জানুয়ারি ৩১, ২০২১ ২০:৩০ Asia/Dhaka

দুঃখজনকভাবে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানবীর (সা) অনুপম এবং শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব সত্ত্বেও ইসলাম ও মহানবীর (সা) প্রতি অপবাদ দেয়া হয়েছে অনেক।

 অন্ধ-বিদ্বেষ, শত্রুতা ও অজ্ঞতাই এসবের কারণ। ইসলাম ও মহানবীর ব্যাপারে এসব অপবাদের জবাব দিয়েছেন অনেক মুসলিম চিন্তাবিদ এবং এমনকি অনেক পশ্চিমা অমুসলিম মনীষীও। নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের অধ্যাপক কার্ল আর্নেস্ট এমন পশ্চিমা ব্যক্তিত্ব বা মনীষীদেরই একজন। এ প্রসঙ্গে গত পর্বে আমরা কার্ল আর্নেস্ট-এর বক্তব্যগুলোর কিছু অংশ তুলে ধরেছিলাম।

অধ্যাপক কার্ল আর্নেস্ট ‘মহানবীর (সা) অনুসরণ শীর্ষক’ বইয়ে ইসলাম ও মহানবী (সা) সম্পর্কে নানা অপবাদের জবাব দিয়েছেন। তিনি এ বইটি লিখেছেন ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর যখন মুসলমানদের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের প্রচার যুদ্ধ আবারও জোরদার হয়। আর্নেস্ট এ বইয়ে মহানবীর অনুপম সুন্দর চরিত্র তুলে ধরে ধর্মগুলোর মধ্যে সংলাপের পথ খুলে দিয়েছেন।

অধ্যাপক কার্ল আর্নেস্ট ইসলামের দুই প্রধান স্তম্ভ কুরআন ও মহানবী (সা) সম্পর্কে লিখেছেন। তার মতে কুরআন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইঞ্জিল বা বাইবেল এবং তাওরাতের চেয়ে বেশি পবিত্র গ্রন্থ। আর্নেস্ট মহানবীকে (সা) বিশ্বজনীন ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবীর অনুপম সুন্দর চরিত্র ও ব্যবহারকে তিনি পশ্চিমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) নাহজুল বালাঘায় মহানবীর বৈশিষ্ট্যগুলোর যে সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন আর্নেস্ট তার লেখায় সে চিত্রেরই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। 

ন্যায়বিচার ও মানবতার সর্বোচ্চ আদর্শের সর্বোত্তম অনুসারী  আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ) মহানবী (সা) সম্পর্কে বলেছেন:

এভাবে সময় গড়িয়ে যুগের পর যুগ অতিক্রান্ত হলো। পিতারা মৃত্যুবরণ করলো এবং সন্তানেরা তাদের স্থানে এলো-সুদীর্ঘ সময় পার হবার পর আল্লাহ তাঁর অঙ্গীকার পূরণার্থে ও পয়গম্বর-ধারা সমাপ্তি করে মুহাম্মাদকে (সা.) নবী ও রাসূল করে পৃথিবীতে প্রেরণ করলেন। অন্যান্য পয়গম্বরদের কাছ থেকে মুহাম্মাদ (সা.) সম্পর্কে অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছিল। মুহাম্মাদের (সা.) জন্ম ছিল অতীব সম্মানজনক এবং চরিত্র বৈশিষ্ট্য ছিল সুখ্যাতিপূর্ণ। সে সময়ে পৃথিবীর মানুষ বিভিন্ন ধর্মে দলভুক্ত (মাজহাব) ছিল। তাদের মত ও পথ ছিল বিবিধ; চিন্তাধারা ছিল বিক্ষিপ্ত এবং তারা একে অপরের সাথে বিবাদমান ছিল। তারা সৃষ্টিকে আল্লাহর সাদৃশ্য করতো অথবা তার মহিমান্বিত নামসমূহ বিকৃত করতো অথবা তিনি ছাড়া অন্য কিছুকে ক্রিয়া-কর্ম সম্পাদনকারী মনে করতো। মুহাম্মাদের (সা.) মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে সুপথ দেখালেন এবং তার অক্লান্ত প্রচেষ্টা দ্বারা তিনি তাদেরকে অজ্ঞতা থেকে ফিরিয়ে আনলেন ।

অতঃপর আল্লাহ মুহাম্মাদকে (সা.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মনোনীত করে তার মহিমান্বিত নৈকট্য দান করলেন এবং এ পৃথিবীতে থাকার অনেক অনেক উর্দ্ধের মর্যাদাশীল বিবেচনা করে তাকে এ পৃথিবী থেকে তুলে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। ফলে তিনি মহাসম্মানের সাথে তাঁকে নিজের সান্নিধ্যে নিয়ে গেলেন। মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর বংশধরগণের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।

হযরত আলী আরও বলেছেন, মহানবী (সা) ছিলেন খোদাভীরুদের মধ্যে শীর্ষ স্থানে এবং  তিনি সুপথ অন্বেষণকারীদের জন্য দৃষ্টি খুলে দেয়ার ও অর্ন্তদৃষ্টির মাধ্যম। তিনি উজ্জ্বলতম প্রদীপ ও তারকা। .. মহান আল্লাহ তাঁকে নবীদের মধ্য থেকে বেছে নিয়েছেন এবং তিনি অজ্ঞতার আঁধারে হেদায়াতের আলো ও প্রজ্জ্বোল প্রদীপ। মহান আল্লাহ মহানবীকে প্রজ্ঞার এক মহাউৎসে পরিণত করেছেন। তিনি একজন ভ্রাম্যমান চিকিৎসকের মত যিনি যেখানেই রোগীদের পান সেখানেই তাদের চিকিৎসা করতেন। ... তাঁর পন্থা ও প্রথা ভারসাম্যপূর্ণ এবং জীবন যাপনের পন্থা দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, তাঁর কথা সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য তুলে ধরে, তাঁর নির্দেশ ও রায় ন্যায়বিচারপূর্ণ... শত্রুদের একতা তাঁকে সত্যের প্রচার থেকে বিরত করতে পারেনি,-শত্রুরা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে অপবাদ দিত। রেসালাতের নুরকে নিভিয়ে দেয়ার যে প্রচেষ্টা শত্রুরা চালিয়েছিল তা সফল হয়নি।

অধ্যাপক কার্ল আর্নেস্ট নতুন দৃষ্টি নিয়ে বর্তমান যুগের বিশ্ববাসীর কাছে মুসলমানদের পরিচয় তুলে ধরেছেন। তিনি মহানবীর (সা) অনুপম ও মহান ব্যক্তিত্বের প্রতি দরুদ পাঠিয়েছেন। 

মহানবী সম্পর্কে হযরত আলী বলেছেন: আল্লাহ রাসূলকে (সা.) সাক্ষী,শুভ সংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারী হিসাবে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্বের পবিত্রতম শিশু,নিষ্পাপতম যুবক,আচরণে পরিশুদ্ধদের পরিশুদ্ধতম এবং যারা উদারতা চাইত তাদের জন্য উদারতম । রাসূল (সা.) সন্ধানকারীদের জন্য উজ্জ্বল প্রদীপ শিখা জ্বলিয়েছিলেন এবং বিভ্রান্তদের জন্য উজ্জ্বল আলোক বর্তিকা রেখে গেছেন। সুতরাং হে আল্লাহ,তিনি তোমার বিশ্বস্ত আমানতদার,বিচার দিনে তোমার সাক্ষী,তোমার নেয়ামতস্বরূপ প্রতিনিধি এবং তোমার রহমতস্বরূপ সত্যের বাণী বাহক। হে আমার আল্লাহ,তোমার ন্যায় বিচারের প্রসাদ থেকে এবং তোমার অগণন নেয়ামত থেকে তাঁকে তুমি পুরস্কৃত কর। আমার আল্লাহ,তাঁর নির্মাণকে অন্য সকল নির্মাণ থেকে উচু করো,যখন তিনি তোমার কাছে আসেন তখন তাঁকে সম্মান করো,তোমার কাছে তাঁর মর্যাদা সমুন্নত করো,তাঁকে সম্মানিত মর্যাদা প্রদান করো এবং তাঁকে গৌরব ও বিশিষ্টতা দ্বারা পুরস্কৃত কর। বিচারের দিনে আমাদেরকে তাঁর দলভুক্ত করো যাতে আমরা লজ্জিত না হই,অনুতপ্ত না হই, দিকভ্রান্ত না হই,প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী না হই, বিপথগামী না হই,গোমরাহ না হই ও প্রলুব্ধ না হই।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ