অক্টোবর ০৮, ২০১৮ ১৮:৩৫ Asia/Dhaka

ভার্চুয়াল জগত: সম্ভাবনা ও শঙ্কা শীর্ষক ধারাবাহিকের আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি।

আমরা এর আগেও বলেছি বর্তমান যুগে সরকারি- বেসরকারি অফিস-আদালতে,ব্যবসা-বাণিজ্যে,পড়ালেখা ও গবেষণাসহ সব কাজে ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য হয়ে উঠছে তবে এটি পুরোপুরি নিরাপদ কোনো জগত নয় আজকের আসরে আমরা এসব বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব

ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগত হচ্ছে ধারালো ছুরির মতো। এটি কীভাবে এবং কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে তা সবচেয়ে বড় বিষয়। ছুরি স্বভাবতই খারাপ কোনো জিনিস নয়, এটিকে ভালো বা মন্দ দুকাজেই ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ইচ্ছাকৃতভাবে প্রবৃত্তির তাড়নায় এটিকে অপব্যবহার করতে পারে,আবার তা থেকে অনেক ভালো কিছুও অর্জন করতে পারে ব্যাংকিং খাত বিশেষকরে অর্থনৈতিক খাতে ভার্চুয়াল জগত এক ধরনের বিপ্লব সাধন করেছে অর্থ লেনদেনের জটিলতা এখন অনেকটাই কেটে গেছে বিশ্বের এক প্রান্তে বসে অপর প্রান্তের ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করা যাচ্ছে নিমিষেই আবার এই ভার্চুয়াল জগতকে অপব্যবহার করেই ব্যাংকের অর্থ এমনকি রাষ্ট্রের রিজার্ভ পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে              

একজন মুসলমান ব্যবহারকারী যেমন ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিপথে যেতে পারেন ঠিক তেমনি ইসলামের দিক নির্দেশনা জেনে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে এর ভালো দিকগুলো থেকে উপকৃত হতে পারেন। ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতে পারে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম প্রচারের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবেও। ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে, তা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও এটিকে কাজে লাগানো জরুরি। মহানবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.)'র জীবনাচারণ তুলে ধরে মানুষকে সত্যের পথে আনা যেতে পারে। নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার অনুমতি যে ইসলাম ধর্মে নেই, সে বার্তা সহজেই পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হতে পারে ইন্টারনেট। কারণ ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করা যায় এবং অল্প খরচে নিজের বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়।

ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে এখন সর্বত্রই অপপ্রচার চলছেদায়েশ বা আইএসের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা চলছে। এর মোকাবেলায় মুসলমানদের পক্ষ থেকে এ বার্তা তুলে ধরতে হবে যে, ইসলাম ধর্ম এসেছে পৃথিবীকে সংঘাতমুক্ত করতে, সংঘাত সৃষ্টি করতে নয়। ইসলামের এ বার্তা ইউরোপ-আমেরিকাসহ সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। সবার উচিত এ সুযোগ কাজে লাগানো। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি,তোমাদেরকে মানবকল্যাণের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজে আদেশ করবে এবং মন্দ কাজে নিষেধ করবে।

ছাত্র-শিক্ষক,নারী-পুরুষ,অফিসার-কর্মচারী,ছোট-বড় সবাই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তবে সবারই সব সময় মনে রাখা দরকার ইন্টারনেট যাতে সময় অপচয় বা বিপথগামী হওয়ার মাধ্যমে পরিণত না হয়। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষকে তার ব্যক্তিগত,পারিবারিক,সামাজিক ও  রাষ্ট্রীয় জীবনে পথ চলার ক্ষেত্রে হালাল-হারাম যাচাই বাছাই করে চলতে হয়। এটি তার দায়িত্ব। এসব দায়িত্বের কথা সব সময় মনে রাখতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে ইন্টারনেটের উপর মানুষের নির্ভরতা দিনদিনই বাড়ছে। কাজেই কেউ চাইলেও এই জগত থেকে খুব বেশি দূরে থাকতে পারবে না। কারণ প্রযুক্তিকে এড়িয়ে উন্নতি করা সম্ভব নয়। এ কারণে প্রযুক্তিকে প্রত্যাখ্যান না করে প্রত্যাখ্যান করতে হবে ওই প্রযুক্তির খারাপ প্রভাবকে। বিশ্বায়নের এ যুগে নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন করে তোলার বিকল্প নেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে তারা যাতে বিপথগামী না হয়।

ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতের কল্যাণে গোটা বিশ্ব যেন একটি কক্ষে পরিণত হয়েছে।  এর ফলে সব কিছুই এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নাগালের মধ্যে। তবে ইন্টারনেট যেমন জীবন পদ্ধতিকে সহজ করছে এবং বিশাল জ্ঞানের ভান্ডারে পরিণত হচ্ছে ঠিক তেমনি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য নতুন নতুন বিপদও ডেক আনছে।  ইন্টারনেট অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রবেশ করছে অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতা। অনিয়ন্ত্রিতভাবে এই জগতকে ব্যবহার করলে প্রতি মুহূর্তেই বিপদের মুখে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ভার্চুয়াল জগতে রয়েছে কোটি কোটি পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট। এসব ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পর্নোগ্রাফিক ছবি ও ভিডিও আপলোড করা হয়। চূড়ান্তভাবে এসব ওয়েবসাইট সব বয়সের মানুষের জন্যই ক্ষতিকর বিশেষকরে এসব ওয়েবসাইট শিশু-কিশোরদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে কাজেই ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জগতের যত ভালো দিকই থাকুক না কেন, এতে শিশু-কিশোরদের অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ ঠেকাতে হবে খারাপ ওয়েবসাইটগুলো আটকে দেওয়ার মতো অনেক সফ্টওয়্যার রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে এ উদ্যোগ বড়দের পক্ষ থেকেই নিতে হবে#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/  ৮

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন