মার্চ ২৯, ২০২০ ২১:৩০ Asia/Dhaka

ইতালিতে বর্তমানে একটা ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাইরে বের হচ্ছে না। সরকার প্রথম দিকে করোনা নিয়ে ততোটা গুরুত্ব না দিলেও বর্তমানে কঠোর অবস্থানে গ্রহণ করেছ বলে রেডিও তেহরানকে জানালেন ইতালী প্রবাসী সাংবাদিক জাকির হোসেন সুমন। তিনি আরও জানান, বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে ইতালিতে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ।সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছন গাজী আবদুর রশীদ। পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

ইতালির করোনাভাইরাস পরিস্থিতি

রেডিও তেহরান: জনাব জাকির হোসেন সুমন, আপনি ইতালিতে আছেন এবং সংবাদকর্মী হিসেবে সেখানকার খবরাখবর রাখছেন, তো আমরা দেখেছি ইতালিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মাত্র তিনজন করোনায় আক্রান্ত হন। মাত্র ৬ সপ্তাহের ব্যবধানে তা ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে ইতালি সবার উপরে। ইতালিতে ঠিক কিভাবে করোনাভাইরাস এত ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ল? সরকারের কি কোনো দুর্বলতা ছিল?  

জাকির হোসেন সুমন: দেখুন! ইতালিতে করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে সরকার তেমন কড়াকড়ি আরোপ না করেনি এবং এখানকার মানুষও তেমন সচেতন হয়নি। যে কারণে আস্তে আস্তে এতবেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ইতালির লোম্বারদিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা এবং আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রথম দিকে ইতালি সরকার তেমন গুরুত্ব না দিলেও পরবর্তীতে একের পর এক নানা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

রেডিও তেহরান: করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ১২ মার্চ থেকে ইউরোপের দেশ ইতালি লকডাউন করা হয়। প্রায় সব ইতালীয় নাগরিক ঘরে বন্দি জীবনযাপন করলেও মৃত্যু ও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। তাহলে কি লকডাউনসহ অন্যান্য পদক্ষেপ কাজে আসছে না?

করোনায় লকডাউন ইতালি

জাকির হোসেন সুমন: দেখুন! আমার কাছে মনে হয়েছে লকডাউন করার পরও এখানকার জনসাধারণ বিষয়টি ততোটা গুরুত্বসহ দেখেনি। যারফলে অনেকেই রাস্তায় বের হয়েছে। অনেকে দোকানে গেছে বা বাইরে গেছে। তবে প্রশাসনের মাথায় বিষয়টি ছিল। যারাই ঘর থেকে বের হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের ডকুমেন্ট চেক করা হয়েছে। কী কারণে তারা ঘর থেকে বের হয়েছে- সে বিষয়টি প্রশাসন জেনেছে। কেউ সঠিক কারণ দেখাতে না পারলে তাকে জরিমানাও করা হয়েছে। সরকার জেল ও জরিমানা দুটোরই বিধান রেখেছে। তারপরও আমি বলব প্রথম দিকে সেভাবে গুরুত্বসহ নেয়নি মানুষ। 

তবে বর্তমান পরিস্থিতি কিন্তু পুরো বদলে গেছে। ইতালির জনগণসহ বাংলাদেশি বা অন্যদেশীয়রাও কিন্তু পুরোপুরি ঘরে বন্দি জীবন যাপন করছে। কেউ কিন্তু বের হতে পারছে না বা বের হচ্ছে না। 

রেডিও তেহরান: ইতালিতে এ পর্যন্ত কয়েজন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কী?

ইতালিতে সারি সারি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে

জাকির হোসেন সুমন: আমার জানা মতে, প্রথমে মিলানোতে গোলাম মাওলা নামে একজন বাংলাদেশি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছিল। পরবর্তীতে গত কদিন আগে যিনি মারা গেলেন সে বিষয়টি নিয়ে একটু বিভ্রান্তি রয়েছে। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে জানতে পেরেছি- গত ১০/১২ দিন আগে উনি ঠাণ্ডা, কাশি ও অ্যাজমা সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তার কোনো করোনা ছিল না। লাঞ্চের সমস্যার কারণে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।

তবে যতটুকু জানি- এখানে অনেক বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার সঠিক সংখ্যা এখনও পুরোপুরি পাওয়া যায় নি। আমি এরইমধ্যে মিলানের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহম্মদের সাথে কথা বলেছি। ঠিক কতজন বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান তিনিও দিতে পারেননি। তবে ২০ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে একটা আনুমানিক হিসাব আমি পেয়েছি। এছাড়া অন্য একটি শহরে একইপরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান তিন জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। আমার জানামতে অন্যান্য বাংলাদেশিরা এখনও পর্যন্ত করোনামুক্ত আছেন এবং কোয়ারেন্টিনে আছেন। 

তবে একটি বিষয় আমি বলতে চাই, ইতালিতে যেসব বাংলাদেশি অবৈধভাবে আছেন অর্থাৎ যাদের বৈধ ডকুমেন্ট নেই তারা অত্যন্ত করুণ অবস্থার মধ্যে আছেন। কারণ তাদের প্রতিদিনের কাজ থেকে যে আয় হতো সেটি সম্পূর্ণভাবে এখন বন্ধ- লকডাইন থাকার ফলে। কিভাবে তাদের দিন চলছে সেটি কেউ দেখছে না। এমনকি সরকারও তাদের ব্যাপারে কোনো খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। তারা কিভাবে বাসা ভাড়া দিচ্ছে, কী খাচ্ছে বা কিভাবে দিন পার করছে সেসব খবর সরকার যেমন নিচ্ছে না, কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও সে খবর রাখছে না।

এখন এখানকার পরিস্থিতি বেশ সংকটময়। সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে। আর যেসব প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ হয়নি সেসব জায়গায় যেসব বাংলাদেশি কাজ করতেন তারা বাধ্য হয়েই কাজ করছেন জীবিকার তাগিদে। যারা কাজ করছেন তারা শিফটিং বা ভাগ ভাগ করে কাজ করছে। তারা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন। তবে বেশিরভাগ  দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। 

Image Caption

রেডিও তেহরান: জনাব সুমন! আপনি ইতালিতে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের কর্মহীন এবং লকডাউনের ফলে গৃহবন্দি জীবনের নানা সংকটের যে করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরলেন তা সত্যিই দুঃখজনক। তো সবশেষে আপনার কাছে জানতে চাইব, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দিনগুলোতে আপনি ইতালিতেই অবস্থান করেছেন। সে অভিজ্ঞতাগুলো কি আপনি রেডিও তেহরানের শ্রোতা-পাঠকদের সঙ্গে একটু শেয়ার করবেন?

জাকির হোসেন সুমন: দেখুন, সারা বিশ্বের মানুষ জানে যে, বর্তমানে ইতালির অবস্থা কেমন! তবে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে গত কয়েকদিনে করোনা সম্পর্কে যেসব তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম- এখন সেটি পারছি না। কারণ সরকার এত কঠোর লকডাউন করেছে এবং কোয়ারেন্টিনের সতর্কতা জারি করেছে যে শুধু সংবাদকর্মীই না যে কেউ অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে পারছে না। এখানে শুধুমাত্র ফার্মেসি খোলা রয়েছে।

ইতালির রোমে করোনা পরিস্থিতি

আমি বর্তমানে যা দেখছি সেটি একটি ভূতুড়ে পরিবেশ এখানে বিরাজ করছে। এই আতঙ্কজনক অবস্থার মধ্যে থেকে আমরা যেন সচেতন হই সেটাই আমার পরামর্শ। যদি আমরা একটু সচেতন হই তাহলে এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলছি আমরা নিজেরা যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকি, বাইরের বের হবার সময় যদি মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করি এবং পরস্পর থেকে কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলি তাহলে আমরা অনেকটাই নিরাপদ থাকব। যতোটা পরি ঘরের মধ্যে থাকতে হবে। তাতে ঝুঁকিটা অনেক কম হবে বলে মনে হয়।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/আশরাফুর রহমান/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ