আগস্ট ০৬, ২০১৮ ১৭:৪৭ Asia/Dhaka

ভার্চুয়াল জগত: সম্ভাবনা ও শঙ্কা শীর্ষক ধারাবাহিকের আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আজও আমরা ভার্চুয়াল জগতের নানা দিক নিয়ে কথা বলবো।

ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে প্রতিদিনই লাখ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে এ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার প্রভাব তার ওপর পড়ছে। অনেকে নিজের অজান্তেই এই জগতের প্রতি এত বেশি ঝুকে পড়ছেন যে, এক পর্যায়ে তা আসক্তিতে রূপ নিচ্ছে। এখন অনেককেই বলতে শোনা যায়, আমিতো ইন্টারনেটে এতো বেশি সময় দিতে চাই না, কিন্তু কীভাবে যেন নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক বেশি সময় ধরে ইন্টারনেটে সময় কাটিয়ে ফেলছি। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঘুরেফিরেই ফেসবুকে ঢুকছেন। কিছু সময় পরপর ফেসবুক চেক না করলে এমন ব্যক্তিরা স্বস্ত্বি পান না। অনেক সময় খাওয়া, ঘুম, পড়াশোনা, সাংসারিক দায়িত্ব-কোনো কিছুর খেয়াল থাকে না। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় কোনো কাজের কথা বললে অনেকে রেগে যান বা বিরক্ত হন।

এমন মানুষের সংখ্যা এখন দিন দিন বাড়ছে যাদের দিনের বেশিরভাগ সময় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে সময় কাটাতে ভালো লাগে। দেখা যাচ্ছে দিনের শুরুটাই হচ্ছে ফেসবুকের টাইমলাইন দেখে। এরপর গ্রুপ চ্যাট করতে করতে কেটে যাচ্ছে প্রতিদিনের বড় একটা সময়। আড্ডা বলতে বন্ধুদের সাথে গ্রুপ চ্যাটই যেন তাদের কাছে বেশি আনন্দের। কখনো কখনো পড়াশোনা নিয়ে কথা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন বিষয়ের লিংক শেয়ার করা ও অনলাইন ট্রল- এগুলোই গ্রুপ চ্যাটের মুখ্য বিষয়। কোথাও এক সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া কিংবা আড্ডা দেয়া হয় না তাদের। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তেমন একটা গল্প হয়না। গল্পের মাধ্যম যেন শুধুই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে চ্যাট করা। এ ধরনের মানুষের মতে, একদিনও অনলাইন ছাড়া কাটানো অসম্ভব।

প্রায় সব বয়সের মানুষের কাছেই এই ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগত দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান ও আড্ডাতেও এখন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব। পাশাপাশি বসেও অনেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন স্মার্ট ফোন নিয়ে। শিশুরা ব্যস্ত থাকে কম্পিউটার গেইম নিয়ে। এ কারণে অনেক সময়ই পাশাপাশি বসেও তারা থাকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। অনেক সময় প্রয়োজনেই ইন্টারনেটে প্রবেশ করা হয়,কিন্তু সেখানে প্রবেশের পর নিজের অজান্তেই অন্য কোনো সাইট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অধিকাংশ মানুষ। এ প্রবণতা সব বয়সের মধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রবণতার কারণে নতুন প্রজন্মই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে শিশুর সময়জ্ঞান লোপ পায়। ধীরে ধীরে শিশু অস্থির ও অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। পড়ালেখার মান খারাপ হয়,হতাশায় ভুগে অস্থির ও খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়।

ভার্চুয়াল জগতের সোশ্যাল সাইটগুলোতে শিশুরা নতুন নতুন অনলাইন বন্ধুর খোঁজ পেতে থাকে, এর ফলে বাস্তব জীবনের বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। ছোটবেলা থেকেই তাদের সামাজিক যোগাযোগ কম হয়,যা শিশুর আচার-ব্যবহারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে শিশু আত্মকেন্দ্রিক ও অসামাজিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে। শারীরিক খেলাধুলা ও অন্যান্য শিশুর সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ মেলামেশা না হলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। দৈনন্দিন সাধারণ সমস্যা সমাধান করতে না পেরে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে পারে। শারীরিক খেলাধুলার অভাবে শিশু অলস ও শারীরিকভাবে দুর্বল হতে পারে। অধিক ওজন বা ওবেসিটি, চোখের সমস্যা,মাথাব্যথা থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ,স্ট্রোকসহ বিভিন্ন জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এছাড়া অশালীন ছবি ও ভিডিও দেখে অসুস্থ চিন্তার দিকে ধাবিত হওয়ার আশঙ্কাতো থেকেই যাচ্ছে যা সবচেয়ে ভয়ংকর।

শিশুকে ইন্টারনেটের খারাপ প্রভাব থেকে দূরে রাখতে বড়দের উচিত হবে প্রয়োজন ছাড়া তাদের সামনে মোবাইল,ট্যাব বা ল্যাপটপ ব্যবহার না করা। শিশুদেরকে সময় দিতে হবে। পরিবারের বড় সদস্যরা শিশুদেরকে সময় দিলে এবং তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে খেললে ভার্চুয়াল জগতের প্রতি তাদের আকর্ষণ কমে যাবে। তারা ভিডিও গেম নিয়ে ব্যস্ত থাকবে না। কারণ ভিডিও গেমের চেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাস্তবে খেলা করা শিশুদের জন্য অনেক বেশি আনন্দদায়ক। শিশুদের বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে খেলাধুলা ও বিভিন্ন ফিজিক্যাল একটিভিটি করালে তাদের মধ্যে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি তৈরি হবে না। প্রতিদিন অল্প সময় হলেও শিশুকে খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। ছবি আঁকা,বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছোটবেলা থেকেই নিয়ম করে একবেলা শিশুকে বই পড়ে শোনাতে পারলে খুব ভালো হয়।

শিক্ষার প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলে সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। সম্ভব হলে এই সময়টুকু শিশুর পাশে থেকে তাকে ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজন শুরু না হওয়া পর্যন্ত শিশুকে ট্যাব, মোবাইল—এসব থেকে দূরে রাখাই ভালো। এছাড়া শিশুকে ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুমতি দিলে নিরাপত্তামূলক কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে অশালীন ছবি ও তথ্য তার সামনে এসে হাজির না হয়। এ বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তাদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। # 

 

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ৬

ট্যাগ