মে ১৮, ২০১৯ ১৫:৫০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা আলোচনা করেছিলাম চাকুরি জীবন থেকে অবসরে যাওয়ার পর নতুন জীবনকে সুন্দরভাবে, সুপরিপল্পিতভাবে কাজে লাগানোর গুরুত্ব নিয়ে।

ভ্রমণ,পছন্দের বইগুলো পড়া, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে পালাক্রমে দেখা-সাক্ষাৎ করা ইত্যাদি কাজকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে অবসর জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ্য করে তোলা যেতে পারে। বন্ধুসঙ্গ পেলে খুবই ভালো কাটতে পারে এই কাল-পর্বটি।

আর অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির সময় ভালোভাবে কাটলে পাশে যারা থাকবে তারাও ভালো সময় কাটাতে পারবে। সর্বোপরি ভাবতে হবে, অবসরকালীন জীবন মানে পথের শেষ নয় বরং নতুন একটি  জীবন পর্বের শুভ সূচনা। বলা যেতে পারে নতুন জন্ম। মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক সুস্থতার ওপর এই পরিকল্পিত জীবনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। যাই হোক আজকের আসরে আমরা যাবো পরিবারের অর্থনীতি বিষয়ে। পরিবার একটি সমাজের ক্ষুদ্রতম একটি ইউনিট। এই ক্ষুদ্র পরিসরই জীবনের মূল যাপন স্থান। পরিবারই মানুষের শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞান-প্রশিক্ষণ লাভের উপযুক্ত পাঠশালা। সকল পেশাজীবী মানুষই পরিবারের সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয়। সুতরাং পরিবারগুলো যদি অর্থনীতি বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত দিক থেকে উন্নতি লাভ করে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সমাজেও তার প্রভাব পড়বে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ও সমাজ উন্নতি লাভ করবে।

পারিবারিক পাঠশালার কথা বলছিলাম। বিশ্বব্যাপী সকল দেশ ও জাতি এমনকি উন্নত,উন্নয়নশীল সকল সমাজের জন্যই পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে-কোনো পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করার ক্ষেত্রে এই পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।এ কারণেই অর্থনীতিবিদরা পরিবারকে একটি সমাজের অর্থনৈতিক জীবনের ভিত রচনার মৌলিক রূপকার বলে মনে করেন।পরিবারের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলার আগে চলুন 'অর্থনীতি'র অর্থের সঙ্গে একটু পরিচিত হয়ে নিই।তারপর পরিবারের সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় যাওয়া যাবে। অর্থনীতির সংজ্ঞার ক্ষেত্রে সবকিছুর আগে দুটি শব্দ চলে আসে আলোচনায়। একটি হলো 'ঘাটতি' অপরটি 'মানুষের চাহিদা'। সেবা এবং পণ্য –এই দুটি মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা। মানুষই তাদের চাহিদা মেটাতে পণ্য উৎপাদন করে এবং ব্যবহার করে। পণ্য উৎপাদিত না হলে মানুষের জীবন কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে পড়তে পারে।

মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের বেশিরভাগ মাটিতে এবং প্রাকৃতিক উৎস থেকে অর্জিত হয়ে থাকে। এসবের বাইরে বাসাবাড়ি, ভবন, গাড়ি, উড়োজাহাজ ইত্যাদি সামগ্রিও মানুষই তৈরি করেছে। তবে এগুলো তৈরির  কাঁচামাল প্রকৃতিরই দান। প্রাকৃতিক এইসব উপাদানকে পুঁজি বলে অভিহিত করা হয়। একইভাবে স্বয়ং মানুষ কিংবা জনবলও সেবা এবং পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি। সেজন্যই সেবা এবং পণ্য উৎপাদনের প্রভাবশালী উপাদানকে এভাবে উল্লেখ করা হয়: ভূমি এবং প্রাকৃতিক উৎস; পুঁজি ও জনবল। পুঁজি হলো ভূমি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ,, দক্ষতা ও চেষ্টা প্রচেষ্টার ফল।

কোনো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ যত বেশি হবে এবং দক্ষ জনশক্তির সংখ্যা যত বেশি হবে, সেইসঙ্গে পুঁজির পরিমাণ যত বেশি হবে সেই দেশ ও সমাজে পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের পরিমাণও বেশি হবে। স্বাভাবিকভাবেই সেই সমাজে সেবার পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এসব উপাদান বিপুল নয় খুবই বিরল। অপরদিকে মানুষের চাহিদাও অসীম এবং শিল্প ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে এইসব চাহিদারও মাত্রা বেড়ে যায়। অর্থনীতির জ্ঞান আমাদের শেখায় কীভাবে কম সামর্থ্য ও সম্পদ দিয়ে বেশি বেশি উপকৃত হওয়া যায়। পরিবারও প্রকৃত অর্থে 'পুঁজি' এবং 'জনশক্তি'র মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে সমৃদ্ধ একটি অর্থনৈতিক ইউনিট।পরিবারের অর্থনীতির উপাদানগুলোকে কী করে সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো যায় তাও বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

তার আগে প্রশ্ন জাগে-অর্থনীতির এই উৎসগুলো কী কী? এর জবাবে সময়, টাকা-পয়সা, বসবাসের পরিবেশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা যেতে পারে। এইসব উৎস বাহ্যত একটু ভিন্ন মনে হতে পারে। তবে এসবের মধ্যে একটি ক্ষেত্রে অভিন্নতা রয়েছে। সেটা হলো এগুলোর সবই প্রায় বিরল। নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন, জনগণ বলে: ইশশশশ, যদি আরেকটু সময় পেতাম, যদি বাসাটা আরেকটু বড় হতো, যদি আরও বেশি টাকা থাকতো ইত্যাদি। এমনকি বস্তুগত দিক থেকে যাঁর যথেষ্ট পরিমাণ সামর্থ্য বা বিত্ত-বৈভব রয়েছে তিনিও আরও বেশি আশা করেন। সেই বিখ্যাত পংক্তিটি মনে পড়ে যায়:

এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি

রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি

যে-কোনো পরিবারই চায় সবচেয়ে ভালো খাবারটি খেতে, সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরিবারের সদস্যদের পরাতে, সবচেয়ে ভালো বাড়িতে বাস করতে এবং ঘন ঘন ভ্রমণে যেতে। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রায় পরিবারেরই আর্থিক বাজেট সীমিত থাকে এবং চাহিদা আর সামর্থ্যের মাঝে সামঞ্জস্যহীনতা একটা সাধারণ বিষয়। তাই পরিবারগুলোকে বাধ্য হয় সামর্থ্যের সীমায় থেকেই নিজেদের চাওয়াগুলো নির্ধারণ করতে এবং এমনভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাতে পরিবারের সদস্যরা তুলনামূলকভাবে বেশি সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। অর্থনীতির পরিভাষায় একে বলা হয় উপযোগ। কী ব্যয় করবো, কতটুকু খরচ করবো, কীভাবে খরচ করবো, কে কাজ করবে, কত ঘণ্টা কাজ করবে, আয়টাকে কত বেশি কাজে লাগানো যায়, কোন কোন জিনিস ঘরে তৈরি করা হবে ইত্যাদি প্রশ্ন প্রায় প্রতিদিনই একটি পরিবারে দেখা দেয় এবং এগুলোর জবাবে বিশেষ করে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে যথার্থ ও দূরদর্শিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ কারণেই সঠিক নির্বাচন হলো পরিবারের অর্থনীতির প্রাণ। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ