নভেম্বর ২০, ২০১৮ ১৮:৩০ Asia/Dhaka

'জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি' বিশ্বব্যাপী পরিচিত নতুন একটি পরিভাষা। সম্প্রতি এই পরিভাষাটির জন্ম হয়েছে। জ্ঞান নির্ভর উৎপাদন উপকরণের সাহায্যে যে অর্থনীতি গড়ে ওঠে তাকেই জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি বলে অভিহিত করা হয়েছে।

অনেকেই মনে করেন যে মানব সমাজ সেই শুরু থেকেই জ্ঞান-নির্ভর ছিল। বেঁচে থাকার তাগিদে এবং জীবনমান উন্নয়নের জন্য মানুষ যুগে যুগে তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছে। মেধা, বুদ্ধি জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ তাদের সমস্যার সমাধান যেমন করেছে তেমনি সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। বর্তমানে এই জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে প্রচুর কোম্পানি। আজকের আসরে আমরা এই জ্ঞান ভিত্তিক কোম্পানি ও অর্থনীতি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

ইতিহাসের কাল পরিক্রমায় দেখা গেছে প্রাকৃতিক সম্পদ, হার্ডওয়্যার সরঞ্জামাদি ইত্যাদি ছিল মানুষের কাজকর্ম ও সকল প্রকার তৎপরতার মূল হাতিয়ার। সময়ের বিবর্তনে এখন সেই হাতিয়ারের স্থান দখল করেছে জ্ঞান। জ্ঞানই এখন কোম্পানিগুলোর মূল পুঁজি। জ্ঞানের প্রকার, স্তর এবং পরিমাণের ওপর কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতায় হারজিতের বিষয়টি নির্ভর করে এখন। কিংবা আরও সহজ করে বলতে গেলে আধুনিক বিশ্বের কোম্পানিগুলো জ্ঞানের সাহায্যেই ধনী, সমৃদ্ধ ও সম্পদশালী হয়। জ্ঞান বলতে বোঝায় কিছু তত্ত্ব, কিছু তার বাস্তব অনুশীলন, কিছু অভিজ্ঞতা আর মানবীয় বুদ্ধির সমন্বয়। বাণিজ্যিকী করণের মধ্য দিয়ে তার সুষ্ঠু প্রয়োগ ঘটে। জ্ঞানের বাণিজ্যিকী করণ মানে হলো আইডিয়া বা নতুন নতুন উদ্ভাবনীকে কাজে লাগিয়ে কিছু প্রোডাক্ট তৈরি করে সেগুলোকে বিক্রির জন্য বাজারজাত করা। বাণিজ্যিকী করণ অনেক সময় এমনও হয় যে বিশ্বভূগোলে ওই প্রোডাক্টটি একেবারেই নতুন এবং প্রথমবারের মতো বাজারজাত করা হয়ে থাকে।

জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলোর সংজ্ঞায় বলা হয়ে থাকে এগুলো এমন প্রতিষ্ঠান যে প্রতিষ্ঠান জ্ঞান এবং সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য বাস্তবায়ন, নতুন নতুন উদ্ভাবন ও তার প্রসার, প্রযুক্তিক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের উন্নয়ন ও বাস্তবায়নসহ সেগুলোর বিপণন ইত্যাদি বিচিত্র কাজ করে। এইসব কাজ করার মধ্য দিয়ে জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রচুর মূল্য সংযোজন করের যোগান দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে গড়ে ওঠার কারণ হলো এইসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য থেকে আসা মূল্য সংযোজন করের প্রাচুর্য। বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল দেশই তাদের নাগরিকদেরকে ক্ষুদ্র, মাঝারি কিংবা বৃহৎ পরসির যে-কোনো রকমের নতুন নতুন গবেষণামূলক পদক্ষেপকে তাই উৎসাহিত করছে।

মানব সম্পদ এবং অবকাঠামোগত গুরুত্ব জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞগণ জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতিকে বেশ কিছু উপায় উপকরণের ওপর নির্ভরশীল বলে মনে করেন। যেমন যথার্থ শিক্ষা ব্যবস্থা, তথ্য প্রযুক্তির মজবুত ভিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী, ইউনিভার্সিটিগুলোসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষ বিভাগগুলোকে গুরুত্বের সাথে কাজে লাগিয়ে নয়া উদ্ভাবনীর উন্নয়ন ঘটানো ইত্যাদি। এগুলোর নিশ্চয়তার ওপরই নির্ভর করে একটা দেশের জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি। একটি এলাকার সাধারণ ইন্টারনেট লাইন কিংবা পরিবহণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়,প্রযুক্তি ও গবেষণা কেন্দ্র এবং সেইসঙ্গে যোগ্য ও দক্ষ কর্মী বাহিনী ইত্যাদি জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক শক্তি।

জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা এবং তার উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম,কোম্পানির বাণিজ্য ও অর্থণৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতিমালার আনুকূল্য। নীতিমালা অনুকূল না থাকলে কেউ এ কাজে এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত হবে না।জ্ঞান ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর জন্য অনুকূল নীতিমালার ভিত্তি হতে পারে একটা নিরাপদ,সুস্থ ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা। নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি সামগ্রিক সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত হতে পারে অনুকূল ও সর্বোত্তম আইনি কাঠামোর মাধ্যমে। এ নিয়ে আমরা আরো কথা বলবো খানিক মিউজিক পর।

জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চিন্তাভাবনার পরিধি সাধারণত বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত থাকে। অর্থাৎ কোনো একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল ভিত্তিক চিন্তাভাবনা তারা করে না। এ ধরনের কৌশল গ্রহণের ফলে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিস্তৃত পরিসর দেওয়ার এবং বিশ্বের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে বিভিন্ন বিষয় শিখে নিজেদের সমৃদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই সুযোগের কারণে চিন্তারাজ্যে নতুন নতুন সংযোজন ঘটে। আর তারই সুবাদে লাভবান হবারও সুযোগ সৃষ্টি হয় জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির পেছনে একটি সমাজের সাংস্কৃতিক প্রভাবও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। সুতরাং জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন কেবল একটি দেশের রাজনৈতিক পদস্থ কর্মকর্তাদের যথাযথ অর্থনৈতিক কর্মসূচির ওপরই সীমাবদ্ধ থাকে না। সেই সমাজের সংস্কৃতিও সক্রিয় কর্মীবাহিনীর মতোই অর্থনৈতিক কর্মসূচিকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।

এ ক্ষেত্রে ইরানে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইস্ফাহানে গড়ে তোলা হয়েছে 'সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি টাউন' বা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপশহর। ইস্ফাহান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তত্ত্বাবধানে 'জুব অহান' কোম্পানির মাধ্যমে ১৯৯২ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীকালে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের সংসদ মজলিশে শুরায়ে ইসলামিতে জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান বিষয়ে নীতিমালা গৃহীত হয়। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/   ২০

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ