চবিতে চার দফা দাবি নিয়ে ছাত্র আন্দোলন অব্যাহত: যোগ দিয়েছেন শিক্ষকরাও
ছাত্রী হেনস্তার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। ক্লাস বর্জন করে দফায় দফায় সমাবেশ মিছলসহ অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ সব আন্দলনে শিক্ষকরাও যোগ দিচ্ছেন।
গত রবিবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পুকুরপাড়ে এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পর ভিডিও ধারণ এবং তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে থাকা বন্ধুকে মারধর করে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনতাই করা হয় বলে ওই ছাত্রী জানান।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে গত বুধবার হাটহাজারী থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলাও করেন সেই ছাত্রী।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এ ঘটনায় এখনো কাউকে শনাক্ত বা আটক করতে পারেনি প্রশাসন। আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এর আগেও চট্টগ্রাম বিস্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে । তবে কোনো বিচার হয়নি। ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের যৌন হরানীর বিষয়ে একটি বিশেষ সেল থাকলেও তা কার্যকর ভুমিকা পালন করছেনা ।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ শিরিন আখতার চৌধুরী আশ্বাস দিয়েছেন, এ জঘন্য ঘটনার জড়িতদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে।
এর আগে বুধবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রীরা। চার দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। দাবিগুলো হলো-
এক. বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও মেডিকেল সেন্টারে প্রবেশের সময়সীমা তুলে নেওয়া ও ক্যাম্পাসে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
দুই. যৌন নিপীড়ন সেল ভেঙে নতুন কার্যকরী যৌন নিপীড়ন সেল গঠন এবং গঠিত সেলে বিচার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ সময় থাকবে এক মাস। এক মাসে বিচার নিশ্চিতে ব্যর্থ হলে যৌন নিপীড়ন সেল নিজে শাস্তির আওতাভুক্ত হবে।
তিন. যৌন নিপীড়ন সেলে বর্তমান চলমান কেসগুলো আগামী চার কার্যদিবসের মধ্যে সমাধান করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
চার. চলমান ঘটনাগুলোর বিচার আগামী চার কার্যদিবসের মধ্যে করতে না পারলে প্রক্টরিয়াল বডির সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে। লিখিত আকারে পেশকৃত এসব দাবি মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান। তিনি বলেন, এসব সমস্যা চার কর্মদিবসের মধ্যে মীমাংসা না করতে পারলে প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করবেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে শহীদ মিনারে যান। পরে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কয়েক শ শিক্ষার্থী শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকও।
এ সময় ‘ভিসি যেখানে নারী, সেখানে অনিরাপদ কেন আমি?’, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে নিরাপত্তা নাই’, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘নাম অবশ্যই প্রশাসনের জানা, তবে মামলা কেন অজ্ঞাতনামা’- ইত্যাদী স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
মহিলা পরিষদের উদ্বেগ
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যৌন হয়রানি বৃদ্ধির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বৃহস্পতিবার মহিলা পরিষদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, 'চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় না এনে উল্টো ছাত্রীদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কার্যকর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। সেই সঙ্গে যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্তকরণ বন্ধে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেল গঠন ও কার্যকর করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে।'
চবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবিও জানানো হয়েছে।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/রেজওয়ান হোসেন/২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।