মার্চ ১৫, ২০২১ ১৫:৩০ Asia/Dhaka

গত কয়েকটি আসরে আমরা ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ঐতিহাসিক প্রদেশ হরমুজগানের বিখ্যাত শহর বন্দর আব্বাসের পাশে অবস্থিত দ্বীপাঞ্চলীয় পর্যটন শহর কেশমের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখে বেড়াচ্ছি।

এখানকার কয়েকটি জিওপার্কের সঙ্গেও আমাদের পরিচয় ঘটেছে। এগুলোর একটি হলো 'কেশম ওয়ার্ল্ড জিওপার্ক'। এটি বিশটিরও বেশি জিওসাইট  নিয়ে গড়ে উঠেছে।

ইতোমধ্যে আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কেশমের ওয়ার্ল্ড জিওপার্কটি ঘুরে ফিরে দেখেছি। এই জিওপার্কটি কেবল কেশম দ্বীপেরই আকর্ষণীয় বিষয় নয় বরং সমগ্র ইরানেও এটি অনন্য। এই জিওপার্কটি মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র জিওপার্ক যা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড জিওপার্কসের তালিকায় নিবন্ধিত হয়েছে। কেশম দ্বীপের এই জিওপার্কটি এবং এর জিওসাইটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ স্থানীয় লোকজন এবং সম্প্রদায়গুলোই করে থাকে। এর পাশাপাশি  সবুজ পরিবেশ রক্ষার জন্য যাবতীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে কেশম জিওপার্কটির পরিচর্যা করা হয়। যার ফলে পর্যটকদের কাছে চমৎকার এই জিওপার্কটি খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কেশম দ্বীপের পশ্চিম অংশে প্রকৃতির বিস্ময়কর সৌন্দর্যের সমাহারে কেশম জিওপার্কটি তৈরি করেছে। যাই হোক গত আসরের ধারাবাহিকতায় আজও আমরা কেশমের জিওপার্কের আরও কিছু দর্শনীয় দিক নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

ইরানের ঐতিহাসিক কেশম দ্বীপের 'ওয়ার্ল্ড জিওপার্ক'

গত আসরে আমরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট নিয়েও কথা বলেছি। আশা করি মনে আছে আপনাদের। ভ্রমণকারীরা যখন বোটে করে এই সবুজ বনের ভেতর দিয়ে পাড়ি জমান তারা এক অনন্য সাধারণ অভিজ্ঞতা লাভ করেন। আসলে পানিতে গড়ে ওঠা সবুজ বন তার ভেতর দিয়ে নৌকা ভ্রমণের যে অপূর্ব অভিজ্ঞতা সেটা বর্ণনা করে কতটুকুই বা বোঝানো যায়। এটা ভ্রমণ করে উপলব্ধি করার মতো একটি ব্যাপার। কেশম থেকে দক্ষিণ উপকূলের পথ ধরে চলতে চলতে 'বারকে খালাফ' গ্রাম পেরিয়ে পাঁচ কিলোমিটারের মতো সামনে এগুলে চোখে পড়বে পর্বতমালাময় একটি বিশাল অঞ্চল। অনন্য সাধারণ এই ভূতাত্ত্বিক অঞ্চলটি "স্টার ভ্যালি" নামে পরিচিত। এই স্টার ভ্যালি প্রকৃতির এক বিরল উপহার। কেশম দ্বীপের মতো সুন্দর এই পর্যটন এলাকার অন্যতম আকর্ষণ এই ভ্যালি বা উপত্যকা।

এই উপত্যকার শিলাপাথরগুলো সেনোজোইক ভূতাত্ত্বিক কালের বলে ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা। এগুলো বেশ প্রাচীন। বলা হয়ে থাকে যে এগুলো আজ থেকে বিশ লক্ষ বছর আগেকার। এই উপত্যকাটিও কেশম দ্বীপের জিওপার্কের অংশ হিসাবে ইউনেস্কোতে নিবন্ধিত হয়েছে। এটি মধ্য প্রাচ্যের একমাত্র উপত্যকাময় জিওপার্ক। বলা হয়ে থাকে যে জিওপার্কটির এখনকার যেই অবয়ব বা দর্শনীয় আকার দাঁড়িয়েছে তা কয়েক হাজার বছর ধরে রূপ লাভ করেছে। শক্তিশালী বাতাস, বজ্রঝড় এবং মৌসুমি বর্ষণের ফলে ধীরে ধীরে গঠিত হয়েছে।

"স্টার ভ্যালি" নামে পরিচিত কেশমের প্রাকৃতিক এক বিরল উপহারের কথা। এখানকার মূল যে মালভূমি অঞ্চল সে অঞ্চলের উত্তর অংশে এখনও এই ভ্যালির কম বা বেশি অক্ষত দেখতে পাওয়া যায়। মালভূমিটি উপত্যকার তল থেকে সাত মিটার থেকে পণেরো মিটারের মতো। এই মালভূমির মাটি সিমেন্টের সাথে বেলেপাথর এবং জীবাশ্ম শাঁসের মিশ্রণে পূর্ণ। আপনি যখন এখানকার করিডোরগুলো অতিক্রম করবেন তখন উপরের দিকে তাকালে নীল আকাশ আপনার মাথার উপরে ছাদের মতো উপলব্ধি করবেন।

স্টারভ্যালিতে অনেকগুলো স্তর ও পর্যায় দেখতে পাওয়া যায়। এটি মনে করা হয় যে প্রতিটি ভারী বৃষ্টিপাতের পর উপত্যকার চেহারায় লক্ষণীয় পরিবর্তন হতো। এখানে অবশ্য খুব কমই বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটে। স্টারভ্যালির কোণে কোণে সরু এবং কখনও কখনও প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে  যেগুলো পর্যটকদের বিস্মিত করে। এই উপত্যকা অঞ্চলের রাতগুলো দর্শনীয় সুন্দর এবং দারুন উপভোগ্য। কবিমনের মানুষজন এখানকার রাত দেখে কবিতার ভাবনায় পড়ে যাবেন। লেখালেখি কিংবা চিন্তা-চেতনার জন্য এই উপত্যকার পরিবেশও বেশ অনুকূল। সুনসান নীরবতা ও প্রশান্তি যেমন এখানে বিরাজ করে তেমনি আকাশের দিকে তাকালে মনে হবে নক্ষত্রপুঞ্জ যেন পৃথিবীর কাছাকাছি নেমে আসছে।

"স্টার ভ্যালি"র রাতের আকাশের সৌন্দর্যের কথা। রাতের তাারগুলো যেন কোনো উৎসব উদযাপনের জন্য পৃথিবীকে আলোকিত করেছে। এই সৌান্দর্য পুরো কেশম অঞ্চলের একটি চমকপ্রদ ঘটনা এবং এখানকার রাতকে অন্যরকম একটা নান্দনিক চেহারা দেয়।

চহকুহ প্রণালি কেশম দ্বীপের আরও একটি দর্শনীয় স্থান। পূর্ব চহু গ্রামের পাশে কেশম শহর থেকে সত্তর কিলোমিটার দূরত্বে এই প্রণালিটি অবস্থিত।

কেশম দ্বীপের উত্তর উপকূলের পশ্চিম অংশে এমন একটি উপত্যকা রয়েছে যেখান প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে  মনে হবে মায়াময় কোনো অভিনব রূপকথার জগতে প্রবেশ করেছেন আপনি। চহকূহ প্রণালি নিয়ে কথা বলার সুযোগ আজ আর হচ্ছে না। পরবর্তী কোনো আসরে সুযোগমতো বলার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ