সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ ১৪:৩৪ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো ইরানের প্রাচীন একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি হলো: সুখ কোথায়? মন যেখানে খুশি! এই প্রবাদের পেছনে যে গল্পটি রয়েছে আমরা সেটি শুনবো আজকের আসরে। গল্পটি এরকম:

এক বৃদ্ধা মায়ের একটাই সন্তান ছিল। তাদের সংসার খুব অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। একদিন ছেলে তার মাকে বললো: মা! এখানে তো কাজ-কর্ম নেই। তুমি আমাকে অনুমতি দিলে অন্য কোনো শহরে যাবো। সেখানে কাজ-টাজ খুঁজে নেবো। কিছু টাকা-পয়সা উপার্জন হলে তোমার কাছে ফিরে আসবো। মা কী আর করবে! অগত্যা অনুমতি দিলো। সেইসঙ্গে নিজের কাছে থাকা সর্বশেষ সম্বল মুদ্রাটি ছেলের হাতে দিয়ে দিলো। সাথে কিছু শুকনো রুটি আর পানি। যাবার সময় মা ছেলেকে দোয়া করে দিলো: যাও বাবা! আল্লাহর আমানতে তোমাকে সোপর্দ করে দিলাম। মায়ের দোয়া সঙ্গে নিয়ে ছেলে রওনা হয়ে গেল।

ছেলে যাচ্ছে তো যাচ্ছে। যেতে যেতে একটা বাজারে গিয়ে উপস্থিত হলো। সেখানে তার দেখা হলো এক দরবেশের সঙ্গে। বুড়ো দরবেশ ছেলেকে দেখে চীৎকার দিয়ে উঠলো: এখানে কি কেউ নেই একটিমাত্র মুদ্রা দিয়ে আমার সমগ্র জীবনের অভিজ্ঞতা কিনে নেয়? কিন্তু সেখানে কেউই ছিল না দরবেশকে একটি মুদ্রা দেওয়ার মতো। এ অবস্থা দেখে ছেলেটা মনে মনে ভাবলো: আমার কাছে তো কিছুই নেই। কেবল মায়ের দেওয়া একটিমাত্র মুদ্রাই সম্বল। ঠিক আছে ওই মুদ্রাটিই না হয় দিয়ে দেই দরবেশকে। রিজিকের মালিক তো আল্লাহ! তিনি এক ব্যবস্থা করে দেবেনই। ভেবেচিন্তে শেষ পর্যন্ত ওই মুদ্রাটি সে দরবেশকে দিয়ে দিলো এবং বললো: এবার তোমার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলো।

বৃদ্ধ দরবেশ বললো: কেউ তার নিজ অবস্থা নিয়ে সুখি নয়। সকলেই ভাবে অন্যের অবস্থায় যেতে পারলেই বোধ হয় সুখি হওয়া যেত। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে মন যেখানে খুশি সুখ মূলত সেখানেই।  সুখটাই গুরুত্বপূর্ণ, স্থান কিংবা অবস্থান নয়। দরবেশের অভিজ্ঞতার কথা শুনে যুবক তার পথে রওনা হলো আবার। যেতে যেতে পড়লো একটা মরুভূমি। সেখানে সে বহু মানুষকে দেখতে পেল একটা পানির কূপকে ঘিরে তারা ভিড় জমিয়েছে। ছেলে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো: এখানে কী হয়েছে? লোকজন বললো: আমাদের কাফেলা এই কূপ থেকে পানি সংগ্রহের আশায় এখানে এসেছে। এখন আমরা সবাই যেমন তৃষ্ণার্ত তেমনি আমাদের গরু, দুম্বা, ঘোড়াগুলোও তৃষ্ণার্ত। কূপে বেশ কয়েকবার বালতি ফেলে পানি তোলার চেষ্টা করেছি কিন্তু সবকটা বালতিই কূপে রয়ে গেছে। খালি রশিটা আছে। এরপরের গল্প শুনবো খানিক পরে।

ব্যাপারটা বুঝে উঠতে না পেরে আমরা একজনকে কূপে নামিয়েছি। কিন্তু সেও আর উঠে আসে নি। কূপের ভেতরে যে কী হচ্ছে-আল্লাহই ভালো জানে। ছেলেটা মনে মনে ভাবলো ব্যবসায়ীদের কাছে নিজের শক্তিমত্তা প্রমাণ করার সুযোগটা হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। আশা করেছিল এই কাফেলায় হয়তো তার একটা কাজ জুটে যেতে পারে। তাই সে বললো: দেখি কূপের ভেতর কী আছে। কাফেলার কেউ তো কূপে নামতে রাজি ছিল না তাই তারা সহজেই যেতে দিলো। কোমরে দড়ি বেঁধে কূপের ভেতর নেমে গেল ছেলে। কূপের দেয়াল ধরে ধীরে ধীরে সে নীচে পানি পর্যন্ত নেমে গেল। বালতি খুঁজতে পানিতে নামতে যাবার সময় কালো এক দানব ভেসে উঠলো। যুবক এবার ভয় পেয়ে দানবকে সালাম করলো। দানব হেসে দিয়ে বললো:

সালাম তো শান্তি নিয়ে আসে। যাই হোক, তুই যেহেতু আদব-কায়দা জানিস! তোকে একটা প্রশ্ন করবো। যদি সঠিক জবাব দিতে পারো তাহলে ফিরেও যেতে দেবো এবং পানিও নিতে দেবো। আর যদি অসংলগ্ন জবাব দাও তাহলে তোর আগে যারা এখানে এসেছে তাদের মতো তোকেও ওই অন্ধকারে আটকে রাখবো। যুবক মনে মনে বললো: কী আর করা! আল্লাহর ওপর ভরসা করে বললো: ঠিক আছে,বলো তোমার প্রশ্ন! দানব বললো: সুখ কোথায়? যুবক মনে মনে বললো: কে না জানে এই পৃথিবীতে, বাগ-বাগিচায়। আবার ভাবলো এই জবাব দিয়ে কূপবাসী দানবকে সন্তুষ্ট করা যাবে না কারণ সে তো অন্ধকার কূপে থাকে। হঠাৎ দরবেশের কথাটা মনে পড়লো তার। সে জবাব দিলো: এটা তো জানা কথা। মন যেখানে খুশি সেখানেই সুখ! সেটা যে স্থানেই হোক না কেন!

যুবকের জবাব শুনে দানব খুশি হয়ে বললো: তুমি তো বেশ জ্ঞানী এবং জীবন অভিজ্ঞ! এর আগে যারা এসেছে তারা বলেছে: পৃথিবীর বুকে বাগ-বাগিচায় সুখ। অথচ আমি এই জায়গায় থাকতে ভালোবাসি। এখানেই আমার সুখ। যাও! বালতিগুলো নিয়ে যাও! তোমাকে তিনটা আনার দিচ্ছি। এগুলো সম্পর্কে কারও সঙ্গে আলাপ করবে না-যতক্ষণ না বাড়ি যাচ্ছো। যুবক পানি ভর্তি বালতিগুলো নিয়ে উঠে এলো কূপ থেকে। সব কথা খুলে বললো কাফেলাকে। কেবল আনারের কথা বললো না। কাফেলা তাকে ধন্যবাদ জানালো এবং সেও কাফেলার সঙ্গে নিজ শহরে গিয়ে উঠলো। কাফেলা তাকে একটি গরু এবং একটি দুম্বা হাদিয়া দিয়ে বললো: আমরা এই শহরে কিছুদিন থাকবো। তারপর চলে যাবো। তুমি যদি চাও আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারো। যুবক কাফেলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের কাছে গেল। মা ছেলেকে পেয়ে ভীষণ খুশি হয়ে গেল এবং বললো: এত দ্রুত ফিরবে-ভাবি নি! খুব ভালো হলো ফিরে এসেছো!

ছেলে বললো: আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছে। একটা গরু এবং দুম্বা পেলাম। কিছুদিন পর কাফেলার সঙ্গে কাজও করতে পারবো। রাতের বেলা মা-ছেলে খাবার খেয়ে ঘুমালো। ছেলের তো ঘুম আসে না। পকেট থেকে একটা আনার বের করে চামড়া ছাড়াতেই দেখলো বিচিগুলো জ্বলজ্বল করছে। সে বুঝতে পারলো ওগুলো সব হীরক কণা। ভীষণ খুশি হয়ে গেল। সে আর কাফেলার সাথে গেল না। কয়েকটি হীরক কণা বাজারে বিক্রি করে একটা দোকান কিনলো এবং ব্যবসা শুরু করে দিলো। ওই ঘটনার পর থেকে অভাব অনটনের মধ্যেও যারা খুশি থাকে তাদের সম্পর্কে বলা হয়: সুখ কোথায়? মন যেখানে খুশি থাকে।#

পার্সটুডে/এনএম/৩০/১০৫

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

 

ট্যাগ