নভেম্বর ০৫, ২০২০ ১৮:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছিলাম ইরানের কৃষিপণ্যের মধ্যে বাগ-বাগিচায় উৎপন্ন পণ্য চেরি নিয়ে কথা বলেছিলাম। কৃষিপণ্য উৎপাদনের বৈচিত্রের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান চতুর্থ পর্যায়ে।

শুধু ফল উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান অষ্টম স্থানে রয়েছে। ইরানের একেকটি শহর একেকটি ফলের জন্য বিখ্যাত। যদিও প্রত্যেক শহরেই কমবেশি প্রায় সব ফলই জন্মে তবু একেক শহর বিশেষ কোনো একটি ফলের জন্য খ্যাতিমান। তবে প্রায় সকল শহরেই কমবেশি যে ফলটি পাওয়া যায় সেটি হলো চেরি।

সুঘ্রাণ, সুদর্শন এবং সুস্বাদু এই ফলটি পছন্দ করে না এমন ভোজনরসিক মনে হয় কমই আছে। ইরানের এই ফলটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সমাদৃত। অন্তত চার রঙের চেরি দেখতে পাওয়া যায়-লাল, কালো, হলুদ এবং গোলাপি। বসন্ত ঋতুর ফল এই চেরি। চেরিতে ভিটামিন এ, সি, কার্বোহাইড্রেট, ফলিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, পটাশিয়াম, মেনজাইমসহ আরও বহু খনিজ উপাদান রয়েছে। সুতরাং চেরিতে যে বহু রকমের উপকার রয়েছে তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে চেরির বাগান প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়। এই প্রাচুর্যের কারণে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশকে বলা হয় ইরানের চেরির রাজধানী। আমরা আজকের আসরে এই চেরির রাজধানী ছেড়ে যাবো পবিত্র একটি ফলের ভুবনের দিকে মানে কুরআনে বর্ণিত ফল ডুমুরের ভুবনে। ইরান তেল বহির্ভুত যেসব কৃষিপণ্য রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে তা হলো এই ডুমুর।  এ ডুমুর নিয়ে আমরা কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো আজকের আসরে।

ডুমুরকে ফার্সি ভাষায় বলে আঞ্জির আর আরবি ভাষায় মানে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ত্বীন। বাংলাদেশসহ আশেপাশের দেশগুলোতে যে ডুমুর পাওয়া যায় সেই ডুমুর অবশ্য ইরানের বা মধ্যপ্রাচ্যের ডুমুর থেকে আলাদা। বাংলাদেশে সচরাচর যে ডুমুর পাওয়া যায় তার ফল ছোট এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত। এর আরেক নাম 'কাকডুমুর'। এই গাছ অযত্নে-অবহেলায় এখানে সেখানে ব্যাপক সংখ্যায় গজিয়ে ওঠে। গাছ তুলনামূলকভাবে ছোট। অনেক এলাকায় এই ডুমুর দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। এই ডুমুরের পাতা শিরিশ কাগজের মত খসখসে। এর ফল কান্ডের গায়ে থোকায় থোকায় জন্মে। অনেকে এই ডুমুরকে জগডুমুর বা যজ্ঞডুমুরও বলে। কিন্তু ইরানে যে ডুমুর পাওয়া যায় তার ফল বড় আকারের এবং এটি বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু একটি ফল। সে কারণেই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়ে থাকে ইরানে।

অবশ্য কেবল ইরানেই যে ডুমুর হয় তা নয় বরং বিশ্বের বহু দেশে ডুমুর উৎপাদন হয়।  ভূমধ্যসাগরের উপকণ্ঠের দেশগুলোতে ডুমুরের চাষ হয় বেশি। বলা হয়ে থাকে যে খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার বছর আগে মিশরে এই ডুমুর চাষের প্রচলন ছিল। প্রাচীন গ্রন্থগুলোতে এই ডুমুরের নামের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। ডুমুর ইহুদিদের কাছে একটি পবিত্র খাদ্য বা ফল হিসেবে পরিচিত বিশেষ করে ঈদে তারা এই ডুমুর খায়। পবিত্র ঐশীগ্রন্থ ইঞ্জিলে ডুমুরকে একটি বেহেশতি ফল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইঞ্জিলের পর কুরআনেও এই ফলের কথা এসেছে। আরবি ত্বীন মানে ডুমুর ফল। এই ত্বীন নামে পবিত্র কুরআনে একটি সূরাই রয়েছে। ত্বীন নামের পঁচানব্বুইতম সূরাটি শুরু হয়েছে দুটি ফলের শপথের মধ্য দিয়ে। ওয়াত্ত্বীনি ওয়াযযাইতুন অর্থাৎ ডুমুর এবং যাইতুনের শপথ...। কুরআন বিশ্লেষকদের মতে এরকম শপথের মাধ্যমে ফল দুটির বিশেষ উপকারিতার বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ডুমুরে প্রচুর চিনি শর্করা রয়েছে। রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি’র পাশাপাশি ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, মেনজাইমসহ আরও বহু খনিজ উপাদান। ডুমুর ক্যানসার প্রতিরোধ করে। ত্বকের চিকিৎসায় ডুমুর বেশ উপকারী। যেসব শিশু দুর্বল তাদের জন্য ডুমুর খুব উপযোগী একটি ফল। রক্তস্বল্পতা এবং ক্ষুধামন্দার জন্যও ডুমুরের ভালো ওষুধি গুণ রয়েছে। ফাইবারের চমৎকার একটি উৎস ডুমুর। আঞ্জিরের উপকারি ভৈশিষ্ট্য এতো বেশি যে ছোট্ট একটি আসরে এ নিয়ে কথা বলে শেষ করা যাবে না।

ডুমুরের অর্থকরী দিকটি উল্লেখযোগ্য। ইরানসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ডুমুর থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। ইরানের ডুমুরের পুষ্টিমানও বেশ ভালো। জাপান, চীন, হংকং, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ভারত, ইরাক, হল্যান্ড, ব্রিটেন, আজারবাইজানসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে ইরানের ডুমুর রপ্তানি করা হয়। ইরানে অন্তত পঞ্চাশ হাজার হেক্টর জমিতে ডুমুরের চাষ হয়। অন্তত আশি হাজার টন ডুমুর উৎপন্ন হয় ইরানে। পেয়াজের মতো দেখতে হলুদ রঙের ডুমুর বেশি হয় সভে’তে। কালো এবং নীল ডুমুর বেশি হয় লোরেস্তান প্রদেশে আর সবুজ রঙের ডুমুর হয় বেশি উৎপাদিত হয় এস্তেহবন, কজরাভন, জোহরাম এবং তাবরিজের মতো এলাকাগুলোতে। মোটামুটি এই কয়রকমের ডুমুরই ইরানে উৎপাদিত হতে দেখা যায়। তবে লোরেস্তানই হলো ইরানে ডুমুরের মূল কেন্দ্র।

আগেই বলেছি যে ডুমুর উৎপাদনের মূল কেন্দ্র হলো লোরেস্তান প্রদেশ। এখানকার আবহাওয়া ডুমুর চাষের জন্য উপযোগী। কারণ এখানে রয়েছে জলটৈটুম্বুর নদী, রয়েছে ডুমুর চাষের জন্য উর্বর ভূমি।  দীর্ঘকাল ধরে এই এলাকার লোকজন ডুমুর চাষ করার কারণে মোটামুটি এটি তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং এই লোরেস্তানের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস এখন ডুমুর চাষ থেকে পাওয়া আয় রোজগার। ইরানে যত নীল ডুমুর উৎপাদিত হয় তার শতকরা তেত্রিশ ভাগই উৎপন্ন হয় এই লোরেস্তান প্রদেশে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।