কথাবার্তা: বাংলাদেশের কারাগারে সর্বোচ্চ সতর্কতা, জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি!
শ্রোতাবন্ধুরা! ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:
- খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় পুলিশ সদস্য গ্রেফতার-প্রথম আলো
- ফের মানবতাবিরোধী অপরাধ মিয়ানমারে-কালের কণ্ঠ
- ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৮ শতাংশ-যুগান্তর
- ইসরাইলের সঙ্গে আরবদের চুক্তির মূলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বাণিজ্য!-বাংলাদেশ প্রতিদিন
- জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি, কারাগারে সর্বোচ্চ সতর্কতা-ইত্তেফাক
- করোনা মহামারি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহবান কাদেরর-সমকাল
- খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়লো-মানবজমিন
এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:
- সরকার গোণেনি বলেই কি কেউ মরেনি?’অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু নিয়ে-মোদিকে তোপ রাহুলের-সংবাদ প্রতিদিন
- প্যাংগংয়ে ভারতই আগ্রাসন চালিয়েছে, ফের নালিশ চীনের-আনন্দবাজার পত্রিকা
- চাষীদের ভাতে মারতে অর্ডিনান্স! সংসদে প্রতিবাদ বিরোধীদের-আজকাল
শিরোনামের পর এবার দুটি বিষয়ের বিশ্লেষণে যাব।
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. ইলিশ পাঠানোর দিনেই পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল ভারত…এমন খবর বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছাপানো হয়েছে। কী বলবেন আপনি?
২. ককেশাস-২০২০ সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে ছয়টি দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে রাশিয়া। এ মহড়ার বিশেষ গুরুত্ব কোথায়?জনাব সিরাজুল ইসলাম আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:
জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকিতে কারাগারগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা-দৈনিক ইত্তেফাক
সাম্প্রতিক সময়ে টেলিফোনে ও উড়ো চিঠিতে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা জঙ্গিসহ ভয়ংকর অপরাধীদের কারাগার থেকে ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়ার প্রেক্ষিতে দেশের সব কারাগারকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা। রবিবার ( ১৩ সেপ্টেম্বর) দেশের কারাগারগুলোতে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেন আইজি প্রিজন্স। চিঠিতে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে ১৮টি নির্দেশনা দেন তিনি।
পিয়াজের কি আবারও ঝাঝ শুরু হবে, ঝরবে ক্রেতাদের বুকে জল-গতবছরের মতো-প্রশ্ন সাধারণের মনে।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন অনেক পেয়াজ আমদানি করা হবে। এদিকে আজ ইত্তেফাকের শিরোনাম-আটকা পড়া ও এলসি করা পেঁয়াজ দেশে আসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আমদানিকারকরা।মানবজমিনের খবর-পিয়াজের বাজারে হুলুস্থুল, কাওরান বাজারে অভিযান। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার সংবাদে দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজের পিয়াজের দাম বেড়েছে। আর ভারতের পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়ায় লেখা হয়েছে,হঠাৎ করে বাংলাদেশে পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল ভারত। দেশের বাজারে যখন পিয়াজের দাম উর্ধ্বগতির দিকে, ঠিক তখনই পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই রপ্তানি বন্ধ করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের পেয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে ভারতে ইলিশ রপ্তানির বিষয়টি উঠে এসেছে তাদের মন্তব্যে।
করোনাকালে গবেষণা- আস্থার সংকটে স্বাস্থ্য খাত-দৈনিক প্রথম আলো
‘করোনাকালে গবেষণা আস্থার সংকটে স্বাস্থ্য খাত-বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্য খাতের ওপর আস্থা নেই। সেই দলে আছেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও।,
ভিকারুন্নেসা বেগম চিকিৎসক। দীর্ঘদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরি করেছেন। ২০০৯ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যোগ দেন। এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। নমুনা পরীক্ষার পর ১ সেপ্টেম্বর রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, ভিকারুন্নেসা বেগম করোনায় আক্রান্ত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসা নিতে গিয়ে সরকারি হাসপাতালের ওপর তিনি বিরক্ত।
২ সেপ্টেম্বর সকালে ভিকারুন্নেসা বেগম রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যান। ওই হাসপাতালে কেবিন ফাঁকা ছিল না। পরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ভর্তি হন। ভিকারুন্নেসা বেগম বলেন, হাসপাতালে কেবিনে পর্দা ছিল না। প্রয়োজনীয় সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ছিল না। চার ঘণ্টায় তাঁর চিকিৎসারও কোনো উদ্যোগ ছিল না। একপর্যায়ে তিনি ওই হাসপাতাল ছেড়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন।
গতকাল সোমবার এই সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ও সাবেক কর্মকর্তার পরিচয় দিয়েও আমি সেবা পাইনি। আস্থা রাখতে না পেরে আমি ঝুঁকি নিয়ে ওই হাসপাতাল ছেড়েছিলাম। সাধারণ মানুষ হাসপাতালবিমুখ কেন হয়েছে, নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারি।’
শুধু ভিকারুন্নেসা বেগম একা হাসপাতালের ওপর আস্থা হারিয়েছেন বিষয়টি এমন নয়। সাধারণ মানুষেরও হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য খাতের ওপর আস্থা নেই, এমন ধারণা অনেকের মধ্যেই ছিল। এখন গবেষকেরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতের ওপর খুব কম মানুষ আস্থা রাখেন।
করোনাকালে বাংলাদেশে জাতিসংঘ যুব ও ছাত্র অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্য খাতের ওপর ২৪ শতাংশ মানুষের আস্থা নিম্ন পর্যায়ে। আস্থা আছে মাত্র ২৩ শতাংশের। আর বাকি ৫৩ শতাংশের আস্থা মাঝারি পর্যায়ের।
বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য খাতের ওপর কোনো আস্থা নেই। এটা বিপজ্জনক প্রবণতা। আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার, নাগরিক সমাজ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম সকলেরই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন
তৌফিক জোয়ারদার, প্রধান গবেষক ও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক
গবেষণায় স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা, সেবাদানকারীদের ওপর মানুষের আস্থা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আস্থার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এ নিয়ে ৫৯ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন ইতিমধ্যে তৈরি করেছেন গবেষকেরা। এ ছাড়া ওই গবেষণার তথ্য নিয়ে যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অ্যানথ্রোপলজি অ্যান্ড গ্লোবাল হেলথের রিডার শাহাদুজ্জামান, ইন্টারন্যাশনাল ফুড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ কার্যালয়ের গবেষণা বিশ্লেষক মোহাম্মদ নাহিদ বিন খালেদ এবং পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক তৌফিক জোয়ারদার একটি গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন।
প্রধান গবেষক ও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক তৌফিক জোয়ারদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য খাতের ওপর কোনো আস্থা নেই। এটা বিপজ্জনক প্রবণতা। আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার, নাগরিক সমাজ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম সকলেরই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।’
গবেষকেরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতের বিরাজমান দুর্বলতার পাশাপাশি করোনাকালে কিছু ত্রুটি দৃশ্যমান হয়ে দেখা দেয়। এর মধ্যে আছে প্রস্তুতি, সমন্বয়, নেতৃত্বের অভাব; নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে দুর্নীতি, নিম্নমানের সেবা, সেবার ক্ষেত্রে বৈষম্য বা কোনো সেবা না দেওয়া। এসব কারণে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ও নানা ধরনের সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই না স্বাস্থ্য খাতের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হোক। স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির নিয়মিত প্রচেষ্টা আমাদের আছে। স্বাস্থ্য খাতের ওপর মানুষের আস্থা যেন নষ্ট না হয়, তার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমেরও আছে।’
‘সম্রাটের শরীরে বস্ত্র নেই’
স্বাস্থ্য খাতে বাজেটস্বল্পতা, নিম্নমানের সেবা এবং বিশেষায়িত সেবার কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্যবিদ গবেষক বলেছিলেন, মহামারি পরিস্থিতি গল্পের ‘সম্রাটের শরীরে বস্ত্র নেই’–এর মতো সত্য প্রকাশ করেছে।
গল্পের ওই সম্রাট বহু মূল্যবান বস্ত্র পরিধান করে জনসমক্ষে এসেছিলেন। অতি সূক্ষ্ম বস্ত্রের প্রশংসায় আশপাশের সবাই ছিলেন পঞ্চমুখ। অবাক হয়েছিল এক বালক। সে সত্য উচ্চারণ করে বলেছিল, ‘এ কী, সম্রাটের শরীরে বস্ত্র নেই।’
মহামারি স্বাস্থ্য খাতের আসল চেহারা উন্মোচন করেছে। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় মৃত্যু হয়। একপর্যায়ে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চাপ বাড়তে থাকে। হাসপাতালে সেবা না পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। একাধিক হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি হতে না পেরে একাধিক মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দেয়। করোনায় আক্রান্ত হলে কোথায় সেবা পাব, কোথায় ভর্তি হব—এটা অনেকটা সামাজিক দুশ্চিন্তার চেহারা নেয়। মানুষ নমুনা পরীক্ষার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ মহাদুর্যোগের মধ্যে মানুষ জানতে পারেন জেকেজি ও রিজেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ। মহামারির কারণে দুর্নীতি থেমে থাকেনি।
মহামারির এমনই জরুরি সময়ে গবেষকেরা স্বাস্থ্য খাতে মানুষের আস্থা নিয়ে গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও ইন্টারনেটে ৫১৭ জন ব্যক্তির কাছে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে উত্তর নেওয়া হয় ১০ থেকে ১২ জুনের মধ্যে। এর মধ্যে ৩১৮ জন পুরুষ, বাকিরা নারী। তাঁদের বয়স ছিল ১০ থেকে ৫০ বছর বা তার বেশি। উত্তরদাতাদের ৯২ শতাংশ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়া। তাঁদের মধ্যে ৯ শতাংশ ছিলেন কোভিড আক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫ থেকে ১৭ জুনের মধ্যে সাতটি দলীয় সভায় ৫০ জন চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্যকর্মীর মতামত নেওয়া হয়।
সত্য উঠে এসেছে
গবেষণায় সত্য উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, মহামারি শুরুর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অনাস্থা প্রকাশ করা মানুষের হার আরও বেশি।
স্বাস্থ্য খাত জনসাধারণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় কি না, সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আছে কি না, সঠিক নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে সেবা দেওয়া হয় কি না, সেবাগ্রহীতাকে সঠিক ও মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া হয় কি না, রোগীর তথ্য গোপন রাখার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কতটা দক্ষ ও মনোযোগী, সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সেবা পায় কি না—এমন বিষয়ে উত্তরদাতাদের ধারণা নেন গবেষকেরা।
উত্তরদাতাদের ৪৬ শতাংশ বলেছেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি তাঁদের ধারণা নিম্নমানের। ১৯ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের আস্থা আছে। বাকি ৩৫ শতাংশ বলেছেন তাঁদের আস্থা মাঝারি ধরনের।
২৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, চিকিৎসক–নার্স বা অন্যান্য সেবাদানকারীর ওপর তাঁদের আস্থা কম। অন্যদিকে ২৩ শতাংশের এখনো আস্থা আছে। উত্তরদাতাদের ৫৩ শতাংশ বলেছেন, সেবাদানকারীদের ওপর তাঁদের আস্থা মাঝারি ধরনের।
তবে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, নেতৃত্বের ঘাটতি, আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা আগে থেকেই ছিল। মহামারি শুরুর দিকে একাধিক কর্তাব্যক্তি বলেছিলেন, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর (পিপিই) প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে নিম্নমানের পিপিই বা নিজের অর্থে পিপিই কিনে চিকিৎসকদের ব্যবহার করতে হয়েছে। এসব কারণে চিকিৎসকদের কেউ কেউ চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর দৃঢ় আস্থা রাখতে পারছেন না।
বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ আসামির বিচার শুরু-দৈনিক প্রথম আলো
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই আদেশ দেন। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মামলার থেকে ১ অক্টোবর টানা সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত।
অভিযোগ গঠনের আগে মামলার ২৫ আসামির মধ্যে ২২ জনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনান। আদালত আসামিদের কাছে জানতে চান, ‘আপনারা দোষী না নির্দোষ?’ তখন আসামিরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান।
গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটে শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গত ২১ জানুয়ারি আমলে নেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত। মামলার ২৫ আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন ২২ জন, পলাতক আছেন তিন আসামি। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে যা বলা হয়েছে
আবরার থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ১০১১ নম্বর কক্ষে। এটি হলের নিচতলায় অবস্থিত। একই কক্ষে থাকতেন ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমানের নাম মামলার এজাহারে ছিল না। তদন্তে জানা যায়, আবরার হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও সূচনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মিজানুর রহমান। গত ৪ অক্টোবরের আগে যে কোনো সময় মিজানুর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিনকে বলেন, ‘আবরারকে তাঁর শিবির বলে সন্দেহ হয়।’
মিজানুরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মেহেদি হাসান ওরফে রবিন এই বিষয়টি শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের নিজস্ব ফেসবুক মেসেঞ্জারে জানান। ৪ অক্টোবর শেরেবাংলা হলের ক্যানটিনে মেহেদি হাসান ওরফে রবিন এবং ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্নার নেতৃত্বে অমিত সাহা, ইফতি মোশাররফ সকাল, আকাশ হোসেন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান মনির, মিফতাহুল ইসলাম জীয়নসহ অন্য আসামিরা মিটিং করেন। এ সময় আবরার তাঁর কক্ষে আছেন কিনা তা জানতে একাধিক সহযোগীকে পাঠিয়ে খোঁজ নেন। কিন্তু আবরার সেদিন তার কক্ষে ছিলেন না। ছিলেন কুষ্টিয়ায়, নিজ বাড়িতে। পরদিন ৫ অক্টোবর মনিরুজ্জামান মনিরের নেতৃত্বে আসামি হোসেন মোহাম্মাদ তোহা, আকাশ হোসেন, মাজেদুর রহমান মাজেদ, মোয়াজ আবু হুরায়রা সহ সকলেই গেস্টরুমে একত্রিত হয়ে মিটিং করেন। সেই মিটিংয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করার সিদ্ধান্ত হয়।
গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় মুজতবা রাফিদ তাঁর সহযোগী ইফতি মোশাররফ ও মেহেদী হাসান ওরফে রবিনকে জানান, ‘তিনি বাড়ি যাবেন। আবরারকে ধরলে আজই ধরতে হবে।’ তাঁদের মধ্যে যখন এই কথোপকথন চলছিল, এর কিছুক্ষণ পর হোসেন মোহাম্মদ তোহা ও শামসুল আরেফীন ইফতি মোশাররফসহ সকলকে জানান, আবরার গ্রামের বাড়ি থেকে হলে এসেছে। এই খবর পাওয়ার পর সকলেই ২০১১ নম্বর কক্ষে আবার একত্রিত হন। রাত আটটার দিকে মেহেদী হাসান ওরফে রবিন ও ইফতি মোশাররফের নির্দেশে এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম, মুনতাসির আল জেমি, এ এস এম নাজমুস সাদাত আবুজার মিলে আবরারের কক্ষে যান। আবরার তখন ঘুমাচ্ছিলেন। তানিম ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন আবরারকে। তিনি আবরারকে বলেন, ‘বড় ভাইয়েরা তোকে ডাকছে। ২০১১ নম্বর রুমে যেতে হবে।’
কখন যেতে হবে, কেন যেতে হবে, জানতে চান আবরার। তানিম জানিয়ে দেন, ‘গেলেই দেখতে পাবি।’
তখন আবরারের ল্যাপটপ, মোবাইলসহ তাঁকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান তাঁরা। ওই কক্ষে যাওয়ার পর তাবাখখারুল, ইফতি মোশাররফ ও মুজতবা রাফিদ চেক করতে থাকেন আবরারের মোবাইল-ল্যাপটপ। একজন বলেন, আবরারের মোবাইলের শিবিরের তথ্য পাওয়া গেছে, তখনই মেহেদী হাসান ওরফে রবিন ক্ষিপ্ত হন। আবরারকে তাঁর চোখ থেকে চশমা খুলে ফেলতে নির্দেশ দেন। আবরার চশমা খোলার পর মেহেদী হাসান ওরফে রবিন প্রচন্ড জোরে তাঁর মুখে কয়েকটি থাপ্পড় মারেন। এরইমধ্যে মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম কাঠের তৈরি শক্ত ক্রিকেট স্টাম্প নিয়ে আসেন। এরপর ইফতি মোশাররফ প্রথমে জোরে থাপ্পড় মারেন আবরারকে। হাতে তুলে নেন ক্রিকেট স্ট্যাম্প। এরপর আবরারের পিঠে, পায়ে, হাতেসহ বিভিন্ন স্থানে নির্মমভাবে আঘাত করতে থাকেন। প্রচণ্ড মারধরের কারণে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দুই টুকরা হয়ে যায়। তখন এহতেসামুল রাব্বি ও তানিম আরও একটি ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে আসেন। এরপর অনিক সরকার একটি স্টাম্প হাতে তুলে নেন। অনিক একাধারে আবরারের সারা শরীরে ৫০ থেকে ৬০টি আঘাত করেন। এতে আবরার মেঝেতে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে মুজাহিদুল ইসলাম ও শামিম বিল্লা স্কিপিং রোপ (মোটা দড়ি) দিয়ে আবরারকে দুই থেকে তিনটি আঘাত করেন। আবরার ফাহাদ তখন বাঁচার জন্য আকুতি-মিনতি করেন। কিন্তু তাতেও তাঁর রক্ষা হয়নি। বরং মিফতাহুল ইসলাম ওরফে জীয়ন ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে আবরারের শরীরের বিভিন্ন স্থানে সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। বারবার জানতে চান, আবরার শিবির করে কি না?
আবার ইফতি মোশাররফ ও অনিক সরকার আববারকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পেটাতে থাকেন। হাতের কনুই দিয়ে আবরারের পিঠে প্রচণ্ড আঘাত করেন। তখন সবাই মিলে প্রচণ্ড শক্তিতে আবরারকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি চড়-থাপ্পড় লাথি মারতে থাকেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, রাত তখন এগারোটা। তখন ওই কক্ষে এসে হাজির হন এস এম মাহমুদ ওরফে সেতু। আবরারের ব্যাপারে উপস্থিত অন্যদের কাছ থেকে তিনি জানতে চান। তখন অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ ও মুজাহিদুল ইসলাম জানান, ‘আবরার কোনো তথ্য দিচ্ছে না।’ তখন মাহমুদ ওরফে সেতু অন্যদের বলে যান, ‘মারতে থাক।’ এমন নির্দেশনার পর আবরারকে আবার ক্রিকেট স্ট্যাম্প, স্কিপিং রোপ দিয়ে মারা হয়।
আবার ইফতি মোশাররফ ও অনিক সরকার আববারকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পেটাতে থাকেন। হাতের কনুই দিয়ে আবরারের পিঠে প্রচণ্ড আঘাত করেন। তখন সবাই মিলে প্রচণ্ড শক্তিতে আবরারকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি চড়-থাপ্পড় লাথি মারতে থাকেন। এরপর ওই কক্ষ থেকে বের হওয়ার আগে অনিক সরকার ও মেহেদী হাসান ওরফে রবিন অন্যদের বলে যান, ‘তোরা আবরারের কাছ থেকে তথ্য বের কর।’ তখন মনিরুজ্জামান মনির বলেন, তিনি আবরারের মোবাইল চেক করে শিবিরের তথ্য পেয়েছেন। এরপর মনিরুজ্জামান ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে আবরারকে পেটাতে থাকেন। তাবাখখারুল, নাজমুস সাদাত, এহতেশামুল রাব্বী ওরফে তানিম, মুনতাসির আল জেমি আবরারকে চড়-থাপ্পড় মারেন। বাইরে থেকে আবার ওই কক্ষে ঢোকেন অনিক সরকার। হাতে তুলে নেন ক্রিকেট স্টাম্প। তখন অনিক সরকার আবার আবরার ফাহাদকে প্রচন্ড জোরে আরও ৪০ থেকে ৫০টি আঘাত করেন। তখন আবরার বমি ও প্রস্রাব করে ফেলেন। বাঁচার জন্য ইশারা-ইঙ্গিতে আকুতি-মিনতি করেন। এমন অবস্থায় আবরারকে হলের বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ধুয়ে মুছে আবরার ফাহাদের জামা কাপড় বদলানো হয়।
এরপর ইফতি মোশাররফ ও মেহেদী হাসানের নির্দেশে নাজমুস সাদাত, শামীম বিল্লাহ, শামসুল আরেফিন, আকাশ, মোয়াজ আবু হোরায়রা, মুনতাসির আল জেমি ও এহতেশামুল রাব্বি আবরারের ধরাধরি করে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। ইফতি মোশাররফ হলের মেস বয় জাহিদ হাসানকে ডেকে আনেন। ২০১১ নম্বর কক্ষটি তাঁকে দিয়ে পরিষ্কার করানো হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, আবরার ফাহাদকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেওয়ার পর ইফতি মোশাররফ অন্যদের বলেন, ‘তোরা এবার আবরারের কাছ থেকে তথ্য বের কর। বুয়েটে কে, কে শিবির করে।’ তখন মোয়াজ আবু হোরায়রা ও অমর্ত্য ইসলাম আবরারের মুমূর্ষু অবস্থা দেখে মেহেদি হাসান ওরফে রবিনকে জানান, ‘আবরারকে হাসপাতালে নিতে হবে।’ এই কথা শোনার পর মেহেদি হাসান ওরফে রবিন বলেন, ‘ও নাটক করছে। শিবির চেনস না। শিবির চেনা কষ্ট।’ রাত আড়াইটার সময় ইফতি মোশাররফ, মুজাহিদ, তাবাখখারুল ও তোহা মিলে আবরারকে তোশকে করে হলের দোতালার সিঁড়িতে রাখেন।
এরপর আসামিরা বুয়েটের চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন। চিকিৎসক আবরারের দেহ পরীক্ষা করে ঘোষণা দেন তিনি মারা গেছেন। আবরারকে হত্যার পর ক্রিকেট স্টাম্প, তোষক, বালিশ, আবরারের ল্যাপটপ, চাপাতি হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ এর কক্ষে নিয়ে রেখে দেওয়া হয়। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল ও সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ ওই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে অপরাধ ঘটাতে সার্বিক সহায়তা করেন। আবরারের মৃতদেহ হলের নিচে নামানোর পর তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল বুয়েটের চিকিৎসকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশে পরস্পরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেমের অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৮ শতাংশ-যুগান্তর
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আর্থিক অবস্থা সংকুচিত হলেও ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে বলে জানিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়তে পারে বলে প্রাক্কলণ করেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার ম্যানিলা থেকে প্রকাশিত এডিবির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের সেপ্টেম্বর আপডেটে এই পূর্বাভাস এসেছে।
তবে এই পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে মহামারীকেই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করছে এডিবি। অর্থাৎ, বাংলাদেশে কিংবা বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের গন্তব্য দেশগুলোতে মহামারীর সঙ্কট দীর্ঘায়িত হলে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে।এডিবি বলছে, উৎপাদনের গতি বাড়ায় এবং বাংলাদেশি পণ্যের ক্রেতা দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০২১ সালে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে এবং চলতি হিসাবের (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) ঘাটতিকে জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে পারবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই ধারা টেকসই করতে সামষ্টিক অর্থনীতির বিচক্ষণ ব্যবস্থাপনা এবং সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা কর্মসূচির বাস্তবায়নে জোর দেয়ার পরামর্শ এসেছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশ এক বিবৃতিতে বলেন, মহামারীর ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। মহামারীর ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য খাতে বিপুল চাপের পরও সরকার যথাযথ প্রণোদনা ঘোষণা এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়িয়ে, দারিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা নিয়ে অর্থনীতিকে ভালোই সামাল দিয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও মহামারী ব্যবস্থাপনা করার জন্য চাপ থাকলেও প্রণোদনা প্যাকেজ ও সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমে সরকার অর্থনীতি ভালো ব্যবস্থাপনা করতে সক্ষম হয়েছে। রফতানির বর্তমান ভালো অবস্থা ও বিদেশ থেকে অর্থায়ন সংগ্রহ করার পাশাপাশি সরকারের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চলমান থাকবে।
পারকাশ আরও বলেন, দ্রুত করোনার টিকা সংগ্রহ করা ও মহামারী ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়া হলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার টেকসই হবে। মহামারীর এই সমস্যা একটি সুযোগও বটে এবং এর ফলে সম্পদের ব্যবহার, রফতানি বহুমুখীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা বৃদ্ধি ও সামাজিক সুরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কার বেগবান করা যেতে পারে।
এডিবি করোনা মহামারীর জন্য ইতোমধ্যে ৬০ কোটি ডলার দিয়েছে। এছাড়া ২০২১-২৩ মেয়াদে ৫৯০ কোটি ডলার সহায়তা দেবে এডিবি এবং যদি সম্পদ সংগ্রহ করা সম্ভব হয় তবে বাড়তি ৫২০ কোটি ডলার পর্যন্ত সহায়তা পাবে বাংলাদেশ।
ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
প্যাংগংয়ে ভারতই আগ্রাসন চালিয়েছে, ফের নালিশ চীনের-আনন্দবাজার পত্রিকা। দৈনিকটির আরেকটি খবরের শিরোনাম-লাদাখ নিয়ে আজ লোকসভায় রাজনাথের ভাষণ, প্রস্তুত বিরোধীরাও। বিস্তারিত এ দুটো খবরে লেখা হয়েছে, মস্কো বৈঠকের তিন দিন পর ফের বেজিংয়ের গলায় নালিশের সুর। ২৯-৩০ অগস্ট রাতে প্যাংগং-এ ভারত আইন ভেঙে অনুপ্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ তুলল চিন। নয়াদিল্লিতে চিনা রাষ্ট্রদূতের সরকারি ওয়েবসাইটে সোমবার এই সংক্রান্ত বার্তা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে এটা ভারতের প্ররোচনামূলক পদক্ষেপ। মস্কো বৈঠকে যখন সন্দেহের বাতাবরণ কাটিয়ে নয়াদিল্লি-বেজিং পারস্পারিক সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে, তার পরেও চিনের এই বার্তায় পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার বিষয়ে চিনের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও নয়াদিল্লির তরফে এখনও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
লাদাখ নিয়ে লোকসভায় ব্যাখ্যা দিতে পারেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং:
পূর্ব লাদাখে ভারত-চিন সীমান্তে প্রকৃত পরিস্থিতি কী, তা দেশবাসীকে জানাক সরকার— মে মাসে চিনা আগ্রাসনের পর থেকেই এই দাবি করে আসছে বিরোধীরা। বিশেষ করে রাহুল গাঁধী প্রায় প্রতিনিয়ত এ নিয়ে সরকারকে বিঁধে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী লাদাখে গিয়ে বা অন্যত্র সুর চড়ালেও কার্যত চিনের নাম করেননি। তা নিয়েও সরব বিরোধী শিবির। এমন পরিস্থিতিতেই পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-চিন সঙ্ঘাত নিয়ে আজ, মঙ্গলবার লোকসভায় সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। পাল্টা প্রস্তুত বিরোধীরাও। রাজনাথের বক্তব্যের সময় বিরোধীদের বাধায় হইহট্টগোলের আশঙ্কা রয়েছে।
নয়াদিল্লি-বেজিং সঙ্ঘাত নিয়ে সরকারের বিবৃতির বিষয়টি ওঠে রবিবার, সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগের দিন। ওই দিন লোকসভার বিষয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে এক যোগে আলোচনার দাবি জানান কংগ্রেস, সিপিএম-সহ প্রায় সব বিরোধী দলের নেতারা। সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী ওই দিন আশ্বস্ত করেন, সংসদে এ বিষয়ে সরকার তার অবস্থান জানাবে। মঙ্গলবার লোকসভার অধিবেশন শুরু হবে বিকেল ৩টেয়। অধিবেশনের শুরুতেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ নিয়ে বক্তব্য পেশ করবেন বলে সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে। বেজিং প্রশ্নে সরকারের বর্তমান অবস্থান এবং লাদাখ সীমান্তের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে পারেন তিনি।
‘আপনি গোণেননি বলেই কারও মৃত্যু হয়নি!অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে’মোদিকে খোঁচা রাহুলের-সংবাদ প্রতিদিনের এ খবরে লেখা হয়েছে, সোমবারই কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক জানিয়েছে,লকডাউনের সময় কতজন পরিযায়ী শ্রমিক (migrant workers) কাজ হারিয়েছেন এবং কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সে সংক্রান্ত কোনও তথ্য সরকারের কাছে নেই। কেন্দ্রের এই বয়ান নিয়ে রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো কাটাছেঁড়া চলছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর দাবি, “পরিযায়ীদের মৃত্যু সকলেরই নজরে এসেছে। কিন্তু মোদি সরকারের উপরেই তার কোনও প্রভাব পড়েনি। এটা দুর্ভাগ্যজনক।” পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি সরকারের মনোভাবে তিনি যে ক্ষুব্ধ, তা রাহুল বুঝিয়ে দিয়েছেন এক টুইটে।
লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) বিঁধেছেন কংগ্রেস নেতা। কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে রাহুল (Rahul Gandhi) লেখেন, ‘‘মোদি সরকার জানে না লকডাউনের সময় কতজন পরিযায়ী শ্রমিক মারা গিয়েছেন এবং কতজন কর্মহীন হয়েছেন? তোমরা গণনা করোনি বলে কি মৃত্যু হয়নি?’’ পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি সরকারের মনোভাবকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে রাহুল লেখেন, “পরিযায়ীদের মৃত্যু সকলেরই নজরে এসেছে। কিন্তু মোদি সরকারের উপরেই তার কোনও প্রভাব পড়েনি।উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই দেখা গিয়েছিল আচমকা কাজ খুইয়ে বাড়ি ফিরতে মরিয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা। কোনও রকম যানবাহন না থাকায় ভিন রাজ্যে গ্রাসাচ্ছেদনের জন্য আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। এর ফলে বহু শ্রমিকের রাস্তাতেই মৃত্যু হয়। অথচ, সরকারের কাছে তার কোনও হিসেব পর্যন্ত নেই।
চাষীদের ভাতে মারতে অর্ডিনান্স! সংসদে প্রতিবাদ বিরোধীদের-আজকালের এ খবরে লেখা হয়েছে,
করোনা আবহের মধ্যেই সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশন। ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, প্রশ্নোত্তর পর্বের বিলুপ্তি নিয়ে প্রথমদিনই উত্তাল হয় সংসদ। কংগ্রেস, তৃণমূল সাংসদরা এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করেন। ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে।
ব্যাঙ্কিং নিয়ন্ত্রণ সংশোধনী বা কৃষিজ পণ্যের ব্যবসা–বাণিজ্য সংক্রান্ত সংশোধনী, ছ’মাস পরে সংসদের প্রথম অধিবেশনে বিল এনেই ফের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানার অভিযোগের মুখে কেন্দ্র। তারই মধ্যে সামান্য শোরগোল বাধে অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের উদ্দেশে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের রসিকতায়।
২০ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণার অঙ্গ হিসেবেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা জানিয়েছিলেন, কৃষিক্ষেত্রে নতুন সংস্কারের দৌলতে এবার থেকে নিজের মর্জিমাফিক দেশের যে কোনও প্রান্তে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারবেন চাষী। এ বিষয়ে জারি করা হয়েছিল অর্ডিনান্সও। সেই অর্ডিনান্সকে আইনে রূপান্তরিত করার জন্য সোমবার লোকসভায় বিল আনতেই আক্রমণের মুখে পড়ে মোদি সরকার। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, গৌরব গগৈ, শশী থারুর, তৃণমূলের সৌগতরা অভিযোগ তোলেন, কৃষি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও, তাতে দখলদারি করে এই বিল এনেছে কেন্দ্র। সমবায় ব্যাঙ্ক পরিচালনার ভার রাজ্যের হাতে থাকায় একই অভিযোগ ব্যাঙ্কিং নিয়ন্ত্রণ সংশোধনীর ক্ষেত্রেও।
কংগ্রেস ও তৃণমূল সাংসদদের অভিযোগ, এই বিল পাশ হলে, তা আদৌ চাষীর হাত শক্ত করবে না। বরং মোটা মুনাফা করার সুযোগ খুলে দেবে কর্পোরেট দুনিয়ার সামনে।
সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি: ভারত গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত ৮৩ হাজার। মোট মৃত্যু৮০ হাজার ছাড়াল এবং মোট আক্রান্ত ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ছাড়াল। সংবাদ প্রতিদিন আনন্দবাজারসহ সব দৈনিকে এ খবর পরিবেশিত হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনায় গত ২৪ ঘন্টায় আরো ৪৩ জন মারা গেছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী-এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় মারা গেছেন ৯লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ। মোট আক্রান্ত ২ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ছাড়িয়েছে। চীনের করোনা টিকা নভেম্বরেই বাজারে আসতে পারে বলে বিভিন্ন দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে।#
পার্সটুডে/গা