ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩ ১৯:১১ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছ তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভালো ও সুস্থ আছো। রংধনুর আজকের আসরে তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশিদ এবং আমি আকতার জাহান।

বন্ধুরা, আজকের আসরের শুরুতেই থাকবে এক নীতিবান রাজা ও বুড়ির গল্প। গল্পটি লিখেছেন সিদ্দিক আবু বকর। গল্পের পর থাকবে একটি আবৃত্তি। আর সবশেষে থাকবে একটি গান। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান। তাহলে আর  কথা না বাড়িয়ে শুরু করছি আজকের আসর।

অনেক দিন আগের কথা। এক রাজ্যে ছিল এক বুড়ি। জগতে আপন বলতে বুড়ির কেউ ছিল না। গরিব হলেও বুড়ি ছিল পরিশ্রমী। এটা ওটা করে তার দিন ভালোই কাটতো।

একবার হলো কী! রাজ্যে টানা সাতদিন সাতরাত বৃষ্টি আর বৃষ্টি! ঘর থেকে পা ফেলার জো নেই। বুড়ির ঘরে দানাপানি যা ছিল, টেনেটুনে পাঁচদিন চলেছে। গত দু’দিন বুড়ি এক্কেবারে উপোস! ক্ষিধের জ্বালা কঠিন জ্বালা। ঘরে খাবার না থাকলে তো দ্বিগুণ জ্বালা। ক্ষুধার জ্বালা কি আর পানিতে মেটে? উপায় না পেয়ে বৃষ্টি মাথায় করে, বুড়ি ছুটল রাজদরবারে।

রাজা ছিলেন পরম দয়ালু। জীর্ণ-শীর্ণ বুড়িকে দেখে রাজার খুব মায়া হলো। মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন কী তার সমস্যা।

মন্ত্রী জানালেন, “মহারাজ! বুড়ি আপনার রাজ্যের প্রজা। খাবার বলতে যা ছিল বিগত পাঁচদিন চলেছে। দু’দিন ধরে পেটে কোনো দানা-পানি নাই। সে ভীষণ ক্ষুধার্ত। রাজা আর সইতে পারলেন না। হৃদয় তার হাহাকার করে উঠল। একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ! দুই দিন না খেয়ে! তাও আমার রাজ্যে? শীঘ্রই বুড়িমার জন্য উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করো।”

রাজার কথায় খুশি হলো বুড়ি। আবেগে ভরা মজলিসে কেঁদে ফেলল সে। কাঁপা কাঁপা গলায় বুড়ি বলতে লাগল, “আপনার কথায় অনেক খুশি হলাম মহারাজ। রাজভোগ চাই না আমার। দুই কেজি আটা হলে এই গরিবের চলে যায়।”

রাজা মন্ত্রীকে বললেন, তাই দাও। আটার ঝাঁপি কাঁখে নিয়ে বুড়ি হাঁটছে বাড়ির দিকে। পথিমধ্যে শুরু হলো ঘূর্ণি বাতাস। বাতাসে বুড়ি নিজেকেই সামলাতে পারছিল না। কখন যে আটার ঝাঁপি উদোম হয়েছে, বুঝতেই পারেনি বুড়ি। যা হবার তাই হলো! দুষ্ট ঘূর্ণি বাতাস সব আটা নিলো উড়িয়ে। আটা খুইয়ে বুড়ির তো মাথায় হাত। পথিমধ্যে বসে পড়ল বুড়ি। আর হাউমাউ কান্না জুড়ে দিলো।

সে পথ দিয়েই যাচ্ছিল এক ছোট্ট ছেলে। বুড়িকে কাঁদতে দেখে থমকে দাঁড়ালো সে। বুড়িকে জিজ্ঞেস করল, বুড়ি মা! কাঁদছো কেন? কী সমস্যা তোমার?”

বুড়ি তার দুর্ভাগ্যের কথা খুলে বলল ছোট্ট ছেলেকে। সব শুনে ছেলেটি রেগে গেল বাতাসের উপর। সে উচ্চস্বরে বলতে লাগল, “পাজি বাতাস…! কাজটা তুমি ঠিক করোনি মোটেও। এটা ভারী অন্যায়। এর বিচার হওয়া চাই। বুড়ি বলল, সে কী করে হয় বাপু? বাতাস চলে স্রষ্টার ইচ্ছায়। তার কি বিচার করা চলে?”

ছেলেটি ধমকে ওঠে, নিশ্চয়ই চলে। রাজা এতো কিছুর বিচার করেন। বাতাসেরও করবেন। ঘটনা তো তার রাজ্যে ঘটেছে, তাই না! ছেলেটি আর কোনো কথা শুনতে চাইলো না। বুড়িকে নিয়ে সোজা রাজদরবারে হাজির। 

বুড়িকে দেখে অবাক হলেন রাজা। কিছুটা বিরক্তও। আবার কী মতলবে বুড়ির আগমন। মন্ত্রী, আবার কী সমস্যা বুড়ির? মন্ত্রী জানাল, বিচার চাইতে এসেছে মহারাজ। রাজা বললেন: বিচার! কার বিরুদ্ধে? কীসের বিচার? মন্ত্রী পুরো ঘটনা খুলে বলে রাজাকে।

সব শুনে রাজা বললেন, সবই তো বুঝলাম। কথা হচ্ছে- বাতাসের বিচার করা আমার সাধ্যে নাই। মন্ত্রী, বুড়িকে দুই কেজি নয়। দুই বস্তা আটা দিয়ে দাও। আর হ্যাঁ অবশ্যই বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দাও। যেই না বুড়ি রাজি হতে যাবে…! ছেলেটি ইশারায় না করল বুড়িকে।

বুড়ি বলে উঠল, না মহারাজ! আমি বিচার চাই। বুড়ির কথা শুনে রাজা গেলেন ক্ষেপে, বাতাস কি আমার প্রজা? আমি কীভাবে বিচার করব? যাও যাকে দিয়ে পারো বাতাসের বিচার করাওগে। আমার পক্ষে একাজ সম্ভব নয়।

এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ছেলেটি। মহারাজ! বেয়াদবি নেবেন না। যদি চান, এই বিচারকার্যে আমি আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি”, আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল ছেলেটি।

রাজা মৃদু হাসলেন বটে, অনুমতিও দিলেন। শুধু বললেন, সহযোগিতা তোমার নিলাম। ন্যায় বিচারে কিন্তু কোনো ছাড় দিতে পারবো না বালক। ছেলেটিও জবাব দেয়, ঠিক আছে। তবে শর্ত আমারও একটা আছে হুজুর। রাজা বলেন, কী তোমার শর্ত? ছেলেটি বলল, শর্ত তেমন কিছু না। আপনার শর্তই আমার শর্ত। যার যা ন্যায্য পাওনা নিশ্চয়ই তা ফিরিয়ে দেবেন।

রাজা বলেন, অবশ্যই। নীতির প্রশ্নে কোনো আপস নাই বালক।

সমুদ্র উপকূল থেকে বাতাসকে ডাকা হলো। শুরু হলো বিচার। বুড়ি তার অভিযোগ তুলে ধরলো মজলিসে। ছেলেটি বাতাসের কাছে জানতে চাইলো, আচ্ছা বাতাস, বুড়ির অভিযোগ কি ঠিক? এক শব্দে জবাব দেয় বাতাস, ঠিক। ছেলেটি আবার জানতে চাইলো, একজনের আহার কেড়ে নেয়া কি অন্যায় নয়? বাতাসের চটজলদি জবাব, অন্যায়। তবে…!

ছেলেটি জানতে চাইল: তবেটা কী জনাব বাতাস? একটু খুলে বলা যায়?

জ্বি যায়। আটা আমি নিয়েছি। একটু তাড়াহুড়ো ছিল। অনুমতি নেবার ফুসরত পাইনি। বাদশার খাদ্যজাহাজ হাঙরের কামড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাহাজের তলায় সামান্য ফাটল ধরে। নাবিক তা জানে না। জাহাজটি ডোবার ভয় ছিল। বুড়ির আটায় জাহাজের ফাটল মেরামত করেছি। জাহাজকে তীরে ভিড়তে সহায়তা করেছি। প্রজাদের খাদ্য রক্ষা করেছি। এতে যদি অন্যায় হয়ে থাকে… শাস্তি পেতে কোনো আপত্তি নাই। পুরো সভায় পিনপতন নিরবতা। অবাক হয়ে বাতাসের কথা শুনছিল সবাই।

এবার ছেলেটি রাজার দিকে তাকালো, মহারাজ! আমার কাজ শেষ। আমার মনে হয় না রায় দিতে হুজুরের আর কোনো সহযোগিতার দরকার আছে। রাজার খাদ্য জাহাজ বেঁচে গেছে শুনে রাজা তো মহাখুশি। তিনি সিংহাসন ছেড়ে দু’পা নিচে নেমে এলেন। দু’হাত উঁচু করে বাতাসকে ধন্যবাদ জানালেন। আর মজলিসের সবাইকে বলতে লাগলেন, ধন্যবাদই তো বাতাসের জন্য সেরা বিচার! কি বলেন সভাসদগণ? পুরো মজলিস কেঁপে ওঠে, 'মহারাজার জয় হোক'!

রাজা হা হা হা করে হেসে উঠলেন। বললেন: বুড়ি মা. আটা তো তোমার। তোমার দুদিনের আহার রক্ষা করলো পুরো রাজ্যের দু’মাসের আহার! এ সম্পদ কেবল রাজ্যের নয়। এ যে তোমারও সম্পদ!

বুড়ি খুশিতে কেঁদে ফেলে। শুনেছিলাম আমাদের মহারাজ দয়াবান। এখন দেখি নীতিবানও বটে! এমন রাজার প্রজা হতেই সুখ। এরচে বড় পুরস্কার আমার কী হতে পারে! সকল প্রজার সম্পদ কারো একার হয় না মহারাজ! এ সম্পদ সবার।

বুড়ির সাথে সুর মিলিয়ে রাজ দরবার কাঁপিয়ে আওয়াজ ওঠে-'মহারাজার জয় হোক'! 'মহারাজার জয় হোক'।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে রয়েছে একটি আবৃত্তি। 'নবীর দেশে' শিরোনামের কবিতাটি লিখেছেন, কবি নাঈম আল ইসলাম মাহিন। আর আবৃত্তি করেছে ছোট্টবন্ধু সামিউল আল রাজ।  

সামিউল আল রাজের চমৎকার উচ্চারণে কবিতাটি শুনলে। এতে নবীজির আবির্ভাবের সময়কার আরবের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। তো বন্ধুরা, এবার রয়েছেন কবি ফররুখ আহমদ-এর লেখা গান 'ইয়া নবী সালাম আলাইকা'। এতে সুরারোপ করেছেন লিটন হাফিজ চৌধুরী। আর গেয়েছে শিশুশিল্পী মাহদিয়া তাসনিম ও নূরী শেহজাদা মাহা।  

মাহদিয়া ও মাহার দ্বৈত কণ্ঠে চমৎকার গানটি শুনলে। তো তোমরা ভালো ও সুস্থ থেকো আবারো এ কামনায় গুটিয়ে নিচ্ছি রংধনুর আজকের আসর। কথা হবে আবারো আগামী আসরে।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৩১

ট্যাগ