জানুয়ারি ২২, ২০২৪ ১১:৪৮ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ২২ জানুয়ারি সোমবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। পরে বিস্তারিত খবরে যাব।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • ৯৯৯ - নারী নির্যাতনের অভিযোগে ৬৭ হাজার কল-মানবজমিন
  • শেয়ার বাজারে বড় দর পতন-ইত্তেফাক
  • ঢাকা মহানগরে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ভোটের আগে ২৩৪ মামলা- প্রথম আলো
  • দুর্নীতির কাছে ‘জিম্মি’ ব্যবসায়ীরা-ডেইলি স্টার বাংলা
  • অর্থ পাচার করলেই নিবন্ধন বাতিল-যুগান্তর

কোলকাতার শিরোনাম:

  • ১৫২৮-২০২৪: বাবরি মসজিদ থেকে রামমন্দির! এক নজরে ৪৯৬ বছরের ইতিহাস এবং বিতর্ক- আনন্দবাজার পত্রিকা
  • সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, গোধরা জেলে আত্মসমর্পণ বিলকিসের ধর্ষকদের-সংবাদ প্রতিদিন
  • রাজনীতি কেড়েছে রামকে, গুমরে রয়েছে অযোধ্যা -গণশক্তি
  • রামকে সাক্ষী রেখেই অযোধ্যা থেকে ভোট প্রচার শুরু নরেন্দ্র মোদীর।-আজকাল

শিরোনামের পর এবার বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত তুলে ধরছি। তবে দৈনিকগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন খবরকে প্রধান শিরোনাম করা হয়েছে। প্রথম আলোর রাজনীতি ও মামলা মোকদ্দমার খবরে লেখা হয়েছে,  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের তিন মাসে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২৩৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয় সাড়ে পাঁচ হাজার নেতা–কর্মীকে। অজ্ঞাতনামা আসামি আরও তিন হাজার।

গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়ের হওয়া এসব মামলার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। বেশির ভাগ মামলার বাদীও পুলিশ। দলটির নেতাদের অভিযোগ, সরকার একপক্ষীয় নির্বাচন করার জন্য মামলা ও গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলের ওপর দমন–পীড়ন চালিয়েছে।তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে কোণঠাসা করতে এসব মামলা করা হয়েছে। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও এমন অনেক মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে কাল্পনিক অভিযোগে মামলা হয়েছে বলেও দাবি করে আসছে বিএনপি।বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ২৮ অক্টোবরের পর মামলা দেওয়া যেমন বেড়েছে, গ্রেপ্তারও বেড়েছে অনেক। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে চলতি জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সারা দেশে তাদের ২৭ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের কার বিরুদ্ধে কত মামলা এমন একটি শিরোনামে প্রথম আলোর শিরোনাম এরকম-কারও বিরুদ্ধে ৪৫০ আবার কারও বিরুদ্ধে ৩০০ মামলা..

পরিবেশ এবং আবহাওয়া সম্পর্কিত প্রথম আলোর শিরোনাম-

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঢাকায়, ২১ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ। বিস্তারিত খবরে দৈনিকটি লিখেছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা আজ সোমবার কুয়াশায় ঢাকা। রাজধানীতে এ শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে আজ সকালে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রায় সব জেলাসহ মোট ২১ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক দিনের মধ্যে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো কমেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সব স্টেশনেই তাপমাত্রা কমে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গতকাল রোববার দেশের দু–এক স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। আগামী পরশু বুধবার দেশের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টি হতে পারে।আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছীতে, ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।তবে শৈত্যপ্রবাহের করুণ ছবি দেখা যায় প্রান্তিক মানুষের ক্ষেত্রে। তাদের কোনো প্রস্তুতি নেই, নেই শীতের কাপড়।কাজ করে খেতে হয়। সবমিলিয়ে তাঁরা কষ্টে আছে।

৯৯৯-নারী নির্যাতনের অভিযোগে ৬৭ হাজার কল -মানবজমিন

নানা বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জাতীয় জরুরি সেবায় দিনে ফোন আসে ২২ থেকে ২৩ হাজার । এর মধ্যে অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা, নির্যাতন, বাল্যবিয়ের অভিযোগ আসে বেশি। নির্যাতনের অভিযোগে বেশি কল করেন নারীরা। গত ৬ বছরে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার ৬৭ হাজার ৯৬২ জন নারী পুলিশের সহযোগিতা পেতে ৯৯৯-এ ফোন দিয়েছেন। সংস্থাটির তথ্যমতে, বিদায়ী বছরে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে ফোন কল এসছে ৬,০০২টি। ধর্ষণের ঘটনায় ফোন কল এসেছে ৪ হাজার ০৮০টি। ধর্ষণ চেষ্টাকালীন ফোন কল এসেছে ১ হাজার ৯২২টি। শুধু তাই নয়, বাল্যবিবাহ বন্ধে গত ৫ বছরে কল এসেছে ২৫,১৮০টি। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী বা বাক প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি এসওএস অ্যাপস ৯৯৯-এ চালু হতে যাচ্ছে। এটি চালু হলে বাক প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা বাড়বে। অ্যাপ্‌সটির মাধ্যমে সংয়ক্রিয়ভাবে ৫ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ হবে এবং ভিডিওটি ৯৯৯-এর কাছে চলে আসবে। 

জাতীয় জরুরি সেবার তথ্যনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১২ই ডিসেম্বর জাতীয় জরুরি সেবার যাত্রা শুরু হয়।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার মানবজমিনকে বলেন, ৯৯৯-এর প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ছে। যে বিষয়গুলোতে আমরা সবচেয়ে বেশি কল পেয়ে থাকি তা হলো নারী নির্যাতনের। নারী নির্যাতনের অনেকগুলো সাব-ইভেন্ট আছে তার মধ্যে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ইভটিজিং। 

বাজার দরের খবরে মানবিজমিনের শিরোনাম-হুঁশিয়ারি আর অভিযানেও থামছে না চালবাজি। এ খবরে লেখা হয়েছে, চালের দাম ৪ দিনের মধ্যে আগের দামে ফিরিয়ে আনতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের হুঁশিয়ারির পরও পণ্যটির দাম কমেনি। অথচ এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারের গুদামেও চালের মজুত পর্যাপ্ত। সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। তারপরেও ভরা মৌসুমে অস্থির চালের বাজার। ওদিকে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে গত কয়েকদিনে বেশ কিছু বাজারে অভিযান চালিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভোক্তা সাধারণের।জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের পর মিল পর্যায় থেকে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৩০০ টাকা দাম বাড়িয়ে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশের পাইকারি বাজারে হু হু করে বেড়েছে দাম। প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। গরিবের মোটা চাল ক্রয়েও কেজিপ্রতি ৫৬ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

অর্থনীতির খবরে যুগান্তর লিখেছে, বিদেশে অর্থ পাচার ঠেকাতে দেশের আমদানি, রপ্তানি ও ইন্ডেন্ট প্রতিষ্ঠানকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। ইন্ডেন্ট প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের একক ডিলার বা এজেন্টশিপ। এসব প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক (আমদানি-রপ্তানি) বাণিজ্যের অন্তরালে অর্থ পাচারের ঘটনা পাওয়া গেলে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।প্রসঙ্গত, আমদানি-রপ্তানির অন্তরালে বিদেশে টাকা পাচার প্রসঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রথম মুখ খুলেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেছেন, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।

আর শেয়ারবাজার সম্পর্কে ইত্তেফাকের শিরোনাম-শেয়ার বাজারে বড় দর পতন। বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, ‘ফ্লোরপ্রাইস’ তুলে নেওয়ার পর গতকাল রবিবার দেশের শেয়ার বাজারে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৯৬.৫০ পয়েন্ট ও সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক কমেছে ৪৭৬ পয়েন্ট। সিইও ফোরামের বৈঠকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।  আর বাজার স্থিতিশীলতায় সিএমএসএফ ১০০  কোটি টাকা ঋণ দেবে।  এদিকে,আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেইলি স্টার বাংলার একটি শিরোনাম দৃষ্টি কেড়েছে। সেটি এরকম, দুর্নীতির কাছে ‘জিম্মি’ ব্যবসায়ীরা।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

বহু বিতর্ক এবং আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে আজ অযোধ্যায় উদ্বোধন হলো রামমন্দির। ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হল রামলালার বিগ্রহে। মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে অযোধ্যায় হাজির লক্ষ লক্ষ মানুষ। তাঁরাও সাক্ষী থাকলেন ইতিহাস এবং পরিবর্তনের। আনন্দবাজার পত্রিকার খবর এটি। শিরোনামটি এরকম ১৫২৮-২০২৪: বাবরি মসজিদ থেকে রামমন্দির! এক নজরে ৪৯৬ বছরের ইতিহাস এবং বিতর্ক।

রাজনীতি কেড়েছে রামকে, গুমরে রয়েছে অযোধ্যা-গণশক্তির শিরোনাম। অন্য একটি শিরোনাম এক মন্দির বানাতেই মাটিতে মিশেছে বহু মন্দির। এবার মন্দির দখলের শঙ্কায় খটিকরা। আজকালের শিরোনামের রাম মন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালে আঁটসাঁট নিরাপত্তা অযোধ্যায়। অন্য একটি শিরোনাম রামকে সাক্ষী রেখেই অযোধ্যা থেকে ভোট প্রচার শুরু নরেন্দ্র মোদীর।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, গোধরা জেলে আত্মসমর্পণ বিলকিসের ধর্ষকদের-সংবাদ প্রতিদিনের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, আত্মসমর্পণ করল বিলকিস বানোর (Bilkis Bano) ধর্ষকরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই গোধরা (Godhra) জেলে আত্মসমর্পণ করেন ১১ জন। রবিবার রাতের দিকেই ১১ জন জেলে পৌঁছে যান। এদিন রাত বারোটার মধ্যে ধর্ষকদের আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ জেলে ফিরে আসে ধর্ষকরা। আত্মসমর্পণের জন্য বাড়তি সময় চেয়ে বিভিন্ন অজুহাত নিয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আর্জি দায়ের করেছিল বিলকিসের তিন ধর্ষক।

আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে লেখা হয়েছে, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার ৪৯১ বছর পরে শীর্ষ আদালতের বিচারকেরা জানান, হিন্দুদের বিশ্বাসের ‘রামজন্মভূমি’তে মন্দিরই হবে

বছরের পর বছর ধরে আইনি লড়াই। দীর্ঘ লড়াই নিয়ে রাজনৈতিক জট। এ সব কাটিয়ে অবশেষে সোমবার অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। সোমবার দুপুরে মন্দিরের গর্ভগৃহে ‘রামলালা’র মূর্তিতে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

আইনি লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে রামমন্দিরের। আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল ১৩৯ বছর আগে। আর দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে টানাপড়েনটা চলছিল তারও অনেক আগে থেকে। পাঁচ শতক ধরে চলতে থাকা এই টানাপড়েনের পর আসে সুপ্রিম কোর্টের রায়। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার ৪৯১ বছর পরে শীর্ষ আদালতের বিচারকেরা জানান, হিন্দুদের বিশ্বাসের ‘রামজন্মভূমি’তে মন্দিরই হবে। গত পাঁচ শতাব্দীতে কত বার কত রকম বাঁক নিল রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক? কোন পথ ধরে তা পৌঁছল রামমন্দিরের উদ্বোধন পর্যন্ত? দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে:

১৫২৮: অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি করালেন মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মির বাকি। বছর দুয়েক আগেই ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন জহিরুদ্দিন মহম্মদ বাবর।

১৮৮৫: মুঘল যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। ঘটে গিয়েছে সিপাহি বিদ্রোহও। ভারতে ব্রিটিশ রাজ সুপ্রতিষ্ঠিত। ফৈজাবাদের জেলা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদের বিতর্কিত কাঠামোর বাইরে শামিয়ানা তৈরি করে রামলালার মূর্তি স্থাপনের অবেদন জানালেন মহন্ত রঘুবীর দাস। আর্জি খারিজ করল ব্রিটিশ আদালত।

১৯৪৯: বছর দেড়েক আগে ভারত স্বাধীন হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ, শীতের রাত। বিতর্কিত কাঠামোর মূল গম্বুজের নীচে রামলালার মূর্তি স্থাপিত হল। মন্দিরপন্থীরা দাবি করলেন, ‘রামলালা প্রকট হয়েছেন’।

১৯৫০: গোপাল সিমলা এবং মহন্ত রামচন্দ্র দাস ফৈজাবাদ আদালতে আলাদা আলাদা মামলা করে বিতর্কিত স্থানে রামলালার পুজোর অনুমতি চাইলেন।

১৯৫৯: বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করল নির্মোহী আখড়া।

১৯৮১: উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ। বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হল উত্তরপ্রদেশ সেন্ট্রাল সুন্নি ওয়াক্‌ফ বোর্ড।

১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬: বিতর্কিত কাঠামোর দরজা হিন্দুদের উপাসনার জন্য খুলে দিতে বলল ফৈজাবাদের আদালত।

১৪ অগস্ট, ১৯৮৯: বিতর্কিত জমিতে স্থিতাবস্থা বহাল রাখার নির্দেশ দিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।

৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২: স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত তারিখগুলোর অন্যতম। করসেবকদের হামলায় ধূলিসাৎ হল বাবরি মসজিদ।

৩ এপ্রিল, ১৯৯৩: সংসদে আইন পাশ করিয়ে অযোধ্যার বিতর্কিত জমির দখল নিল কেন্দ্রীয় সরকার।

২৪ অক্টোবর, ১৯৯৪: ইতিহাসবিদ ইসমাইল ফারুকির মামলায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালত জানাল, কোনও একটা মসজিদকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে ধরা হবে না।

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০: অযোধ্যা মামলার রায় দিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের উপর দাঁড়িয়ে জানাল, বিতর্কিত জমি তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রামলালা বিরাজমানের মধ্যে।

৯ মে, ২০১১: ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।

২১ মার্চ, ২০১৭: দেশের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর বললেন, আদালতের বাইরেই মীমাংসা করে নেওয়া হোক অযোধ্যা বিতর্কের।

৭ অগস্ট, ২০১৭: অযোধ্যা মামলার শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করল সুপ্রিম কোর্ট।

২০ নভেম্বর, ২০১৭: উত্তরপ্রদেশ শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড জানাল, অযোধ্যায় মন্দির বানালে আপত্তি নেই। পরিবর্তে লখনউতে মসজিদ বানিয়ে দেওয়া হোক।

৫ ডিসেম্বর, ২০১৭: প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এস আবদুল নাজিরের বেঞ্চে আবার নতুন করে শুরু অযোধ্যা মামলার শুনানি।

২৯ অক্টোবর, ২০১৮: নয়া প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে আবার নতুন করে তিন বিচরপতির বেঞ্চ গঠন হল।

৮ জানুয়ারি, ২০১৯: প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে এ বার তৈরি হল পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। কারও সরে দাঁড়ানো, কারও অসুস্থতার কারণে সেই বেঞ্চে পরে কিছু পরিবর্তনও হল।

৮ মার্চ, ২০১৯: বিচারপতি এফএম কলিফুল্লা, আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর এবং আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চুকে নিয়ে মধ্যস্থতা প্যানেল তৈরি করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

২ অগস্ট, ২০১৯: মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানালেন, ৬ অগস্ট থেকে রোজ শুনানি হবে অযোধ্যা মামলার।

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯: মধ্যস্থতা কমিটিকে আবার আলোচনা শুরু করতে বলল সুপ্রিম কোর্ট। এক মাসের মধ্যে আলোচনা শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হল।

১৬ অক্টোবর, ২০১৯: প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বললেন— অনেক হয়েছে, আজই শেষ করতে হবে অযোধ্যা মামলার শুনানি ।

৯ নভেম্বর, ২০১৯: সুপ্রিম কোর্ট রায় দিল, অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে হিন্দুদের মন্দির তৈরি হবে। বিকল্প পাঁচ একর জমি দেওয়া হবে মুসলিম সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে।

১২ ডিসেম্বর, ২০১৯: অযোধ্যায় জমি বিবাদ মামলার রায় নিয়ে একাধিক আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট।

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট গঠনে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের অনুমোদন। রামমন্দির নির্মাণে তদারকি করছে ওই ট্রাস্ট। লোকসভায় অনুমোদনের কথা ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: অযোধ্যার সোহাওয়াল তহশিলে পাঁচ একর জমিতে মসজিদ গড়ার জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার প্রদত্ত জমি গ্রহণ উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের।

৫ অগস্ট, ২০২০: অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগে ভূমিপূজা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। এর পর রুপোর ইট দিয়ে হল রামমন্দিরের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস।

২২ জানুয়ারি, ২০২৪: বহু বিতর্ক এবং আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে উদ্বোধন হচ্ছে রামমন্দিরের। ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হল রামলালার বিগ্রহে। মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে অযোধ্যায় হাজির লক্ষ লক্ষ মানুষ। তাঁরাও সাক্ষী থাকলেন ইতিহাস এবং পরিবর্তনের।

 

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ২২

ট্যাগ