ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩ ১৩:২৭ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ২৮ ডিসেম্বর বুধবারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • এখন টাকার সংকটেও ভুগছে ব্যাংকগুলো-প্রথম আলো
  • দ্য টেলিগ্রাফের নিবন্ধ বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন এবং ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি-মানবজমিন
  • রাজনীতি ভোট বানচালে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী-ইত্তেফাক
  • মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে  ইসির বৈঠক-যুগান্তর

কোলকাতার শিরোনাম:

  • লোকসভা ভোটে মোদির সাফল্য কামনায় পুতিন -সংবাদ প্রতিদিন
  • ডিজিটাল মিডিয়া সেন্সরে মোদীর নতুন হাতিয়ার ব্রডকাস্টিং বিল–গণশক্তি
  • রাহুল-যাত্রা: থাকবে কি তৃণমূল-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • ১ জানুয়ারি থেকে রেশন বন্ধ-আজকাল

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. বিদেশে ২৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা; সেই মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এই খবর দিয়েছে দৈনিক মানবজমিন। কী বলবেন আপনি?

২. গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে ইরাকি প্রতিরোধ যোদ্ধারা হামলা চালিয়েছে। তাতে কী গাজার চলমান সংঘাতের বিস্তৃতি ঘটছে বলে আপনার মনে হয়?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:

রাজনীতি ভোট বানচালে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী-ইত্তেফাক

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি জানে নির্বাচনে অংশ নিলে পরাজিত হবে। তাই ভোট বানচালে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে দেশটি।’ বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে গণভবনে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাসে আহত সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যায়িত করে বলেন, ‘বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তারা একটি সন্ত্রাসী দল।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা পার পাবে না। তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’

তবে দৈনিকটির অপর এক খবরে লেখা হয়েছে, ফুঁসছে জনগণ, সরকারের পতন অনিবার্য: রিজভী 

জনগণ ফুঁসে উঠেছে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসন-রাষ্ট্রযন্ত্র সবকিছু ধ্বংস করেছে। ১৮ কোটি জনগণের রুদ্ররোষ থেকে তারা পার পাবে না। এই পরগাছা, পরজীবী, আর্টিফিসিয়াল সরকারের পতন অনিবার্য। 

মতামত •    সাংবাদিক কামাল আহমেদের মতামত কলামের শিরোনাম-

৭ জানুয়ারির আয়োজন থেকে যেসব শিক্ষা মিলছে-প্রথম আলো

শত্রুর (বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, সিপিবি অথবা সরকারবিরোধী যেকোনো দলের নাম পড়া যেতে পারে) মুখে ছাই দিয়ে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নামক আয়োজন প্রমাণ করে দিচ্ছে, দেশে আসলেই চমক লাগানো উন্নয়ন হয়েছে। নির্বাচনের জন্য যে হলফনামা দিতে হয়, সম্পদের বিবরণ ও আয়কর দেওয়ার প্রমাণ দিতে হয়, তা থেকে প্রার্থীদের সম্পদ ও আয় বৃদ্ধির যেসব চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে যাঁরা উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করেন, তাঁদের নিশ্চয়ই মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।

মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় বৃদ্ধির হিসাব নিয়ে আর কোনো সন্দেহের অবকাশই থাকতে পারে না। সপ্তাহ দুয়েক ধরে সংবাদমাধ্যমে প্রার্থীদের সম্পদ ও আয় দুটোই কমেছে, এমন কারও কথা শোনা গেল না।

৯০ শতাংশের সম্পদ বেড়েছে; কারও ৪ গুণ, কারও ৪০০ গুণ, সর্বোচ্চ ৬০০ গুণের বেশি। বর্তমান যুগে কারও কাছে নগদ টাকা কোটির বেশি থাকতে পারে, এমনটা ধারণা করাও কঠিন। কিন্তু আছে; কারও কারও কাছে কয়েক কোটি নগদ টাকা আছে।

তবে সরকারবিরোধীরা নির্বাচন না করায় নির্বাচন শুধু যে একতরফা হচ্ছে তা–ই নয়; সরকার–সমর্থকদের সমৃদ্ধির চিত্র প্রকাশের ব্যাপারটাও একতরফা হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে ‘ব্যাংক ডাকাত’, ‘শেয়ারবাজার লুটেরা’, ‘দুর্নীতির রেকর্ডধারী’, ‘টাকা পাচারকারীর’ মতো নানা ধরনের বিশেষণ একটু বেশিই শোনা যাচ্ছে। এখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ১৮ জন শতকোটিপতি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আর প্রার্থীদের ৮৭ শতাংশই কোটিপতি।

আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ধারা শুরুর আগে কোটিপতি প্রার্থী ছিলেন ২৭ শতাংশ। তারা একজন মন্ত্রীর বিদেশেও হাজার আড়াই কোটি টাকার সম্পদের তথ্য তুলে ধরে বলেছে, তিনি হলফনামায় এসব তথ্য দেননি। অতএব অনুমান করা অন্যায় হবে না যে হলফনামায় সবাই সব সম্পদের হিসাব দেননি। এসব হিসাব আবার সম্পদ কেনা হয়েছে যে দামে, সেই হিসাবে, বর্তমান বাজারমূল্যে নয়। বর্তমান বাজারমূল্যে হিসাব করলে তা বহুগুণে বেড়ে যাবে।

ক্ষমতায় থাকার বা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে থাকার এত যে আর্থিক সুবিধা, সেটা নিয়ে অনেক কানাঘুষা ছিল। কিন্তু এখন আমরা তা নিশ্চিত তথ্য হিসাবে জানতে পারছি। 

রাজনীতির আসল প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাদ দিয়ে নকল প্রতিদ্বন্দ্বী (ডামি প্রার্থী) দাঁড় করিয়ে যে নির্বাচন সাজানো হয়েছে, তাতে ভোটাররা পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ না পেলেও এ আয়োজন থেকে অনেক কিছুই জানতে পারছেন। আমরাও রাজনীতির নতুন নতুন কৌশল সম্পর্কে শিক্ষা নিচ্ছি। 

উন্নয়নবিষয়ক জ্ঞানলাভ ছাড়া এ পর্যন্ত আর কী কী শিক্ষা পাওয়া গেল, তার একটা তালিকা দাঁড় করানোই আজ আমার অনুশীলন। যা কিছু বাদ পড়ে যাচ্ছে, তার জন্য অধমের অজ্ঞতাকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজেরা প্রয়োজনমতো তালিকাটি সমৃদ্ধ করতে পারেন।

—বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ের চেয়ে অন্তর্দলীয়, গোষ্ঠীগত বা উপদলীয় লড়াই গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করে। যে কারণে দলীয় টিকিটে ২৬৩ জনকে মনোনয়ন দিলেও দলের ২৬৯ জনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দেওয়া সম্ভব।

দলের গঠনতন্ত্রে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা থাকলেও এবং অতীতে এ অপরাধে শত শত দলীয় নেতা–কর্মীকে বহিষ্কার করা হলেও গণতন্ত্রকে নতুন রূপ দেওয়ার জন্য তা সহি।

—বিরোধী দল নির্বাচনে থাকলে পাল্টাপাল্টি প্রচারযুদ্ধ যতটা হিংস্র বা সহিংস হওয়ার আশঙ্কা করা হয়, দল ও জোটের আসল ও নকল প্রার্থীর প্রচারযুদ্ধ তার চেয়ে বেশি উগ্র ও রক্তক্ষয়ী হওয়া কোনো সমস্যা নয়। এ রকম লড়াইয়ে তিনজনের প্রাণহানির পরও পরিস্থিতি নিয়ে ন্যূনতম উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং বাংলাদেশে নির্বাচনের সঙ্গে মারামারি ও রক্তারক্তি যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রমাণ, তা তুলে ধরাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

—উপদলীয় ও গোষ্ঠীগত সংঘাত ইতিমধ্যেই যতটা ব্যাপকতা পেয়েছে, তাতে বিরোধীদের আন্দোলনের কথিত নাশকতা জনমানসে অচিরেই হারিয়ে যাবে।

—নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে শুধু দল নয়, মহাজোটেও গোষ্ঠীগত লড়াইকে উৎসাহিত করা। এর ফলে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জাতীয় পার্টির নেতারা নামকাওয়াস্তের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চাইলেও এখন আসন হারানোর আশঙ্কায় নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছেন। আগে তাঁরা যতগুলো আসনে ছাড় পেয়েছিলেন, এবার তা অর্ধেকে নামায় তাঁরা বুঝতে পারছেন, ভবিষ্যতে বড় নেতাদের টেবিলে তাঁদের জন্য আর কোনো জায়গা থাকবে না।

—বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার পর রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার লক্ষ্য অর্জনে এমন ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে অনুগতদের মধ্য থেকেই নকল (ডামি) বিরোধী দল দাঁড় করানো সহজ হয়। তবে তারা যাতে কোনোভাবেই আত্মনির্ভর হতে না পারে, সে জন্য আসন ভাগাভাগিতে বিরোধী দলের মর্যাদার জন্য প্রয়োজনীয় ৩০ আসনের চেয়েও কম—২৬ আসনে ছাড় দেওয়া।

—গণতন্ত্রের এই নতুন ধারায় দলবদলে রাজি হলেই, অর্থাৎ বিএনপির সঙ্গ ছাড়লেই জামিনে মুক্তি ও নৌকার মনোনয়ন—দুটোই যে মেলে, শাহজাহান ওমর তার প্রমাণ রেখেছেন। বিরোধী নেতার ওজন বুঝে নৌকার প্রার্থীকে সরিয়ে নেওয়াও যে অসম্ভব নয়, তারও প্রমাণ রেখেছেন জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম।

—নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণ প্রতিনিধিত্বমূলক না হলে বা প্রশ্নবিদ্ধ হলে ধরেবেঁধে এনে হলেও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কর্মসূচি গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে বৈধ, অবৈধ বা নীতিনৈতিকতার কোনো বালাই নেই। রাষ্ট্রের হাতে যত রকম হাতিয়ার আছে, তার সবই প্রয়োগ করা যায়। প্রান্তিক ও বিপন্ন মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হলেও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে হাজির করার নতুন নজির তৈরি করা। সন্দেহ নেই, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ভাতার বড় ধরনের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে, যার সংখ্যা সরকারি হিসাবে এখন ১ কোটি ২৮ লাখ। সংখ্যাটা মোট ভোটারের প্রায় ১১ শতাংশ। দুর্দিনের বাজারে মাসিক ভাতা হারানোর ভয় তো উপেক্ষা করার মতো কিছু নয়।

—স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা এবং সিটি কাউন্সিল কর্মকর্তারা নাগরিকদের যেসব সেবা দেওয়ার জন্য আইনগতভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাঁরা যেহেতু প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের (বিএনপির অতীত বর্জনের কারণে) সদস্য। তাঁদের কেউ কেউ হুমকি দিয়েছেন, ভোটকেন্দ্রে যাঁরা যাবেন না, তাঁরা তাঁদের কোনো সেবা পাবেন না।

—২০১৮ সালের নির্বাচন যাদের কল্যাণে রাতের ভোট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, তাদের একাংশ পুলিশ এখন অতি উৎসাহী হয়ে ভোটার হাজির করার অভিযানে নেমেছে। ঢাকায় তারা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের ভোটার হাজির করার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বের কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু তাদের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেওয়ার দায়িত্ব বা কর্তৃত্ব কোন আইনে আছে? দেশের বিরোধী দলগুলো যখন ভোট বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছে, তখন তাদের উদ্যোগকে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি বিশেষ সেবার নতুন নজির ছাড়া আর কিছু কি বলা চলে?

দেশে ভোট দেওয়া আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়, আবার কাউকেই পছন্দ নয় জানানোর এমন ব্যবস্থা ব্যালটে নেই। এমনকি, নষ্ট ব্যালটের সংখ্যা মোট ভোটের অর্ধেকের বেশি হলেও নির্বাচনের ফল বা বিজয়ী ঘোষণায় কোনো বাধা নেই। এর ফলে কোনো পছন্দ না থাকলেও ভোট দিতে বাধ্য করা অত্যাচারের সঙ্গেই তুলনীয়। 

নাগরিকদের ন্যায্য প্রাপ্য বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুবিধাকে দলীয় লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার করার যেসব নীতিহীন পদক্ষেপ এবং ভয় দেখানোর মাধ্যমে জবরদস্তি করে ভোট আদায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হচ্ছে, ভবিষ্যতে তার শিকার যে আওয়ামী লীগও হতে পারে, সে কথা তারা হয়তো বিস্মৃত হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস বলে, ১৯৭৪ সালে তাদের তৈরি বিশেষ ক্ষমতা আইনে আশির দশকে তারাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছিল।

দ্য টেলিগ্রাফের নিবন্ধ বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন এবং ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি-মানবজমিন

বাংলাদেশ তার পরবর্তী সরকার বেছে নিতে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে প্রস্তুত। তবুও ভোট দেয়ার আগেই, অনুশীলনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্নগুলি দেশের গণতন্ত্রকে  অস্থিতিশীল করার হুমকির মুখে দাঁড় করায়। সতর্ক না হলে ভারতও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির টানাপড়েনে জড়িয়ে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের নির্বাচনে জয়ের পথ প্রশস্ত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এই জয় হবে বিজয়ীর জন্য বড় ক্ষতির মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে বড় বিরোধী শক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করছে, এটাকে ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য গণভোটের চেয়ে কিছুটা কম করে দেখা হবে। একই সঙ্গে এটা হবে দেশের গণতন্ত্রের জন্য পরীক্ষা। শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং সাম্প্রতিক মাসগুলিতে তার শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ক্রমবর্ধমান মাত্রা ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশে অনেকেই ২০২৩ সালে একটি অর্থবহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে পছন্দ করেন। কিন্তু অনেক বিশ্লেষক  এখন  এই নির্বাচনকে ‘এক ঘোড়ার দৌড়’ বলে মনে করছেন। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, বিএনপির ভোট বয়কটের সিদ্ধান্তের পক্ষে তার যুক্তি যাই হোক না কেন- তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষে সহায়ক হবে না। 

তবে বাংলাদেশের সরকারই জনগণের কাছে সবচেয়ে বেশি জবাবদিহির মুখে।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমনপীড়ন, বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস হামলা এবং একাধিক গ্রেপ্তার উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উজ্বলতাকে ম্লান করেছে। এই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করেছে। ভারত ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের সাথে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারণ বিএনপি ইসলামপন্থি দল এবং নয়া দিল্লির সমালোচক গ্রুপগুলির সাথে সম্পৃক্ত। অতীতের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত সতর্কতা অবলম্বন করেছে, যাতে আওয়ামী লীগের প্রতি  প্রকাশ্য সমর্থন অনুধাবন না করা যায়। তবুও, বাংলাদেশে, নয়া দিল্লি ক্ষমতাসীন সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে এমন ধারণা ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। ক্ষমতায় থাকা দলের বিরুদ্ধে যদি জনপ্রিয়তা  আরও  কমে যায় তবে ভারতও সেই প্রভাব অনুভব করবে- যেমনটি দক্ষিণ এশিয়ার  অন্যত্র সাম্প্রতিক নির্বাচনে ঘটেছে। এদিকে, বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাবও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেড়েছে, তাই হাসিনার  ক্ষমতায় ফিরে আসা এই অঞ্চলে তার প্রধান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ভারতের হাতকে শক্তিশালী করবে না। যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে তার আনুষ্ঠানিক বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের অনুভূতিকে সমর্থন করা উচিত নয় ভারতের জন্য।

যাইহোক, বাংলাদেশে রাজনৈতিক যেকোনো সম্ভাব্য অস্থিরতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে ভারতকে। বাংলাদেশ নীতি নিয়ে ভারতের জন্য ‘রেড লাইন’ টানার সময় এসে গেছে।

এখন টাকার সংকটেও ভুগছে ব্যাংকগুলো-প্রথম আলো

ডলার–সংকটের পাশাপাশি দেশের ব্যাংকগুলো এখন টাকার সংকটেও ভুগছে। ফলে ব্যাংকগুলো যে হারে টাকা ধার করে, সেই হার দ্রুত বাড়ছে। অনেক ব্যাংককে উচ্চ সুদে আমানতও সংগ্রহ করতে হচ্ছে। জে৵ষ্ঠ ব্যাংকার ও খাতবিশেষজ্ঞরা তারল্যের এই সংকটের জন্য তিনটি কারণকে দায়ী করছেন।

এগুলো হলো—বারবার ছাড় ও সুবিধা দেওয়ার কারণে ঋণ পরিশোধের সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়া, সরকারের উচ্চ সুদে টাকা ধার নেওয়া ও বেশি দামে ডলার সংগ্রহ। তারল্যসংকট মোকাবিলায় এখন ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থ ধার করতে হচ্ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারের রাজস্ব আদায় কম, তাই তারা ট্রেজারি বিল-বন্ডের মাধ্যমে উচ্চ সুদে টাকা ধার করে যাচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারকে খরচ কমিয়ে আনতে হবে, নতুন প্রকল্প নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছর শেষে ঋণ পরিশোধে আবার ছাড় মিলবে—এমন প্রত্যাশায় অনেক ব্যবসায়ী গ্রাহক ঋণের টাকা ব্যাংকে ফেরত না দিয়ে অপেক্ষা করছেন। পাশাপাশি সরকার উচ্চ সুদে বন্ডের মাধ্যমে টাকা ধার করায় ব্যাংকগুলো আমানত পেতে সমস্যায় পড়ছে। অন্যদিকে ডলার কিনতে ব্যাংকগুলোকে ব্যয় করতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। দুই বছর আগে যে ডলার কিনতে ৮৫ টাকা খরচ হতো, তার আনুষ্ঠানিক দরই এখন ১১০ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে ১২৩ টাকাও খরচ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এই টাকা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকদের থেকে পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

লোকসভা ভোটে মোদির সাফল্য কামনায় পুতিন-সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাফল্য কামনা করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুধু তাই নয়, বুধবার মস্কোয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে সাক্ষাতে ‘বন্ধু’ মোদিকে রাশিয়া আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

গতকাল মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জয়শংকর। ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজা সংঘাতের আবহে এই বৈঠকের গুরুত্ব যে অপরিসীম তা বলাই বাহুল্য। আমেরিকা ও পশ্চিমের দেশগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখলেও সময় পরীক্ষিত বন্ধু রাশিয়ার পাশেই থেকেছে ভারত। ভূকৌশলগত কারণে চিনকে নজরে রেখে এবং ভূরাজনীতির সূত্র মেনে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে বরাবরই উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে নয়াদিল্লি। সেই প্রয়াস যে কতটা সফল তা স্পষ্ট হয়ে গেল জয়শংকর-পুতিন বৈঠকে।সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ইউক্রেন সমস্যা সমাধানে ভারতের সাহায্য চেয়েছে রাশিয়া (Russia)।

মিশন লোকসভা, সংঘ সদরে আজ যুদ্ধ ঘোষণায় তিন গান্ধী-সংবাদ প্রতিদিন

ব্রিটিশ অত‌্যাচার থেকে মুক্তি পেতে ১৯২০ সালে কমলালেবুর শহরে

বার্ষিক অধিবেশন থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল কংগ্রেস (Congress)। তার ১০৩ বছর পর সেই নাগপুর থেকেই ‘হ্যায় তৈয়ার হাম’ স্লোগান তুলল দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। এবার লক্ষ্য বিজেপির ‘অপশাসন’ থেকে দেশকে, দেশবাসীকে মুক্তি দেওয়া। বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের ১৩৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস। এই উপলক্ষে আরএসএসের ভরকেন্দ্র থেকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের পাঞ্চজন্যে ফুঁ দিতে চলেছেন খাড়গে-গান্ধীরা।

বুধবার সকালে ডা. বাবাসাহেব আম্বেদকরের নামাঙ্কিত বিমানবন্দর থেকে শহরের ভিতরে যাওয়ার পথে এক বারও মনে হল না, এই শহর আরএসএসের (RSS) আঁতুড়ঘর। মনে হল না এই শহরের ঠিকানাই জ্বলজ্বল করছে জনৈক মোহন ভাগবতের (Mohan Bhagwat) আধার কার্ডে। কে এই ভাগবত? যাঁর হাতে মোদি-শাহদের বিজেপির রিমোট কন্ট্রোল। যিনি নাকি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সর্বাধিনায়ক। উল্টে শহরের এদিক-ওদিক প্রবল, প্রকাণ্ড উপস্থিতি মল্লিকার্জুন খাড়গে (Mallikarjun Kharge), সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী নামের সেই মানুষগুলোর, যাঁদের পরিচয়পত্রের স্থায়ী ঠিকানায় রয়েছে গুলবার্গ অথবা দিল্লির পিনকোড। এক গাল হাসি মুখ নিয়ে হাতজোড় করে যাঁরা ছেয়ে রয়েছেন শহরজুড়ে।

কংগ্রেসের প্রচারে বাধা দিতে বম্বে হাই কোর্টের এক রায়কে হাতিয়ার করে আসরে নেমে পড়েছে নাগপুর পুরসভা। শহরের সৌন্দর্যকে রক্ষা করতে আদালতের নির্দেশে যত্রতত্র ব্যানার-হোর্ডিং লাগানো অবৈধ। এই রায়কে ঢাল করেই গত দু’দিন ‘হ্যায় তৈয়ার হামে’র প্রচুর হোর্ডিং ভেঙে ফেলা হয়েছে। নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে ‘আইওয়াশ’ হিসাবে বলি গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের কিছু হোর্ডিংও। তবে এইসব খুচরো বাধাকে একটিপ নস্যির মতো ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা।

এই প্রথম নাগপুরে একসঙ্গে মঞ্চে দেখা যাবে তিন গান্ধীকে। সঙ্গে আবার কংগ্রেস সভাপতিও। থাকার কথা প্রায় প্রত্যেক সাংসদ-সহ সর্বভারতীয় স্তরের প্রায় ২৫০ নেতার। দেশজুড়ে ৬০০ বিধায়কের অন্তত অর্ধেকও সম্ভবত থাকবেন বৃহস্পতিবার। এই মেগা আবহে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, কৃষক আত্মহত্যার মতো জ্বলন্ত সমস্যাকে সামনে রেখে জনস্রোত বইয়ে দিতে মরিয়া নাগপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কংগ্রেস কর্মীরা। যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বে র‌্যালির প্রচারে আয়োজন করা হয়েছে বাইক মিছিল। সভার কথা মাথায় রেখে আজাদ ময়দানের নামকরণ করা হয়েছে ভারত জোড়ো (Bharat Jodo) ময়দান হিসাবে। আজাদ ময়দানে গিয়ে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চৌহান, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজয় ওয়াদেত্তিয়ার, প্রদেশ সভাপতি নানা পাটোলেরা। কংগ্রেসের দাবি, লক্ষ্মীবারে এখানেই বাজিয়ে দেওয়া হবে ভোট যুদ্ধের পাঞ্চজন্য। শুরু হবে দেশ, দেশবাসীকে বাঁচানোর ধর্মযুদ্ধ। এই ধর্মযুদ্ধে ধর্মের যুদ্ধ কতখানি হয়, তাও দেখার।

রাহুল-যাত্রা: থাকবে কি তৃণমূল-আনন্দবাজার পত্রিকা

হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপির কাছে হার মানতে হয়েছে। বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র আসন সমঝোতা কতটা বাস্তবায়িত হবে, এখনও তা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন ঝুলছে। রামমন্দির ঘিরে হিন্দু ভাবাবেগ উস্কে দিতে নরেন্দ্র মোদী আসরে নামছেন।

এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে রাহুল গান্ধী আজ ‘হাতের শেষ তাস’ টেবিলে ফেললেন। আবার ভারত যাত্রা। দক্ষিণ থেকে উত্তরের পরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার পরে এ বার রাহুল গান্ধী মণিপুর থেকে মুম্বই পর্যন্ত ‘ভারত ন্যায় যাত্রা’ শুরু করতে চলেছেন। রামমন্দির উদ্বোধনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে, ১৪ জানুয়ারি যাত্রা শুরু হবে। তবে এই যাত্রা যখন পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে যাবে, তখন তৃণমূল কংগ্রেসের মতো ‘ইন্ডিয়া’-র শরিক দল তাতে অংশ নেবে কি না, তা এখনও অস্পষ্ট। তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গে আসন সমঝোতা হবে কি না, তা এখনও ঠিক হয়নি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ২৮