এপ্রিল ১০, ২০২১ ১৬:১৭ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা রাসায়নিক পণ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান, অগ্রগতি ও তৎপরতা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে ইরানের পেইন্ট, রজন এবং আঠা ও টেপ শিল্পের ব্যাপারে খানিকটা ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে জ্ঞান-ভিত্তিক কয়েকটি ইরানি কোম্পানির কৃতিত্ব ও অর্জনের দিকেও ইঙ্গিত করার চেষ্টা করেছি।

আশা করি আপনাদের  ভালো লেগেছে। বলেছিলাম যে রাসায়নিক পণ্য এখন আমাদের জীবনজুড়ে এতোটাই প্রভাব বিস্তার করে আছে যে খুব কম শিল্পই পাওয়া যাবে যেখানে এখন রাসায়নিক বিভিন্ন উপাদান, কাঁচামাল কিংবা সহযোগী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। পেট্রো-কেমিক্যাল শিল্প সামগ্রির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প রাসায়নিক শিল্পের একটি শাখা।  এখানে তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস জাতীয় বিচিত্র প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক কাঁচামাল থেকে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করার পর নতুন রাসায়নিক পণ্য উত্পাদন করা হয়। মানব জীবনে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রভাবের আগে এই তেল এবং এ জাতীয় পেট্রো-কেমিক্যাল পণ্য সামগ্রী ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এসব প্রয়োজনীয় রাসায়নিকগুলো উদ্ভিদ এবং প্রাণীজ পণ্যগুলোর মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তন ও রূপান্তর কিংবা বলা যেতে পারে ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে তৈরি হতো। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস কাঁচামাল হিসাবে মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো উত্পাদন করতে ব্যবহার করা হত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশ এবং হাইড্রোকার্বনের ব্যবহারের প্রসারের তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে ফলে হাজার হাজার পণ্য তৈরি হতে শুরু করেছে। এখন বিপুল পরিমাণ শিল্পজাত পণ্য এই পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প থেকেই উৎপন্ন পণ্য। পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের বেশিরভাগই রাসায়নিক, বৈদ্যুতিক , ইলেকট্রনিক্স, টেক্সটাইল, মেডিকেল, মোটরগাড়ি, বাড়ি এবং খাদ্য শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণের প্রধান সরবরাহকারী। যাই হোক এই পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যে ইরানের অবস্থান ও অগ্রগতি নিয়ে আজকের আসরে আমরা কথা বলার চেষ্টা করবো।

প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য সামগ্রীর গুরুত্বপূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো এর মূল্যমানগত প্রবৃদ্ধি। বিশ্ব বাজারে এইসব পণ্যের অর্থনৈতিক মূল্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের দাম অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি। সুতরাং সেইসব দেশের জন্য এই পেট্রো-কেমিক্যাল পণ্য গুরুত্বপূর্ণ যেসব দেশ বিশেষ করে পেট্রো-কেমিক্যাল শিল্প পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের লক্ষ্যে কাঁচামাল থেকে শুরু করে চূড়ান্ত পণ্য তৈরি করা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সকল আয়োজন যেমন করেছে তেমনি বিনিয়োগও করেছে প্রয়োজনমতো। এই শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ'ল এর পণ্যগুলোর বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্য।

আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো হাজার হাজার কারখানার বিচিত্র পণ্য সামগ্রী উত্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ পেট্রো-কেমিক্যাল সামগ্রী থেকেই নিশ্চিত করা হয়। অন্যভাবে বলা যেতে পারে যে, পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প হ'ল অন্যতম প্রধান শিল্প যা অন্যান্য শিল্প খাতকে বাঁচিয়ে রাখে এবং তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই পেট্রো-কেমিক্যাল পণ্য সামগ্রী। আরও যে বিষয়টি উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হলো পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের অনন্য অর্থনৈতিক ও গঠনমূলক বৈশিষ্ট্য হ'ল দেশের বেকার সমস্যা হ্রাস করা এবং কর্মসংস্থান বাড়ানো।

বিশেষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এর ইতিবাচক ভূমিকা সম্পর্কে। ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প অর্ধ শতাব্দীরও বেশি পুরোণো। উনিশ শ তেষট্টি খ্রিস্টাব্দে ইরানের জাতীয় পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প সংস্থা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এবং জাতীয় ইরানি তেল কোম্পানির তত্ত্বাবধানে এই শিল্পটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই শিল্পের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের শিরাজ শহরে একটি রাসায়নিক সার উত্পাদন কারখানা নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে। ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের আগে ইরানের জাতীয় পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানির কার্যক্রমের আওতায় যারা তৎপরতা চালাতো তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল রাজি, আবাদান, কার্বন, খারক এবং ফারাবীর মতো কয়েকটি পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি। এইসব কোম্পানির কাজছিল বিভিন্ন কমপ্লেক্স স্থাপন করা এবং শিরাজ পেট্রোকেমিক্যাল উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন।

 ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এবং ইরানের ওপর ইরাকের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের ফলে শিরাজ পেট্রোকেমিক্যাল সম্প্রসারণ প্রকল্পের মতো আধা-সমাপ্ত প্রকল্পের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে এবং ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্সগুলির উত্পাদন কার্যক্রম একেবারেই কমে যায়। ইরাকের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের পরিসমাপ্তির সাথে সাথে বান্দর ইমাম কমপ্লেক্সের মতো ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল কেন্দ্রগুলির পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যায় এবং দ্রুততার সঙ্গে সেগুলোর কাজ শেষ হয়। এক দশকের মধ্যে এইসব পেট্রো-কেমিক্যাল স্থাপনা সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করে দেয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প পরিমাণগত এবং গুণগত মান বিচারে আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

ইরাকের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর ইরানের উৎপাদিত পেট্রো-কেমিক্যাল পণ্যের ক্রমবর্ধমান উত্পাদন ছিল চোখে পড়ার মতো। উচ্চ অর্থনৈতিক মূল্য ছাড়াও পেট্রো-কেমিক্যাল পণ্য সামগ্রীর সবচেয়ে বড়  বৈশিষ্ট্য ছিল জাতীয় অর্থনীতিতে এই পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের প্রভাব বৃদ্ধি এবং তেলবিহীন পণ্যের রফতানি। বলাবাহুল্য এই শিল্পটি ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের আগের তুলনায় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিল।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ