'ন্যায়ভ্রষ্ট রায়' বললেন ডা. শফিকুর
সাতক্ষীরার জামায়াত নেতা মাওলানা খালেক মণ্ডলসহ দুই জনের মৃত্যুদণ্ড
-
আবদুল খালেক মণ্ডল
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাতক্ষীরা জেলা আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডলসহ দুইজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ (বৃহস্পতিবার) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। এর আগে শুনানি শেষে এ মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখেছিলেন। রায়ের সময় আবদুল খালেক মণ্ডল আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এ মামলায় আসামি আবদুল খালেক মণ্ডলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার ও আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। পলাতক খান রোকনুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর ছিলেন মোখলেসুর রহমান বাদল ও রেজিয়া সুলতানা চমন।
আবদুল খালেক মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনিসহ আটক সকল জামায়াত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান একটি বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সরকার মিথ্যা, বায়বীয় ও কাল্পনিক অভিযোগে অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে নিজেদের দলীয় লোকদের দ্বারা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায়ে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। মাননীয় আদালত সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে ২৪ মার্চ মৃত্যুদণ্ডের যে রায় ঘোষণা করেছেন তা একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। এ রায়ে অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডল ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে তিনি খালাস পাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।"
এদিকে, মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
২০১৭ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছয়জনকে হত্যা, দু’জনকে ধর্ষণ, ১৪ জনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ।
২০১৮ সালের ৫ মার্চ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেওয়া হয়। পরে একই বছরের ১৫ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদ্রাসায় নাশকতার উদ্দেশে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গোপন বৈঠকের অভিযোগে আব্দুল খালেক মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৫ আগস্ট খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখান ট্রাইব্যুনাল।
শিমুলবাড়িয়া গ্রামের রুস্তম আলীসহ পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২ জুলাই খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন শহীদ রুস্তম আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম গাজী।
মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে সাতক্ষীরা সদর আসন দুইবার নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এবং সাতক্ষীরা সদরের বৈকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।#
পার্সটুডে/এআর/২৪
