ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৮ ১৮:০২ Asia/Dhaka

বন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। ইরানের হাটবাজারে বিদ্যমান বিচিত্র পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পরিচিতিমূলক নতুন ধারাবাহিক "ইরানের পণ্য সামগ্রী" শীর্ষক আসরের আজকের পর্বে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি..গাজী আবদুর রশিদ এবং আমি নাসির মাহমুদ।

গত আসরে আমরা ইরানের বিখ্যাত পণ্য লাল স্বর্ণ খ্যাত "জাফরান" নিয়ে কথা বলেছি। আশা করি ভালোই লেগেছে আপনাদের। আজকের আসরে আমরা ইরানের ব্ল্যাক পার্ল বা কালোমুক্তা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

কালোমুক্তা হলো ক্যাভিয়ার। ক্যাভিয়ার সম্পর্কে আপনাদের নিশ্চয়ই জানা আছে। তারপরও যাদের জানা নেই তাদের জন্য বলছি এটা এক ধরনের সামুদ্রিক মাছের ডিম। স্টার্জন মাছের ডিম। ইরানে ওই মাছটির নামও ক্যাভিয়ার। সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের ক্যাভিয়ার হলো ব্ল্যাক ক্যাভিয়ার। ক্যাভিয়ার অ্যানার্জিপূর্ণ একটি খাবার। যেমন সুস্বাদু তেমনি সুঘ্রাণময়। এই ব্ল্যাক ক্যাভিয়ার বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার হিসেবে পরিচিত। তবে রেড এবং গোল্ডেন ক্যাভিয়ারও রয়েছে, সেগুলো ব্ল্যাক ক্যাভিয়ারের মতো দামি নয়। আজকের আসরে আমরা এই ক্যাভিয়ার নিয়ে আরও কিছু আলোচনা শুনবো। 

স্টার্জন বা ক্যাভিয়ার বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। বিশ্বের জীবিত ফসিল নাম দেওয়া হয়েছে এই মাছকে। কারণটা হলো এই মাছ প্রজাতির বয়স কয়েক কোটি বছর পুরনো। সেই জুরাসিক কালের বলে অনেকের ধারনা। ডাইনোসরসহ এই ক্যাভিয়ার মাছ পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে পাওয়া যেত সেই সময়। কালক্রমে পরিবেশগত বিচিত্র পরিবর্তনের ফলে ক্যাভিয়ারের জীবনযাত্রা সীমিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে এই ক্যাভিয়ার ইরানের কাস্পিয়ান সাগর, কৃষ্ণ সাগর, ইউরাল ও আজভ সাগরসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিক্ষিপ্ত কিছু এলাকায় পাওয়া যায়। তবে স্টার্জন বা ক্যাভিয়ার মাছের নিরাপদ স্থান হলো ইরানের কাস্পিয়ান সাগর।

কাস্পিয়ানকে সাগর বলা হলেও এটি আসলে সাগর নয়, বিশ্বের সর্ববৃহৎ হ্রদ। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিশ্বের শতকরা ৯৩ ভাগ ক্যাভিয়ার রয়েছে এই কাস্পিয়ান হ্রদে। বলা হয়ে থাকে উপযুক্ত পরিবেশের কারণে বিশ্বের শতকরা নব্বুই ভাগ ক্যাভিয়ার এই কাস্পিয়ানেই শিকার করা হয়। ইরান, রাশিয়া,আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র,তুর্কমেনিস্তান এবং কাজাখস্তানের মাঝখানে এই কাস্পিয়ান হ্রদ অবস্থিত। ক্যাভিয়ার মাছ মানে যেসব মাছ থেকে ক্যাভিয়ার পাওয়া যায় সারাবিশ্বের এরকম মাছগুলোকে কমপক্ষে বিশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫ প্রকারের মাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন হস্তি মাছ ইংরেজিতে বলা হয় গ্রেট হোয়াইল স্ট্রার্জেন বেলুগা, ইরানি ক্যাভিয়ার বা পার্সিয়ান স্ট্রার্জেন, রাশিয়ান স্ট্রার্জেন, স্পাইনি বা শিপ স্ট্রার্জেন এবং ওজুন বরুন বা স্টিলেইট স্ট্রার্জেন। এই সব প্রজাতির মাছই কাস্পিয়ান হ্রদে রয়েছে।               

 

দেখতে লম্বা,প্রায় ১ থেকে ২ মিটারের মতো। মাথার দিক থেকে লেজের দিকে ক্রমশ চিকন। তুলনামূলকভাবে জলের বেশ গভীরে বাস করে এই মাছ। এক হাজার কেজি পর্যন্ত ওজন হয় কোনো কোনো ক্যাভিয়ারের। পৃথিবীর সমুদ্র তলদেশের বিস্ময় এই ক্যাভিয়ার মাছ বিশেষ করে যে পাঁচটি বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির কথা বললাম, বিভিন্ন রঙের হয়। সাদা, কালো, ধূসর এবং হলুদ ক্যাভিয়ারও রয়েছে। ক্যাভিয়ার মাছ তো ডিমের জন্যই বিখ্যাত সে কথা আগেই বলেছি। এই মাছ নোনাজলের মাছ। তবে খুবই কম মিষ্টি পানিতে দেখতে পাওয়া যায়। এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ। তা হলো ক্যাভিয়ার মাছ ডিম পাড়ার সময় হলে মিষ্টি জলের গভীর এবং খরস্রোতা নদীতে চলে যায় কখনো কখনো।

ওই ডিমগুলো নদীর তলদেশের লতাপাতা কিংবা পাথরকুচিতে লেপ্টে যায়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে ডিম ফুটে বাচ্চা মাছে পরিণত হয়। মজার ব্যাপার এই বাচ্চাগুলো যখন বড় হয় তখন তাদের বেশিরভাগই আবার সমুদ্রের দিকে চলে যায়।  অন্যান্য মাছের তুলনায় এই মাছের এতো বেশি গুরুত্বের কারণ হলো তাদের ডিম বা ক্যাভিয়ার। যাকে কৃষ্ণ মুক্তা নামে অভিহিত করা হয় বলে আগেই জানিয়েছি। এই ক্যাভিয়ার মাছ বয়োসন্ধিকালে পৌঁছতে অন্যান্য মাছের চেয়ে একটু বেশি সময় নেয়। মাছের প্রজাতি এবং বসবাসের পরিবেশগত পার্থক্যের দিক থেকে ৮ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত সময় লাগে।

 

ক্যাভিয়ার মাছের বয়োসন্ধিকালে পৌঁছানোর ব্যাপারে কথা বলছিলাম আমরা। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এ ধরনের মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির মাছগুলোকে কীভাবে লালন করা যায়, কীভাবে যত্ন নেয়া যায় সে বিষয়ে কাজ করতে পারেন। যেমন ক্যাভিয়ার মাছ কখন ডিম পাড়ে সে ব্যাপারে ধারনা দিয়ে মাছ শিকারীদেরকে ডিম দেয়ার সময় যেন মাছ শিকার না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক করতে পারে। একইভাবে যেখানে মাছগুলো ডিম পাড়ে সেই এলাকাটিকে উপযোগী করে তুলতে পারা যায়। মৎস্য বিশেষজ্ঞগণ কৃত্রিমভাবেও ক্যাভিয়ার মাছের পোণার চাষ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিতে পারেন।

 

বলাবাহুল্য ক্যাভিয়ার মাছ এবং এই মাছের ডিম দুটোই সারাবিশ্বে বেশ দামি খাদ্যপণ্য। সুতরাং ক্যাভিয়ার চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক সাফল্য আসতে পারে। তো শ্রোতাবন্ধুরা! আমাদের হাতে আজ আর সময় নেই। যারা সঙ্গ দিলেন সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

কথা হবে আবারও পরবর্তী আসরে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/৭

ট্যাগ