অক্টোবর ০৩, ২০১৮ ১৮:৩০ Asia/Dhaka
  • দেখব ঘুরে ইরান এবার: ইরানের ঐতিহাসিক প্রদেশ ইয়াযদ

ইরানের মরু এলাকার পাশে অবস্থিত এই প্রদেশটিতে কদিন ঘুরে বেড়াবো আমরা। ইরানের প্রতিটি প্রদেশই একেকরকম বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল।

আপনারা জানেন যে ইরান চার ঋতুর দেশ।

 মজার ব্যাপার হলো এই চার ঋতু যেন ইরানে সবসময়ই বিরাজ করে অর্থাৎ এক এলাকায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা এমনকি বরফ রয়েছে অথচ ঠিক সে সময়েই দেখা যায় ইরানের অন্য এলাকায় কুলার অন না করে থাকা যাচ্ছে না। এক এলাকায় বৃষ্টিপাত তো অন্য এলাকায় অনবরত খরা। ইয়াযদ তেমনি একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যময় এলাকা। এ এলাকার বৈচিত্র্য আপনাদের ভালো লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস। চলুন তাহলে পাড়ি দেওয়া যাক ইয়াজদের দিকে।                      

 মরুর উপকণ্ঠে ইরানের কেন্দ্রীয় পর্বতমালার পাশে ইয়াযদ প্রদেশটি অবস্থিত। ইয়াজদের উত্তর এবং পশ্চিমে ইস্পাহান প্রদেশ, উত্তর পূর্বে দক্ষিণ খোরাসান প্রদেশ, দক্ষিণ পশ্চিম দিকে ফার্স প্রদেশ আর দক্ষিণ পূর্বে রয়েছে আমাদের ফেলে আসা সেই স্মৃতি বিজড়িত কেরমান প্রদেশ। ইয়াযদ প্রদেশটি বেশ বড়ো। বাহাত্তর হাজার এক শ  ছাপ্পান্ন বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই প্রদেশটির বিস্তার। পুরো ইরানের আয়তনের শতকরা প্রায় চার দশমিক তিন সাত অংশ এই ইয়াযদ প্রদেশ। বিশ্বের ড্রাই বেল্টের ওপর এই প্রদেশটির অবস্থান। এ কারণে ইয়াযদের আবহাওয়া  শুষ্ক এবং এখানকার গ্রীষ্ম ঋতু বা তারচেয়ে বলা ভালো গরম আবহাওয়ার সময়টা একটু দীর্ঘ।

সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে ইয়াযদে ঠাণ্ডা কম পড়ে। একেবারে যে ঠাণ্ডা নেই তা নয় শীতকালে মোটামুটি ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। তবে যতই পাহাড়িয়া এলাকার দিকে যাওয়া যাবে ততই ঠাণ্ডা বেশি লাগবে। এই এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শীতকালে বেড়ে যাওয়ার ফলেই ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। পার্বত্য এলাকা হবার কারণে গরমের সময়ও এখানকার আবহাওয়া থাকে নাতিশীতোষ্ণ।

 আবহাওয়াগত কারণে ইয়াযদ প্রদেশে কৃষিকাজের অবস্থা খুব একটা ভালো বলা যাবে না। যেহেতু মরু এলাকা তাই কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানির সু ব্যবস্থা নেই। পানির স্তর এখানে অনেক গভীরে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও এখানে কম। তাছাড়া  বালিময় বায়ু প্রবাহ এখানে সবসময়ই থাকে। এরকম বিচিত্র কারণে পানির অভাব রয়েছে এখানে। আর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকার কারণে কৃষিকাজ করার তেমন একটা সু বন্দোবস্ত গড়ে ওঠে নি। ইয়াযদ প্রদেশ বেশ বড়ো হবার পরও তাই অন্তত আটাশ শতাংশ এলাকা অনাবাদি রয়ে গেছে এখানে। স্থানীয় অর্থনীতির ওপর তার বিরূপ প্রভাব যে পড়বে তাতে আর সন্দেহ কী!

 ইয়াজদের যেসব এলাকায় কৃষিকাজ হয় সেসব এলাকার মধ্যে রয়েছে ইয়াযদ সমতল প্রান্তর আর্দেকান, বাহা’দারন, বাহা’বদ, হেরাত, চহাক এবং আব্‌রকূহ। এই প্রদেশের প্রধান প্রধান কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে আনার, পেস্তা বাদাম, বাদাম যেটাকে অ্যালমন্ড বলা হয়, সূর্যমুখী, আঙুর, তুলা, বিট, তিসি ইত্যাদি। ইয়াযদ প্রদেশটি খনিজ সম্পদের দিক থেকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এখানে রয়েছে আয়রন বা লোহার খনি, রয়েছে মর্মর পাথর, সীসা, পাথুরে বালি ইত্যাদি। ইরানের বিশেষ করে ইয়াযদ প্রদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে এইসব খনিজ সম্পদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।

 ইরানের জাতীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি প্রত্যেকটি প্রদেশের মোটামুটি নিজস্ব বা স্থানীয় সংস্কৃতি রয়েছে। ইয়াযদ প্রদেশের সংস্কৃতিও বেশ সমৃদ্ধ। সংস্কৃতির পাশাপাশি এখানকার শিল্প ঐতিহ্যের বিষয়টিও বেশ উল্লেখযোগ্য। এই প্রদেশের লোকজন বেশ কর্মঠ, পরিশ্রমী এবং প্রতিরোধকামী। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের মাঝে এই চেতনাগুলো গুণ হিসেবে ধরা দিয়েছে। কেননা প্রাকৃতিক নানা বিরূপতার সাথে তাদেরকে সবসময়য় যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হয়। শত শত মিটার মাটির গভীরে খনন করে তাদেরকে পানির ব্যবস্থা করতে হয়, ফলে পরিশ্রমী না হবার কোনো বিকল্প নেই।

ইয়াযদ শহর এই প্রদেশের প্রধান শহর। মরু আঞ্চলিক শহরগুলোর মধ্যে এই শহরটি সবচেয়ে ভালো একটি শহর হিসেবে স্বীকৃত। শহরটির দুই দিকে অন্তত ১২ শ মিটার উঁচু দুটি পাহাড়। এই উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গণনা করা হয়েছে। ইয়াযদ মাসে হলো পাক পবিত্র। ইয়াযদ শহরটির বৈশিষ্ট্য তার নাম থেকে সুস্পষ্ট হয়ে যায়। ইয়াযদ শহরের স্থাপনাগুলোর ইতিহাস নিয়ে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন এখানকার প্রথম স্থাপনাটি গড়ে উঠেছে অ্যালেক্সান্ডারের হাতে। বলা হয়ে থাকে অ্যালেক্সান্ডার এই শহরটি তৈরি করেছিল কারাগার হিসেবে। যারা শাস্তি প্রাপ্ত তাদের জন্য এবং নির্বাসনে দেওয়ার জন্য এই শহরটি গড়ে তুলেছেন তিনি। এ কারণে অ্যালেক্সান্ডারের কারাগার নামেও এই শহরের প্রসিদ্ধি আছে।

অ্যালেক্সান্ডারের কারাগার প্রসঙ্গে বলছিলাম আমরা। বলা হয়ে থাকে অ্যালেক্সান্ডার যখন ইরানের ওপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল তখন তেহরানের কাছাকাছি ‘রেই’ নামক বিখ্যাত এবং ঐতিহাসিক শহরের বেশ কজন ব্যক্তিত্ব তার বিরোধিতা করেছিলেন। অ্যালেক্সান্ডার সেইসব মহান ব্যক্তিবর্গকে গ্রেফতার করে ইয়াযদ অতিক্রম করার সময় সেখানকার একটি কূপে তাঁদেরকে বন্দী করে রেখেছিল। ওই স্থানটিকে গ্রিক ভাষায় জিন্দান বা কারাগার বলে নাম রাখে।

অ্যালেক্সান্ডার যখন ইয়াযদ থেকে বেরিয়ে যায় তখন ওই কারাবন্দীরাই রক্ষীদের সাহায্য নিয়ে শহরটিকে আবাদ করার উদ্যোগ নেয়। অনেক ইতিহাসবিদের মতে ইয়াজদের গোড়াপত্তন হয়েছিল শাসানী শাসক প্রথম ইয়াযদগার্দ্ এর হাতে। তার নামের সাথে মিল রেখেই শহরটির নাম রাখা হয়েছে ইয়াযদ। হিজরি পঞ্চম শতক থেকে এই শহরটির বিকাশ ঘটে। আতাবাকিরাই এই শহরের উন্নয়নে অবদান রেখেছিল। ইয়াযদেও দেখার আছে অনেক কিছু। বিশ্ব পর্যটকরা এই শহরে প্রায়ই বেড়াতে আসে। ইয়াজদের মসজিদে কাবির, ফাহরাজ জামে মসজিদ, সাইয়্যেদ রোকনুদ্দিনের সমাধি, দৌলতাবাদ বাগিচা, আমিরে চাখমখ মসজিদ, অগ্নিমন্দির, টাওয়ার ইত্যাদি।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/  ৩

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ