মার্চ ০৬, ২০২১ ১৬:৩৩ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠক! ৬ মার্চ শনিবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:

  • রমজান সামনে রেখে সক্রিয় সিন্ডিকেট-ইত্তেফাক
  • বিএনপির ৭ মার্চ পালনের ঘোষণা ভণ্ডামি: কাদের–প্রথম আলো
  • সরকারের পেছনে ভয়ংকর শক্তি রয়েছে: ফখরুল – মানবজমিন
  • কিশোর গ্যাংয়ের হাতে লাগছে রক্তের দাগ -কালের কণ্ঠ
  • সক্রিয় নানা চক্র নিত্যনতুন প্রতারণার ফাঁদ লোভে পড়লেই সর্বনাশ -যুগান্তর
  • বিশ্বসেরা ৫০০ তালিকায় বাংলাদেশের তিন বিশ্ববিদ্যালয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:

  • কঠোর নেত্রী মমতা, ৬৪ খোপের রাজনীতির দাবাখেলায় বাদ পড়লেন তৃণমূলের ৬৪ বিধায়ক-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • ভবানীপুর থেকে দাঁড়াচ্ছেন না, ‘পালিয়ে গেল মমতা' বলে কটাক্ষ বিজেপির-আজকাল
  • বিজেপিকে একটিও ভোট নয়’, ভোটের মুখে বঙ্গে প্রচারে আসছেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত -সংবাদ প্রতিদিন

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু’টি বিষয়ের বিশ্লেষণে যাব। 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চেয়েছেন বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। কেন তিনি এ কথা বললেন?

২. ওমান সাগরে ইসরাইলি জাহাজে যে হামলা হয়েছে তার জন্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে দায়ী করেছে তেল আবিব। ইসরাইলি অভিযোগের বিরুদ্ধে ইরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। কিভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

বিএনপির ৭ মার্চ পালনের ঘোষণা ভণ্ডামি: কাদের-প্রথম আলো

ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালনের ঘোষণা আরেকটা রাজনৈতিক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই না। এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের মুখচ্ছবি মুখোশ দিয়ে ঢাকতে চাইছে।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভার শুরুতে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজ হঠাৎ করে ৪৬ বছর পর বিএনপির বোধোদয় হয়েছে। ৭ মার্চকে তারা নিষিদ্ধ করেছিল। ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ শুধু নিষিদ্ধই করেনি, এ ভাষণ যারা বাজাত, তাদের নির্যাতন করত, জেলে দিত। অনেককে অত্যাচার নির্যাতন করে পঙ্গু পর্যন্ত করে দিয়েছিল ৭ মার্চের ভাষণ বাজানোর অপরাধে।

আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘সেই ৭ মার্চ তারা পালন করছে। মুখচ্ছবিকে আজকে মুখোশ দিয়ে ঢাকতে চাইছে বিএনপি। ৭ মার্চ পালন করছে, আবার আরেক দিকে বলছে, একটি ভাষণ স্বাধীনতা এনে দেয়। আসলে এ কথা বলার জন্যই তারা ৭ মার্চের আলোচনা করছে। এটা তাদের আরেকটা রাজনৈতিক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দিয়ে মহান স্বাধীনতার মাসের কর্মসূচির উদ্বোধন করে বিএনপি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে তামাশা করেছে।’

সেতুমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপি চক্রান্তের পথ বেছে নিয়েছে। কারণ, তারা নির্বাচন করতে গেলে জনগণ তাদের ভোট দেয় না। জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আন্দোলন করতে গেলে জনগণ সাড়া দেয় না। তারা বারবার চেষ্টা করেছে, হাঁকডাক দিয়েছে, কিন্তু জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেয়নি। কারণ, বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে সহিংসতা, বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে জ্বালাও-পোড়াও, তাদের আন্দোলনের নামেই হচ্ছে আগুন–সন্ত্রাস। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের জানা আছে।

বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির কারণে তাদের ভোট কমে যাচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সে কারণেই আজকে তাদের ভোটে ভরাডুবি। এটা সরকারেরও দোষ না, ভোট কম পড়ে নির্বাচন কমিশনেরও দোষ না। জনগণের কাঠগড়ায় পরিত্যক্ত জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি আন্দোলনে যেমনিভাবে ব্যর্থ, তেমনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনগণের আস্থা অর্জনেও তারা ব্যর্থ হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

মির্জা ফখরুলের অভিযোগ-বিরোধীদের দমাতে সরকারের পেছন থেকে কাজ করছে একটা শক্তি-প্রথম আলো

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, যারাই এই সরকারের বিরোধিতা করছে, তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য ভয়ংকর একটা শক্তি সরকারের আড়ালে থেকে কাজ করছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৫তম কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম নামের দুটি সংগঠন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্র ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা মীর হেলাল।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর জেল থেকে বেরিয়ে যে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, সেই স্টেটমেন্টেই বোঝা যায় ভয়ংকর একটা শক্তি পেছন থেকে, এই সরকারের আড়ালে থেকে যারাই এই সরকারের বিরোধিতা করছে, যারাই রাষ্ট্রপ্রধানের বিরোধিতা করছে, তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য অমানবিক নির্যাতন করছে।’

মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, লেখক মুশতাক আহমেদ শুধু লেখার অপরাধে, কিশোরকে শুধু কার্টুন আঁকার অপরাধে নির্মমভাবে অত্যাচার করে মাসের পর মাস আটক রাখা হয়েছে।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের নাম কোথাও ছিল না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনবার এফআইআর করেও যখন নাম পাওয়া যায়নি, তখন আরেকজনকে ধার করে নিয়ে এসে নতুন করে অভিযোগপত্র তৈরি করে তাঁকে (তারেক রহমান) সেখানে আসামি দেখানো হয়েছে। এখন যেকোনো ঘটনা ঘটলে তাঁর নাম দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রমজান সামনে রেখে সক্রিয় সিন্ডিকেট চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন; বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম; আলু, পেঁয়াজ, আদা, মুরগির দামও বাড়তি-ইত্তেফাক

রমজানকে সামনে রেখে সিন্ডিকেট  ততপর

সরু চালের পর এবার মোটা ও মাঝারি মানের চাল ইরি/স্বর্ণা, পাইজাম ও লতার দামও বাড়ল। শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে দুই টাকা করে বেড়েছে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহের মধ্যেই দুইবার বাড়লো চালের দাম। প্রতি বছর ধানের মৌসুমের সময় চালের দাম কমে। কিন্তু এবার সদ্য সমাপ্ত আমনের মৌসুমেও চালের দাম কমেনি। বরং উলটো বেড়েছে এবং এখনো বাড়ছে।

এদিকে শুধু চালের দামই নয়, গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, আদা ও ব্রয়লার মুরগিও। এছাড়া গত প্রায় দুই মাস ধরেই ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির। কিন্তু কেন বাড়ছে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম তা যেন কারোরই জানা নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই রমজানে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এবার রমজানের এক/দেড় মাস আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন। যাতে রমজানে দাম বাড়ানোর জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে না হয়। সরকারের বিপণন সংস্থা টেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল শুক্রবার তাদের দৈনন্দিন বাজারদরের প্রতিবেদনে জানায়, মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা কেজিতে দুই টাকা করে বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে দুই টাকা বেড়ে মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৮ টাকা। তবে সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেটের দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা উল্লেখ করলেও রাজধানীর বিভিন্ন খুচরাবাজারে দেখা গেছে তা বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকায়। টিসিবির হিসেবে গত এক বছরে মোটা চালের দাম ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, সরু চালের দাম ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ ও মাঝারিমানের চালের দাম ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ১৬ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নিলেও অত্যন্ত ধীরগতিতে আসছে সেই চাল। এর মধ্যে বেসরকারিভাবে যাদের চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই মিল মালিক। তাদের একটি অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরগতিতে চাল আমদানি করছে। অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে তারাই চালের দাম বাড়াচ্ছে। তবে চাল আমদানিকারকরা বলেছেন, আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এছাড়া সীমান্তে জ্যামসহ বিভিন্ন কারণে ভারত থেকে চাল আসতে দেরি হচ্ছে।

ষড়যন্ত্রের জাল দেশে বিদেশে বিস্তৃত-মানবজমিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপি হত্যার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের । রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি’র এক নেতার বক্তব্যের সূত্র ধরে ওবায়দুল কাদের গতকাল সংসদ ভবনের সরকারি বাসভবন থেকে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ অভিযোগ তুলেন। ১৫ই আগস্ট আর ২১শে আগস্ট একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতার বক্তব্য তাদের খুনের রাজনীতির স্বরূপ উন্মোচিত করেছে। এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায় বিএনপি এখন আন্দোলন এবং নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। এ ষড়যন্ত্রের জাল দেশে-বিদেশে বিস্তৃত। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য লন্ডনের ছক অনুযায়ী গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি’র এক নেতা দেশে আরেকটি ১৫ই আগস্ট ঘটানোর ইঙ্গিতপূর্ণ ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তাতে দেশবাসী বিক্ষুব্ধ।

সক্রিয় নানা চক্র-নিত্যনতুন প্রতারণার ফাঁদ লোভে পড়লেই সর্বনাশ-যুগান্তর

দেশে সক্রিয় নানা প্রতারক চক্র। সঙ্ঘবদ্ধ এসব চক্র নিত্যনতুন কৌশলে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন মানুষ। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতারক চক্রের হাত থেকে রেহাই পেতে সচেতনতার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে লোভে পড়লেই ঘটবে সর্বনাশ।

জানা গেছে, প্রতারক চক্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারী সদস্যও রয়েছেন। কোনো কোনো চক্রে আছেন বিদেশিরাও। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র বিস্তৃত এদের প্রতারণার জাল। প্রতারণার শিকার কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হচ্ছেন। আবার কেউ লোকলজ্জা, কেউ বাড়তি ঝামেলার ভয়ে নীরব থেকে যাচ্ছেন।

চাকরি দেয়া, বিদেশ পাঠানো ও বিয়ের নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। এছাড়া কনসালটেন্সি ফার্ম খুলে, ব্যাংক লোন করিয়ে দেয়ার নামে, জাতীয় পরিচয়পত্র নকল করে এবং কয়েন, তক্ষকসহ নানা অভিনব জিনিস নিয়ে প্রতারণার বাণিজ্য চলছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়সহ নানা পরিচয় ব্যবহার হচ্ছে।

২ মার্চ রাতে রাজধানীর রামপুরা ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি অভিনব প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। এরা জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার থেকে বিভিন্ন লোকের এনআইডির ছবি পরিবর্তন করে ওই এনআইডি দিয়ে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ তুলে লাপাত্তা হয়ে যেত। ঋণ নেয়ার কাজে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স, ভুয়া টিআইএনও ব্যবহার করত চক্রটি। এভাবে এরা ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও থানা পুলিশ গ্রেফতার করে জাহিদুর রহমান ইকবাল নামের এক প্রতারককে। সে নিজেকে ‘বনবন্ধু’ নামে পরিচয় দিত। রাজধানীর কাওরানবাজার এলাকায় ভুয়া কোম্পানির অফিস খুলে চালিয়ে যাচ্ছিল প্রতারণা। গাড়িতে বঙ্গবন্ধুর বড় বড় ছবি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে গাছ লাগানোর কথা বলে প্রায় ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছিল সে। প্রতারণার কাজে সে মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করে।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ যুগান্তরকে বলেন, শুধু গাছ লাগানোর কথা বলে নয়, সে ভুয়া কনসালটেন্সি ফার্ম খুলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিককে ব্যাংক ঋণ করিয়ে দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জাহিদুর রহমান ইকবাল ওরফে ‘বনবন্ধু’ গত ৩০ বছর ধরে কাওরানবাজার এলাকায় প্রতারণা করে আসছিল। এ ধরনের প্রতারকদের বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করার পরামর্শ দেন তিনি।

২৩ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতারক চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এরা রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আড়ালে ২৪ মাসে দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ চক্র বিভিন্ন স্থানে অফিস খুলে বসে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিত। এরপর অফিস পরিবর্তন করে আবার নতুন নামে প্রতারণা চালাত। এভাবে তারা ৫ শতাধিক লোককে সর্বস্বান্ত করেছে। এদের টার্গেটের শিকার হয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এছাড়া ২৪ ফেব্রুয়ারি খিলক্ষেত নিকুঞ্জ-২ এলাকা থেকে জহিরুল আলম, রবিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ও উত্তম তালুকদার নামে ৪ প্রতারককে গ্রেফতার করে সিআইডি। তারা চাকরি এবং বিদেশে পাঠানোর নামে চাকরি প্রার্থী লোকজনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিআইডি জানিয়েছে, জহিরুল ইসলাম নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করত। এর আগে নাসির নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে এসএসএফ কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করত। বগুড়ার এক মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়। বিয়ের কথাও ছিল প্রায় পাকাপাকি। এ অবস্থায় মেয়ের বাবা খোঁজ নিতে এসে বুঝতে পারেন সে প্রতারক। পরে পুলিশ তাকে গণভবন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।

সম্প্রতি আরেক প্রতারককে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তার নাম আশরাফুল আলম দিপু। লেখাপড়ায় মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরোলেও ২০ বছর বয়সী এ যুবক নিজেকে কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক, দুদকের পরিচালক, পুলিশের ডিআইজিসহ একেক সময় একেক পরিচয় দিত। নিজ জেলা ভোলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব পরিচয় ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত দিপু।

বিভিন্ন জেলা সফরে গিয়ে ভুয়া জিও লেটারে নিত পুলিশ প্রটোকল। এমনকি ডায়াসে দাঁড়িয়ে স্যালুট নেয়া থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে বিচার প্রশাসনে প্রভাব খাটাত সে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর তার অজস্র প্রতারণার গল্পে চমকে উঠেছেন খোদ গোয়েন্দা কর্মকর্তারাই। সে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে হাতিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সম্প্রতি আরেকটি প্রতারক চক্রের সন্ধান পায়। এর ৬ সদস্য আক্তারুজ্জামান, সালাম, মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামান, আবু তাহের জবা ও শফিকুল ইসলাম স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়।

পিবিআই সূত্র জানায়, দুর্লভ নাসার কয়েন কিনে আবার বিক্রি করলেই কোটি টাকা লাভ। এ লোভে এই চক্রের হাতে সম্প্রতি শিল্পপতি থেকে শুরু করে সরকারি আমলারাও খুইয়েছেন কোটি কোটি টাকা। একটি কাঠের তৈরি কয়েনকে নাসার কয়েন বলে প্রলোভন দেখাত চক্রটি। বলত, গবেষণার কাজে কয়েনটি নাসায় ব্যবহৃত হয়। এটি কিনে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা যাবে। যার ক্রয়মূল্য ১০ কোটি টাকা। মার্কিন মুলুকে কয়েনটির ব্যাপক চাহিদা। পিবিআই জানায়, এ নাসার কয়েন চক্রের খপ্পরে পড়ে সম্প্রতি সরকারের প্রথম শ্রেণির একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার পেনশনের ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা খুইয়েছেন। আরেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খুইয়েছেন ৮৪ লাখ টাকা। স্বনামধন্য এক ব্যবসায়ী ২ কোটি টাকা হারিয়েছেন।

গত বছর এমন আরেকটি চক্রের সন্ধান পায় র‌্যাব। চক্রের সদস্যরা ধানের ভেতর ভাঙা সুই ভরে সেগুলো আকর্ষণ করাত ম্যাগনেটিক কয়েনে। পরে বিশেষ রাসায়নিকে পাউডার বানিয়ে দেখাত ধানগুলোকে। এভাবে বিভিন্ন কৌশলে কখনও ম্যাগনেটিক কয়েন, পিলার এমনকি তক্ষক নামের প্রাণী বিক্রিরও প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের ধোঁকা দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত প্রতারক চক্রের প্রধান নুরুল ইসলাম ও তার ১৪ সহযোগী।

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কশিনার মাহবুব আলম বলেন, প্রতারকরা খুবই চতুর। এরা নানা কৌশলে ফাঁদে ফেলতে চায়। এদের খপ্পর থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হলে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন প্রতারকদের পাকড়াও করতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। তেমনি প্রতারক চক্রও দিন দিন অভিনব কৌশল বের করে প্রতারণার চেষ্টা করছে। তাই প্রতারক চক্র থেকে দূরে থাকতে হলে লোভকে বর্জন করতে হবে। এ বিষয়ে একটু সচেতন থাকলেই ভয়াবহ ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, দেশে বহুমাত্রিক প্রতারণা দেখা যাচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এজন্য দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতারণাবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই এর সুফল মিলবে।

ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

মমতা বন্দোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা ভোটের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। আনন্দবাজার পত্রিকা এ সম্পর্কে শিরোনাম করেছে- এরকম-তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা দেখিয়ে দিল, দলের রাশ এখনও পুরোপুরি সেই মমতার হাতেই।দেখিয়ে দিল, দলের উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নিরঙ্কুশ’ প্রাধান্য এবং কর্তৃত্ব এখনও অটুট। দেখিয়ে দিল, মমতার হাতে দলের রাশ যতটা রয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের হাতে ততটা নেই।শুক্রবার ঘোষিত প্রাথিতালিকার ছত্রে ছত্রে রয়েছে মমতার অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দৃষ্টি এবং বিভিন্ন সমীকরণ। অন্য একটি শিরোনামে লেখা হয়েছে, কঠোর নেত্রী মমতা। ৬৪ খোপের রাজনীতির দাবাখেলায় বাদ পড়লেন তৃণমূলের ৬৪ বিধায়ক।

আর সংবাদ প্রতিদিন লিখেছে,মমতা শুধু নন্দীগ্রামেই একাধিক চমক দিয়ে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা। তিনি বলেছেন, খেলা শুরু। অন্যদিকে শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ মমতাকে- নন্দীগ্রাম থেকে খালিহাতে কোলকাতায় পাঠাব। এদিকে আজকালের শিরোনাম- ভবানীপুর থেকে দাঁড়াচ্ছেন না, ‘পালিয়ে গেল মমতা' বলে কটাক্ষ বিজেপির, পাল্টা শোভনদেব।

এদিকে টিকিট না পেয়ে কেঁদে ফেললেন সোনালি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দীপেন্দু ও  আরাবুলের।

আনন্দবাজার পত্রিকার অন্য দলের খবরে লেখা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল বাম-কংগ্রেস-সিদ্দিকী জোট। এদিকে বিজেপির প্রার্থী তালিকা শেষ হয়েও হইল না শেষ! এত গোপনীয়তা কেন, জল্পনায় ৫ কারণ।

কিন্তু এত কিছুর পরেও তালিকা প্রকাশ করা হল না কেন? তা নিয়ে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। অনেকেই মনে করছেন, রবিবার ব্রিগেডে মোদীর সমাবেশ রয়েছে। তার পরেই ঘোষণা করা হতে পারে তালিকা। সেই জল্পনাকে উস্কে দিয়েছে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য। কবে জানা যাবে প্রার্থিতালিকা? এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর ছোট্ট মন্তব্য, ‘‘৯ তারিখের আগেই।’’ প্রসঙ্গত, ৯ মার্চই প্রথম দফার নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। দিলীপের এই মন্তব্যের পর থেকেই নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, রবিবারের আগে প্রকাশ হবে না পদ্মের তালিকা। কিন্তু মোদীর সমাবেশ পর্যন্ত অপেক্ষা কেন? বিজেপি-র অন্দরে নানা আলোচনা শোনা যাচ্ছে। তার থেকে এই ‘গোপনীয়তা’র পিছনে তিনটি সম্ভাব্য কারণ শোনা যাচ্ছে।

প্রথমত, ৬০ আসনের তালিকা চূড়ান্ত বলা হলেও কয়েকটি আসন নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়ে গিয়েছে। দুই, তৃণমূলের প্রার্থী দেখার পর প্রয়োজনে বদল হতে পারে তালিকায়। তিন, তৃণমূলের তালিকায় জায়গা না পাওয়া কেউ কেউ বিজেপি-তে যোগ দেন কিনা তার জন্য অপেক্ষা। চার, মোদীর ব্রিগেডের আগে প্রার্থিতালিকা নিয়ে কোনও বিতর্ক তৈরি হলে তা সমাবেশে প্রভাব ফেলতে পারে এবং পাঁচ, এখনই প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে দিলে নেতারা নিজেদের আসনে চলে যাবেন। তাতে ব্রিগেড সমাবেশের আয়োজন ধাক্কা খাবে।

বিজেপিকে একটিও ভোট নয়’, ভোটের মুখে বঙ্গে প্রচারে আসছেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত –সংবাদ প্রতিদিন

বিতর্কিত তিন কৃষি আইনের (Farmers Protest) প্রতিবাদে দিল্লিতে (Delhi) আন্দোলনরত কৃষকরা। ইতিমধ্যে আন্দোলনের আঁচ পৌঁছে গিয়েছে গোটা দেশে। এই পরিস্থিতিতেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ চার রাজ্য এবং এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনের ১৪ দিন আগেই বঙ্গ সফরে আসছেন রাকেশ টিকাইত-সহ অন্যান্য কৃষকনেতারা। বক্তৃতা রাখবেন মহাপঞ্চায়েতে। সাধারণ মানুষের সামনে কেন্দ্রের কৃষকবিরোধী এবং জনবিরোধী নীতির কথা তুলে ধরবেন তাঁরা। বিজেপি যেন একটি ভোটও না পায়, সেই প্রচারই করবেন প্রত্যেকে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৬

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।