ইরানের পণ্যসামগ্রী: পাঁচ শ’র বেশি পোল্ট্রি ফার্মে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা হয়
গগত আসরে আমরা ইরানের গবাদি পশুর খাদ্যপণ্য এবং মুরগি বা মুরগি জাতীয় অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য সামগ্রি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। বিশ্ববাসীর জন্য স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের চাহিদা মেটায় পশু ও পাখি-এই দুই ধরনের প্রাণীর মাংস।
এই দুই প্রকারের মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরান এখন ব্যাপক অগ্রসর।
বর্তমানে ইরানে অন্তত পঞ্চাশ রকমের পশুপাখি ও মাছের খাবার তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। এসব খাদ্য উৎপাদন কারখানাগুলোকে আরও উন্নত করে তুলতে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় গুণগত মান ও উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এগিয়ে এসেছে জ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানি। ইরানে এখন পাঁচ শ’র বেশি পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে যেসব ফার্মে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। তিন শতাধিক কোম্পানি এ ক্ষেত্রে সক্রিয় রয়েছে। একদিনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা হয় মাসে দশ কোটির উপরে। এই পরিসংখ্যান তিন বছর আগেকার। এসব মুরগির বাচ্চা ডিমের জন্য নয় মাংসের জন্য। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মুরগি প্রতিবেশি দেশগুলোতে রপ্তানি করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ইরান মুরগি উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় দেশ। গত চার দশকে এ ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে পোল্ট্রি ফার্মগুলো। যার ফলে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে ইরানের পোল্ট্রি বিভাগ। সুতরাং ইরানের পরিবারগুলোতে যে মুরগির মাংস কী পরিমাণ এবং কত রকমে ব্যবহার হয় তা সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। প্রোটিন চাহিদার বিশাল একটি অংশ পূরণ করে এই মুরগির মাংস। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে মুরগির মাংস উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বের প্রথম দশটি দেশের তালিকায় রয়েছে ইরান। ইরানের যেসব প্রদেশে বেশি বেশি পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: মজান্দারন প্রদেশ, খোরাসান প্রদেশ, ফার্স, ইস্ফাহান, পূর্ব আজারবাইজান, কেন্দ্রিয় প্রদেশ এবং তেহরান প্রদেশ। সারা দেশে যে পরিমাণ মুরগির মাংস উৎপাদিত হয় তার অর্ধেকের মতো উৎপাদিত হয় এই কয়েকটি প্রদেশে।
ইরানে যে কয় প্রকারের মুরগি প্রতিপালন করা হয় তার মধ্যে লাইন, আজদদ, মা মুরগি, গোশত এবং ডিমের জন্য মুরগি ইত্যাদি বেশি। এগুলো ব্রয়লার এবং লেয়ার জাতের মুরগির প্রকারভেদ। লাইন হলো এমন জাতের মুরগি যারা একত্রে থাকতে পারে এবং এ জাতের মুরগি তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে জেনেটিক গুণবৈশিষ্ট্যগুলো পুরোপুরি স্থানান্তর করতে পারে। লাইন মুরগি থেকেই ক্রমান্বয়ে মা মুরগি এবং সবশেষে মাংসের মুরগি পাওয়া যায়। ইরান বিশ্বের মধ্যে অষ্টম দেশ এবং মুসলিম বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র দেশ যে দেশে অরিন নামে এই লাইন মুরগি রয়েছে। ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় বাবুল অঞ্চলে আটাশ বছর আগে এক হাজার হেক্টরের বেশি জায়গা জুড়ে এই অরিন লাইন মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। এখানে বছরে বিশ লাখ টনের বেশি মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। ইরানের মুরগির পা রপ্তানি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম, হংকং, থাইল্যান্ড, লাওসসহ আরও বহু দেশে।

মানব দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হচ্ছে প্রোটিন। পানির পর প্রোটিনই মানব দেহে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিরাজ করে যা সুস্থতাসহ মানব জীবনের জন্য অবশ্যম্ভাবী একটি পদার্থ। জীবিত মানুষের দেহের প্রতিটি অঙ্গেই প্রোটিন রয়েছে এবং দেহের বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। রক্ত, মাংসপেশি, হার্ট, মগজ, চামড়া, চুল এমনকি আঙুলের নখ পর্যন্ত এই প্রোটিন থেকেই তৈরি হয়। ভেষজ খাবার এবং প্রাণীজ খাবার-উভয় প্রকার খাবারে মানুষের ব্যবহার উপযোগী প্রোটিন বিদ্যমান থাকে। প্রাণীজ প্রোটিনের অন্যতম খাদ্য উৎস যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা হ'ল পোল্ট্রি মাংস অর্থাৎ পাখি জাতীয় প্রাণীর মাংস। পোল্ট্রি শিল্প এখন সারাবিশ্বেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্পের মর্যাদা লাভ করেছে।
হাস-মুরগি, তিতির খামারে এখন প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তিতিরের চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি। কেননা তিতিরের মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি অথচ কোলেস্টেরলের পরিমাণ সবচেয়ে কম। মুরগির বাইরে কোয়েল পাখি প্রতিপালনের প্রবণতাও বেশ লক্ষ্যনীয়। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে মানব দেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিন চাহিদা পূরণে কোয়েলের মাংস খুবই উন্নত একটি খাদ্য-উৎস। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা তাই কোয়েলের মাংস খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পাখি জাতীয় অপরাপর প্রাণীজ মাংসের তুলনায় কোয়েলের মাংসে শতকরা পাঁচ থেকে দশ ভাগ বেশি প্রোটিন থাকে।কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের পুষ্টিগুন ও উপকারীতা অনেক। কোয়েল পাখির মাংস ও ডিম হালাল। কোয়েল পাখির মাংস ও ডিম নিঃসংকোচে যেকোনো বয়সের মানুষ অর্থাৎ বাচ্চা থেকে বৃদ্ধারা পর্যন্ত সকলেই খেতে পারে। কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমে রয়েছে পুষ্টিকর অনেক উপাদান এবং এর রয়েছে প্রচুর ঔষধি গুণ।
কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের পুষ্টিকর উপাদান নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। কোয়েল পাখির মাংস ও ডিম খেতে খুবই সুস্বাদু। এতে কোলেস্টেরেলের পরিমাণ খুব কম। কোয়েলের মাংস ও ডিমে প্রোটিন বেশি কিন্তু চর্বি কম। এই পাখির ডিমে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে আছে যা শরীরে এন্টিবডি তৈরি করে এলার্জি প্রতিক্রিয়াকে নষ্ট করে দেয়। কোয়েল পাখির ডিম প্রাণীজ খাদ্য দ্রব্য হলেও এর মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ, এন্জাইমস, শর্করা এবং এমিনো-এসিড এমন আদর্শ মাত্রায় বিদ্যমান থাকে যে, নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেলে শরীরে পুষ্টির চাহিদা যেমন পূরণ হয় তেমনি শরীরের কার্য ক্ষমতাও বেড়ে যায়।
উদাহরণত বলা যেতে পারে কিডনি, জকৃৎ ও হার্ট-এসবের কার্যক্ষমতা এবং হজম শক্তি অনেক বেড়ে যাবে। পক্ষান্তরে অ্যাসিডিটি বা অম্লত্ব কমাতে সাহায্য করবে। মানব মস্তিষ্ক সবসময় সতেজ রাখে। স্মৃতিশক্তি ভাল থাকে। ছোট বাচ্চাদের শারীরিক গঠন এবং মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতেও কোয়েলের মাংস ও ডিম সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেলে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। যার ফলে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। ইরানের কেরমানশাহ, তেহরান, পশ্চিম আজারবাইজান এবং যানজন প্রদেশগুলো কোয়েল প্রতিপালনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কেন্দ্র। #
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।