জুন ১৯, ২০২৩ ১০:৫৪ Asia/Dhaka
  • 'সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমামের শাহাদাত'

জিলক্বদ মাসের শেষ দিন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক মজলুম ইমাম মুহাম্মাদ জাওয়াদ আততাকি (আ)'র শাহাদত বার্ষিকী। ২২০ হিজরির এই দিনে তিনি শাহাদত বরণ করেছিলেন। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি।

তিনি ছিলেন শিশু নবী ইয়াহিয়া ও ঈসার স্মারক

ছিলেন যখন নব-জাতক!/  জন্মের তৃতীয় দিনেই শোনান

স্বকণ্ঠে শাহাদাতাইন

হয়েছেন ইমাম বয়স যখন মাত্র আট!

শৈশবেই জ্ঞানীদের দিয়েছেন পাঠ

তুলে ধরে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশদ ইসলামী আইন!

ছড়াতে নবীজির পয়গাম

করেছেন বীরোচিত সংগ্রাম

রেখেছেন অম্লান

মহানবীর রক্তধারার সুনাম!

নামও তাঁর ছিল মুহাম্মদ

ইসলামের অনন্য সম্পদ!

মাত্র ২৫ বছর বয়সে দিয়ে প্রাণ

সজীব রেখেছেন ইসলাম!

পিতা ইমাম রেজার মতই দয়া-দাক্ষিণ্যের খ্যাতিও তাঁর চির-দেদীপ্যমান!-

জিলক্বদ মাসের শেষ দিন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক মজলুম ইমাম মুহাম্মাদ জাওয়াদ আততাকি (আ)'র শাহাদত বার্ষিকী। ২২০ হিজরির এই দিনে তিনি শাহাদত বরণ করেছিলেন।মহানবী মুহাম্মাদ (সা)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম মুহাম্মাদ বিন আলী আল জাওয়াদ-এ'র জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদিনায়।  পিতা  ইমাম রেজা (আ.)'র শাহাদতের পর মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্ব পান ইমাম জাওয়াদ। ১৭ বছর এই পদে দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন তিনি।

ইমাম রেজা (আ.)-এর বোন হাকিমাহ বলেন : ইমাম রেজা (আ.) আমাকে ইমাম মুহাম্মদ তাকী (আ.)-এর জন্মের সময় খিযরানের কাছে তথা তাঁর স্ত্রীর কাছে থাকার নির্দেশ দেন। নবজাতক জন্মের তৃতীয় দিবসে আকাশের দিকে ও অতঃপর ডানে-বায়ে দেখলেন এবং স্পষ্ট করে কলেমায়ে শাহাদাতাইন বললেন, যার অর্থ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল।’  আমি এই বিস্ময়কর ঘটনা দেখেই সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ের কাছে এ ঘটনা বর্ণনা করলাম। ইমাম রেজা (আ.) বললেন,‘যা দেখেছ তার চেয়ে আরও বেশি বিস্ময়কর ঘটনা ভবিষ্যতে তাঁর থেকে দেখতে পাবে’ (মানাকেব,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৩৯৪)।–

মহানবীর (আ) আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী এবং ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির  পুনরুজ্জীবন ও  বিকাশ ছিল তাঁরও মূল লক্ষ্য। সেযুগের সব ফের্কার মনীষী তাঁর প্রশংসা করেছেন। যেমন, প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ) সম্পর্কে বলেছেন, " ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরত তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" মালিকি মাজহাবের ফকীহ ইবনে সাব্বাগ ইমাম জাওয়াদ সম্পর্কে লিখেছেন: সবার চেয়ে কম বয়স অথচ তাঁর মান-মর্যাদা ছিলো সবার উপরে! ... স্বল্পভাষী হয়েও তিনি শত্রুর বক্তব্যকে অকাট্য যুক্তি দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ও সুমিষ্ট ভাষায় খণ্ডন করে নিজ বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। সে সময়কার সব তর্কবাগীশ , আলঙ্কারিক ও ভাষাবিদকে তিনি হার মানিয়েছেন।

'সবার চেয়ে কম বয়স অথচ তাঁর মান-মর্যাদা ছিলো সবার উপরে!'

 

আব্বাসীয় শাসক মামুন ও মুতাসিম ছিল ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র যুগের দুই বাদশাহ। ইমাম পবিত্র মদিনা ছাড়াও হজের সময় মক্কায় গমন উপলক্ষে সেখানে ইসলামের ব্যাখ্যা তুলে ধরতেন এবং বক্তব্যের পাশাপাশি নিজ আচার-আচরণের মাধ্যমে দিক-নির্দেশনা দিতেন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে। শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধেও থাকতেন সোচ্চার। এইসব শাসক বিশ্বনবী (সা.)'র আদর্শ ও সুন্নাতকে ত্যাগ করেছিল। ইমাম জাওয়াদ (আ.) শাসকগোষ্ঠী ও তাদের প্রতিপালিত দোসরদের চিন্তাগত হামলা মোকাবেলা করে আহলে বাইতের আদর্শকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন।ইমাম জাওয়াদ মাত্র আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহ মানুষকে কম বয়সেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কুরআনে শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়ার (আ) নবুয়্যত প্রাপ্তি ও মায়ের কোলে নবজাতক ঈসার (আ) কথা বলার ঘটনা এসেছে। -

ইমাম জাওয়াদ-আ. শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদাত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ ও অন্যান্য শহরের আশি জন বিখ্যাত ফকীহ মদীনায় শিশু ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে আসেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ) এর ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের সন্দেহ দূর হয়ে যায়। ইমাম জ্ঞানগত বিতর্কে বড়ো বড়ো পণ্ডিতদের হারিয়ে দিতেন। একদিন আব্বাসীয় বাদশাহ মামুনের আয়োজিত এক মজলিসে নামকরা এক পণ্ডিত ইমামকে প্রশ্ন করেন: যে ব্যক্তি হজ পালনের জন্যে এহরাম বেঁধেছে, সে যদি কোনো প্রাণী শিকার করে, তাহলে এর কী কাফফারা হবে? ইমাম জাওয়াদ (আ) এই প্রশ্নটির উত্তর সংশ্লিষ্ট ২২টি অবস্থায় কি হবে তা সুদীর্ঘ বর্ণনার মাধ্যমে জানিয়ে দেন। উত্তর পেয়ে সবাই হতবাক হয়ে যান এবং ইমামের অলৌকিক জ্ঞানের প্রশংসা করেন। বাজনাইমাম জাওয়াদ (আ) এর শতাধিক ছাত্র তাঁরই জীবনাদর্শ ও শিক্ষার আলোকে সুশিক্ষিত ও সমৃদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা সমকালে ছিলেন শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। ফিকাহসহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাঁরা ব্যাপক অবদান রেখেছেন।  ইমাম জাওয়াদ তাঁর অর্জিত সম্পদ বহুবার মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। ইসলামী সভ্যতার পুনরুজ্জীবনে এমন মহান ইমামের আদর্শ অনুসরণ খুবই জরুরি।

ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র জীবনের শেষ দু'বছরে আব্বাসীয় শাসক ছিলো মুতাসিম। ইমামের গণ-জাগরণী বক্তব্যে আতঙ্কিত মুতাসিম ইমামের প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করলে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ইমাম জাওয়াদ শাহাদাত বরণ করেন। ‌ ইমাম জাওয়াদ বলেছেন, যে কর্মের সময় এখনো আসেনি সেজন্য তাড়াহুড়া করো না,করলে অনুতপ্ত হবে। আকাশচুম্বী আশা-আকাঙ্ক্ষা করোনা,কেননা তাতে আত্মা পাষণ্ড ও কঠিন হয়। দুর্বল-অক্ষমদের প্রতি দয়া কর এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর (আল ফুসুলুল মোহেম্মাহ,পৃ. ২৯২)ইমাম জাওয়াদ (আ)'র শাহাদাত দিবসে সবাইকেও আবারও জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

 

ট্যাগ