ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪ ১৬:০২ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি সোমবারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • মার্কিন প্রতিনিধিদল এলেই নালিশে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের-ইত্তেফাক
  • বাইডেনের চিঠির জবাব দিলেন শেখ হাসিনা-ডেইলি স্টার বাংলা
  • ফখরুলের অভিযোগ: দুঃশাসন প্রলম্বিত করতেই ছড়ানো হচ্ছে ভীতি-আতঙ্ক- -যুগান্তর
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি রুখতে শ্রেণিকক্ষেই কেন পাঠ নয়-প্রথম আলো
  • সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী- মানবজমিন 

কোলকাতার শিরোনাম:

  • '৭ দিনেই গ্রেপ্তার হবে শাহজাহান’-বললেন কুণাল ঘোষ-সংবাদ প্রতিদিন
  • ইলেক্টরাল বন্ডকে ‘কেলেঙ্কারি’ বলে নিন্দা অমর্ত্য সেনের-গণশক্তি
  • কোর্টের বক্তব্যের পরেই দ্রুত পদক্ষেপ?-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • লোকসভা নির্বাচনের জন্য আগামী তিন মাস বন্ধ থাকবে ‘মন কি বাত’-আজকাল
  • জ্ঞানবাপীতে হিন্দুদের পুজো চলবে, মসজিদ কমিটির আর্জি খারিজ -পুবের কলম

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ- একথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। কতটা এগুবে এ সম্পর্ক?

২. ইসরাইলের স্বার্থে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে বিসর্জন দিয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেন। একথা বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। আপনি কীভাবে দেখেন?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি রুখতে শ্রেণিকক্ষেই কেন পাঠ নয়-প্রথম আলোর এ শিরোনামের মতামত কলামটি লিখেছেন কালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও লেখক নাদিম মাহমুদ। এ কলামে লেখা হয়েছে, আমার ছেলের বয়স যখন আট মাস, তখন তাকে নিয়ে একদিন আমি ও আমার স্ত্রী জাপানের এক পার্কে হাঁটানোর চেষ্টা করছিলাম। সেই পার্কে খেলছিল চার-পাঁচ বছরের আরও দুই জাপানি শিশু। 

আমার ছেলে ওই দুই শিশুকে দেখে, তার দিকে যেতে যাচ্ছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে, ওই দুই জাপানি শিশু আমার ছেলের কাছে এগিয়ে এল। প্রথমে এই দুই শিশু আমার ছেলের দুই হাত স্পর্শ করল। এরপর তারা আলতোভাবে আমার ছেলের মাথার চুলগুলো নেড়ে দিয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করল যে তাদের আদর এই পর্যন্ত! এর বাইরে তারা আমার ছেলেকে আর কোথাও স্পর্শ করল না।

বিষয়টি দেখার পর আমার স্ত্রী আমাকে বলল, দেখো এই ছোট শিশুরাও জানে কীভাবে ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’ হয়। এরা ছোটবেলা থেকেই নিজেদের শরীরের গোপন ও স্পর্শকাতর অঙ্গ বিষয়ে কতটা সতর্ক। 

হ্যাঁ, জাপানে শিশুরা স্কুলে যাওয়ার পরই ওদের শেখানো হয়, কোন কোন জায়গায় স্পর্শ করে আদর কিংবা ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়, আর কোন কোন জায়গায় স্পর্শ করলে অন্যায় বা অপরাধ করা বোঝানো হয়। এই শিক্ষা নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুরাই আজ জাপানকে সভ্য ও শালীন দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করে যাচ্ছে।

অথচ আমাদের দেশের শিশুদের এসব শিক্ষার বালাই নেই। অন্যের বাচ্চাকে কোলে নেওয়া, চুমু খাওয়া, শরীরের বিভিন্ন স্থানে টিপ্পনী দেওয়া আমাদের দেশে গা-সওয়া হয়ে গেছে। ছোট্ট শিশুদের আদর করতে গিয়ে মনের অজান্তে অপরাধ করে বসি। ফলে দেশের শিশুরা যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে নিকট আত্মীয়ের দ্বারা। নিজেদের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর ব্যাপারে সচেতন না হওয়ায় স্কুলে সহপাঠী কিংবা শিক্ষকের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে তারা।

কয়েক দিন আগে যৌন হয়রানির অভিযোগে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর ক্যাম্পাসের দিবা শাখার এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে প্রত্যাহার করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। 

এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন পড়ার পর মনে হলো, আমাদের ফুলের মতো শিশুদের শৈশব বিষময় হয়ে উঠছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিগ্রহের শিকার হচ্ছে হাজারো শিশু।

শুধু স্কুল কেন, বিভিন্ন উচ্চশিক্ষালয়গুলোয় যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ঘটনা বছরজুড়েই চলে আসছে। 

ছাত্রীকে যৌন হয়রানি

এ মাসের শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে ওই অভিযুক্ত শিক্ষককে ‘বাধ্যতামূলক’ শিক্ষাছুটিতে পাঠায়। 

এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই বিভাগেরই এক শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত সপ্তাহে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে যৌন হয়রানির অপরাধে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এক বছর আগে নিজ বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্তে এসেছে। কিছুদিন আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদল দুর্বৃত্ত (শিক্ষার্থীদের) দ্বারা এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল।

শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ধর্ষণ, যৌন হয়রানির ঘটনা নিত্যদিনই ঘটছে। পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর দেওয়া, চাকরির প্রলোভন দেখানো, বিশেষ কোনো সুবিধা আদায়ের টোপে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষকেরা মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠছেন। পরিবার, সমাজ কিংবা নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অধিকাংশ ঘটনাই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যাচ্ছে। ফলে জীবনের বিষাদময় এই সব ঘটনা বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক নারী শিক্ষার্থী।

শুধু স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ধর্মীয় শিক্ষার পর্দার আড়ালে অনেক মাদ্রাসায়ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়েছে, এমন ঘটনাও নতুন নয়। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকার কয়েক বছর আগে আইন পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করলেও থামছে না এই বর্বরতা।

কখনো কখনো আবার সংবাদমাধ্যম সেই সব মেয়ে সাক্ষাৎকার কোনো প্রকার গোপনীয়তা ছাড়াই প্রকাশ করছে। অথচ এই সব ঘটনায় কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এক যুগ আগে ‘যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল’ গঠন করলেও অদ্ভুত কারণে এই সব অভিযোগকারীর তথ্যের গোপনীয়তা রাখা হচ্ছে না। ফলে কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি কিংবা ধর্ষণের অভিযোগ তোলার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা। 

আবার অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সহকর্মীরা এই সব তদন্তের দায়িত্বে থাকায় ‘ফ্রেন্ডস অব বেনিফিটের’ ঘটনাও ঘটছে। আবার অনেক সময় অভিযোগ দেওয়ার পর বছরের পর বছর সেগুলোর তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করে, ভুক্তভোগীদের মনোবল ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এই সব কারণে অনেক মেয়েই ‘প্রশাসনের কাছে’ অভিযোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

শুধু স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ধর্মীয় শিক্ষার পর্দার আড়ালে অনেক মাদ্রাসায়ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়েছে, এমন ঘটনাও নতুন নয়। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকার কয়েক বছর আগে আইন পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করলেও থামছে না এই বর্বরতা।

এখান থেকে মুক্তির পথ কী? কীভাবে এই সব যৌন নিপীড়কের হাত থেকে আমাদের শিশুদের মুক্ত করা যাবে? উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়েও বিবেকের শিকলে বন্দী থাকা অমানুষদের কাছ থেকে ‘শিক্ষা’র পবিত্রতা রক্ষা করা যাবে?

শুরুটা করতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। প্রাথমিকের পাঠ্যক্রমেই স্থান দিতে হবে খারাপ স্পর্শ ও ভালো স্পর্শের পাঠ। ছবি আঁকিয়ে, ডিজিটাল চিত্রে শিশুদের শারীরিক স্পর্শকাতর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে হবে। কোন কোন শব্দ ও বাক্য যৌন হয়রানির অংশ, সে বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকা জরুরি। এতে তারা নিজেদের অধিকার ও স্পর্শকাতর অঙ্গ বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠবে।

আমরা যারা দেশের বাইরে শিক্ষকতা বা গবেষণায় নিয়োজিত, তাদের প্রায় প্রতিবছরই ‘সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ও ডিসক্রিমিনেশন’-বিষয়ক কোর্স করা বাধ্যতামূলক। জাপানে যখন পড়াশোনা করেছি, তখনো এসব বিষয় যেমন অ্যাকাডেমিক নন-ক্রেডিট কোর্সের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তেমনি আমেরিকায় আসার পর এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশের শুরুতেই আমাদের কোর্স করতে হয়েছিল।

বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কোর্স করানো বাধ্যতামূলক করা সময়ের দাবি। ডিজিটাল বাংলাদেশে সবার হাতে হাতে ডিভাইস। স্কুল, কলেজে প্রায় প্রতিটি অফিসেই কম্পিউটার, ল্যাপটপ। তাই অনলাইনেই শিক্ষকদের এসব কোর্স বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। 

প্রতিবছর এসব কোর্স করানোর ফলে অন্তত শিক্ষকেরাও জানবেন যে তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঠিক কীভাবে আচরণ করবেন, কোন সীমারেখায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করবেন। কোন কোন আচরণে যৌন হয়রানি হয়, সে সম্পর্কে ধারণা পাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে কর্মজীবন শুরু হয়। তাই উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের যৌন হয়রানি ও বৈষম্য দূরীকরণ বিষয়ক অ্যাকাডেমিক কোর্সকে পাঠক্রমে স্থান দেওয়া আবশ্যিক বিষয় হয়ে উঠেছে।

ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোর্স-কারিকুলাম সাজিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। শিগগিরই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য অনলাইন ভিত্তিক এসব কোর্স করানো ও নিজেদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যেমন বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গবৈষম্য কাটানো রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার, তেমনি সেখান থেকে যৌন নিপীড়নের মতো জঘন্য অপরাধ দূরীকরণে এ ধরনের অ্যাকাডেমিক উদ্যোগ আগামী দিনে শিক্ষালয়ে সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে দেবে।

সরকার চাইলেই এই সব করা সম্ভব। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বয় করে ‘অভিন্ন’ এসব কোর্স ডিজাইন করতে পারে, যা থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্যের অধিকার ও গোপনীয়তা বিষয়ে যেমন সচেতন হওয়ার সুযোগ পাবেন, তেমনি যৌন নিপীড়নবিহীন একটি সুন্দর পরিবেশের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে। স্কুলের শিশুদের মৌলিক এই সব শিক্ষা আমাদের সমাজ থেকে নিগ্রহ কমাবে, রাস্তাঘাট ও কর্মক্ষেত্রকে আরও বেশি নিরাপদ হিসেবে গড়বে।

মার্কিন প্রতিনিধিদল এলেই নালিশে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের-ইত্তেফাক

মার্কিন কোনো প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এলেই বিএনপি নালিশে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার কাছে অবাক লাগে, মির্জা ফখরুল জেল থেকে বের হয়ে অসুস্থতার অজুহাতে জনগণের কাছে যাননি। তবে মার্কিন প্রতিনিধিদল দেশে আসায় লাঠি ভর করে ঠিকই গেছেন। তাদের কাছে গেছেন নালিশ করতে। নালিশ করা তাদের রাজনীতি পুরনো অভ্যাস। 

তিনি বলেন, নালিশ করবে জনগণের কাছে। জনগণের কাছে নালিশ করার চাইতে বিদেশিদের কাছে নালিশ করতে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। 

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় খেসারত বিএনপিকে দিতে হবে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা আন্দোলনে সফল হতে পারেনি, নির্বাচনে আসতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা অচিরেই টের পাবে তারা নিজেদের কতটা সংকুচিত করে ফেলেছে। এজন্য বিএনপিকে অনেকদিন খেসারত দিতে হবে।

ফখরুলের অভিযোগ: দুঃশাসন প্রলম্বিত করতেই ছড়ানো হচ্ছে ভীতি-আতঙ্ক-যুগান্তর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, দুঃশাসন প্রলম্বিত করার জন্যই রাষ্ট্র ও সমাজে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

‘মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দিনাজপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আখতারুজ্জামান মিয়া এবং চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে আলম সিদ্দিকী নয়নের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে’ এ বিবৃতি দেন ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে দেশে আইনের শাসন ও সুশাসন নেই বলেই গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণরত নেতাকর্মীরা  ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশে এক সর্বগ্রাসী অরাজকতা বিদ্যমান রয়েছে। দুঃশাসন প্রলম্বিত করার জন্যই রাষ্ট্র-সমাজে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী এখন আরও বেশি বেপরোয়া ও কতৃর্ত্ববাদী হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ গণতন্ত্রমনা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নানা কায়দায় দমন-পীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে বিরোধী নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানোর মাধ্যমে এক জুলুমের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। মো. আখতারুজ্জামান মিয়া এবং নুরে আলম সিদ্দিকী নয়নের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা আওয়ামী মাত্রাতিরিক্ত জুলুমেরই ধারাবাহিকতা।

ফখরুল বলেন, সারা দেশে প্রতিনিয়ত সরকারের মদদে বিরোধী নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুরের মাধ্যমে কারান্তরীণ করার ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে আখতারুজ্জামান মিয়া ও নুরে আলম সিদ্দিকী নয়নের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানাচ্ছি।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

শেখ শাহজাহান

শেখ শাহজাহানের গ্রেপ্তারি নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। অভিষেকের দাবিকে সমর্থন করেই তিনি জানালেন, আইনি জটিলতা যা ছিল, তা কেটে গিয়েছে। সাত দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হবে শেখ শাহজাহানকে। 

প্রায় দু মাস ধরে বেপাত্তা সন্দেশখালির ‘বাঘ’ শেখ শাহজাহান। ইডি একাধিকবার তলব করেও তাঁর হদিশ পায়নি। এদিকে রাজ্য পুলিশও গ্রেপ্তার করতে পারছে না তাঁকে। যার ফলে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছিল সন্দেশখালির বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতিতে রবিবার মহেশতলা থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের জেরেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবারই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে হাই কোর্ট। জানানো হয়েছে, শাহজাহানকে রাজ্য পুলিশের গ্রেপ্তারিতে কোনও বাধা নেই। পুলিশ চাইলেই গ্রেপ্তার করতে পারে তাঁকে। 

আর আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে এ সম্পর্কে লেখা হয়েছে, শাহজাহানের বিরুদ্ধে নতুন এফআইআর সন্দেশখালি থানায়, কোর্টের বক্তব্যের পরেই দ্রুত পদক্ষেপ?

অমর্ত্য সেন

ইলেক্টরাল বন্ডকে ‘কেলেঙ্কারি’ বলে নিন্দা অমর্ত্য সেনের-গণশক্তি পত্রিকার এ খবরে লেখা হয়েছে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পকে কেলেঙ্কারি বলে নিন্দা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস থেকে সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে অমর্ত্য সেন বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে মানুষের মধ্যে আরও স্বচ্ছতা আসবে। ‘‘নির্বাচনী বন্ড একটি কেলেঙ্কারি ছিল, এবং আমি খুশি যে এখন তা বাদ দেওয়া হয়েছে।অমর্ত্য সেনের মতে, ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থা রাজনীতির প্রকৃতি দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা শোনা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থা দলীয় রাজনীতির প্রকৃতি দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়, যার ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে নির্বাচনে তাদের যে রায় পাওয়া উচিত তা পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

জ্ঞানবাপী মসজিদে  হিন্দুদের পুজা চলবে-আদালত

জ্ঞানবাপীতে হিন্দুদের পুজো চলবে, মসজিদ কমিটির আর্জি খারিজ করে রায় ইলাহাবাদ হাইকোর্টের-পুবের কলম

বিতর্ক অব্যাহতই থাকল। জ্ঞানবাপী নিয়ে মসজিদ কমিটির আর্জি খারিজ করে দিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। অর্থাৎ বারাণসী আদালতের রায় বহাল রাখল হাইকোর্ট। জ্ঞানভাপী মসজিদ চত্বরে পুজো-পাঠ চলবে বলে জানিয়ে দিল আদালত। মসজিদ কমিটির আবেদন খারিজ করে বিচারপতি রোহিত রঞ্জন আগরওয়াল বলেন,  ‘ব্যাস তেহখানা’তে হিন্দু প্রার্থনা অব্যাহত থাকবে।” শুধু তাই নয়, মসজিদ চত্বরে যাতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না হয়, সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য অ্যাডভোকেট জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যদিও হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিল আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি।

এদিনের রায়ের পর আইনজীবী প্রভাষ পান্ডে বলেন, ‘আজ আদালত মুসলিম পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। পুজো চলবে। এটি সনাতন ধর্মের বড় জয়। মুসলিম পক্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে পারে বা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে’। জ্ঞানবাপী মামলায়, হিন্দু পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন বলেছেন, ‘আজ এলাহাবাদ হাইকোর্ট মুসলিম পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। যার অর্থ হল যে পুজো চলছিল। একই পদ্ধতিতে চলবে। মুসলিম পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে গেলে আমরাও সুপ্রিম কোর্টে আমাদের মতামত তুলে ধরব।

উল্লেখ্য, বারাণসী জেলা আদালত গত মাসে রায় দিয়েছিল যে একজন পুরোহিত “ব্যাস তেহখানা” নামক জ্ঞানবাপী মসজিদের দক্ষিণ সেলারে প্রার্থনা করতে পারেন। জেলা আদালতের আদেশটি শৈলেন্দ্র কুমার পাঠকের আবেদনের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছিল, যিনি বলেছিলেন যে তাঁর মাতামহ সোমনাথ ব্যাস ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থনা করেছিলেন। শৈলেন্দ্র কুমার পাঠক অনুরোধ করেছিলেন যে, বংশগত পূজারি হিসাবে, তাকে তেহখানায় প্রবেশ করার এবং পুনরায় পুজো শুরু করার অনুমতি দেওয়া হোক।#


পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ২৬

ট্যাগ