আগস্ট ২১, ২০১৯ ২১:১৪ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি যিনি আমাদেরকে এপর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পবিত্র কুরআনের প্রথম থেকে ২৯তম পারার আলোচনা শোনার সুযোগ দিয়েছেন।

আজ আমরা এ মহাগ্রন্থের শেষ পারা তথা ত্রিশতম পারার প্রথম সুরার আলোচনা শুনব। পবিত্র কুরআনের ত্রিশতম পারার বেশিরভাগ সুরাই মক্কায় নাজিল হয়েছে। এই পারার বেশিরভাগ সুরাতেই যে বিষয়গুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে সেসব বিষয় হল একত্ববাদ বা তাওহিদ, পরকাল ও পুনরুত্থান এবং বিচার দিবসে মানুষের অবস্থা। পরকালের ওপর জোর দেয়ার বা এ বিষয়টি বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়ার কারণ হল মানুষের সংশোধনের জন্য এটাই জরুরি ও প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত।

 

মানুষের মনে রাখা দরকার, একদিন সব মানুষকেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং সেখানে সব ভালো ও মন্দ কাজের জন্য পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আর ওই আদালত এমন এক কঠিন আদালত যে সেখানে কোনো কিছুই গোপন রাখার সুযোগ নেই। সেখানে জোর-জবরদস্তির সুযোগ নেই, নেই ঘুষ দেয়া-নেয়ার কিংবা শাস্তি থেকে পালানোর কোনো সুযোগ। এমন একটি আদালতের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস মানুষকে রাখে সংযত এবং তার মধ্যে জেগে ওঠে খোদাভীতি, দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার অনুভূতি।

 

পবিত্র কুরআনের ত্রিশতম পারার প্রথম সুরার নাম নাবা বা সুরা আম্মা কারণ এ সুরা আম্মা শব্দটি দিয়ে শুরু হয়েছে। তবে নাবা নামটিই বেশি প্রচলিত।  আরবি 'আন ও মা' শব্দের সংযোগে গঠিত আম্মা শব্দটির অর্থ হচ্ছে কোথা হতে অথবা কি সম্পর্কে? অন্যদিকে নাবা শব্দের অর্থ মহাসংবাদ। সুরা নাবা এ মহাগ্রন্থের ৭৮ তম সুরা। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ৪০। মহানবীর (সা) মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের আহ্বান ও প্রচার শুরু হলে মক্কার কাফির-মুশরিকরা একত্ববাদ, পরকাল, ওহি ও নবুওতের মত নানা শব্দের মুখোমুখী হয়। কখনও কখনও সন্দেহের দোলা বা উপহাস কিংবা প্রশ্নের আঙ্গিকে তারা এসব বিষয়ে তর্ক করত। কিয়ামত বা পুনরুত্থান ও বিচার-দিবস বলে আদৌ কোনো কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে কিনা-এটা ছিল তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সুরা নাবায়ও তাদের এ প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে। এর জবাবে আকাশ ও ভূমিতে মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতার নানা নিদর্শন, মানুষের জন্য মহান আল্লাহর অজস্র নেয়ামত ও অনুগ্রহ, কিয়ামত বা পুনরুত্থানের নানা নিদর্শন, খোদাদ্রোহীদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক নানা শাস্তি, খোদাভীরুদের জন্য বেহেশতের অপার সুখের কয়েকটি দিক ও আরও কিছু বিষয়েও বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে সুরা নাবায়।

সৃষ্টির পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে মহান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতার অনেক নিদর্শন। এসব নিদর্শন পরকাল ও পুনরুত্থানের অনিবার্যতারই প্রমাণ।

সুরা নাবার প্রথম কয়েকটি বাক্যে মহান আল্লাহ বলছেন:

(১) এরা পরস্পরের কাছে কী বিষয়ে প্রশ্ন করে? (২) এক মহাসংবাদ বিষয়ে, (৩) যে বিষয়ে তারা মতবিভক্ত। (৪) কখনও এমন নয়, অতিশীঘ্র তারা জানতে পারবে; (৫) অতঃপর কখনও এমন নয়, অতিশীঘ্র তারা জানতে পারবে।

- ‘নাবা-ই-আজীম’বা মহাসংবাদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কিয়ামতকে, কেউ কুরআনকে, আবার কেউ হযরত আলী (আ.)-এর বেলায়াত বা নেতৃত্বকেও উদ্দিষ্ট বলে থাকেন।

সুদ্দী মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেক মানুষকে কবরে আলী ইবনে আবি তালিবের বেলায়াত প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং কোন মৃত পূর্ব ও পশ্চিমে, স্থলে ও জলে থাকবে না যাকে ফেরেশতা আলীর বেলায়াত বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে না। মৃতদের জিজ্ঞেস করা হবে, ‘তোমার ধর্ম কী?’ ‘তোমার নবী কে?’ এবং ‘তোমার ইমাম কে?’ (ইককাকুল হাক, ৩য় খ-, পৃ.৪৮৪) এ কারণে আমর বিন আস হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা সত্ত্বেও স্বীকার করেছে যে, হযরত আলী ‘নাবা-ই আজীম’ ও ‘নূহের কিস্তি’ও ‘বাবুল হিত্তা’তথা আল্লাহর রহমতে প্রবেশের দরজা।

মহান আল্লাহ সুরা নাবার ৬ থেকে ১২ নম্বর আয়াতে বলছেন:

 (৬) আমরা কি ভূমিকে তোমাদের জন্য প্রশান্তির স্থল তথা বিছানাস্বরূপ করিনি? (৭) এবং পর্বতমালাকে পেরেক বা কীলকস্বরূপ? (৮) এবং আমরা তোমাদের জোড়া জোড়া করে তথা নারী ও পুরুষ শ্রেণীতে সৃষ্টি করেছি, (৯) এবং আমরা তোমাদের ঘুমকে বিশ্রামের মাধ্যম করেছি, (১০) এবং আমরা রাতকে করেছি আবরণস্বরূপ, (১১) এবং দিবসকে করেছি জীবিকা আহরণের সময়। (১২) এবং আমরা তোমাদের ঊর্ধ্বদেশে সুস্থিত সপ্তাকাশ নির্মাণ করেছি,

সুরা নাবায় পুনরুত্থান-দিন ও বিচার দিবসে মানুষের দু'টি শ্রেণীতে তথা খোদাদ্রোহী ও খোদাভীরুর দলে বিভক্ত হওয়ার এবং খোদাদ্রোহীদের জন্য কঠোর শাস্তির সামান্য কিছু নমুনার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, সুরা নাবার ২৪ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে দোযখে দোযখিদের অবস্থা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলছেন:

(২৪) সেখানে তারা কোন শীতলতা আস্বাদন করবে না, থাকবে না কোন পানীয়, (২৫) ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া, (২৬) এটাই তাদের কর্মের উপযুক্ত প্রতিফল,

-পাপীদের জন্য দোযখ হবে ভয়াবহ মাত্রায় গরম ও উত্তপ্ত। সেখানে তাদের পান করতে দেয়া হবে মহা-উত্তপ্ত পানি। সে পানি তাদের পেটকে গলিয়ে দেবে।

সুরা নাবায় খোদাভীরুদের সাফল্য সম্পর্কে বলা হয়েছে:

(৩১) নিশ্চয় সাবধানী তথা খোদাভীরুদের জন্য বড় সাফল্য রয়েছে, (৩২) আর রয়েছে সবুজ সুরম্য উদ্যান ও নানা প্রজাতির আঙ্গুর (৩৩) এবং সমবয়স্কা উদ্ভিন্ন-যৌবনা তরুণী।

  • লক্ষ্যণীয় যে বেহেশতের মহাসুন্দর পরিবেশে থাকবে না মিথ্যার সামান্যতম লেশ, অহেতুক কথা, অপবাদ, কটাক্ষ বা অপমান, সত্যকে অস্বীকার ও মিথ্যার পক্ষে সাফাই এবং অশালীন কথার মত নানা নোংরা বিষয়।  

সুরা নাবার শেষের আয়াতে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে পাপী মানুষের শাস্তি খুবই সন্নিকটে। এটা তা-ই যা মানুষ নিজেই কামাই করেছে। নিজ কৃতকর্মের ভয়াবহ ও বীভৎস রূপ প্রকাশ এবং পরকালের কঠোর শাস্তি দেখে কাফেররা সেদিন চরম অনুশোচনার জ্বলে পুড়ে বলবে: হায়! আমি যদি মাটি হতাম!-আসলে সেদিন মানুষের কৃতকর্মই বাস্তব প্রতিফল হয়ে দেখা দেবেঅন্যদিকে খোদাভীরুরা সৎকাজের বাস্তব প্রতিফলন দেখে আনন্দিত হবে। আসলে ভালো ও মন্দের বাস্তব বা মূর্ত প্রতিফলনই হল সবচেয়ে বড় পুরস্কার এবং সবচেয়ে বড় শাস্তি।#

 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/  ২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।