একটা অবস্থায় ফিরে এসেছে। এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে একটা জোটে আনার জন্য ইরান –সৌদি আরব চেষ্টা করছে। সুতরাং কুরআন অবমাননার ব্যাপারে ইসলামি প্রজাতন্ত্র  ইরানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডেনমার্কে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর নিন্দনীয় ঘটনা নিয়ে বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হুদার সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব শুনছেন। ফিরছি খুব শিগগিরিই আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: আবারও ফিরে এলাম সাক্ষাৎকারে। মিউজিক বিরতির আগে  আপনি ডেনমার্কে পবিত্র কুরআনপোড়ানোর ঘটনা নিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূমিকা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা, অনেক দেশ বিশেষ করে ইরান বলছে, পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনার মধ্যদিয়ে চরমপন্থাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কী বলবেন আপনি?

মাওলানা নাজমুল হুদা:  হিংসা এবং সন্ত্রাস কখনও ভালো ফলাফল বয়ে আনেনা। পশ্চিমা বিশ্ব যদি হিসেব করত ক্রসেডে অবতীর্ণ হয়ে তাদের কি লাভ হয়েছে! যদি তারা বিষয়টি ভাবত তাহলে তাদের হিসেবে মিলানোটা সহজ হতো। ক্রসেডে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে খৃষ্টান ধর্মের। মুসলমানদেরও ক্ষতি হয়েছে তবে খৃষ্টানদের ক্ষতি হয়েছে বেশি। তারা যে হিংস্র ও আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছে তাতে সন্ত্রাসবাদকে উসকে দেয়া হয়েছে। আজকের বিশ্বের মানুষ কিন্তু সেই ক্রুসেডের দিনের কথা ভুলে যায়নি। এখন আবার নতুন করে সেই ক্রুসেডের পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।

রেডিও তেহরান: অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হুদা দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্বের সবশেষ যে প্রশ্নটি জানতে চাইব সেটি হচ্ছে- আপনি এর আগের প্রশ্নের জবাবে ক্রুসেডের দিনের কথা বলছিলেন, বলছিলেন মানুষ কিন্তু ক্রুসেডের সেই দিনগুলোর কথা মানুষ ভুলে যায়নি আবারও সেরকম পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত করলেন-এ সম্পর্কে আপনি আর কি বলবেন?

মাওলানা নাজমুল হুদা: দেখুন, পশ্চিমারা যে কাজটি করেছে সেটাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদই বলা যাবে। আর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে উসকে দেয়ার কাজই তারা করে যাচ্ছে। মানুষের পীঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখন সে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। অনন্যোপায় হয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। সুতরাং পশ্চিমাদের প্রতি আমাদের আহ্বান ইসলাম শান্তিতে বিশ্বাস করে। ইসলাম ধর্মের মানুষরা কখনও অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি অত্যাচার নির্যাতনে বিশ্বাসী নয়। ফলে আবারও আহ্বান জানাবো পশ্চিমারা যেন আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনকে আর অবমাননা না করে। কুরআনকে যেন তারা সম্মানের চোখে দেখে। আর যদি এভাবে তারা করতেই থাকে তাহলে সেই সন্ত্রাসবাদকে উসকে দেয়া হবে। তাতে শান্তির কোনো নিশানা খুঁজে পাওয়া যাবে না।

রেডিও তেহরান: তো জনাব অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হুদা  ডেনমার্কে পবিত্র কুরআন পোড়ানো এবং ফ্রান্সে মহানবি সা. কে অবমাননা নিয়ে রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

 মাওলানা নাজমুল হুদা: আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রেডিও তেহরানকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ। #

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ২১

ট্যাগ