ইরানের সুন্নি আলেমদের ঐতিহাসিক বিবৃতি: ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের আহ্বান
-
ইরানি সুন্নি আলেম
গত ১২ দিনের ইরান–ইসরাইল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিজয়কে 'ইসলাম ও মানবতার বিজয়' হিসেবে অভিহিত করে ইরানের সুন্নি সম্প্রদায়ের ১,৩০০ জনেরও বেশি আলেম, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী এক যুগান্তকারী বিবৃতি দিয়েছেন।
আজ (রোববার) প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে তাঁরা মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান, আলেম, চিন্তাবিদ ও যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, "ইরানের এই বিজয় মূলত সত্যের উপর অসত্যের পরাজয়, কুফরের উপর ইসলামের জয়। আজ সময় এসেছে—ঈমান, ঐক্য ও প্রতিরোধের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ সম্মিলিতভাবে ইসরাইল ও তার পৃষ্ঠপোষক পশ্চিমা শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "দুষ্ট ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী, যার জন্ম ব্রিটিশ ষড়যন্ত্র ও মার্কিন চক্রান্তের মাধ্যমে এবং এখনও বিদ্যমান, মুসলিম দেশগুলোর শরীরে ক্যান্সারের টিউমারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এই রক্তপিপাসু শাসকরা কাফের মিত্রদের সাহায্য ও সমর্থনে জেরুজালেম এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা দখল করেছিল। তারা একটি দিনও অসহায় ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীদের হত্যা না করে কাটায়নি। গাজার সংগ্রামী তরুণদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত তাদের নির্লজ্জ অপরাধ চলতে থাকে। ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সংগ্রামীরা এক অতুলনীয় মহাকাব্য রচনা করে এবং 'আল-আকসা তুফান অভিযান'-এর মাধ্যমে ইসরাইলের সামরিক, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক ভিত্তিকে কাঁপিয়ে দেয়।"
বিবৃতিতে বলা হয়, “আর তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা কেন আল্লাহর পথে এবং দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুদের জন্য লড়াই করছ না?”- পবিত্র কুরআনের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলামী দেশগুলোর মুজাহিদদের একটি অংশ অসহায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করছে এবং কাফেরদের সাথে সংঘর্ষে নিজেদের জানমাল বিলিয়ে দিচ্ছে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ফিলিস্তিনের হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও ইয়াহিয়া সিনওয়ার, লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ও সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিন—যাঁরা আল-আকসা ও মজলুমদের পক্ষে রুখে দাঁড়িয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন।
বিবৃতিতে ইসরাইল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতির সমালোচনা করে বলা হয়- তারা শুধু ফিলিস্তিন, লেবানন বা ইয়েমেন নয়, বরং এখন ইরানকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে বলা হয়, আজ ইরানের উপর হামলা হয়েছে—আগামীকাল তা অন্য যেকোনো মুসলিম রাষ্ট্রের ওপরও হতে পারে। কারণ, এই যুদ্ধ কেবল একটি ভূখণ্ড বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়—এটি একটি সভ্যতা, একটি দীন এবং একটি উম্মাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
সুন্নি আলেমগণ আহ্বান জানিয়ে বলেন, সব মুসলিম রাষ্ট্র, আলেম, চিন্তাবিদ, তরুণ, রাজনীতিক ও আন্দোলনকর্মীরা যেন পরস্পরের বিরুদ্ধে নয় বরং একত্রিত হয়ে "তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর, আর নিজেদের মধ্যে দয়ার্দ্র”- এই নীতিতে অটল থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
তাঁরা পশ্চিমা দখলদার শক্তির কূটনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক উপস্থিতি—যেমন মার্কিন দূতাবাস, সামরিক ঘাঁটি ও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, এখনই সময় ঐক্য, সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের। কুরআনের ঘোষণা- "তোমরা দুর্বল হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না; যদি তোমরা ঈমানদার হও, তবে তোমরাই শ্রেষ্ঠ (ও বিজয়ী) হবে।"
যদি আমরা সত্যের ওপর অটল থাকি, তাহলে বিজয় অবশ্যম্ভাবী। আমরা বিশ্বাস করি—এই জায়নবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকে পরাজিত করে মুসলিম উম্মাহ আবারও তার মর্যাদা, সম্মান ও নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার করবে।”
পার্সটুডে/এমএআর/৩০